আজ কেন বিডিআর ভাইয়ের এই পরনতি? কেন শহীদ না হয়ে হলো নিহত?
লিখেছেন লিখেছেন হৃদয় আমার তলোয়ার ২৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:৪৬:৩৯ রাত
এই ছবিটা দেখার পর মনের অজান্তেই হৃদয়টা কেঁদে উঠল, শুধু বার বার মনে পড়তে লাগলো সেই বড়ইবাড়ি আমাদের প্রানপ্রিয় বিডিআর ভাইদের বীরত্বের কথা।যাদের ত্যাগের বিনিময়ে ২০০১ সালে ১৫ এপ্রিলে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বি এস এফ আয়ত্বে দীর্ঘ দিন ধরে থাকা সেই পদুয়া এলাকাটা উদ্ধার হয়েছিল।
২০০১ সালের ১৫ ই এপ্রিল আমাদের বিডিআর বিনা রক্তপাতে পাদুয়া দখল করে নেয়। পরবর্তীতে বিএসএফ এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ১৮ই রাতে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বড়ইবাড়ীতে বিডিআর চৌকি আক্রমণ করে। সাথে সাথে আমাদের বিডিআর জওয়ানরা পাল্টা আক্রমণ করে ফলে সেখানে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় যেখানে ৩০০ বিএসএফ সৈন্যের মধ্যে ১৩৭ জনই নিহত হয় এবং অপরদিকে আমাদের মাত্র ৩ জন বিডিআর জওয়ান শহীদ হয়। বিএসএফ চরম অপমানের সহিত পিছু হটে আর তখন থেকেই বিএসএফ বিডিআরকে বাঘের মতো ভয় পেত। যদিও পত্রিকায় ভাষায় মাত্র ১৬ জন বিএসএফ নিহত হয়েছিল বলে প্রচার করেছে কিন্তু উল্লেখিত সংখ্যাই হলো বাস্তব।
তখন আমি ছোট ছিলাম কিন্তু যে কোনো মারপিট বা রাজনৈতিক ঘটনাবলির প্রতি আকর্ষনটা বেশি ছিল. আমার এখনো মনে আছে, তখন ইনকিলাব পত্রিকায় খুব বড় করে হেটলাইন দিয়ে বিডিআর বীরত্বপূর্ণ কথা গুলো বিস্তারিত তুলে ধরেছিল। তখন আমি সেই নিউজটা বার বার পড়তাম এবং সেই বীরদের ছবিগুলো সামনে রেখে স্যালুট দিতাম। তখন থেকে বিডিআরকে আমি অতিসম্মানের সহিত দেখতাম। তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সম্মানটা ছিল অন্যরকম। তাদের আর একটা পরিচয় ছিল ধর্মভীরু। কিন্তু আজ কালের বিবর্তনে বিডিআর হয়ে গেল বিজিবি, আর এই বিজিবি হয়ে গেল ভারতের দালালদের পা চাটা গোলাম। বিদেশীদের হাতে দেশের জন্য যে একজন সৈনিক নিহত হলে সারা দেশ শোকে কাতর হত, কিন্তু আজ, আজ, আজ,......... সেই সৈনিকের লাশের প্রতি মানুষে থু থু নিক্ষেপ করে।যে লাশ কে সম্মান করার কথা আজ সেই লাশ দেশপ্রেমিক জনগনের জন্য হয়ে গেল এক অসম্মানের পাত্র এবং যে নিহত উপাধি না পেয়ে শহীদ উপাধি পেত কিন্তু তাকে নিহত বলতে মানুষ দ্বিধাবোধ করতেছে।এমন কি অনেকে বলেছে "আজকে এক বিজিবি জাহান্নামে গেছে". কিন্তু কেন এমন হলো? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন? হ্যা খুঁজে পাওয়া যাবে, তবে সেই উত্তরটি হবে আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আজ পরাশক্তি রাষ্ট্র দিন দিন বেড়েই চলছে। সেই পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোর সাথে ঠিকে থাকার জন্য অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্র গুলো প্রতিরক্ষা ব্যবস্তা মজবুত করার জন্য সৈনিকদের সমর শক্তি বাড়াইতেছে আর আমাদের বাংলাদেশে ঠিক তার উল্টো। তারা বিরোধী দল দমন করার জন্য এইসব দেশপ্রেমিক বাহিনীদের কে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরী করেছে। আজ এইসব দেশপ্রেমিক বাহিনী গুলোকে জনগনের বিরোদ্ধে ব্যবহার করার কারণে আজ জনগণ ও সৈনিকরা মুখামুখি। অতচ যেখানে জনগণ ও সৈনিকরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাহিরের আগ্রাসন প্রতিরোধ করার কথা আজ সেখানে তারা হয়ে গেল একে অপরের দুশমন। আর আমাদের এই অবস্থা দেখে সেই ভারতের আগ্রাসন কুত্তারা কতই না আনন্দ করতেছে।
দেশের সাধারণ জনগণ এই বিজিবি, পুলিশ, র্যবের প্রতি এমনভাবে ক্ষেপা দেখলে মনে হয় যেন অন্য দেশের হানাদার বাহিনী আমাদের দেশের ভিতরে ঢুকে লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালাইতেছে তাই তারা এদের উপর চরম ভাবে ক্ষেপা। আমরা প্রবাস জীবনে থেকেও যেন শান্তি নাই।আজ প্রতিটি বাংলাদেশী যাকে পাই সবারই একটি জিজ্ঞাসা, আজকে "কুত্তা কয়জন মারা গেছে"? এদের ভাষায় কুত্তা হলো, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আওয়ামীলীগ। আজকে একজন ভদ্র লোক ব্যবসায়ী ওনার বাসায় ঢেকে নিয়ে গেল, সেখানে আরো লোকজন জমায়েত হইয়েছে। সবাই বাংলাদেশের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। আজকে বিজিবি ও পুলিশের একজন করে নিহত হবার খবরটা শুনে সবাই গুড গুড বলে হাসতে লাগলো। তারা বলল এরকম মারতে হবে।তখন মনে মনে প্রশ্ন জাগলো, হয়রে বাংলাদেশ, যেখানে একজন সৈনিকের মৃত্যুর খবর শুনে চিন্তিত হবার কথা সেখানে সবাই খুশি হয়েছে। একমাত্র এই হাসিনা সরকার সুকোশলে এই বিডিআর দেরকে বিজিবিতে রুপান্তরিত করে জনগনের মুখামুখি দাড় করিয়ে সেই বড়ইবাড়ীর বিএসএফ হত্যার প্রতিশোধ নিচ্ছে। সেই বড়ইবাড়ীর ঘটনার পর হাসিনা উল্টো ভারতের কাছে ক্ষমা চেয়েছিল। বড়াইবাড়ীতে রাতের আধারে সীমান্ত অতিক্রম করে শত শত ভারতীয় সৈন্যের বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ, বিডিআর সৈন্যদের হত্যা, বাংলাদেশের গ্রাম লুট ও জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনায় যখন সারাদেশে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার দাবি উঠেছে ঠিক তখনই তৎকালীন সরকার প্রধান ২২ এপ্রিল দিবাগত রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সাথে আধাঘণ্টাব্যাপী এক টেলিফোন সংলাপে বসেন এবং এই সময়ে ৩ বার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিডিআরের ভূমিকায় (বীরত্বের জন্য) দুঃখ প্রকাশ করেন। এদিকে নিজ দেশে বাজপেয়ী সরকারের মুখ রক্ষা করতে বাংলাদেশের সরকার প্রধান দুঃখ প্রকাশ করলে ভারতীয় পক্ষ থেকে তাদের দেশে শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে এ ঘটনায় দায়ভার এককভাবে বিডিআর প্রধানের উপর চাপিয়ে দেয়।
পরিশেষে আমি বিডিআর, পুলিশ ও র্যব প্রতি বিনীতভাবে অনুরোধ করব, আপনারা দয়া করে এই সরকারে অবৈধ, অন্যায় নির্দেশ পালন না করে জনগনের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুন, এবং আপনারা সরকারকে বাধ্য করুন বিরোধীদল সহ অন্যান্য দলের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য।
বিষয়: বিবিধ
১৬৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন