ONOSUNDHAN:

লিখেছেন লিখেছেন আপোষহীন জনতা ২৬ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:৪০:১৯ সকাল

[অতিভক্তি বাবাদের কাহিনী]

শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ

শফী বর্তমানে বিপুল জনপ্রিয় একজন

ব্যক্তিত্ব। ইঙ্গিতে-ইশারায়, প্রত্যক্ষ-

প্রকাশ্যে, গঠনমূলক বা বিদ্বেষপূর্ণ কেউ

তাঁর সমালোচনা করুক তা অবশ্যই তাঁর ভক্তকুলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও

সাধারণভাবে কোনো মানুষই ভুলের

ঊর্ধ্বে নয় একমাত্র আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)

ছাড়া। আল্লামা শাহ আহমদ শফী ধর্মীয়

জ্ঞানে অসাধারণ পণ্ডিত, বিদ্ধান ও বুযুর্গ

ব্যক্তিত্ব তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তাই বলে সর্বক্ষেত্রে; জাগতিক বিশেষত

রাজনীতিক-সামাজিক প্রেক্ষাপটে তাঁর

সকল পদক্ষেপই সম্পূর্ণ নির্ভুল হবে তাও

বোধ হয় বাস্তবসম্মত নয়। প্র্যাক্টিক্যাল

ে এই ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক নাও হতে পারে।

এ দিকটায় তাঁর পদক্ষেপসমূহ পর্যালোচনা করা, গঠনমূলক সমালোচনা,

উচিত-অনুচিত ব্যাপারে মতামত দেওয়া—

এটি যদি কেউ বিদ্বেষচর্চার মনোভাব

থেকে না-করে, বরং দীনের

প্রতি আন্তরিকতা, একনিষ্ঠতা ও

হিতাকাক্সক্ষা থেকে করেন তাতে আমি দোষের কিছু দেখি না। কিন্তু

সমস্যা হচ্ছে তাঁর ভক্তকুলের মধ্যে এমন

কিছুসংখ্যক অতিভক্ত লোকজন আছেন

যারা পবিত্র হেফাজত সংক্রান্ত

কোনো ব্যাপারে যেকোনো ধরনের

সমালোচনা-পর্যালোচনাকে দুনিয়ার জঘন্যতম ধর্ম-অবমাননার মতো অপরাধ

হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।

তারা নিজেরা তো সবাইকে পরমতসহিষ্ণুতা

সবক ঠিকই দিয়ে থাকেন, তবে যখন

নিজেরা কথা বলেন তখন দুনিয়ার

নিকৃষ্ঠতম অশ্রাব্য, অশ্লীল, তথ্য ও ভিত্তিহীন, জাল-বানোয়াট কথাও বেফাঁস

বলে ফেলেন।

তারা অন্যদেরকে আত্মসমালোচনা সহ্য

করার জ্ঞানও দিয়ে থাকেন, কিন্তু যখন

নিজেরা আচরণ করেন তখন অত্যন্ত

যুদ্ধাংদেহী, উদ্ধতপূর্ণ ও ভদ্রতার সব সীমাবিবর্জিত আচরণ করেন।

শ্রেণিতে এই ভক্তকুল আবার তিন ধরনের।

যথা-

১. মতলববাজ: এরা মূলত বিভিন্ন

রাজনীতিক দলের নেতা-কর্মি ও সমর্থক।

হেফাজতের অভ্যূদয়ের মাধ্যমে যারা রাজনীতিকভাবে লাভবান

হতে আগ্রহী ছিল। এই

শ্রেণিতে আছে জামায়াত-শিবির। এরা ১৩

দফা সমর্থন করে কিনা জানি না। তসলিমা-

বাবরি মসজিদ-কাদিয়ানি ও

ফতোয়া ইস্যুতে অতীতে তাদের কোনো ভূমিকা না-থাকলেও হেফাজতের

অভ্যূদয়কে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিক

ফায়দা হাসিলে এরা খুবই তৎপর ছিল।

মতলবাবাজ ভক্তকুলের

মধ্যে বিগতবারে আওয়ামী লীগের

সহযোগী এবং ২০১০ সালে শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের দায়ে আল্লামা শাহ

আহমদ শফীর ক্ষুব্ধ থাকা তথাকথিত

অতি আওয়ামী বিরোধী কয়েকটা ইসলামি দল

নেতা-কর্মি ও সমর্থকরাও আছে।

এরা হেফাজত সংশ্লিষ্ট

যেকোনো সমালোচনা অসহ্য জ্ঞান করে এ জন্যে যে, এতে তাদের স্বার্থে আঘাত আসে।

এ জন্যে নয় যে, এতে আল্লামা শাহ আহমদ

শফীর ব্যক্তিত্বের অবমাননা হয়—সেজন্য

নয়। বরং এরা রাজনীতিক প্রতিপক্ষের

বক্তব্যগুলোকে চালাকির

সাথে বানোয়াটি করে হেফাজতের বিরুদ্ধে বলে চালিয়ে দিয়ে নোংরা রাজনী

ফায়দা হাসিল করতেই বারবার

চেষ্টা করেছে।

দলীয় স্বকীয়তা ও স্বতন্ত্র অবস্থানের

কারণে আওয়ামী লীগ তো বটে, বিএনপি-

জামায়াত এমনকি অন্যান্য ইসলামি দলসমূহের সাথে রাজনীতিক

মতভিন্নতা ইসলামী আন্দোলন

বাংলাদেশের থাকতে পারে। এখন

ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যদের নিজেদের

আলাদা অবস্থানের

কথা তুলে ধরা এবং অন্যদের নীতিগত সমালোচনারও একটা অধিকার সবার আছে।

কিন্তু সে নীতিগত সমালোচনাকে রঙচঙ

লাগিয়ে বিকৃতভাবে উপস্থাপন

করে নাস্তিক্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের

পুরোটা সময়জুড়ে হেফাজতে ইসলাম ও

ইসলামী আন্দোলনের মাঝে মতবিরোধ ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে রেখেছিল মতলববাজ

এই অতিভক্তরা।

এরা প্রকৃতপক্ষে হেফাজতে রাজনীতিক

আশ্রয় নিয়েছিল। কেউ এদের

সমালোচনা করলে সেটাকে হেফাজতের

বিরুদ্ধে বলে চালিয়ে অবস্থানগতভাবে রা সুব আড়ালে সুরক্ষিত করেছিল। এরা চাতুর্যের

সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের

মুকাবেলায় হেফাজতকেই ব্যবহার করেছিল।

২. চরমোনাইবিদ্বেষ: কোনো কথা-কারণ

নেই। ব্যক্তিগত অরুচি ও অপছন্দ

থেকে অনেকে চরমোনাইয়ের চরম বিদ্বেষী। তাদের এই অরুচি ও অপছন্দের

কারণও কিন্তু ধর্মীয় নয়। ঈর্ষা, ব্যক্তিগত

ইগো ও জ্ঞান-গরিমার বড়াই। এদের এই

বিদ্বেষ ধর্মীয় হলে তাদের ভাষণ

হতো ভারসাম্যপূর্ণ, সংশোধনের

উদ্দেশ্যে এবং ইখলাসের নিয়তে। আজকে অনেকে আছে যারা ‘চরমোনাই’

শব্দটিকেই কত অশ্রাব্য ও

অশ্লীলভাবে উপস্থান করে, দলের সাবেক

নামটিকে বিকৃতভাবে পেশ করে—এরাই

ব্যক্তিগত চরমোনাই-বিদ্বেষচর্চার উপযুক্ত

ক্ষেত্র হিসেবে হেফাজতকে বেচে নিয়েছিল।

এরা চাতক পাখির মতো উন্মুখ

হয়ে চেয়ে থাকতো, কোথাও কোনোভাবে এক/

দুই শব্দ ইঙ্গিতে-ইশারায়

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ

থেকে হেফাজত বিরোধী হয় কিনা তার জন্য। এ-ব্যাপারে চরমোনাইঅলাদের

আদতে কোনো ইচ্ছা না-থাকলেও এই

অতিভক্তরা যেন কামনাই করতো যে,

ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় হোক

চরমোনাইঅলারা হেফাজতের বিরুদ্ধে বলুক।

প্রকাশ্যত ধরার মতো কিছু না- পেয়ে তারা উস্কানি দিয়ে কাউকে কাউকে

কিছু বলাতে বাধ্য করে। কিছু কিছু

বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন

এবং সর্বত্র প্রচার করার মাঝেই

এরা সর্বোচ্চ সুখানুভূতি লাভ করতো।

তিলকে তাল বানানো, বক্তব্যের আগ-পিছ কেটে-ছেটে উদ্দোশ্যপ্রণোদি

তভাবে প্রচারে এরা সিদ্ধহস্ত ছিল।

কওমি ও ইসলামি অঙ্গনে বিভিন্ন বলয়

রয়েছে যা কারো অজানা নয়। প্রত্যেকের

রয়েছে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি ও আধ্যাত্মিক গুরু।

বিস্তর মতবিরোধও আছে। এদের অনেকে আবার আল্লামা শাহ আহমদ শফীর

বিরোধিতাও করেন। আর দ্বিতীয় শ্রেণির

অতিভক্তদের অধিকাংশই আল্লামা শাহ

আহমদ শফী বিদ্বেষী ও বিরোধী বলয়ের।

সাময়িকভাবে তারা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর

প্রতি অতিভক্তি প্রদর্শনের কারণ হচ্ছে চরমোনাইবলয়ের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত

বিদ্বেষচর্চা এবং একই

সঙ্গে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মতো বুযুর্গ

ব্যক্তিত্বকে চরমোনাইয়ের মতো বিশাল

বললের লোকজনের কাছে বিষিয়ে তোলা। এর

মধ্য দিয়ে চরমোনাই সিলসিলার প্রতি যুগশ্রেষ্ঠ বুযুর্গ আল্লামা শাহ আহমদ

শফীর নেক নজর, পৃষ্ঠপোষকতা ও আন্তরিক

সম্পর্কে চিড় ধরানোই ছিল তাদের

যাবতীয় তৎপরতার মুখ্য উদ্দেশ্য।

৩. দীনহিতৈষী: অতিভক্তও নয়, চরমোনাই

বিদ্বেষও নয়। এই শ্রেণিটি দীনের হিতৈষী। প্রত্যেক দল-বলয়ে এই শ্রেণির

অনেক লোক আছে। এমনকি জামায়াতেও এই

শ্রেণির লোকজন আছেন বলে আমার বিশ্বাস।

যারা সবসময় যেকোনো দীনী আন্দোলন-

সংগ্রাম ও কাজে সমর্থন ও শরিক হন অত্যন্ত

আন্তরিকতা ও ঔৎসুখ্যের সাথে। রাজনীতিক মতলববাজি ও বিদ্বেষচর্চার

সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠে এই শ্রেণির

লোকজন নিঃস্বার্থভাবে স্রেফ দীনের

খাতিরে সংঘবদ্ধ ও সবার মাঝে সুসমন্বয়

সাধনে সদা তৎপর থাকতে দেখা যায়।

হেফাজতকে কেন্দ্র করে কতিপয় মতলববাজদের রাজনীতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদি

ত চরমোনাই-বিদ্বেষের অর্ন্তনিহিত রহস্য

এই শ্রেণির ব্যক্তিগর্ব যথার্থ

উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। এই ধরনের

স্বউপলব্ধির কারণে এই শ্রেণির ব্যক্তিবর্গ

হেফাজত-ইসলামী আন্দোলনের মাঝে পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি নিরসন,

উভয়ের মাঝে সমন্বয় সাধন এবং বিতর্কিত

বিষয় এড়িয়ে চলার সর্বপ্রকার

চেষ্টা করেছেন। এক শ্রেণির মতলববাজ

দলবাজ লোকদের চরমোনাইবিদ্বেষ

এবং সেটাকে পুজি করে বাম দল ও মিডিয়াগুলো যেভাবে ইসলামপন্থিদের

মাঝে প্রকাশ্যে ফাটল ও

পরষ্পরকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার

ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল এই তৃতীয়

প্রকারের দীনহিতৈষীদের

ঐক্যপ্রয়াসী আন্তরিক কর্মতৎপরতার ফলেই সেই ধরনের ভয়াবহ জাতীয় সংকট

থেকে জাতি রক্ষা পেয়েছিল।

অনেকের জানা আছে, নাস্তিক্যবাদ

বিরোধী আন্দোলনের সময় পীর সাহেব

চরমোনাইয়ের নামে কিছু বাম পত্রিকায়

দুয়েকটা বিকৃত বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছিল। যাকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির লোকজন

পীর সাহেব চরমোনোইয়ের হেফাজত-

বিরোধী বক্তব্য হিসেবে দেখাতে প্রচার

চালাতে ঔৎসুক্য দেখিয়েছিল।

পক্ষান্তরে এই তৃতীয় শ্রেণির

দীনহিতৈষী ব্যক্তিবর্গ যেসব সূত্রে এসব বক্তব্য বাজারে এসেছে সেসব সূত্রের

নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান

ছিলেন।

বক্তব্যগুলো নিয়ে বিশেষভাবে বাম

পত্রিকাগুলোর বাড়াবাড়ি করায়

দীনহিতৈষী ব্যক্তিবর্গের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, এসব বক্তব্য সংশ্লিষ্ট

মিডিয়ার বিকৃত, মনগড়া ও উদ্দেশ্যমূলক

প্রপাগাণ্ডা ছাড়া কিছুই নয়। দ্বিতীয়ত

মন্তব্যের আগে দীনহিতৈষী ব্যক্তিবর্গ

প্রথমে পীর সাহেব চরমোনাইয়ের

নামে প্রকাশিত পুরো বক্তব্যের আদ্যোপান্ত পাঠ

করে বক্তব্যটাকে কোনোভাবে ইতিবাচক

হিসেবে নেওয়া যায় কিনা সে-চেষ্টাও

করতেন এবং সেই সঙ্গে একই বক্তব্য

ইসলামপন্থিদের সমর্থক বলে পরিচিত

মিডিয়া বিশেষত ইনকিলাব, আমারদেশ ও নয়াদিগন্তে এসেছে কিনা তাও যাচাই

করে দেখতেন। এতেও জটিলতা না-

কাটলে তাঁরা সরাসরি ইসলামী আন্দোলন

বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ

করতেন এবং অনেক ক্ষেত্রে কিছু বক্তব্যের

প্রতিবাদ কামনা করতেন। দলের পক্ষ থেকে নিজ গরজে উক্ত বক্তব্যের প্রতিবাদ

করা হতে এবং তাঁদের অনুরোধের প্রতিও

যথেষ্ট সম্মান জানানো হতো। লিখেছেন: মু.

সগির আহমদ চৌধুরী

বিষয়: বিবিধ

৯৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File