সালাত ও প্রশান্তি
লিখেছেন লিখেছেন আহমাদ আল সাবা ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৭:২৭:১০ সন্ধ্যা
বিসমিল্লাহীর রাহমানীর রাহীম
কোর’আন-হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী জান্নাতিদের সর্বাপেক্ষা সন্তুষ্টির বিষয় হবে জান্নাতে আল্লাহকে দর্শন। পূর্ণিমার চাঁদকে যেরুপ প্রত্যেকেই পূর্ণতৃপ্তিসহকারে দেখতে পারে সেভাবে আল্লাহর দর্শন ও আতিথেয়তাই হবে জান্নাতিদের পূর্ণ নেয়ামত।
সেই আল্লাহর সাথে আমাদের পার্থিব জীবনের সংযোগ(সালাহ)থাকা সত্ত্বেও কেন আমরা প্রশান্তি অনুভব করি না? অথচ রাসূল (সা)ও সাহাবারা(রা)এই সালাতেই প্রশান্তি পেতেন।
আল্লাহ হযরত মূসাকে(আ)প্রশ্ন করেছিলেনঃ হে মূসা, তোমার হাতে কি? তিনি এক কথায় উত্তর দিতে পারতেন। কিন্তু কিছুটা বৃদ্ধি করে এমনভাবে উত্তর দিতে দিলেন যেন আল্লাহর সাথে কথা বৃদ্ধি করা যায়!! প্রিয়র সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক থাকে এরকম-ই, তাঁর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে, তাঁকে ক্রমাগত পেতে ইচ্ছে করে, তাঁর সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে।
রাসূল(সা)বলেছেনঃ যে ব্যক্তির তিনটি জিনিসের স্বাদ আচ্ছাদন করতে পেরেছে সে ঈমানের পূর্ণ স্বাদ পেয়েছে।
১। আল্লাহকে রব হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট
২। ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট এবং
৩। মুহাম্মাদ(সা)কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট(মিশকাত, ঈমান অধ্যায়)
কিন্তু আমাদের ঈমানের পরিচয় এই হাদীসের আলোকে খুব কমই দেখা যায় যখন আমরা আল্লাহর সাথে সংযোগের সময়টাতে পৌছি, যখন সালাতের সময়টাইতে তারাহুরো করে সালাত আদায় করি...আমরা মুখে বলি আল্লাহকে, ইসলামকে খুবই ভালোবাসি কিন্তু যেই ঈমানের কর্মের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হবে সেখানে ঈমানের অংশ খুবই কম!!
তাহলে?...নিশ্চয় কোনো ঘাটতি আছে...
একজন প্রিয়তম তো তার প্রিয়র জন্য সর্বাপেক্ষা উন্মুখ থাকে ও সর্বদা স্মরণে রাখে। তাঁর দিকে মন সর্বদা নিমগ্ন থাকে। কিন্তু আমরা আল্লাহকে ভালোবাসা সত্বেও আমাদের সালাতে এ নিমগ্নতা আসে না কেন? অথচ ‘আল্লাহু আকবার’ বলার সাথে সাথেই তো এটি হওয়ার কথা ছিল। কারণ এটি বলার ক্ষণেই দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে কেবল আমাদের প্রিয়তমের নিকটেই যাই না বরং ঘোষণা দেই যে আমরা দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে “শ্রেষ্টতর” কারো নিকটে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরও কেন আমাদের মধ্যে এই অনুভূতি কাজ করে না? কেন সালাতে প্রশান্তি অনুভব করি না?
অথচ রাসূল (সা) সারা দিন কাজ করে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়ে ঠিকই রাতে আল্লাহর নিকট গিয়ে প্রশান্তি পেয়ে দিনের সমস্ত পেরেশানি ভুলে গিয়ে আবার সেই কষ্টদাতাদেরই জান্নাতের পথে আহবান করতেন(সূরা মুজাম্মিল এর ব্যাখ্যায় তারিক রামাদান)। তাঁর কাছে সালাত ছিল কষ্টকে বিমোচনকারী, আল্লাহর সাথে সংযোগের মাধ্যমে রিলিভ পাওয়া এবং আবার সেই নবুওয়াতী দায়িত্বকে পূর্ণ উদ্দ্যমে চালিয়ে যাওয়া। সেই একই সালাহ আমাদের কাছে কিছু নিয়মের দায়সাড়া দায়িত্ব পালনের মত হয়ে গেছে...এতে কোন তৃপ্তি নেই, মনে প্রশান্তি আসে না।
রাসুল (সা) যে কোন কষ্টের মধ্যে পতিত হলে দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন, আনন্দের সময়ও দু’রাকাত শুকরানা সালাত আদায় করতেন। এতেই ছিল তাঁর প্রশান্তি। তদ্রুপ সাহাবারাও (রা) তীরবিদ্ধ অবস্থায় সালাতের প্রশান্তিতে দাঁড়িয়ে যেতেন আর তীর খুলে ফেলা হত। তাদের কাছে এই একই সালাহ ছিল প্রশান্তির স্পন্দন, আল্লাহর সাথে জান্নাতের যেমন সর্বাপেক্ষা নেয়ামত, তদ্রুপ দুনিয়াতেও সেই একই রবের সাথে সংযোগে প্রশান্তি আসত।
সালাহউদ্দিন আইয়ূবী (র) বলতেন লোকেদের তাবুতে কেন আলো জ্বলে না? তারা এখনো জিহাদের জন্য প্রস্তুত নয়। যখন রাতের প্রহরে তাবুগুলোতে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখার সাথে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় দেখা গেল তখন সালাহউদ্দিন আইয়ূবী(র) বললেনঃ আজ তোমরা জিহাদের জন্য প্রস্তুত হয়েছো।(সূরা মুজাম্মিল-২০ দেখুন)
উমার(রা)কাউকে গভর্নর নিয়োগ দেওয়ার আগে দেখতেন তাঁর সালাহ ঠিক আছে কি না...সালাহ ঠিক থাকলে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হত অন্যথায় দেওয়া হতো না। তাদের কাছে সালাহ ছিল আল্লাহর সাথে ওয়াদার সর্বোচ্চ স্তর আর আমাদের কাছে সেটা যেন চাপিয়ে দেওয়া দায়িত্ব, কিছু নিয়মের সমষ্টি।
ওমর(রা)বলতেন যে ব্যক্তি সালাতকে হেফাযত করে, সঠিকভাবে আদায় করে সে দ্বীনকে হেফাযত করে। আর যে ব্যক্তি সালাতের হেফাযত করে না, সে কীভাবে দ্বীনকে হেফাযত করবে?
তারা সালাতকে দ্বীনের সমতুল্য মনে করতেন...কারণ?...সে তাওবা করে সালাতে(পথভ্রষ্ট ও গজবপ্রাপ্তদের থেকে-সূরা ফাতিহা), সে আল্লাহর তাওহীদকে প্রকাশ করে সালাতে(আল্লাহর এককত্ব সাক্ষী দিয়ে), আল্লাহর সাথে সর্বোচ্চ স্তরের এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে(সালাতের হেফাযত করে-সূরা বাকারাহ), এই কাজ যথা সময়ে করে(নির্দিষ্ট সময়ে সালাহ ফরজ), যথা নিয়মে করে(সুন্নাহ পদ্ধতিতে), সকল বাজে কাজ থেকে বিরত থাকে(সূরা আনকাবুত), আল্লাহর সাথে নিমগ্নতা থাকে(খুশু-সূরা বাকারাহ)।
তাহলে বুঝতেই পারছেন যার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক ভালো নয়, সালাত ঠিকমত আদায় করে না, দ্রুত আদায় করে, ঠিকমত সুন্নাহ অনুযায়ী করে না...সেই একই ব্যক্তি এই একই রবের ইবাদাহ ঠিকমত করে না সে আবার অন্যান্য ইবাদাহ বা ইসলামী কাজ কীভাবে ঠিকমত করবে?, দ্বীনকে হেফাযত করবে কীভাবে?!!
আর সে কারণেই সে সালাহ আদায় করে আবার ফেইসবুকে গালিও দেয়, ঝগড়াও করে, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে, অন্যদের মূল্যায়ন করতে জানে না, জাজমেন্টাল হয়, পিতামাতা-ভাইবোনদের সাথে মন্দ আচরণ করে ...সহজ কথায় যার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক ভালো নেই, তার সাথে সেই আল্লাহর অন্যান্য কাজ ও সৃষ্টির সাথে সম্পর্কে কীভাবে ভালো হবে? তাঁর দ্বীনের ভিত্তি সেই সালাতই ঠিক নেই, আল্লাহর সাথে সম্পর্কের সর্বোচ্চ ভিত্তিই ঠিক নেই, সে কীভাবে অন্যান্য কাজে আল্লাহর আদেশ উপলব্ধি করবে?
তারা সালাতে প্রশান্তি ও শক্তি দুটোই পেত। কিন্তু এগুলো আমাদের কাছে মিথ মনে হয়, মনে হয় কোন প্রাচীনকালের গল্প পড়ছি যা আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়। রাসূল (সা)এর সালাত দেখলে আমাদের কাছে তাঁকে অতিমানব মনে হয়, তাঁকে তখন আর মানব হিসেবে রাখি না...অথচ তাঁর সালাত ছিল মানবিক হিসেবে আল্লাহর ইবাদাহ পালন করা আর সেটাই সাধ্যের মধ্যে আমাদেরও সম্ভব, সেটাই আল্লাহ দিয়েছেন আর তারও বাস্তব প্রয়োগ দেখেছি সাহাবাদের(রা)মাঝে...অথচ সেই একই রবের সালাত, একই কোর’আনের তেলাওয়াত, একই নিয়ম কিন্তু আমাদের উপলব্ধি, অনুভূতি, আর প্রশান্তি সবই যেন ভিন্নমাত্রার; প্রাণহীন।
এখানেই আমাদের উপলব্ধির অভাব রয়েছে। তারা সালাতকে কেবল নিয়মের মধ্যে বেধে রাখত না। আযানের জবাব থেকে, অযু থেকে সালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এরুপ সকল কাজকেই ইবাদাহ মনে করত। তারা সালাতের শুরু থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটা জিনিসকে উপলব্ধি করত। এই ‘উপলব্ধি’টাই এখানে মূল। সালাতের মধ্যকার সবকিছুকে ‘উপলব্ধি’ করে যখন তা ‘বাস্তবায়ন’ করবেন তখনই সেই প্রশান্তির ছোঁয়া পাবেন, মনে হবে আমি নতুন করে আজকে সালাত আদায় করতে শুরু করেছি! আমরা দায়িত্বকে ‘ইবাদাহ’ হিসেবে না নিয়ে নিয়েছি কেবল কিছু নিয়ম পালন হিসেবে আর এখান থেকেই আমাদের বিপত্তি ঘটেছে। এ কারণে আমরা আল্লাহর সাথে সংযোগে প্রশান্তি না পেয়ে কষ্ট বা অন্য সময় অন্য কিছুতে প্রশান্তি খুঁজি(অথচ আল্লাহর চাইতে অন্যকে অধিক ভালোবাসা হল ভালোবাসায় শিরক-ইবনুল কাইয়্যুম(র))।
আমাদের সালাতে প্রশান্তি পেতে হলে অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু জিনিস বুঝতে হবে...যেরুপভাবে বুঝেছেন আল্লাহর রাসূল(সা), সাহাবারা(রা)ও সালফে সালেহীনগণ(র)। এগুলো সবই আল্লাহ নাযিল করেছেন, তাঁর ওহীর মধ্য দিয়েই এই প্রশান্তি, খুশু, ও প্রশান্তির ছোঁয়া নেওয়া সম্ভব।
হয়ত চমৎকারভাবেই লক্ষ্য করে থাকবেন আল্লাহ পূর্ণ কোর’আনকে ‘যিকির’ বলেছেন তদ্রুপ এই সালাতকেও ‘যিকির’ বলেছেন...অর্থাৎ আল্লাহর পূর্ণ বাণী কোর’আন আল্লাহর সাথে কথোপকথন আবার এর সাথে সালাতকে স্পেশাল গুরুত্ব দিয়ে নির্জনতার মাঝে একে আরো একধাপ এগিয়ে বিশেষভাবে ৫বার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আল্লাহ যখন একমাত্র ওহী পাঠিয়েছেন আর সেই ওহীর উদ্দেশ্য তাঁকে স্মরণ করার জন্য...এই সালাতেরও সেই একই আসনে রেখেছে...এবং এই কোরআনের মাধ্যমেই সালাতে স্মরণ করা হয়। এভাবে সালাতের মাধ্যমে প্রিয়র সাথে সর্বদা স্মরণে আনতে পারি, পেতে পারি প্রশান্তি।
আমাদের সালাতে এ প্রশান্তি না আসার অনেকগুলো কারণ রয়েছে।
সালাতের মাধ্যমে যদি আমাদের ভেতরে আল্লাহর স্মরণ ক্রমাগত বৃদ্ধি না পায়, তবে তাকওয়া(আল্লাহর সর্বদা উপস্থিতির প্রভাব)বা ইহসান(আমি আল্লাহকে দেখছি বা আল্লাহ আমাকে দেখছেন)তবে কোনটাই সম্ভব নয়...আর এগুলো না আসলে ঈমানের পূর্ণ স্বাদ বা সালাতের মাধ্যমে প্রশান্তি সম্ভব হবে না। সালাতের একটা উদ্দেশ্য সমস্ত বাজে কাজ থেকে বিরত রাখে। এজন্য সালাতের বাহিরে যত বেশি তাকওয়া ও ইহসান রাখতে পারবেন, সালাতের ভেতরেও ততবেশি প্রশান্তি পাবেন। ব্লগে বা ফেইসবুকে গালি দিবেন, কাউকে কটূ কথা বলবেন, ভিন্নমত পোষণ করলেই তাকে খোচা দিবেন, স্কলারদের নামে নিজের খেয়াল-খুশিমত অপবাদ দিবেন, গীবত করবেন, বাবা-মার সেবা করবেন না, রিক্সাওয়ালার সাথে বাজে ব্যবহার করবেন...আর সালাতে প্রশান্তি খুঁজবেন, খুশু পেতে চাইবেন সেটা কখনই সম্ভব নয়। আপনি সালাতের বাহিরে কতটুকু ভালো সেটাই আপনার সালাতের পূর্ণ প্রভাব রাখবে। তাই সালাতের বাহিরে কি করছেন সেটা প্রথমে ভালো করে খেয়াল রাখুন।
সালাতে আলস্য বা প্রদর্শন দুটোর কোনটাই মুমিনের বৈশিষ্ট বলা হয়নি...এদেরকে মুনাফিকের বা রিয়াকারীর(=শিরককারীর)বৈশিষ্ট বলা হয়েছে। অথচ এই মহা পাপের বিপরীতে একে মহা সাফল্য, এবং নিশ্চিত সাফল্য বলেছেন আল্লাহ(সূরা মুমিনুন)। তাঁর মানে আমাদের ঘাটতি রয়েছে এ মহা সাফল্যের ঈমানকে বুঝতে, সালাহর উপলব্ধিতে।
সালাতের অনেক নিয়ম-কানুন পড়েছি কিন্তু উপলব্ধি করিনি, অর্থকে প্রাসংগিকভাবে বুঝতে চেষ্টা করিনি এবং এগুলোকে জানার থিওরির মধ্যেই রেখে দিয়েছি। অথচ এটা ছিল প্রশান্তির একটা শ্রেষ্ট মাধ্যম।
এ সমস্যার একটি কারণ হতে পারে আমাদের আলেম-উলামারা সালাতের অন্তর্নিহিত অর্থের গভীরতার চেয়ে নিয়মের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন আর এভাবে ইসলামী ইবাদাত সালাতের মূল অর্থটাই যেন হারিয়ে গেছে।
এখানে আরেকটা দিক মনে রাখা উচিত... আল্লাহর রাসূল (সা) ঠিক যেভাবে, যে নিয়মে সালাত আদায় করেছেন, সেখানে যদি একটুও ভিন্নতা আসে তবে সাওয়াব এবং প্রশান্তি দুটোতেই ঘাটতি থাকবেই। রাসুল (সা) যেমন আল্লাহর দেওয়া নিয়ম অনুসরণ করতেন, তেমনি উপলব্ধির মাধ্যমে সেগুলোকে ঠিক সেভাবেই পালন করে প্রশান্তি পেতেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য সালাতকে ফরজ করে দিয়েছে, কোর’আন দিয়েছেন, ওহী দিয়েছেন এবং রাসূল(সা)এর মাধ্যমে বাস্তবিকভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে সালাতে প্রশান্তি পেতে হবে, কীভাবে সালাতে খুশু আনতে হবে। গাইডেন্স ম্যানুয়াল রয়েছে কিন্তু আমরা প্রশান্তি পাই না কারণ আমরা ঠিক ঐভাবে উপলব্ধি করিনি, জানতে পারিনি, বুঝতে পারিনি। তাহলে আল্লাহর দেওয়া বিধানগুলো তাঁর নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে না করে অন্য নিয়মে করলে অবশ্যই তাঁর ইবাদাত গ্রহণ ও প্রশান্তি দুটো হারাতে হবে।
সালাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা যদি রাসূল (সা) এর দেখানো সুন্নাহ(পথ) অনুযায়ী উপলব্ধির মাধ্যমে করতে পারি, তবেই প্রশান্তি পাবো ইন শাআ আল্লাহ। রাসূল(সা) যে পদ্ধতিতে পড়ে প্রশান্তি অনুভব করতেন এবং সাহাবারা(রা) যেভাবে করে প্রশান্তি অনুভব করেছেন।
আমরা যখন অযুকে আল্লাহর রাসূল সা এর ঠিক সুন্নাহ অনুযায়ী করতে পারব, সালাতের রুকু-সিজদা রাসূল(সা)যেভাবে, যতটুকু সময় নিয়ে করেছেন, সেভাবে চেষ্টা করতে থাকব ধীরে ধীরে, যেসব দুয়া পড়েছেন সেগুলোর সালাতের ভেতরে প্রাসঙ্গিক অর্থকে উপলব্ধি করতে পারব, সালাতের ভেতরে কত জায়গায় দুয়া করেছেন, এভাবে প্রত্যেকটি জিনিসকেই সুন্নাহ থেকে পড়ে বুঝে, উপলব্ধি করে, সালাতের বই থেকে সালাতের প্রত্যেকটা অংশ, প্রত্যেকটা দিক, একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাসূল(সা)যেভাবে করেছেন, যতটুকু স্থিরতা অবলমম্বন করতেন, যেভাবে তিলাওয়াত করতে, যতটুকু সময় রুকু সিজদায় অবস্থান করতেন, ঠিক সেভাবে যদি সালাতে প্রয়োগ করতে পারি, করতে চেষ্টা করি তখন থেকে আমাদের প্রশান্তির যাত্রা শুরু হবে।
ওয়াল্লাহি, সালাতে প্রশান্তি সম্ভব, হ্যা, সম্ভব, এটাকে কেবল দায়িত্ব নয়, কিছু নিয়ম নয়, জান্নাতে যেই রবের সাথে সাক্ষাতে পূর্ণ তৃপ্তির আশা রাখেন, যেই নেয়ামতের পর অন্যসব কিছুকে আপনার কাছে খুবই, খুবই নগন্য মনে হবে, সেই একই রবের, সর্বোচ্চ প্রিয়র সাথে দুনিয়ার সংযোগে(সালাহ)কি প্রশান্তি আসার কথা নয়? অবশ্যই আসার কথা। তাহলে আমাদের কিছুটা পূনরুপলব্ধির জন্য বসতে হবে...আমাদের বুঝতে হবে সালাহ খাশেয়িনদের জন্য কঠিন নয়(সূরা বাকারাহ), এটা মুমিনদের জন্য সফলতার চূড়ান্ত দ্বার(সূরা মুমিনুন), এর একাকীত্বের সময়ে আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তির উত্তম সময়...কিন্তু এখানেই মনে রাখতে হবে এজন্য খুশু এবং পূর্ণ মুমিন হওয়ার শর্ত রাখতে হবে...এবং এ খুশু পাওয়া যাবে সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সংযোগের মাধ্যমে এবং এ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তবিক জীবনের প্রয়োগে।
বিশেষত সালাতের ভেতরে যা কিছুই করেন, লিটারালি “যা কিছুই করেন” এর সকল অর্থের উপলব্ধি আপনার সালাতের “প্রাণ”। এটা ছাড়া সালাতের প্রশান্তি অসম্ভব। অযু মানে কী?, সালাত অর্থ কী?, ইকামাহ অর্থ কী?, রুকু অর্থ কী?, সিজদা অর্থ কী?, এসবগুলোর তাৎপর্য, গভীরতা, অন্তঃস্থিত অর্থ কী—এসই জানতে হবে, সবই, এবং গভীরভাবে; সালাতের সাথে এগুলোর সম্পর্ক কীভাবে সেটাও জানতে হবে। আর সালাতের মাঝে যা তিলাওয়াত করেন সেটাও জানতে হবে অর্থসহকারে। সালাতে তিলাওয়াতের অর্থকে জানা এতটাই গুরুত্ব দিতেন ডা. এসরার আহমাদ যে, তিনি পবিত্র রামাদান মাসে প্রত্যেক দু’রাকাত সালাত আদায়ের আগে যে আয়াত তিলাওয়াত করা হবে তা সংক্ষিপ্তাকারে তাফসীরসহ আলোচনা করতেন। এ যেন আল্লাহর বাণী “সালাত আদায় কর আমাকে স্মরণ করার জন্য” এর পূর্ণ প্রতিফলনের জন্য প্রচেষ্টা।
কারো সালাতের দিকে তাকান, তাঁর ঈমানের গভীরতা বুঝতে পারবেন। কারণ আল্লাহ সালাতকে ঈমানের পরিবর্তে ব্যবহার করেছেন(সূরা বাকারাহ)। যার সালাতে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ভালো নেই, তাঁর জীবনটাই আল্লাহর সাথে কখনই গভীরভাবে নেই;তাঁর চিন্তা, আখলাক-ব্যবহার, ইবাদাহ সবই। কারণ যে আল্লাহর সাথে গভীরভাবে থাকতে পছন্দ করে না সে একই আল্লাহর দেওয়া অন্যান্ন ইবাদাতে কীভাবে ভালো করবে?
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের পর্যায়ে আমরা অনেককেই দেখি তাদের প্রিয় লোকদের সম্পর্কে অনেক ভালো জানেন, নিজ সংগঠনের উপরের লেভেলের র্যাংকিং এ থাকেন, অনেকেই প্রচূর বুদ্ধিবৃত্তিক স্ট্যাটাস দেন ফেইসবুকে, ব্লগে বা সাইটে কিন্তু তাদের যখন তাদের রবের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিগুলো, সালাতের মত নির্দিষ্ট ইবাদাহ, এত বড় ইবাদাহ যে আল্লাহ রাসূল(সা) আরশে আ’জীমের নিকটে নিয়ে গেলেন, খিলাফাতের দায়িত্বের সাথে, আল্লাহর সাথে এ সংযোগ এতই গুরুত্বপূর্ণ দিলেন কিন্তু অনেক বড় র্যাংকিং এ থাকলেও তাদের সালাতের ভিত্তি নড়বড়ে।
এই সালাতের মাধ্যমে এতটূকুন চোখের পানি আপনার জন্য জাহান্নামকে হারাম করতে পারে। কিন্তু আমাদের উঠবসে কাকের ঠোকরের মত সালাতে সেটা আসা অসম্ভব। কারণ আমরা যা তিলাওয়াত করি তার অর্থও ভাল করে জানি না...অথচ সালাতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সাথে কথোপকথন করি...তাহলে আমরা যদি তাঁর কথাই না বুঝি তবে কথোপকথন হবে কীভাবে? ভাষাই যদি না উপলব্ধি করি তবে তার স্বাদ, রস, আনন্দ কীভাবে পাবো?
আপনি চাইনিজ ভাষা জানেন না, ইতালিয়ান ভাষা বুঝেন না, তাহলে এই চাইনিজ বা ইতালিয়ান ভাষায় যদি আপনার সাথে কেউ কথা বলে আপনার কি অনুভূত হবে এর অন্তর্নিহিত অর্থ? না, বরং ১৫-২৫ সেকেন্ড পরেই বিরক্তির আসবে। তেমনি আমাদের সালাতে যদি আল্লাহর দেওয়া প্রত্যেকটা কাজ, প্রত্যকেটা দিক, প্রতিটি ভাষা, মাধ্যম ইত্যাদি না বুঝি তবে উপলব্ধি, প্রশান্তি এগুলো তো দূরের কথা বরং বিরক্তি আসাই তো স্বাভাবিক!! আজকের সালাত আমাদের নিকট একরকম বিরক্তিভরা নিয়ম বা দায়িত্ব হয়ে গেছে অথচ এর আনন্দ আমাদের কাছে অর্থহীন আর এভাবে আমাদের সালাতের পূর্ণ প্রশান্তি ও পূর্ণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
সালাতে যখন আপনি সর্বোচ নিম্নে যাবেন, সিজদাতে, এই নিম্নে যাওয়াটাই আল্লাহ তাঁর বান্দার নিকট থেকে এতই পছন্দ করেন যে আয়েশা(রা)রাসূল (সা)এর সিজদার দীর্ঘতাকে মনে করতে যেন তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
আপনি যখন সিজদাতে যাবেন, আপনার সমস্ত কিছুকে আল্লাহর কাছে সমর্পন করবেন, আপনার জমিনে যাওয়া, দুনিয়ার সর্বনিম্নে অবস্থান আল্লাহর কাছে, সেই মালিকের কাছে, বান্দার এই অবস্থান এতটাই উৎফুল্ল করে যে তিনি তাঁর বান্দার সর্বনিম্নের অবস্থানকে আল্লাহর অধিক নৈকট্য, কাছের ও প্রিয় হিসেবে নেন। আপনার মাঝে যখন এ অনুভূতি আসবে তখন আপনি সালাতে সিজদাতে অধিক সময় দিবেন, আপনার প্রিয়র সাথে এই একান্ত সময়ে অধিক সময় দিবেন যেরুপ রাসূল(সা) দিতেন যেন মৃত্যুবরণ করেছেন এরকম অধিক সময় ধরে।
রাসূল(সা)আল্লাহর সাথে কথা বলতে এতই প্রশান্তি অনুভব করতেন যে সূরা বাকারাহ, সূরা আলে ইমরান ও সূরা নিসার মত বড় বড় তিনটি সূরা একই রাকাতে পড়তেন!
এটা প্রশান্তির স্তর। আপনার যাকে বেশি ভালো লাগে তার সাথে বেশি সময় কাটাতে ইচ্ছে করবে, আপনি সব সময় ব্যাকুল থাকবেন তাকে কাছে পাওয়ার জন্য, তার কাছে যাওয়ার জন্য, তার সাথে একাকী নির্জনতায় কিছু শ্রেষ্ট মুহুর্ত কাটানোর জন্য...কারণ এতে আপনি প্রশান্তি অনুভব করে, এতে আপনার চোখে প্রশান্তির পরশ নেমে আসে...আল্লাহও আমাদের জন্য সর্বোচ্চ প্রশান্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কেবল দরকার আমাদের উপলব্ধি, কিছুটা প্রচেষ্টা আর বাস্তব প্রয়োগ।
এ প্রশান্তি অর্জনে কিছু রিসোর্স আপনাকে সাহায্য করবে
What if My Salah was Rejected - Sheikh Tawfique Chowdhury
https://www.youtube.com/watch?v=zETgy2ipQjI
সালাত আদায়ের হুকুম
https://www.facebook.com/video.php?v=1532653483647545
Salah is the Foundation - Shaykh Abdul Nasir Jangda
https://www.youtube.com/watch?v=3hAtekOiI00
সালাত- (১ম পর্ব): আমাদের জীবনের অবহেলিত অধ্যায়- নামাজ ( Salah : Life’s Forgotten Purpose - Ustadha Yasmin Mogahed)
http://tinyurl.com/ndnv52r
সালাত(২য় পর্ব) : ১০ মিনিটে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়লোক হওয়ার সহজতম উপায়
http://tinyurl.com/q9fes9n
সালাত(৩য় পর্ব) : উমার (রা) এর জীবনের শেষ দিন
http://tinyurl.com/pgncobr
Importance of Salah- Shaykh Abdul Nasir Jangda and Ustadh Nouman Ali Khan
https://www.youtube.com/watch?v=T-toAP4tAWo
Nouman Ali Khan - The Characteristics of Believers
https://www.youtube.com/watch?v=ANb13kFo4iI
Salah in Focus- Shaykh Abdun Nasir Jangda
https://www.youtube.com/watch?v=SBA0nmxwRMQ
(Transcript - http://muslimmatters.org/2012/01/20/abdul-nasir-jangda-salah-in-focus/ )
Salah - A Personality Changer - Ustadh Nouman Ali Khan
https://www.youtube.com/watch?v=qwKgStouog0
Practical Steps to Develop Khushoo in Salah Meaningful Prayer – Shaykh Abdun Nasir Jangda
https://www.youtube.com/watch?v=SrmVGUQr_Ws
Rukuu - Shaykh Abdul Nasir Jangda
https://www.youtube.com/watch?v=0i8qulKnI2c&index=7&list=PL91iZnz-I1ZDZG8BG4mZzCPTKmyQk-ZhP&spfreload=10
The Secret of Prayer: Sujood- Jinan Yousef
http://www.virtualmosque.com/personaldvlpt/worship-personaldvlpt/prayer/the-secret-of-prayer-sujood/
The Meaning of the Tashahhud Preview of Meaningful Prayer from Bayyinah - AbdulNasir Jangda
https://www.youtube.com/watch?v=IevbR3-SnSk&list=PLFvS1Fm3-5ik1BQhm9zZ7l_SvukGUwfBy
Salah Coolness of the Eyes - Shaykh Abdul Nasir Jangda 2
https://www.youtube.com/watch?v=8WRq4yYdLhs
The Prayer! The Prayer! The Prayer! Mokhtar Maghraoui
http://www.youtube.com/watch?v=0efbrGqO1Os
The Importance of Salah - Nouman Ali Khan
https://www.youtube.com/watch?v=PF2-GMLvo1Q
সালাতে খুশু - একটি সহজ ও কার্যকরী নসীহা
https://www.facebook.com/NAKBangla/posts/1490277124560242
Turn to Allah in Prayer – Dr. Sheikh Taqfique Chowdhury
https://www.youtube.com/watch?v=Sx-u8sq0bUE
Your conversation with Allah, The Prayer - Sheikh Sajid Umar & Sheikh Tawfique Chowdhury
https://www.youtube.com/watch?v=DSR_gyJVQ_E
Literary Gems of Prayer – Shaykh Abdun Nasir Jangda http://www.youtube.com/watch?v=1MQ2tZyp0FI
Meaningful Prayer: Linguistic Beauty of Salah - Shaykh Abdul Nasir Jangda
https://www.youtube.com/watch?v=m9QxTDTCTXw
Our Salah is Full and Full Meaningful! – Ustadh Nouman Ali Khan
https://yassarnalquran.wordpress.com/2012/07/23/our-salah-is-full-and-full-meaningful/
https://yassarnalquran.wordpress.com/2012/07/25/meaningful-salah-part-2/
(Or Pdf) https://yassarnalquran.files.wordpress.com/2012/07/meaningful-salah.pdf
কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়(সিরিজ অনুবাদ)
http://tinyurl.com/phs92j2
Blessings of Salaah - Mufti Ismail ibn Musa Menk
https://www.youtube.com/watch?v=9g9zZ_QR0ZY
Sweetness in Prayer (Salah) - Moutasem Al-Hameedi
https://www.youtube.com/watch?v=O724d95udWg
Salah Is Not A Responsibility - Sheikh Yawar Baig
https://www.youtube.com/watch?v=fVn2eiJlLhk
রাসূল(সা)যেভাবে অযুর ইবাদাহটি করতেন- শাইখ মুরাবিত আল-হাজ্জ্ব এর ইসনাদসূত্রে বর্ণিত
https://www.youtube.com/watch?v=9wXD_hLE92w
আরো কিছু প্রয়োজনীয় রিসোর্স
"Meaningful Prayer" By Shaykh Abdun Nasir Jangda
http://www.youtube.com/watch?v=lR4dnWh2AgA&list=PLE55A0135EEC30F58
How to Gain Tranquility in Your Prayer Series (Part 1) productive muslims
http://productivemuslim.com/how-to-gain-tranquility-in-your-prayer-series-part-1/
Rediscovering Salat (Prayer) w/ Sheikh Rizwan Arastu series
https://www.youtube.com/watch?v=7sqcFQZ_YNo&list=PLD3F35421353F36A5&index=3&spfreload=10
Khushoo in Salah by Yaser Birjas
http://www.halaltube.com/yaser-birjas-khushoo-in-salah
Salah: The Complete Tarbiyah & Tazkiyah Yawar Baig
https://www.youtube.com/watch?v=bR4O5rBhd0A
ফিকহুস সালাত
1. আল্লাহর রাসূল(সা)কীভাবে নামায পড়তেন –আল্লামা হাফিয ইবনুল কায়্যিম(র)(আবদুস শহীদ নাসিম অনুদিত)
http://icsbook.shibir.info/allahr_rasul_sm_kivabe_namaz_porten.pdf
2. সালাত সম্পাদনের পদ্ধতি – মুহাদ্দিস আলবানী(র)( অনুবাদ ও সম্পাদনা: আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালাম এবং আবূ রাশাদ আজমাল বিন আবদুন নূর)
http://www.quraneralo.com/how-to-pray-namaz/
3. "The Prophet's Prayer" by Dr Muhammad Salah
https://www.youtube.com/watch?v=EogdUdraapg
কিছুদিন পরেই ধীরে ধীরে হয়ত আবার এই প্রশান্তির শক্তি হারাতে থাকবেন, এগুলো দেখতে থাকুন, শুনতে থাকুন। আর ভালো হয় এই রিসোর্সগুলো দেখার সাথে সাথে করণীয়গুলো নোট আকারে রেখে দেওয়া।
রাসূল(সা)দোয়া করে বলতেনঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট অনুপকারী জ্ঞান থেকে মুক্তি চাই, এমন হৃদয় থেকে মুক্তি চাই যে হৃদয়ে খুশু নেই, এমন মন্দ চাহিদা থেকে পানাহ চাই যা সন্তুষ্ট হবার নয় এবং এমন দোয়া থেকে যা কবুল হয় না।
/
ঘুরে আসতে পারেন আমার পার্সোনাল ব্লগে...
http://alsabanow.blogspot.com/
বিষয়: বিবিধ
২০৩৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন