মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

লিখেছেন লিখেছেন আবরারুল হক ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:৪৫:১৪ রাত

আপনি জানেন কি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি ছিল?

আমাদের জ্ঞানপাপীদের সর্টকাট উত্তর, “ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ”।

“মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ” এইটা কিভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে আজাইরা কথা তাই আপনাদের আজ প্রমাণ করে দেখাব।

মার্চ, ২০১৩ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্যমতে বর্তমানে দেশে শিক্ষার হার ৫৩.৭ শতাংশ। বর্তমান “ডিজিটাল” সময়ে, যখন দেশের একটি বড় সংখ্যক মানুষ ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে প্রতিমূহুর্তের আপডেট জানতে পারছে, ঠিক ঐ সময়ে আমি যদি বাংলাদেশের ১৫ কোটি ৩০ লক্ষ জনগণকে(তথ্যসূত্রঃ জাতীয় অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৩) প্রশ্ন করি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কি, বলুন তো কতভাগ মানুষ বলতে পারবে? কতভাগ মানুষ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের উপরে ২ মিনিট কথা বলতে পারবে?

গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, ১ শতাংশ মানুষও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কি, তার সঠিক উত্তর দিতে পারবেনা।

চলুন ফিরে যাই ৪২ বছর আগে। ১৯৭৪ সালের আদমশুমারী মতে তখন দেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৭ কোটি। তখন দেশের শিক্ষার হার ছিল খুবই কম। দেশে গণমাধ্যম বলতে জনপ্রিয় ছিল রেডিও।

দেশের ৭ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ১ কোটি মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহন করে। এছাড়া রাজাকার বাহিনী, শান্তি বাহিনী, আল বদর বাহিনী সহ অন্যান্য পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্যকারী বাহিনীসমুহের মোট সদস্য ছিল ১ লাখের কাছাকাছি। এর বাহিরে দেশের প্রায় ৫ কোটি ৯০ লাখ মানুষের সবাই কোন না কোন মতে মুক্তিযোদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, যদিও সরাসরি মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ১৫ লাখের মত (তথ্যসূত্রঃ মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট)। তবে দেশের সকলেই দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজ নিজ স্থান থেকে দেশের জন্য কাজ করেছেন। এর মধ্যে ৩০ লাখ মানুষ প্রান দিয়েছেন পাকিস্তানিদের হামলায় (যদিও সংখ্যাটা আমি এক মূহুর্তের জন্যও বিশ্বাস করিনা)।

এখন দাবি করা হচ্ছে এইসব মানুষ সকলেই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছে। কোন বিষয়কে যদি আত্মত্যাগের জন্য চেতনা হিসেবে নিতে হয়, তাহলে বিষয়টাকে অন্তর থেকে অনুভব করতে হবে, তার প্রতি অন্তত এতটুকু আবেগ কাজ করতে হবে, যা তাকে আত্মত্যাগ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। অন্যথায় কোন ভাবেই ব্যক্তি ঐ বিষয়ের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন বলে দাবি করা যাবেনা।

এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, ১৯৭১ সালের ঐ সময়ে যখন দেশের ৭০ ভাগ মানুষই ছিল স্বাক্ষরজ্ঞানহীন, যখন রেডিও ছাড়া কোন উল্লেখযোগ্য গণমাধ্যম ছিলনা, যখন মানুষের সচেতনতার স্তরটাও উন্নত ছিলনা, এবং সচেতন থাকার মত সুযোগও ছিলনা, তখন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের মত জটিল একটা মতবাদকে কিভাবে এত মানুষ, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন গ্রামাঞ্চলের, নিজের জীবন দানের মত অনূভব করতে পারলেন? অনেক চেষ্টা করেও আমি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাইনি।

তাহলে দেশের মানুষ কিসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটা পরাধীন দেশকে একেবারে স্বাধীন করে ফেলল? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, পাকিস্তানিদের সর্বক্ষেত্রে অন্যায় বিভেদ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, তাদের শোষন ও সর্বোপরি বাংলাদেশ নামক একটি দেশের জন্য মানুষের মনে যে আবেগ সৃষ্টি হয়েছিল, তাই মানুষকে এত বড় আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছিল, কোন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নামক গাঁজাখুরি মতবাদ নয়।

বিষয়: বিবিধ

৯৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File