সাকা চৌধুরীর রায় ফাঁসঃ ডিবির তদন্ত কি আসলেই নাটক?
লিখেছেন লিখেছেন সামছুল করিম ০৫ অক্টোবর, ২০১৩, ০৬:৩৩:৫২ সকাল
ঢাকা মহানগর ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের কাছে রায় ফাঁসের কাহিনী তুলে ধরেন। অনেকের কাছে মনে হতে পারে এ আরেক জর্জ মিয়া নাটক। আবার কেউ কেউ এটাকে স্রেফ শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মনে করতে পারেন। কেউবা ডিবির সকল বিষয়ের মত এটাকেও অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে পারেন রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে। তবে সাংবাদিক সম্মেলনে মনির সাহেবের বক্তব্য বিশ্লেষন করলেই তার কথার কিছু গাঁজাখুরি দিক ধরা পড়ে। বিষয়টি নাটক কিনা তা এ পর্যায়ে না বলতে পারলেও মনে হয় কোথায় যেন সমস্যা থেকে যাচ্ছে। আসুন তার বক্তব্য বিশ্লেষন করে দেখি - কাহিনীর স্ক্রিফটে ভুল গুলো কোথায়।
১) মনিরুল জানান "তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই আইনজীবীর সহকারী রায়ের খসড়াটি পাওয়ার পর তা দেশের বাইরে কোনো একজনের কাছে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে পিডিএফ ফাইল করে তা ইন্টারনেটে ফাঁস করা হয়েছে। দেশের বাইরের যে কম্পিউটার থেকে এটি করা হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে সেখানে বাংলা ফন্ট নেই।" এই পয়েন্ট টিকেই আমি প্রথমে নিয়ে আসলাম। মনির সাহেব কি করে জানলেন ফখরুল সাহেবের (সাকার আইনজীবি) সহকারী রায়ের খসড়াটি পাওয়ার পর তা দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। নয়ন যদি এটা ফাঁস করতে সহায়তা করেও থাকে তারপরও তারতো এটা জানার কথা নয়। আনলাইনে আপলোডতো বাংলাদেশ থেকেও করা হতে পারে। নাকি বিষয়টি গল্প তৈরি করার সময় তাদের মাথায় আসেনি। এটাতো যে পাঠিয়েছে একমাত্র তার জানার কথা। নাকি পুলিশ একদিনেই দেশের সব মেইল ট্রান্সফার গেইটওয়ের মাধ্যমে চেক করে ফেলেছেন? এটাতো অসম্ভব!!!
২) বিচারকের রায় লিখার কক্ষের তালা খোলা, কম্পিউটারের লগইন করা, ফাইলের পাসওয়ার্ড ভাংগা - এতো অনেক ধাপ? ধরে নিলাম ফাইলের পাসওয়ার্ড যারা প্রকাশ করেছে তারাই ভেংগেছে। কিন্তু এই ধরনেই একটি সেনসিটিভ হাই সিকিউরিটি রুমের তালা খোলা (ঝাড়ুদার হিসাবে তার কাছে কি সার্বক্ষনিক চাবি ছিল?) এবং কম্পিউটারের লগইন করা - এর উত্তর কি? হিসাব যে কোন ভাবেই মিলছেনা। পুলিশকি আমাদেরকে বিশ্বাস করতে বলবে যে এ কম্পিউটারে কোন পাসওয়ার্ড ছিলনা।
গল্পটা বিশ্বাসযোগ্য হত যদি বলতো বেন্চ অফিসারই টাকার বিনিময়ে রায় ফাঁস করে দিয়েছেন।
ট্রাইবুনালকে বাঁচানোর জন্যে এই গরিব নয়নের উপর দিয়েই সব কিছু চালিয়ে দেয়া হল?
৩) বলা হল মোটা অংকের টাকা পেয়েছে নয়ন - প্রশ্ন হচ্ছে কোথায় সে টাকা? গল্পটি এখানেও বিশ্বাসযোগ্য নয়।
৪) মনির সাহেব জানালেন ঝাড়ুদার নয়ন কম্পিটার জানে। যে ছেলে কম্পি্উটার এবং ইংরেজী ভালভাবে জানে ( কারণ সে ফাইলের নাম, ফোল্জাডারের নাম এগুলো ইংরেজীতে পড়ে তার পর ফাইল নিশ্চিত হয়ে ট্রন্সফার করেছিল) সে সিসি ক্যামেরা সম্পর্কে জানবেনা এটা অস্বাভাবিক। আর সিসি ক্যামেরা সম্পর্কে জানলে সে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ভাববেনা এটা আরও অস্বাভাবিক।
৫) বিষয়টি আরও সন্দেহ জনক যখন সাকার আইনজীবির অনপুস্হিতিতে তার অফিসের রুম ভেংগে তার কম্পিউটার, সিডি বা এ সংক্রান্ত জিনিস গুলো নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশ চাইলে ফখরুল সাহেবের অফিস তার উপস্হিতিতেই তাকে ডেকে নিয়ে এসে খুলতে পারত।
৬) পুলিশের ভাষ্য মতে " প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নয়ন বলেছেন, ওই আইনজীবীর সহকারী তাঁকে বলেছিলেন, আদালতে পিটিশনের জন্য কয়েকটি তারিখ প্রয়োজন। তাই রায় লেখার কম্পিউটার থেকে কিছু তথ্য তাঁকে এনে দিতে হবে। নয়ন দেখেন, ওই কম্পিউটারে একটি রায় লেখা হচ্ছে। তারপর তিনি বিভিন্ন সময়ে রায়ের খসড়া পেনড্রাইভে নিয়ে নেন এবং ওই আইনজীবীর সহকারীকে দেন।" কয়েকটি তারিখের প্রয়োজন আর রায়ের ড্রাফট এনে দেয়া - বিষয়ের আগামাথা খুজে পাচ্ছিনা। গল্পেরও তো একটা সিকোয়েন্স থাকে?
আরও অনেক গোঁজামিলে ভরপুর এই গল্প। টাইপ করতে ইচ্চে করছেনা। কারণ এই মনির সাহেবের মুখে গত চার বছরে এমন আরও কত গাঁজাখুরি গল্প শুনেছি। কোনকিছুরই শেষ পর্যন্ত আগামাথা পাওয়া যায়নি। জানিনা ট্রাইবুনালকে বাঁচানোর এই শেষ চেষ্টা সফল হবে কিনা। তবে সরকার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করতে ব্যার্থ হলে এর দায় হবে অনেক বেশী।
রাজনৈতিক মামলা হিসাবে হয়ত এই ট্রাইবুনালের অপমৃত্যু হতে পারে, হয়তবা নতুন কোন আংগিকে এই ট্রাইবুনাল বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে। তবে আজ হোক বা কাল হোক যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে জাতির সাথে বিশ্বাস ভংগের দায় সরকারকে বা এই গল্পের ম্যাকানিজমের সাথে জড়িতদের অবশ্যই নিতে হবে। মনির সাহেবরা ইউকেতে আসার অগ্রিম শিক্ষা ছুটি নিয়ে বেশ আছেন, কিন্তু সবাই কি বাঁচতে পারবে? তারা বাঁচতে পারলেও জাতিকে বিভক্তির এই দায় কে নিবে?
আমি বিশ্বাস করি অভিযুক্তরা বিশ্বাসযোগ্য বিচার পেলে বিচারের মান নিয়ে তাদের প্রশ্ন মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পেতনা।
বিষয়: রাজনীতি
২৩২১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার সাথে সহমত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন