রোবটিক প্রেম ( Part-5)
লিখেছেন লিখেছেন ক্যাকটাস হিমু ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:১৯:০৪ বিকাল
নিশ্চুপ শাহীন ভাবছে রিহামকে মৃত্যুর খবর
কীভাবে দেয়া যায়।
অদ্যাবদি দেখা হয়নি ওদের।
দেখা হবে কীভাবে... পরীক্ষার ঝামেলা,
মাঝে মাঝে মনোমালিন্য, সব মিলিয়ে ভাল সময়
যাচ্ছিলনা। মৃত্যুর খবর শুনে আসবে তো?
নাকি হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিবে? নাকি ফোন অফ
করে দিবে? অনেক জল্পনা-
কল্পনা কাটছে শাহীনের মনে। এদিকে বাসার
সবাই কারণ খুজঁছে... কেউ বালিশের নিচে, কেউ
তোষকের নিচে, কেউ শার্টের পকেটে, কেউ
ডাইরীতে চিরকুট খুজঁছে...
যে যেখানে পারছে সেখানে। কিন্তু শাহীনের
হাতে আসল চিরকুট রয়েগেছে। সে মোবাইল
দিচ্ছে না। তার হাতেই রেখে দিবে ভাবছে আর
নৃশংস ভালবাসার
বলি নিশুকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে চোখের
জলে বুক ভাসাচ্ছে। রিহাম স্পষ্ট
করে বলতে পারতো “আমি তোমাকে ভালবাসি না”
সময়ের অসম গতিশীলতায় আগের
কসমে মরিচা ধরেছে। তখন হয়তো নিশু
নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারতো। যেদিন
মারা যায় ঠিক ৩/৪ দিন আগে থেকে রিহামের
সাথে কঠিন ভাবে মনোমালিন্য চলছে। কারণ
একটাই রিহাম ফোন ধরে না। ১০০ কলের
পরে ১বার ফোন রিসিভ করে “কি সমস্যা?
ডিষ্টার্ব কর কেন?”
- তুমি আমার ফোন ধর না কেন?
- তোমার কী মনে হয়?
- আমার মনে হয় তুমি অন্য কোথাও Engaged.
- তোমার যা ভাবার তাই ভাব, আর ফোন কর না।
- তাহলে “I hate you” বল?
- OK, I hate you….ফোন রাখ।
নিশু ভেবেছিল এ কথা রিহাম
কখোনো বলতে পারবে না। কিন্তু রিহামের
পক্ষে সব কিছুই সম্ভব এটা জানতো না নিশু।
তারপরেও নিশু ভাবছে রাগের বসে এসব
বলতে পারে। স্বামী স্ত্রীকে তালাক
দিয়েওতো বলে রাগের বসে দিয়েছি, তালাক
হয়নি। এই আশায় নিশু আবার ফোন দেয়। এবার
রিহাম ছোট ভাইদের দিয়ে ফোন ধরায়, গান
শুনায়। রাগে ক্ষোভে রিহামের রক্ত গরম
হয়ে যায়। চোখে অন্ধকার দেখে সে, রক্ত
সঞ্চালন ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে তার। মাথার
উপর পৃথিবী ভন ভন করে ঘুরছে। তারপরও নিশু
আবার ফোন দেয় “ কী কর? ক্যামন আছো?”
রাগের মধ্যেও এরকম শান্ত গলা মনে হয় নিশু
আর কখনো দেখায়নি। হয়তো পৃথিবী ছাড়ার
উপসর্গ দেখা দিছে আজ তার মনে। নিশু
রাগলে বড় বড় গলায় কথা বলতো। আবারও নিশু
বলল “ আমি জানি তুমি রাগে এসব বলছো, ঠিক
আছে আমি মেনে নিছি”। কিন্তু রিহাম ফোন
রিসিভ করে গান শোনায়, পড়ার
টেবিলে বসে পড়া শোনায়। হয়তো নিশুর
কাকুঁতি গুলো রিহামের
কানে যায়নি কিংবা কখোনো যাবেনা। ফোন
কেটে দিয়ে SMS লেখে নিশু “ Plz, Ami
Mara Jabo. Call kore kotha Bolo. Aj
Ami Bachbo Na. Ami Mara Gele Kosto
Pabe Na? Plz, Phon Dhoro.”
উত্তর আসেনা রিহামের। আবারও সেন্ড
করে ম্যাসেজ। এবার বলে “ Tomar Paye
Dhore Bolci, Ekbar kotha Bolo?”
রিহাম এবার ফোন করে। রিহামের ফোন
দেখে নিশু অবাক হয়। কখোনো সে ফোন করে না,
আর এখন ফোন করা মানে SMS কাজ করছে...।
- হ্যালো...
- তোকে বলছি…মরবি মর, আমাকে জানাস কেন?
কাল সকালে যেন তোর মৃত্যুর সংবাদের আমার ঘুম
ভাঙ্গে।
- আমি মারা গেলে তুমি খুশি?
ফোন কেটে দেয় রিহাম। এর পর রাতে মায়ের
সাথে তুচ্ছ কথার জের ধরে খাবার
না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কিছু খায়নি বললে ভুল
হবে, যা খেয়েছিল তা ফিরে আসার খাবার
খায়নি।
শাহীনের ফোন পেয়ে রিহাম আর কথা বলেনা।
স্তব্ধ পৃথিবী তার! হ্যালো...
হ্যালো বলে শাহীন ফোন কেটে দেয়। রিহাম
কখোনো ভাবেনি নিশু এমন করবে। রিহাম’ই
সাজ্জাদের নাম দিয়েছিল “নিশু”। আজ চোখের
জলে রিহাম পৃথিবীকে ধিক্কার জানাচ্ছে।
যে ধিক্কার নিশু দেখেনি সেই ধিক্কার।
অতীতের স্মৃতি গুলো স্মরণ করে অনুশোচনা করছে,
যে অনুশোচনা কয়েক
ঘন্টা আগে করলে একটা প্রাণ বেচেঁ যেত।
কিছুক্ষণ চোখের পানি ফেলে হয়তো নতুন
করে কাজল লাগিয়ে এই পৃথিবীকে নয়ন
ভরে দেখতে যাবে।
Continue...
বিষয়: বিবিধ
১১৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন