বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’র সকল ইবাদত একই দিনে(৩ম)
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ২৭ মে, ২০১৫, ০৪:৪৪:৪৯ বিকাল
চাঁদ দেখার স্বাক্ষী নিজ দেশের লোক, পার্শ্ববতী দেশের লোক, পৃথিবীর যে কোন দেশের লোক, কোথাকার হবে অর্থাৎ “তোমরা” “সবাই” “সকলে” বলতে কাদের বুঝিয়েছেন ?
১) আলোচিত বিষয়ে ফিকহ গ্রন্থ ফাতওয়া-ই-শামী-এর সিদ্ধান্ত হচ্ছে-
প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সমগ্র পৃথিবীতে এক কেন্দ্রিক তারিখ গণনা করে, একই দিনে একই তারিখে আমল করতে হবে । এটাই আমাদের হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্ত । মালেকী এবং হাম্বলী মাযহাবের মতও এটা । তাদের দলীল হচ্ছে আয়াত ও হাদীসে চাঁদ দেখার সম্বোধন সকলের জন্য আম বা সার্বজনীন যা নামাজের ওয়াক্তের সম্বোধন থেকে আলাদা-(ফাতওয়া-ই-শামী, খন্ড-২, পৃঃ-১০৫)
(২) ফাতওয়া-ই-আলমগীরির সিদ্ধান্ত হলো- অর্থাৎ ফিকহের প্রতিষ্ঠিত বর্ণনানুযায়ী চাঁদ ঊদয়ের বিভিন্নতা গ্রহণীয় নয় । ফতুয়াই কাযী খানের ফাতওয়াও অনুরুপ । ফকীহ আবু লাইছও এমনটাই বলেছেন । শামছুল আইম্মা হোলওয়ানী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, যদি পাশ্চাত্যবাসী রমযানের চাঁদ দেখে তবে সে দেখার দ্বারা প্রাচ্য বাসীর জন্য রোযা ওয়াজিব হবে । এমনটাই আছে খোলাছা নামক কিতাবে-(ফাতওয়া-ই- আলমগিরী, খন্ড-১, পৃঃ-১৯৮)
(৩) চার মাযহাবের সমন্বিত ফিকহ গ্রন্থ আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া নামক গ্রন্থের ভাষ্য হচ্ছে-অর্থাৎ পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সকল স্থানেই উক্ত দেখার দ্বারা রোযা ফরয হবে । চাই চাঁদ নিকটবর্তী দেশে দেখা যাক বা দূরবর্তী দেশে দেখা যাক এতে কোন পার্থক্য নেই । তবে চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে অন্যদের নিকট পৌছতে হবে । তিন ইমাম তথা ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম মালেক (রাহঃ) এবং ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল (রাহঃ)-এর মতে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয় । অর্থাৎ প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সর্বত্র আমল ফরয হয়ে যাবে(আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, খন্ড-১, পৃঃ-৪৪৩)
(৪) ফিকহ গ্রন্থ আল ফিকহুস্ সুন্নাহ এর সিদ্ধান্ত হচ্ছে-অর্থাৎ জমহুর ফুকাহা গনের সিদ্ধান্ত অতএব যখনই কোন দেশে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে তখনই অন্য সকল দেশে রোযা ফরয হয়ে যাবে । কেননা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন “চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তোমরা রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তোমরা রোযা ছাড়, ঈদ কর”। এখানে তোমরা বলে সম্বোধন দেশ মহাদেশ নির্বিশেষে সকল উম্মতের জন্য عام ব্যাপক অর্থবোধক । অতএব উম্মতের মধ্য থেকে যে কেউ যে কোন স্থান থেকে চাঁদ দেখুক উক্ত দেখাই সকল উম্মতের জন্য দলীল হবে । এ মত পোষণ করেছেন হযরত ইকরামা, কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ, সালেম এবং ইসহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহিম । হানাফী ফকীহগণের এটাই বিশুদ্ধমত- (আল-ফিকহুস্ সুন্নাহ, খন্ড-১, পৃঃ-৩০৭)
(৫) ফিকহ্ গ্রন্থ “মুগনী”-এর সিদ্ধান্ত হচ্ছে-অর্থাৎ কোন এক দেশের মানুষ চাঁদ দেখলে সকল দেশের মানুষের জন্যে রোযা রাখা জরুরী হবে (আল-মুগনী, খন্ড-৪, পৃঃ-১২২)
(৬) গ্রন্থ “তাবয়ীনুল হাকায়েক”-এর ভাষ্য হচ্ছে- যদি এক দেশের অধিবাসীরা নুতন চাঁদ দেখেন এবং অন্য দেশের অধিবাসীরা না দেখেন তবে প্রথম দেশবাসীর দেখা দ্বারাই অন্য দেশবাসীদের জন্য রোযা রাখা ফরয হবে । অধিকাংশ মাশাইখ-ই এমত পোষণ করেছেন । এমনকি এক দেশের মানুষ ৩০টি রোযা রাখল, অন্য দেশের মানুষ রোযা রাখল ২৯টি, তাহলে অন্যদেরকে একটি রোযা কাযা করতে হবে (তাবয়ীনুল হাকায়েক, খন্ড-২, পৃঃ-১৬৪/১৬৫)
***অতএব চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয় । প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সমগ্র পৃথিবীতে এক কেন্দ্রিক তারিখ গণনা করে, একই দিনে একই তারিখে আমল করতে হবে । এমনিভাবে বিভিন্ন জন তাদের ভাষায় বলেছেন, দলিল দেওয়া হল কিতাবগুলো খুলে দেখুন-
(ফতহুল কাদির, খন্ড-২, পৃঃ-৩১৮) (বাহরুর রায়েক, খন্ড-২, পৃঃ-৪৭১) (কাযীখান, খন্ড-১, পৃঃ-৯৫) (হাশিয়া-ই-তাহতাবী শরীফ, পৃঃ-৩৫৯) (মায়ারিফুস্ সুনান, খন্ড-৫, পৃঃ-৩৩৭) (ফাতওয়ায়ে ইবনু তাইমিয়্যা, খন্ড-২৫, পৃঃ-১০৭) (ফাতওয়া-ই-দারুল উলুম দেওবন্দ, খন্ড-৬, পৃঃ-৩৯৮) (মায়ারিফুল মাদানিয়্যাহ, খন্ড-৩, পৃঃ-২৩) (মিফতাহুন্ নাজ্জাহ, খন্ড-১, পৃঃ-৪৩২) (তানযীমুল আশ্তাত, খন্ড-১, পৃঃ-৪১) (ফাতওয়া-ই-রশিদিয়া, পৃঃ-৪৩৭) (বেহেশসি- জেওর, খন্ড-১১, পৃঃ-৫১০) (ফাতওয়া-ই-রাজাবিয়্যাহ্, খন্ড-৪,পৃঃ-৫৬৭) (তরিকুল ইসলাম, খন্ড-২, পৃঃ-১৮৮) বাজ্জাজিয়া, খন্ড ৪, পৃঃ ৯৫; তাতারখানিয়া, খন্ড ১ পৃঃ ৩৬৯; নুরুল ইযাহ, পৃঃ ১২৭; আল কাফী, খন্ড ১ পৃঃ ৪৬৮; বজলুল মাযহুদ ফি হল্লি আবি দাউদ, খন্ড ১১ পৃঃ ১০৭; শাইখ তুসী তাহযীব খন্ড ৪ পৃঃ ১৫৫; মিলাযুল আখবার, আল্লামা মাজলেসী খন্ড ১ পৃঃ ৬২০; তাহযীবুল আহকাম, ফয়েজ কাশানী খন্ড ৪ পৃঃ ১৫৭; ছালছাবিল আনওয়ারুল মাহমুদ খন্ড ২ পৃঃ ৭১; আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আব্দুল আ’লা সাবযাওয়ারী মুসতানাদ খন্ড ২ পৃঃ ১৩৩; আয়াতুল্লাহ খুয়ী মুসতানাদুল উরওয়া খন্ড ২ পৃঃ ১২২; ফতোয়া-ই-আযীযিয়া খন্ড ৩ পৃঃ ৪৯ (দারুল উলুম দেওবন্দ); তাফসীরে মাজেদা পৃঃ ১০৭; মারাকীহুল ফালাহ পৃঃ ২০৭; মজমুআ ফতোয়া খন্ড ১ পৃঃ ৩৮১; জরুরী মাসায়েল, মাওলানা রুহুল আমীন বর্ধমানী খন্ড ১ পৃঃ ১৪; জামেউর রমুয পৃঃ ১৫৬; নাহরুল ফায়েক মজমুআয়ে ফতোয়া খন্ড ১ পৃঃ ৩৬৯; তাহতাবী পৃঃ ৫৪০; কিতাবুল মাবছুত, আল্লামা ছারাখছী খন্ড ৩ পৃঃ ১৩৯।
***পৃথিবীর একেবারে পশ্চিম প্রান্তে চাঁদ দেখা গেছে, এই সংবাদ যদি নির্ভরযোগ্য সূত্রে পূর্ব প্রান্তের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে, তবে তাদের উপর এই দিনে রমযানের রোযা ফরয হবে (সূত্র: দুররুল মুখতার, ২য় জিলদ, পৃষ্ঠ-১০৮; আলগিরী, ১ম জিলদ, পৃঃ-১৯৮; বাহরুর রায়েক, ২য় জিলদ, পৃঃ-২০৭; মাজমাউল আনহুর, ১ম জিলদ, পৃঃ- ২৩৯)
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর বক্তব্যঃ-
---চলবে---
বিষয়টি ভালকরে বুঝার জন্য ১ম অংশ, ২য়..., ৩য়... ধারাবাহিক ভাবে মনযোগ দিয়ে পড়েন । কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন । ইন-শাআ-আল্লাহ! জবাব দেওয়া হবে ।
১ম অংশ
http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/65221#.VWJ70_mqooI (pls click & read)
২য় অংশ
http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/65484#.VWJ-DfmqooI (pls click & read)
বিষয়: বিবিধ
১১১৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন