ধন্যবাদ দিবস (Thanksgiving day)
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১০ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:৩৮:৪৬ রাত
মাঝে মাঝে কো- ইনসিডেনস ঘটে।
এই সপ্তাহ হঠাৎ করেই ক্যানাডায় কয়েক সভ্যতার বা ধর্মের সদস্যদের কাছে একসাথে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে! ইউরোপিয়ান বংশোদ্ভূত তথা সংখ্যাগরিষ্ট কানাডিয়ানদের কাছে আজ ‘থ্যাংকসগিভিঙ ডে বা ধন্যবাদ দিবস; - ইহুদীদের কাছে ঈওম কিপ্পূর আর সনাতনধর্মীদের দুর্গতিনাশের দুর্গাপুজা; আর মুসলিমদের কাছে আশুরা -১০ মহররম, আরবি প্রথম মাসের ১০ তারিখ- । না, কারবালার সেই বিয়োগ ব্যথা বা শিয়াদের কাছে হায় হুসেন এর মাতম শুধু নয়, ইহুদীদের ঈওম কিপ্পূর – বা SABBATH OF THE SABBATHS, পাপ মুক্তি দিবস- অন্য দিন ইহুদীরা তিনবার প্রার্থনা করে কিন্তু এডীণ করবে পাঁচ বার, এদিনে তারা ফেরাঊনের ‘জোয়াল থেকে উদ্ধার পেয়েছিল, আল্লাহ্র ইচ্ছায় সমুদ্র দুভাগ হয়ে ইহুদীরা মুক্তি পেয়েছিল, মূসা (আ এর তূর পাহাড়ের ১০ কমান্ডমেমেন্ট প্রাপ্তি আর নূহ (আঃ)এর বন্যা থেকে নাজাত পেয়ে ডাঙ্গায় প্রত্যাবর্তন, ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে উদ্ধার - এ ঘটণা গুলোও আশুরার দিনেই ঘটেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখ আছে। এর সবগুলো ঘটনাই মাণব প্রজন্মের জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপলক্ষ!
শুনতে নেহায়েত সেকুলার শুনালেও এই ‘ধন্যবাদ দিবস’ এর স্মৃতি অতি প্রাচীন এবং তার শেকড়ও ধর্মের ভেতরে গাঁথা! এক কথায় ‘শরতে ফসল তোলা হয়ে গেলে- একটা উৎসবের মাধ্যমে ‘ফসলদাতা- সৃষ্টিকর্তাকে ধ্যনবাদ দিতে – এই বিশেষ দিবসের আয়োজন। কানাডায় অক্টোবরের ২য় সোমবার, ইউ এস এ তে নভেম্বরের ৪র্থ বৃহস্পতিবার এটা পালিত হয়! আজ সেই ছুটির দিন।
এর মূল যদিও ইউরোপে, কিন্তু ইউরোপে ফসল তোলা (Harvest) এসময়ের বেশ আগেই হয়ে যায়। ঐতিহাসিক ভাবে, ব্রিটিশ প্রটেস্টাণ্ট রিফরমেশন এর সময় থেকেই এমন ধন্যবাদ দিবসের প্রচলন চালু হয়েছে!
১৫৩৬ এর চার্চ পুনর্গঠন (Reformation) এর আগে, ‘চার্চ হলিডে’ ছিল ৯৫ দিন, এর সাথে ৫২ টা রবিবার যোগ করা হলে, বছরে কর্মদিবসের অবস্থা সহজেই অনুমেয়! তখনকার দিনে মানুষ ‘ধর্মভীরু ছিল এটা বুঝা যায়! তবে রাষ্ট্রের জন্য বা শিল্প বা বানিজ্য বা ব্যবসায়ীদের জন্য খুব লাভজনক ছিল না! কাজেই ১৫৩৬ এ পূনঃগঠন করে, চার্চ হলিডে ২৭ দিন করা হয়, পিউরিতানিস্টরা একে ‘শুন্য’ করতে চাইলেও সফল হয় নি! তবে ঐ সকল ‘হারানো দিবসের বদলা হিসেবে এমন বিশেষ একদিন ‘ধন্যবাদ দিবস উদযাপন করা হয়েছে বলেও একটা সূত্র উল্লেখ করেছে! কিন্তু পরবর্তীতে দুর্যোগ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় মানুষ সৃষ্টিকর্তার ‘স্পেশাল অনুকম্পা প্রার্থনা করতে গিয়ে – ‘স্পেশাল ডেজ অভ ফাস্টিঙ বা স্পেশাল ডেজ অভ থ্যাঙ্কসগিভিং’ এর ধারনাকে নিজেদের জীবন যাত্রার সাথে অঙ্গিভূত করে নিয়েছে । বিশেষ বিশেষ সময়ে বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে, কিম্বা ভাল ফলন পেয়ে, কিম্বা আশাতীত ভাবে দুর্যোগ বা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেয়ে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিয়েছে মানুষ! যেমন ১৬১১ তে খরা, ১৬১৩ তে বন্যা, ১৬০৪ ও ১৬২২ এর প্লেগের সময় কিম্বা স্প্যানিশ আর্মাদার বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে ‘ডেজ অভ থ্যাঙ্কসগিভিং পালন করা হয়েছে- ইউরোপে!
এখন এই থ্যাঙ্কসগিভিং একটা ‘প্রথায় রূপ নিয়েছে- শুধু ধার্মিকেরাই নয়, পাঁড় নাস্তিকও এই এখন প্রথা পালন করছে টার্কি (Turkey) আর মিষ্টিকুমড়ার পিঠা (Pumpkin pie ) বা পাম্পকিন পাঈ’ খেয়ে !
হালাল টার্কি এখন সহজলভ্য হলেও নেহায়েত ‘রসকষহীন - শুকনো হওয়ায় আমাদের কাছে তা ‘গ্রহণ যোগ্যতা পায়নি; তেল ঝাল মশলার খাবারে অভ্যস্ত ‘দেশী জিভ- এত সহজে ভিন্ন সভ্যতার বশ হবে বলে মনে হয়না! তবে ‘পাঈ’টা মন্দ লাগে না!
সকালে বেক করা গরম গরম ‘আপেল পাঈ’ আজকের ডেসার্ট। আর, একজন মুসলিম হিসেবে খেয়ে, বা না খেয়ে (রোজা রেখে) শুধু এক বিশেষ দিনে নয়, সৃষ্টিকর্তাকে সব সময় সদা সর্বদা- ধন্যবাদ দিতে হবে! আলহামদুলিল্লাহ্ - সকল প্রশংসা তোমার- হে প্রভু!
বিষয়: বিবিধ
১২৬৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
However, neighbors are celebrating, Shopping malls, stores - you can see as holiday celebration!
মন্তব্য করতে লগইন করুন