ডিএনএ কী? ১৫ তম পর্ব, আপনার প্রিয়জনকে কপি করে এই ধরনীর বুকে রেখে দিতে পারেন,কৃত্রিম CLONING কী?(৩)।

লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ২২ অক্টোবর, ২০১৩, ০৫:৪৬:১৮ সকাল

ডিএনএ কী? ১৫ তম পর্ব, আপনার প্রিয়জনকে কপি করে এই ধরনীর বুকে রেখে দিতে পারেন,কৃত্রিম CLONING কী?(৩)।



GURDON

Sir John B. Gurdon

জন্ম: ১৯৩৩, Dippenhall, United Kingdom

উনি ২০১২ সালে মেডিসিন বা ফিজিওলজীর উপর Shinya Yamanaka সংগে একত্রে নোবেল বিজয়ী হয়েছিলেন।

Sir John B. Gurdon কী আবিস্কার করেছিলেন?

আগে বিশ্বাষ করা হত একটা PLURIPOTENT STEM কোষের যাত্রা একমুখী ও অপরিবর্তনীয়। অর্থাৎ যেমন ধরুন আমাদের ভ্রণের PLURIPOTENT STEM কোষ হতে আমাদের শরীরের যাবতীয় বিশেষায়িত কোষ যেমন মস্তিস্ক কোষ,হার্ট কোষ,লিভার কোষ ইত্যাদি জন্মায় ও শুধু মাত্র সম্মুখে বার্ধক্য ও মৃত্যুর (APOPTOSIS) দিকেই অগ্রসর হতে থাকে। ( ১৪ তম পর্ব দেখুন)

এই বিশেষায়িত কোষ গুলী আর কখনো BACK GEAR করে ভ্রণ জীবনের PLURIPOTENT STEM কোষে পরিণত হতে পারেনা। আর যদি তা পারে তার অর্থ ঠিক এইরুপ দাড়ায় যেমন একজন ১০০ বৎসরের বৃদ্ধ তার জীবন চক্রকে BACK GEAR করে সে তার জন্ম কালের বয়সে ফিরিয়ে নিতে পারার মত একটি ঘটনা ঘটে যাওয়া।

Sir John B. Gurdon ১৯৬২ সালে ব্যাঙাচির উপর একটা পরীক্ষা চালিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে PLURIPOTENT STEM কোষে পরিণত করে পুনরায় হুবহু নুতন ব্যাঙাচি ও ব্যাঙ তৈরী করা যায়।

এর কী অর্থ দাড়ালো সেটা কী একটু অনুধাবন করতে পেরেছেন?

অন্য কথায় এর অর্থ দাড়ালো একজন ১০০ বৎসরের বৃদ্ধ, তারই শরীরের ১০০ ট্রিলিয়নের যে কোন একটি কোষ সংগ্রহ করে, সেই কোষের নিউক্লীয়াসের মধ্যের তারই CHROMOSOME কে ব্যবহার করে তারই মত হুবহু একজনকে নব জন্ম দেওয়া হল।

কী ভয়ংকর কথা,একটু ভেবে দেখুন তো!!!

বিশ্ব সমাজ, বিজ্ঞানীদেরকে বলেছে, তোমরা অন্ততঃ মানব জাতির উপর এই পরীক্ষা নীরিক্ষাটা চালিওনা, মানব সৃষ্টির ক্ষমতাটা নিজেদের হাতে লইওনা, তা করলে এটা পৃথিবীর ধংস লয়ে আসবে।

বিজ্ঞানীদের উপর মানব CLONING নিষিদ্ব করা না হলে, এতদিনে আমরা অজস্র CLONE(কপি) মানব সমাজে চলা ফিরা করতে দেখতে পেতাম।

তবে অন্য প্রাণীদের উপর যত পার করতে পার।

তার সেই থিওরীর উপর ভিত্তি করেই আজ উন্নত বিশ্বে অহরহ পশু এর CLONING করে উৎপাদন চলতেছে। সেই পশুর মাংসও বাজারে চলতেছে।

তাছাড়া সম্প্রতি , শুধু মাত্র প্রাণীর MUSCLE STEM কোষ উৎপাদন করে, সেই STEM কোষ হতে, প্রাণী হত্যা ব্যতিরেকেই, মাংস উৎপাদন করিয়া, সেই মাংসও বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা হচে্ছ।

বিজ্ঞানীরা চাচ্ছেন মাংসের জন্য অনবরত প্রাণী হত্যা করার মত বাড়তি ঝামেলা না পোহায়ে, পরিবেশ দুষণ না করে, মাংসের চাহিদাটা, শুধু ফ্যাক্টরীর ল্যাবরেটরীতে উৎপাদিত মাংস দ্বারা পুরণ করা যায় কিনা। মন্দ নয় ধারনাটা। (২)

Sir John B. Gurdon এর পরীক্ষাটা কী ছিল?

তিনি একটি ব্যাঙের অপরিপক্ক ডিমের NUCLEUS কে বের করে ফেলে দিয়ে, সেই ডিম্বের মধ্যে একটি ব্যাঙাচির পরিপাক তন্ত্রের নাড়ীর (INTESTINE) পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষের NUCLEUS ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি পর্যবেক্ষন করে দেখতে পেলেন ডিম হতে ঠিকই হুবহু ব্যাঙাচি জন্মও নিল এবং বর্ধিত হয়ে পূর্ণ ব্যাঙেও পরিণত হল। এরুপ অনেক গুলো পরীক্ষা করেছিলেন চিত্র-১ (১)

Sir John B. Gurdon এর এই ছোট্ একটা পরীক্ষায় কতবড় রহস্যের দ্বার উন্মোচন হল তা কী ধরতে পেরেছেন?

এটা ভাল ভাবে বুঝতে গেলে, আসুন আগে আমরা কিছু কাল্পনিক নাম ধরে লই, তাহলে বুঝতে সহজ হবে।যেমন-

উক্ত অপরিপক্ক ব্যাঙের ডিম্ব হতে যদি NUCLEUS টি বের করে না ফেলা হত, ধরে নিন তাহলেও ঐ ডিম্ব হতে একটি ব্যাঙাচি ও ব্যাঙের সৃষ্টি হত, ধরা যাক উক্ত সম্ভাব্য ব্যাঙটির নাম “A’

যে ব্যাঙাচিটির পরিপাক তন্ত্রের নাড়ীর বিশেষায়িত কোষ হতে NUCLEUS সংগ্রহ করে উক্ত ডিমের মধ্যে বসিয়েছেন, সেই ব্যাঙাচিটির নাম ধরুন “B”

ডিমের NUCLEAS ফেলে দিয়ে ‘B” ব্যাঙাচির নাড়ীর বিশেষায়িত কোষের NUCLEUS ঢুকিয়ে দেওয়ার পর যে ব্যাঙাচিটি বা ব্যাঙটি উৎপন্ন হল, ধরুন তার নাম “C”।

মনে রাখতে হবে NUCLEUS এর মধ্যেই CHROMOSOME, যা প্রানীটির BLUE PRINT বা মডেল অবস্থিত থাকে। প্রানিটী ঠিক যেমন CHROMOSOME টি পাইবে, সে হু-বহু ঠিক তদ্রুপ ই হইবে। ক্রোমোজমের বাইরে তার কিছুই গড়ার ক্ষমতা নাই।

এবার তাহলে একটু চিন্তা করুনতো প্রথম সম্ভাব্য ব্যাঙ “A” ও তৃতীয় বাস্তব উৎপাদিত ব্যাঙ “C”এর মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?

এদের পার্থক্য মূল জায়গায় ক্রোমোজোমে। সম্ভাব্য “A’ ব্যাংটির একটা স্বাভাবিক নিজস্ব CHROMOSOME ও বৈশিষ্ট থাকত। যেটা ডিম্ব হতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

তার মধ্যে “B” ব্যাঙাচির CHROMOSOME ঢুকিয়ে দিয়ে বাস্তব “C” ব্যাঙাচি উৎপন্ন করা হয়েছে।

এর অর্থ দাড়াল “C’ ব্যাঙাচি টি “B” ব্যঙাচিটির একটি কপি বা হুবহু অনুরুপ প্রানী উৎপাদিত হইল। কারণ তাদের উভয়ের ক্রোমোজোম একই।

তাহলে এই পরীক্ষাটা কী কী রহস্য উন্মোচন করল?

১, এই পরীক্ষায় প্রমাণিত করল যে,আমরা একটি প্রানীর অনুরুপ কপি আর একটি প্রানী উৎপাদন করতে পারি।

কারন, একটি প্রানীর জীবনের সব কিছুই তার ক্রোমোজোমের মধ্যেই থাকে। আর এখানে একটি প্রানীর ক্রোমোজোম সংগ্রহের মাধ্যমেই আর একটি প্রানী উৎপাদন করা হল। অতএব “C” ব্যাঙাচির ক্রোমোজোম ও “B”ব্যাঙাচির ক্রোমোজোম হুবহু একই। তাই এরা একটা আর একটার হুবহু কপি প্রাণী।

২, আবার এই পরীক্ষায় এটাও প্রমাণিত করল যে,আমরা বয়স্ক বিশেষায়িত কোষকে ভ্রণের STEM কোষে পরিণত করতে পারি।

কারণ, “B” ব্যাঙাচির নাড়ী হতে পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষের ক্রোমোজোম সংগ্রহ করে নিউক্লীয়াছ-শূন্য ডিম্বের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার ফলে “C” ব্যাঙাচির জন্ম হয়েছে। এই নব জন্ম লওয়া “C” ব্যাঙাচিতে আর কোন পরিপক্ক বিশেষায়িত নাড়ীর কোষ নাই। যদিও তাকে সংগ্রহ করা হয়েছে পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষ নাড়ী হতে।

এখন এই নব জন্মিত “C” কোষে যত কোষ আছে সবই STEM কোষ।এরা অতি সত্বর সব PLURIPOTENT STEM কোষে পরিণত হয়ে, নূতন “C” ব্যাঙের জন্ম দিল। (পর্ব-১৪ দেখুন)

অতএব এই পরীক্ষায় এটাও প্রমাণিত হল যে পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষ অপরিবর্তনীয় নয়। বরং একে, এর আদি প্রথমিক জীবনের কোষে (PLURIPOTENT STEM CELL) পত্যাবর্তন করানো যায়।(পর্ব-১৪ দেখুন)



চিত্র-১, Sir John B. Gurdon এর ব্যাঙাচির উপর পরীক্ষা।

উপরের চিত্র-১ এ লক্ষ করুন, বামে একটি ব্যাঙের ডিম্ব, যার মধ্য থেকে NUCLEUS বের করে ফেলা হচ্ছে (১ নং)।

একটু ডানে,NUCLEUS শুণ্য ডিম্বটির মধ্যে অন্য একটি ব্যাঙাচির নাড়ীর পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষের NUCLEUS ঢুকানো হচ্ছে (২ নং)।

তার একটু ডানে, ডিম্বটি FERTILIZED হয়ে একটা ZYGOTE এ পরিণত হয়ে STEM কোষের ভ্রুণে পরিণত হয়ে গেছে (৩ নং) ।

তার ডাইনেই ডিম্বটি হতে প্রথমে ব্যাঙাচি ও পরে ব্যাঙের বাচ্চায় পরিণত হয় গেছে।

ঠিক এর নীচে (৪নং) এই থিওরী প্রয়োগ করে পশু CLONING দেখানো হয়েছে।(পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে)।(১)

এটাই কৃত্রিম CLONING , যার পথপ্রদর্শক হচ্ছেন বিজ্ঞানী Sir John B. Gurdon.

কী কী উপায়ে কৃত্রিম CLONING করা হয় তা আগামী পর্বে আলোচনা করা হবে।

আগের পর্ব সমূহ-

সূত্র-

NOBEL PRIZE 2012

১. http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2012/

STEM CELL MEAT

2. http://www.americanthinker.com/2013/09/cultured_meat_peta_and_mandels_cow.html

বিষয়: বিবিধ

১২৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File