তামাত্তু হজ্জের ধারাবাহিক কিছু নিয়ম কানুন
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:২৪:৩১ সকাল
সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার জন্য ৷ সালাত ও সালাম তাঁরই রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ৷ তার সাহাবায়ে কিরামের প্রতি আল্লাহর রাহমাত বর্ষিত হোক ৷
﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ ﴾ [ال عمران: ٩٧]
আর আল্লাহ্র জন্য লোকদের উপর বায়তুল্লাহ্র হজ্জ ফরজ করা হ’ল, যারা সে পর্যন্ত যাবার সার্মথ্য রাখে (আলে ইমরান ৩/৯৭)
আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ওমরাহ পরিপূর্ণভাবে পালন কর (বাক্বারাহ ২/১৯৬)
সংজ্ঞাঃ ওমরাহঃ আল্লাহ্র নৈকট্য হাছিলের উদ্দেশ্যে বছরের যেকোন সময়ে শরী’আত নির্ধারিত ক্রিয়া-পদ্ধতি সহকারে মক্কায় গিয়ে বায়তুল্লাহ যেয়ারত করার সংকল্প করা ।
ফযীলতঃ
«الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّة»
রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘এক ওমরাহ অপর ওমরাহ পর্যন্ত সময়ের (ছগীরা গোনাহ সমূহের) কাফফারা স্বরূপ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫০৮)
রাসুল (সাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই রমাযান মাসের ওমরাহ একটি হজ্জের সমান (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৫০৯)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রমাযান মাসে ওমরা করা আমার সাথে হজ্জ করার ন্যায় (বুখারী হা/১৮৬৩; মুসলিম হা/৩০৩৯)
হজ্জঃ আল্লাহ্র নৈকট্য হাছিলের উদ্দেশ্যে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে শরী’আত নির্ধারিত ক্রিয়া-পদ্ধতি সহকারে মক্কায় গিয়ে বায়তুল্লাহ যেয়ারত করার সংকল্প করা ।
ফযীলতঃ
«مَنْ أَتَى هَذَا الْبَيْتَ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَمَا وَلَدَتْهُ أُمُّه»
রাসুল (সাঃ) বলেন, যে আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে হজ্জ করেছে । যার মধ্যে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কার্য করেনি, সে হজ্জ থেকে ফিরবে সেদিনের ন্যায় (নিষ্পাপ অবস্থায়) যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫০৭)
কবুল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত কিছুই নয় (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫০৮)
হজ্জ এর সময়কাল
আশহুরে হজ্জ মানে শাওয়াল, যুলক্বা’দাহ ও যুলহিজ্জাহ মাসের যেকোন সময়ে মিকাত থেকে ইহরাম বেঁধে বায়তুল্লাহ্র উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হয় এবং ৯ই যিলহাজ্জে আরাফাতে অবস্থান করতে হয় । আরাফাতে অবস্থান না করলে হজ্জ হবে না [সাইয়িদ সাবিক্ব, ফিক্বহুস সুন্নাহ (কায়রোঃ দারুল ফাৎহ ৫ম সংস্করণ ১৪১২/১৯৯২), পৃঃ ১/৪৬২, ৫৪০]
সফরের আদবঃ
১। বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় পড়বেন
বিসমিল্লা-হি তায়াক্কাল্তু ‘আলাল্লা-হি ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’ (অর্থঃ ‘আল্লাহ্র নামে ( বের হচ্ছি), তাঁর উপরে ভরসা করছি । নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত (আবুদাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২৪৪৩)
২। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব থেকে বিদায়ের সময় পরস্পরের উদ্দেশ্যে পড়বেন-
আস্তাউদি‘উল্লা-হা দীনাকুম ওয়া আমা-নাতাকুম ওয়া খাওয়া-তীমা আ‘মা-লিকুম (অর্থঃ ‘আমি আপনার দ্বীন, আপনার আমানত সমূহ ও আপনাদের শেষ আমল সমূহকে আল্লাহ্র যিম্মায় ন্যস্ত করলাম (ছহীহ আবুদাউদ হা/২২৬৬, ২২৬৫; মিশকাত হা/২৪৩৬
পরস্পরের ডান হাত ধরে দো‘আটি পাঠ করে পরস্পরকে বিদায় দিবেন (মিশকাত হা/২৪৩৫)
নীচের দো‘আটিও পড়বেন
যাউয়াদাকাল্লা-হুত্ তাক্বওয়া ওয়া গাফারা যাম্বাকা ওয়া ইয়াস্সারা লাকাল খায়রা হায়ছু মা কুন্তা (অর্থঃ আল্লাহ আপনাকে তাক্বওয়ার পুঁজি দান করুন ! আপনার গোনাহ মাফ করুন এবং আপনি যেখানেই থাকুন আপনার জন্য কল্যাণকে সহজ করে দিন (ছহীহ তিরমিযী হা/২৭৩৯, ২২৬৫; মিশকাত হা/২৪৩৭)
৩। অতঃপর যানবাহনে পা দিয়ে বিসমিল্লাহ, উঠার সময় আল্লাহু আকবার, সীটে বসে আলহামদুলিল্লাহ এবং নামার সময় সুবহা-নাল্লাহ বলবেন (তিরমিযী, মিশকাত হা/২৭৩৪; বুখারী, মিশকাত হা/২৪৫৩)
৪। পরিবহন চলতে শুরু করলে তিনবার আল্লাহু আকবার বলে নিচের দো’আ
সুবহা-নাল্লাযী সাখখারা লানা হা-যা ওয়া মা কুন্না লাহূ মুক্বরেনিনা; ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনক্বালিবূন । আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফী সাফারিনা হা-যাল বিররা ওয়াত তাক্বওয়া ওয়া মিনাল ‘আমালে মা তারযা; আল্লা-হুম্মা হাওভিন ‘আলাইনা সাফারানা হা-যা ওয়াত্বভে লানা বু‘দাহূ, আল্লা-হুম্মা আনতাছ ছা-হিবু ফিস সাফারি ওয়াল খালীফাতু ফিল আহ্লি ওয়াল মা-লি । আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ওয়া‘ছা-ইস সাফারি ওয়া কাআ-বাতিল মানযারি ওয়া সূইল মুনক্বালাবি ফিল মা-লি ওয়াল আহ্লি’
(অর্থঃ আল্লাহ সবার বড় (৩ বার) । মহা পবিত্র সেই সত্তা যিনি এই বাহনকে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন । অথচ আমরা একে অনুগত করার ক্ষমতা রাখি না । ‘আর আমরা সবাই আমাদের প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’ (যুখরুফ ৪৩/১৩-১৪) । হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকটে আমাদের এই সফরে কল্যাণ ও তাক্বওয়া এবং এমন কাজ প্রার্থনা করি, যা তুমি পসন্দ কর । হে আল্লাহ! আমাদের উপরে এই সফরকে সহজ করে দাও এবং এর দূরুত্ব কমিয়ে দাও । হে আল্লাহ! তুমি এই সফরে আমাদের একমাত্র সাথী এবং আমাদের পরিবার ও মাল-সম্পদে তুমি আমাদের একমাত্র প্রতিনিধি । হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট পানাহ চাই সফরের কষ্ট ও খারাব দৃশ্য হ’তে এবং আমাদের মাল-সম্পদে ও পরিবারের নিকটে মন্দ প্রত্যাবর্তন হ’তে (মুসলি্ম, মিশকাত হা/২৪২০)
৫। অবতরণ করে পড়বেনঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি মিন শাররি মা খালাক্ব’ (অর্থঃ আল্লাহ্র সৃষ্টবস্তু সমূহের অনিষ্টকারিতা হ’তে আমি তাঁর পূর্ণ কালেমা সমূহের মাধ্যমে পানাহ চাচ্ছি (মুসলি্ম, মিশকাত হা/২৪২২)
হজ্জের প্রকারভেদঃ হজ্জ তিন প্রকারঃ তামাত্তু, ক্বিরান ও ইফরাদ ।
হজ্জে তামাত্তুঃ হজ্জের মাসে একটি ওমরাহ ও একটি হজ্জ পৃথক ভাবে সম্পন্ন করা।
প্রথমে মিকাত থেকে ইহরাম বেঁধে বায়তুল্লাহ্র ত্বাওয়াফ, ছাফা-মারওয়ার সাঈ শেষে মাথা মুন্ডন বা চুল ছেটে হালাল হয়ে ওমরাহ সম্পন্ন করা ।
দ্বিতীয় স্বীয় অবস্থানস্থল হ’তে ইহরাম বেঁধে ৮ই যিলহজ্জ মিনা থেকে শুরু করে হজ্জ সম্পন্ন করা ।
হজ্জে ক্বিরানঃ হজ্জের মাসে মিকাত হ’তে ইহরাম বেঁধে ১টি ওমরাহ ও ১টি হজ্জ একত্রে সম্পন্ন করা ।
হজ্জে ইফরাদঃ হজ্জের মাসে মিকাত হ’তে ইহরাম বেঁধে ওমরাহ না করে শুধু ১টি হজ্জ সম্পন্ন করা ।
রাসুল (সাঃ) বলেন, ওমরাহ সর্বদা হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত (আবুদাউদ হা/১৭৮৪, ৮৭, ৮৮, ৯০)
রাসুল (সাঃ) স্বীয় ছাহাবীগণকে প্রথমে ওমরাহ সেরে পরে হজ্জ অর্থাৎ তামাত্তু হজ্জ করার তাগিদ দিয়েছেন এবং না করলে ক্রোধ প্রকাশ করেছেন (আবুদাউদ হা/১৭৮৫, ৮৭)
অধিকাংশ মাজহাবী ইমাম, মুজতাহিদ, মুহাদ্দীস, মুফতী গণও উপরের হাদিসের আলোকে বলেছেন, বায়তুল্লাহ্র দুরবর্তী লোকেরা হজ্জে তামাত্তু আর নিকটবর্তী লোকেরা হজ্জে ক্বিরান করাই উত্তম । তবে নিজ নিয়ত ইচ্ছানুযায়ী তিনটির যে কোন ১টি সম্পন্ন করলেই হজ্জ পালন হবে ।
তামাত্তু হজ্জের ওমরাহ্র বিবরণঃ
প্রথমে ওমরাহঃ ওযূ, গোসল করে প্রবিত্রতা অর্জন করা । যদি বিমান মিকাতের আগে কোন স্থানে যাত্রা বিরতি না করে সে ক্ষেত্রে বিমানে উঠার পূর্বে প্রবিত্রতা অর্জন করে ইহরাম বাঁধতে পারেন । মীকাতে পৌঁছার আগে নিয়ত ও তালবিয়াহ পাঠ করা যাবে না ।
তবে এ যুগে সময়ের হিসাব জানা খুবই সহজ । বিমানে ঢাকা থেকে জেদ্দায় পৌছতে সাধারণতঃ সাড়ে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে । অবতরণের আধ ঘন্টা আগে বিমানেই ওযু করে ইহরাম বেঁধে নিবেন ।
পুরুষদের জন্য ইহরাম সাদা রঙের সেলাই বিহীন লুংগী ও চাদর । দেহে সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে, ইহরামের কাপড়ে নয় ।
আয়েশা (রাঃ) বলেন, “আমি এহরামের পূর্বে রাসুল (সাঃ) এর গায়ে খুশবু লাগাতাম (সহীহ মুসলিম হা/১১৮৯)
টুপি, গেঞ্জি, জাইঙ্গা, সেলাই করা মাথার রুমাল, তাবিজ ইত্যাদি কিছুই ব্যবহার করা যাবে না । ইহরাম পড়ার পরেও গোসল করতে পারবে, ইহরাম বদলানো যাবে, ময়লা হলে ধৌত করা যাবে ।
সাদা সেয়াই বিহীন ইহরামের কাপড় পড়াকে সংকল্প করুন আপনি কাফন পড়ে আত্মীয় স্বজন ছেড়ে আখেরাতের পথে রওয়ানা হচ্ছেন ।
মিকাত, ইহরাম বাঁধাঃ বাংলাদেশের হাজীদের জন্য মিকাত ইয়ালামলাম পাহাড় থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে ।
ইহরাম বাঁধার পর দো’আঃ لبيك عُمْرَةً লাব্বায়েক ওমরাতান (আমি ওমরাহ্র জন্য হাজির) অতঃপর
তালবিয়াহঃ
«لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ»
‘লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বায়েক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বায়েক; ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারীকা লাক’ (আমি হাযির হে আল্লাহ আমি হাযির । আমি হাযির । তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির । নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা, অনুগ্রহ ও সাম্রাজ্য সবই তোমার; তোমার কোন শরীক নেই)
রাসুল (সাঃ) বলেন, কোন মুসলিম যখন তালবিয়া পাঠ করে, তখন তার ডাইনে-বামে, পূর্বে-পশ্চিমে তার ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত কংকর, গাছ, ও মাটির ঢেলা সবকিছু তার সাথে তালবিয়াহ পাঠ করে (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৫৫০)
অথবা আল্লা-হুম্মা লাব্বায়েক ওমরাতান ( হে আল্লাহ! আমি ওমরাহ্র জন্য হাযির) অথবা
লাব্বায়েক আল্লা-হুম্মা ‘ওমরাতাম মুতামাত্তি‘আন বিহা ইলাল হাজ্জি; ফাইয়াসসিরহা লী ওয়া তাক্বাব্বালহা মিন্নী’ ( হে আল্লাহ! আমি ওমরাহ্র জন্য হাযির, হজ্জের উদেশ্যে উপকার লভকারী হিসাবে । অতএব তুমি আমার জন্য ওমরাহকে সহজ করে দাও এবং আমার পক্ষ হ’তে তা কবুল করে নাও)
এই দো’আটিও পড়ে নিবেনঃ ‘ফাইন হাবাসানী হা-বিসুন, ফা মাহাল্লী হায়ছু হাবাসতানী’ [যদি (আমার হজ্জ বা ওমরাহ পালনে) কোন কিছু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহ’লে যেখানে তুমি আমাকে বাঁধা দিবে (হে আল্লাহ!) সেখানেই আমার হালাল হওয়ার স্থান হবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৭১১)]
সবগুলো দো’আই পড়ুন আরো বেশী করে দো’আ পাঠ করুনঃ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাহ, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিনান্না-র’ (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট জান্নাত প্রার্থনা করছি ও জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি)
‘রব্বে ক্বিনী আযা-বাকা ইয়াওমা তাব‘আছু ‘ইবা-দাকা (হে আমার প্রতিপালক! তোমার আযাব হ’তে আমাকে বাঁচাও! যেদিন তোমার বান্দাদের তুমি পুনরুত্থান ঘটাবে)
বিমান থেকে নেমে বিমান বন্দরের যাবতীয় নিয়মাবলী শেষে যানবাহন যোগে প্রবাসের আবাস্থলে যেয়ে মাল সামান রেখে, প্রয়োজনে সামান্য বিশ্রাম, ওযু করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফে যাবেন ।
বিঃ দ্রঃ যখনই যে স্থানেই ৫ ওয়াক্ত সলাতের সময় হবে বা জামায়াত শুরু হবে সম্ভব হলে জামাতে শরীক হবেন, বিশেষ কারনে না পারলে একাকি, দাঁড়িয়ে না পারলে বসে, ক্বেবলার দিক না জানলে বা না হতে পারলে (বিমানে) যে কোন দিকেই কেবলা করে ফরজ সলাত আদায় করে নিবেন ।
কা’বা গৃহ দৃষ্টোচর হওয়া মাত্র দু’হাত উঁচু করে আল্লাহু আকবার বলে নিজ ইচ্ছানুযায়ী যেকোন দো’আ করুন অথবা
ওমর (রাঃ) পড়েছিলেনঃ আল্লা-হুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, ফাহাইয়েনা রব্বানা বিস সালাম (হে আল্লাহ! তুমি শান্তি । তোমার থেকেই আসে শান্তি । অতএব হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের শান্তির সাথে বাঁচিয়ে রাখো!)-বায়হাক্বী ৫/৭৩
হারামে ডান পা রেখে দো’আঃ পড়া:
اللّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ،
আল্লা-হুম্মা ছাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া সাল্লেম; আল্লা-হুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রহমাতিকা (হে আল্লাহ! তুমি মোহাম্মাদ-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ কর । হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তোমার অনুগ্রহের দরজা সমূহ খুলে দাও (হাকেম ১/২১৮; আবুদাউদ হা/৪৬৫; ইবনু মাজাহ হা/৭৭২-৭৩; ছহীহাহ হা/ ২৪৭৮)অথবা
، أَعُوْذُ باِللهِ الْعَظِيمِ وَ وَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ»
আ‘ঊযু বিল্লা-হিল আযীম, ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম, ওয়া বিসুলত্বা-নিহিল ক্বাদীমি মিনাশ শায়ত্বা-নির রজীম (আমি মহীয়ান ও গরীয়ান আল্লাহ এবং তাঁর মহান চেহারা ও চিরন্তন কর্তৃত্বের আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিতারিত শয়তান হ’তে)
ত্বাওয়াফঃ আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ প্রদক্ষিণ করাকে ত্বাওয়াফ বলে ।
এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাইল (আঃ) কে দায়িত্ব দিলাম যে তোমরা আমার ঘর পবিত্র করো তাওয়াফকারী ও ইতিকাফকারীদের জন্য (বাক্বারাহ ২/১২৫)
ত্বাওয়াফে কুদূমঃ (আগমনী ত্বাওয়াফ) ওযু অবস্থায় হারামের যেকোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করে সোজা মাত্বাফে গিয়ে কা’বার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত হাজারে আসওয়াত (কালো পাথর) বরাবর সবুজ বাতির নীচ থেকে কাবা গৃহকে বামে রেখে ত্বাওয়াফ শুরু করবেন ।
ত্বাওয়াফ কেনঃ আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের তাওয়াফ করার নির্দেশ দিয়েছেন (দেখুন সুরা হজ্জ ২২/২৯) এছাড়াও হ’তে পারে-
১) এটাই পৃথিবীতে আল্লাহ্র ইবাদতের জন্য নির্মিত প্রথম গৃহ (আলে ইমরান ৩/৯৬)
২) এটি পৃথিবীর নাভিস্থল এবং ঘুর্ণায়মান লাটিমের কেন্দ্রের মত ।
৩) প্রকৃতির প্রত্যেক ছোট বস্তু বড় বস্তুকে কেন্দ্র করে ঘোরে ।
বাম দিক হ’তে কেনঃ সকল কাজ ঘড়ির কাঁটার মত ডান দিক হ’তে করতে হয়। ত্বাওয়াফ বাম দিকে হওয়ার কারন হতে পারেঃ
১) প্রকৃতির সকল কিছু এমনকি দেহের রক্ত প্রবাহ বাম থেকে ডাইনে আবর্তিত হয় ।
২)হৃদপিন্ড বুকের বামে থাকে । কা’বার প্রতি অধিক আকর্ষণ অনুভূত হয় ।
ইযত্বিবা শুধু ত্বাওয়াফে কুদূমেঃ মানে ডান বগলের নীচ দিয়ে ইহরামের কাপড় বাম কাঁধের উপর উঠিয়ে ডান কাঁধ খোলা রাখা ।
ত্বাওয়াফ কত বারঃ ৭ বার । হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করে এখানে আসলেই ১ ত্বাওয়াফ ।
শুরুতে হাজারে আসওয়াদ-এর দিকে হাত ইশারা করে বলবেনঃ বিসমিল্লাহি আল্লা-হু আকবার (আল্লাহ্র নামে শুরু করছি এবং আল্লাহ সবার বড়) শুধু আল্লাহু আকবার বলা যায় ।
তাওয়াফের শুরুতে আপনার জন্য নিম্নের দো‘আটি পড়া সুন্নাত :
اللّهُمَّ إِيْمَاناً بِكَ وَتَصْدِيْقاً بِكِتَابِكَ وَوَفَاءً بِعَهْدِكَ وَاتِّبَاعاً لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ
অর্থ : “হে আল্লাহ্! আপনার প্রতি ঈমান এনে, আপনার কিতাবকে সত্য প্রতিপন্ন করে, আপনার প্রতিশ্রুতিকে পূর্ণ করে এবং আপনার রাসূলের সুন্নাতকে অনুসরণ করে (আমি তাওয়াফ শুরু করছি)”
সুযোগ পেলে শুরু ও শেষে হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করবেন । ভিরের কারনে সু্যোগ না পেলে করবেন না ।
রাসুল (সাঃ) হযরত ওমর (রাঃ) কে বলেছেন হে ওমর! তুমি শক্তিমান মানুষ । হাজরে আসওয়াদ স্পর্শের জন্য ভির ঠেলে যেতে যেও না যা দুর্বলকে কষ্ট দিবে । যদি খালি পাও তবে স্পর্শ করো । অন্যথায় এর দিকে মুখ করো, তাকবির দাও ও তাহলিল পড়ো (মুসনাদে আহমদ; ১৯০)
হাজারে আসওয়াদ জান্নাত থেকে নেমে আসা একটি পাথর (নাসাঈ ৫/২২৬)
রুকনে ইয়ামেনী থেকে দক্ষিণ দেওয়াল এলাকায় পৌঁছে প্রতি ত্বাওয়াফে দো’আঃ
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
রব্বা-না আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র (হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দাও ও আখিরাতে মঙ্গল দাও এবং আমাদেরলে জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা কর (বাক্বারা ২/২০১; ছহীহ আবুদাউদ হা/১৬৬৬; মিশকাত হা/২৪৮৭, ২৫৮১; বুখারী হা/৪৫২২,৬৩৮৯)
হাজারে আসওয়াদ ১ম কোণ এবং রুকনে ইয়ামানী হবে চতুর্থ কোণ ।
সম্ভব হলে রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করে বলবেনঃ বিসমিল্লা-হি, ওয়াল্লা-হু আকবার । না হলে দো’আটি পড়তে পড়তে চলে যাবেন ।
হাদিসে এসেছে, ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসুল (সাঃ) কে দুই রুকনে ইয়ামেনি ব্যতীত অন্য জায়গায় স্পর্ষ করতে দেখিনি (মুসলিম ২/৯২৪)
রমল শুধু ত্বাওয়াফে কুদুমেঃ মানে প্রথম ৩টি ত্বাওয়াফে একটু জোরে চলতে হবে বাকি ৪টি স্বাভাবিক গতিতে চলবেন । এভাবেই ৭ বার ত্বাওয়াফ ।
বিঃদ্রঃ তাওয়াফের সময় জামা’আতের ইকামত দিলে জামা’আতে শরীক হবেন । ছালাত শেষে তাওয়াফের বাকি অংশ পূর্ণ করবেন ।
ত্বাওয়াফ শেষের সলাতঃ তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থানকে ছালাতের স্থান বানাও (বাক্বারাহ ২/১২৫)
ত্বাওয়াফ শেষ করে মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে বা ভিড়ের কারনে অস্বম্ভব হ’লে হারাম শরীফের যেকোন স্থানে দু’রাক’আত নফল সলাত আদায় করবেন।
প্রথম রাকা’আতে ফাতিহার পর সূরা কাফেরূন দ্বিতীয় রাক’আতে ইখলাছ বা অন্য সুরাও পাঠ করা যাবে।
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্র ৭টি ত্বাওয়াফ করবে ও শেষে দু’রাক’আত ছালাত আদায় করবে, সে যেন ১টি গোলাম আযাদ করল । এই সময় প্রতি পদক্ষেপে ১টি করে গোনাহ ঝরে পড়ে ও ১টি করে নেকী লেখা হয় (মিশকাত হা/২৫৮০)
সলাত শেষে সম্ভব হলে হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করবেন ।
রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি রুক্নে ইয়ামেনী ও হাজারে আসওয়াত স্পর্শ করবে, তার সমস্ত গোনাহ ঝরে পড়বে (ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২৭২৯; ছহীহ নাসাঈ হা/২৭৩২)
ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদ প্রতি তাওয়াফেই স্পর্শ করতেন (আবু দাউদ হা/১৮৭৬)
মসজিদ থেকে বের হওয়ার দো’আঃ প্রথমে বাম পা রেখে বলবেন-
اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِك»
আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া সাল্লেম; আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাযলিকা (হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ কর । হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি) অথবা
আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া সাল্লেম; আল্লা-হুম্মা’ছিমানী মিনাশ শায়ত্বা-নির রজীম ((হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ কর । হে আল্লাহ! তুমি আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে নিরাপদ রাখো-ছহীহাহ হা/২৪৭৮)
সাঈঃ ওমরা ও হজ্জে ছাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানোই সাঈ । প্রথমে ছাফার নিকতবর্তী হয়ে পড়বেনঃ
﴿۞إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ فَمَنۡ حَجَّ ٱلۡبَيۡتَ أَوِ ٱعۡتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَاۚ وَمَن تَطَوَّعَ خَيۡرٗا فَإِنَّ ٱللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ ١٥٨ ﴾ [البقرة: ١٥٨]
ইন্নাছ ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা’আ-ইরিল্লা-হ । ফামান হাজ্জাল বাইতা আবি’তামারা ফালা জুনা-হা আলাইহি আই ইয়াত্ত্বাউওয়াফা বিহিমা । ওয়ামান তাত্বাউওয়া’আ খায়রান, ফাইন্নাল্লা-হা শা-কেরুন আলীম (নিশ্চয়ই ছাফা ও মারওয়া আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহের অন্যতম । অতএব যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্র হজ্জ অথবা ওমরা করবে, তার জন্য এদু’টি পাহাড় পদক্ষিণ করায় দোষ নেই । সুতরাং যে ব্যক্তি স্বেছায় সৎকর্ম করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার যথার্থ মূল্যায়নকারী ও তার সম্পর্কে সম্যক অবগত)বাক্বারাহ ২/১৫৮
অতঃপর ছাফা পাহাড়ে উঠে কা’বার দিকে তাকিয়ে-লা ইলাহা ইল্লালাহ, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লালাহ, আল-হামদুলিল্লাহ ও ৩ বার আল্লাহু আকবার ।
তারপর কা’বার দিকে মুখ করেই দু’হাত তুলে ৩ বার নীম্নের দো’আ ও অন্যান্য দো’আ করবেন-
«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَه»
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু; ইউহ্য়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লে শাইয়িন ক্বাদীর । লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ, আনজাযা ওয়াদাহূ ওয়া নাছারা আবদাহূ, ওয়া হাযামাল আহ্যা-বা ওয়াদাহূ (আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই । তিনি এক । তাঁর কোন শরীক নেই । তাঁরই জন্য সকল রাজত্ব ও তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা । তিনিই বাঁচান ও তিনিই মারেন এবং তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী । আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই । তিনি এক । তাঁর কোন শরীক নেই । তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন ও স্বীয় বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রু দলকে ধ্বংস করেছেন । মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৫৫; আবুদাউদ হা/১৮৭২)
দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী সবুজ দাগে একটু জোরে দৌড়াবেন । ছাফা থেকে মারওয়া গেলে এক সাঈ । মারওয়াতেও ছাফার মত দো’আ পড়বেন । মারওয়া থেকে সাফা দুই সাঈ । এভাবে ৭ সাঈ মারওয়াতে শেষ হবে ।
বিঃদ্রঃ এছাড়াও ত্বাওয়াফ ও সাঈ তে আপনার জানা, ইচ্ছানুযায়ী বেশি বেশি দো’আ করুন ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসুউদ (রঃ) ও আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) এই সময় পড়েছেন-রব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতাল আ’আযযুল আকরাম (হে প্রভু! আমাকে ক্ষমা কর ও দয়া কর । আর তুমিই সর্বোচ্চ সম্মানিত ও সবচেয়ে দয়ালু) বায়হাক্বী ৫/৯৫পৃঃ
বিঃদ্রঃ সাঈর সময় জামা’আতের ইকামত দিলে জামা’আতে শরীক হবেন । ছালাত শেষে সাঈ’র বাকি অংশ পূর্ণ করবেন ।
সাঈ শেষে মারওয়া থেকে ডান দিকে সেলুনে গিয়ে মাথা মুন্ডন বা চুল ছেটে খাটো করবেন । এরপর জমজমের পানি আরোগ্যের নিয়তে পান করবেন এবং কিছুটা মাথায় দিবেন ।
রাসুল (সাঃ) বলেন, এই পানি কোন রোগ থেকে আরোগ্যে্র উদ্দেশ্যে পান করলে তোমাকে আল্লাহ আরোগ্য দান করবেন (ছহীহ তারগীব হা/ ১১৬৪)
এখানেই আপনার তামাত্তু হজ্জের ওমরাহ শেষ হবে । এখন আপনি হালাল, ইহরাম খুলে স্বাভাবিক পোশাক পড়ে ত্বাওয়াফ এবং সৌদির যে কোন স্থান ভ্রমণ, দর্শণ করতে পারেন ।
বিঃদ্রঃ ১টি হজ্জের সাথে ১টি ওমরাই করতে হবে এর বেশি করা বেদ’আত ।
মসজিদে নববীর যিয়ারতঃ এটি হজ্জ বা ওমরার কোন অংশ নয় । শুধু রাসুল (সাঃ) এর কবর যেয়াওতের উদ্দেশ্যে গমন করা জায়েয নয় ।
রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘অন্যত্র ছালাত আদায়ের চেয়ে আমার মসজিদে ছালাত আদায় করা এক হাজার গুণ উত্তম এবং...(ইরওয়া হা/১১২৯)
মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে দু’রাকা’আত তাহিইয়াতুল মাসজিদ পড়বেন । তবে জামায়াত চলতে থাকলে সরাসরি জামা’আতে যোগ দিবেন । তারপর রওযাতু জান্নাহ বা জান্নাতের বাগিচা যা কবর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান সবুজ রঙের খাম্বা দ্বারা বেষ্টিত এবং স্থানটি সাদা কার্পেট বিছিয়ে নির্দিষ্ট করা আছে, এখানে ইচ্ছামত নফল ছালাত পড়বেন ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«مَا بَيْنَ بَيْتِي وَمِنْبَرِي رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ وَمِنْبَرِي عَلَى حَوْضِي»
‘‘আমার ঘর ও মিম্বরের মাঝখানের স্থানটি জান্নাতের বাগিচা সমূহের একটি বাগিচা। আর আমার মিম্বর আমার হাওযের উপর অবস্থিত। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৩৫ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪৩৬।
কবর যেয়ারতঃ রওযাতুল জান্নাহ’র বামে দক্ষিণ দিকে রাসুল (সাঃ) এর কবরে গিয়ে সালাম দিবেন এভাবে-
«السلام عليك أيها النبي و رحمة الله و بركاته،
আসসালা-মু ‘আলায়কা ইয়া রাসুলাল্লাহ ওয়া রহমাতুল্লা-হে ওয়া বারাকা-তুহু (‘হে আল্লাহ্র রাসুল! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হউক এবং আল্লাহ্ররহমত ও বরকত সমূহ নাযিল হউক)
একটু এগিয়ে আবুবকর (রাঃ)কে সালাম দিবেন-এভাবে-
আসসালা-মু ‘আলায়কা ইয়া আবাবাকরিন রহমাতুল্লা-হে ওয়া বারাকা-তুহু (‘হে আবুবকর! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হউক এবং আল্লাহ্র রহমত ও বরকত সমূহ নাযিল হউক)
আরো এগিয়ে অমর (রাঃ) কে সালাম দিবেন-
আসসালা-মু ‘আলায়কা ইয়া ওমারো রহমাতুল্লা-হে ওয়া বারাকা-তুহু (‘হে ওমর! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হউক এবং আল্লাহ্র রহমত ও বরকত সমূহ নাযিল হউক)
বাক্বী গোরস্থান যিয়ারতঃ মসজিদে নববীর পূর্বদিকে ‘বাক্বী’উল গারক্বাদ কবরস্থান যিয়ারত করা সুন্নাত । কবরবাসীর উদ্দেশ্যে দু’হাত তুলে নিম্নোক্ত দো’আঃ আসসালা-মু ‘আলায়কুম দারা ক্বাওমিন্মু’মিনীন, ওয়া আতা-কুম মা তূ’আদূনা গাদান মুআজ্জালূনা; ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা-হেকূন; আল্লা-হুম্মাগফির লিআহলি বাক্বী’ইল গারক্বাদ (কবরবাসী মুমিনগণ!আপনাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হউক! আগামীকাল (ক্বিয়ামতের দিন) আপনারা লাভ করবেন যা আপনাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে । আর আমরাও আল্লাহ চাহেন তো সত্বর আপনাদের সাথে মিলিত হ’তে যাচ্ছি । হে আল্লাহ! আপনি ‘বাক্বী’উল গারক্বাদ’ এর অধিবাসীদের ক্ষমা করুন-মিশকাত হা/১৭৬৬) অথবা
আসসালা-মু ‘আলা আহলিদ্দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা; ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা-হেকূন; নাসআলুল্লা-হা লানা ওয়া লাকুমুল ‘আ-ফিয়াতা (মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ!আপনাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হউক! আর আমরাও আল্লাহ চাহেন তো অবশ্যই আপনাদের সাথে মিলিত হ’তে যাচ্ছি । আমাদের ও আপনাদের জন্য আমরা আল্লাহ্র নিকটে কল্যাণ প্রার্থনা করছি-মিশকাত হা/১৭৬৪)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَطَهَّرَ في بَيْتِه ثُمَّ أَتَى مَسْجِدَ قُبَاء فَصَلَّى فِيْه صَلاةً كَانَ لَه كَأَجْرِ عُمْرَةٍ»
“যে ব্যক্তি নিজ গৃহে পবিত্রতা অর্জন করে মাসজিদে কুবায় এসে নামায পড়ে, তার একটি উমরা করার সাওয়াব হবে।’
হজ্জের নিয়মাবলীঃ-শুক্রবারে হজ্জ হলেও যোহর পড়বেন ।
৭ই যিলহাজ্জ যোহরের ছালাতের পর ইমামুল হজ্জ (হজ্জের নেতা) কাবা শরীফে প্রথম খুতবায় আগামী ৫ দিনের কর্মসুচি উল্লেখ করবেন । হাজিদের জন্য এ খুতবা শোনা উচিত । এটা হজ্জের অংশ নয় ।
৮ই যিলহাজ্জ সকালে স্বীয় অবস্থানস্থল হ’তে ওযূ-গোসল সেরে শরীরে সুগন্ধি মেখে হজ্জের ইহরাম বাঁধে দো’আ পাঠ করবেন- لبيك حَجاً
লাব্বায়েক আল্লা-হুম্মা হাজ্জান (হে আল্লাহ! আমি হজ্জের উদ্দেশ্যে তোমার দরবারে হাযির) অতঃপর
তালবিয়াহঃ ‘লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বায়েক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বায়েক; ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারীকা লাক’ (আমি হাযির হে আল্লাহ আমি হাযির । আমি হাযির । তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির । নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা, অনুগ্রহ ও সাম্রাজ্য সবই তোমার; তোমার কোন শরীক নেই)
ইহরাম পড়ার পরেও গোসল করতে পারবে, ইহরাম বদলানো যাবে, ময়লা হলে ধৌত করা যাবে ।
মিনায় গমনঃ ৭ই যিলহাজ্জ দিবাগত রাতে বা ৮ই যিলহাজ্জ সকালে তালবিয়াহ পড়তে পড়তে মিন অভিমুখে রওয়ানা হবেন এবং যোহরের পূর্বেই সেখানে পৌছাবেন । এখানে ওয়াক্তিয়া ফরজ সালাত জমা না করে সময় মত কসর পড়বেন তবে জামায়াতে পড়লে ইমাম পূর্ণ পড়লে আপনিও পূর্ণ পড়বেন ।
মিনায় রাত্রি যাপন করে ৯ই যিলহাজ্জ সূর্যোদয়ের পর তালবিয়াহ পড়তে পড়তে আরাফা অভিমুখে রওয়ানা হবেন ।
আরাফায় অবস্থানঃ আরাফায় যোহর থেকে মাগরীব পযন্ত অবস্থান করবেন ।
অতপর (জমা তাক্বদীম) যোহর ও আছরের সলাত এক আযান ও দুই ইক্বামতে ক্বছর সহ মূল জামায়াতে আদায় করবেন ।
আরাফাতে সূর্য ঢলার পরে ইমাম হজ্জের সুন্নাতী খুতবা দেন, নীরবে মনযোগ দিয়ে শুনবেন ।
রাসুল (সাঃ) বলেন, শ্রেষ্ঠ দো’আ হ’ল আরাফা দিবসের দো’আ...(মিশকাত হা/২৫৮৯; ছাহীহাহ হা/ ১৫০৩)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ওরা আল্লাহর মেহমান । আল্লাহ ওদের ডেকেছেন তাই ওরা এসেছে । এখন ওরা চাইবে, আর আল্লাহ তা দিয়ে দিবেন (ইবনু মাজাহ হা/২৮৯৩; ছহীহাহ হা/১৮২০)
বিঃদ্রঃ কোন সুন্নাত, নফল ছালাত আরাফায় পড়বেন না । আরাফার জন্য নির্দিষ্ট কোন দো’আ নেই । আপনার ইচ্ছেমত জানা সকল দো’আ আরবী বা মাতৃভাষায় বেশি করে পাঠ করবেন ।
কল্পনা করুন এমনি এক ময়দানে সকল মানবজাতির রূহ আল্লাহ্র সম্মুখে অঙ্গীকার করেছিলাম আপনিই আমাদের প্রতিপালক যাকে আহ্দে আলাস্তু বলা হয় ।
দুনিয়ার এই সর্ব বৃহৎ জামায়াতে এক স্থান হ’তে কাছাকাছি অন্য স্থানে যেতে কত কষ্ট পরিশ্রম সময় ব্যয় করতে হয়, হৃদয়ের গভীরের অন্তঃকরন দিয়ে স্মরণ করুন আমল বিহীন মানুষের আমার আপনার কি অবস্থা হবে সেই হাশরের জামায়াতে । আল্লাহ্র নিকট তাওবা করুন আমাদের যেন বিনা হিসাবে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন । আমীণ!
৯ই যিলহাজ্জ সুযাস্তের পর মাগরীব না পড়ে আরাফা হ’তে তালবিয়াহ, বিভিন্ন দো’আ ও তওবা ইস্তিগফার করতে করতে মুযদালিফা অভিমুখে রওয়ানা হবেন।
তওবার দো’আঃ আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহে’ (আমি আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি । যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই । যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্ব চরাচরের ধারক এবং আমি তাঁর দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি-মিশকাত হা/২৩২৫, ২৩৫৩)
মুযদালিফায় রাত্রিযাপনঃ মুযদালিফায় পৌঁছে জমা তাখীর অর্থাৎ মাগরিব পিছিয়ে এশার সাথে জমা ও ক্বছর পড়বেন । কোন সুন্নাত, নফল ছালাত মুযদালীফায় পড়বেন না । এরপর ঘুমিয়ে যান ।
এখানে ফজর নামাজ আউয়াল ওয়াক্তে পারলে মাশ’আরুল হারামে (মুযাদালিফার মসজিদ) না পারলে নিজ অবস্থানে বসে পড়ে নিবেন ।
একটু ফর্সা হলে সূর্যোদয়ের পূর্বেই মিনার অভিমুখে রওয়ানা হবেন । চলার পথে পাথর বা কংকর কুড়িয়ে নিন যা মিনায় গিয়ে বড় জামরায় মারবেন ।
মিনায় প্রত্যাবর্তনঃ ১০ই যিলহাজ্জ মিনা ফিরে এসে সূযাস্তের পূর্বে বড় জামরাকে লক্ষ করে মক্কা বাম দিকে ও মিনা ডান দিকে রেখে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন । প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার বলবেন । বড় জামরায় পৌঁছা মাত্রই তালবিয়া পাঠ বন্ধ করবেন ।
কংকর নিক্ষেপ ও তাকবীর বলার সময় দৃঢ় সংকল্প করুন-
আমি আমার সার্বিক জীবনে শয়তান ও শয়্তানী বিধানকে ছুঁড়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র বিধানকে ঊর্ধ্বে রাখব । ত্বাগূতের বিরুদ্ধে আল্লাহ্র বিধান কায়েম করার সংগ্রাম করব ।
রাসুল (সাঃ) বিদায় হজ্জের এদিন কংকর নিক্ষেপের পর সকেলে্র উদ্দেশ্যে খুতবা দিয়েছেন, ঈদুল আযহার ছালাত আদায় করেনি ।
বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর ঈদের তাকবীর-
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু; আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ (আল্লাহ সবার বড়, আল্লাহ সবার বড় । নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যাতীত । আল্লাহ সবার বড়, আল্লাহ সবার বড়, আল্লাহ্র জন্যই সকল প্রশংসা) বারবার পড়বেন ।
এখন কুরবানী করতে পারেন । কুরবানীর পর মাথা মুন্ডন ও ইহরাম খুলে স্বাভাবিক পোষাক পড়তে পারবেন, এটা হবে তাহাল্লুলে আউয়াল বা প্রাথমিক হালাল অর্থাৎ স্ত্রী মিলন ব্যতীত সব করা যাবে।
যে পর্যন্ত না হাদির পশু তার স্থানে পৌঁছায়, তোমরা মাথা মুন্ডন কর না (বাক্বারাহ ২/১৯৬)
যবেহ কালে দো’আঃ বিস্মিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার; আল্লা-হুম্মা মিন্কা ওয়া লাকা, আল্লা-হুম্মা ত্বাকাব্বাল মিন্নী (আল্লাহ্র নামে কুরবানী করছি । আল্লাহ সবার বড় । হে আল্লাহ! এটি তোমারই তরফ হ’তে প্রাপ্ত ও তোমারই উদ্দেশ্যে নিবেদিত । হে আল্লাহ! তুমি এটা আমার পক্ষ থেকে কবুল কর’ ।
উল্লেখ্য যে, কুরবানী মিনা ছাড়া মক্কাতে এসেও করা যায় । ১০-১২ই যিলহাজ্জ এই তিন দিনের যে কোন দিন করবানী করা যায় ।
ত্বাওয়াফে ইফাযাহ ও সাঈঃ তাওয়াফে কুদুম বা উমরার তাওয়াফ ছাড়া বাকি সব তাওয়াফ স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করেই করবেন ।
তামাত্তু হাজীগণ মিনা থেকে মাথা মুন্ডন করে ওযু গোসল সেরে মক্কায় এসে ত্বাওয়াফে ইফাযাহ করে সাঈও করবেন । এরপরই আপনি পূর্ণাঙ্গ হালাল হবেন ।
ত্বাওয়াফে ইফাযাহ ও সাঈ করে সেদিনই মিনায় এসে রাত্রি যাপন করবেন ।
ত্বাওয়াফে ইফাযাহ ১০ই যিলহাজ্জে করাই উত্তম । আপনি আইয়ামে তাশরীকের মাধ্যেও অর্থাৎ ১১, ১২, ১৩ই যিলহাজ্জের যেকোন দিন করতে পারেন ।
আইয়ামে তাশরীক্বের তিন দিন মিনা রাত্রি যাপন করা ওয়াজিব । পাঁচ ওয়াক্ত সলাত জামা’আতে মসজিদে খায়েফে আদায় করা উত্তম । সলাত ক্বছর বা পূর্ণ পড়া দু’টিই জায়েয (মিশকাত হা/ ১৩৪৭)
আইয়ামে তাশরীকের প্রতিদিন দুপুরে সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়া হ’তে সন্ধ্যার মধ্যে তিনটি জামরায় ৩*৭=২১টি করে ৩দিনে মোট ৬৩টি কংকর নিক্ষেপ করতে হয়।
প্রথমে জামরা ছুগরা (ছোট), তারপর উস্তা (মধ্যম) ও শেষে কুবরা (বড়) ধারাবাহিক মারতে হবে ।
ছোট ও মধ্যম জামরায় কংকর মেরে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে দো’আ করুন ।
বড় জামরায় মেরে দো’আ করবেন না ।
বিদায়ী ত্বাওয়াফঃ বিদায়ী ত্বাওয়াফ ছাড়া মক্কা ত্যাগ করা যাবে না । আপনি আইয়ামে তাশরীকের পরবর্তী যে কোন তারিখে বা দেশে ফেরার আগের দিন (এটাই করা ভাল) বিদায়ী ত্বাওয়াফ হিসাবে শুধু বায়তুল্লাহ্র ত্বাওয়াফ করবেন সাঈ করতে হবে না ।
«لاَ يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْتِ»
নবী (সাঃ) বলেছেন, কাবাঘরে বিদায়ী তাওয়াফ করা ছাড়া যেন কেউ দেশে ফিরে না যায় (মুসলিম ১৩২৭)
বিঃদ্রঃ মক্কায় অবতরণের পর ওমরাহ্র পর হ’তে ৮ই যিলহাজ্জ পূর্ব পর্যন্ত এবং আইয়ামে তাশরীকের পর মক্কায় ফিরে যত খুশি আপনার ইচ্ছানুযায়ী স্বাভাবিক পোষাকে বায়তুল্লাহ্র ত্বাওয়াফ করতে পারবেন ।
রাসুল (সাঃ) বলেন, যখন তোমাদের কেউ হজ্জ সম্পন্ন করে ফেলে সে যেন তার পরিবার পরিজনের কাছে দ্রুত ফিরে যায় । আর এতেই বেশি ছোঁয়াব (মুসতাদরাক লিল হাকেম ১/৬৫০)
দেশে ফেরার সময় তিনবার আল্লা-হু আকবার অতঃপর
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু; লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লে শাইয়িন ক্বাদির; আ-ইয়িবূনা তা-ইবূনা ‘আ-বিদূনা সা-জিদূনা লি রব্বিনা হা-মিদূনা; ছাদাক্বাল্লা-হু ওয়া‘দাহু ওয়া নাছারা ‘আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযা-বা ওয়াদাহু ।
অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই । তিনি এক । তাঁর কোন শরীক নেই । তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব ও তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা এবং তিনিই সকল বস্তুর উপরে ক্ষমতাবান । আমরা সফর হ’তে প্রত্যাবর্তন করছি তওবাকারী হিসাবে, ইবাদতকারী হিসাবে, সিজদাকারী হিসাবে এবং আমাদের প্রভুর জন্য প্রশংসাকারী হিসাবে । আল্লাহ সত্যে পরিণত করেছেন তাঁর প্রতিশ্রুতিকে, জয়ী করেছেন তাঁর বান্দা কে এবং পরাজিত করেছেন একাই সম্মিলিত (কুফরী) শক্তিকে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৪২৫)
সফর শেষে মুস্তাহাব হলো নিজ ঘরে প্রবেশের পূর্বে নিকটতম মসজিদে দু’রাক’আত নফল ছালাত আদায় করা (বুখারী)
নিজ গৃহে প্রবেশকালীন দো’আঃ প্রথমে বিসমিল্লাহ অতঃপর গৃহবাসী উদেশ্যে সালাম (বুখারী,মিশকাত হা/৪১৬১ নূর ২৪/৬১)
হজ্জে মাবরুর (কবুল হজ্জ) এর কিছু লক্ষণ
হজ্জ কবুল হওয়ার শর্তঃ হজ্জে মাবরূরঃ
১। যে হজ্জে গোনাহ করা হয়নি এবং ছহীহ সুন্নাহ মোতাবেক আদায় করা হয়েছে ।
২। হজ্জ থেকে ফিরে আসার পর পূর্বের চেয়ে উত্তম হওয়া (ফতহুল বারী ৩/৪৪৬ হা/১৫১৯-এর ব্যাখ্যা)
ইসলামী লেবাস-ছুরুতঃ
এক মুষ্ঠি দাড়ি রাখব ।
টাকনুর উপর কাপড় পড়ব ।
আহাল পরিবারকে শরীয়া অনুযায়ী পর্দার সাথে পরিচালনা করব । এই বলে আল্লাহ্র নিকট খাটি তাওবা অঙ্গীকার করব ।
নিজে ও আহালদেকে টিভিতে নাটক, সিনেমা, নাচ, গান ইত্যাদি যাবতীয় শরীয়াত বিরোধী অনুষ্ঠান দেখা থেকে বিরত রাখা । প্রয়োজনে টিভিতে খবর ও ইসলামিক অনুষ্ঠান দেখা যাবে ।
নিজে ও আহালদের প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা কুরআনের তাবসীর “ইবনে কাছিরের অনুবাদ” এবং সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অনুবাদ কিনে পড়াব ।
৩। অনেকে লোন নিয়ে ব্যবসা, বাড়ি করছেন । পরিশোধ না করে হজ্জে আসছেন ।
হজ্জেই খাটি তাওবা করুন জীবনে আর লোন নিবেন না, দেশে যেয়েই পরিশোধ করে দিবেন ।
তাহলে আপনার হজ্জ আল্লাহ কবুল করতে পারেন ।
কুরআনে বর্ণিত সুদ হারাম এবং দেয়া-নেয়া কবিরা গুনাহ ।
ঋণ মুক্তির দো’আঃ আল্লা-হুম্মাকফিনী বেহালা-লেকা ‘আন হারা-মেকা ওয়া আগ্নিনী রেফাযলেকা ‘আম্মান সেওয়া-কা (হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হারাম ব্যতীত হালাল দ্বারা যথেষ্ট কর এবং তোমার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে অন্যদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন কর)
রাসুল (সাঃ) বলেন, এই দো’আ পাঠের দ্বারা পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তার ঋণমুক্তির ব্যবস্থা করে দেন (মিশকাত হা/২৪৪৯)
তবে তাড়াহুড়া করবেন না । ঋণ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পড়তেই থাকুন । আপনার সদিচ্ছা থাকলে একদিন ঋন মুক্ত হবেনই । ইনশা-আল্লাহ!
এটাও পড়ুনঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখ্লি, ওয়া যালা’ইদ দায়নি ওয়া গালাবাতির রিজা-লি (হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ হ’তে, অক্ষতা ও অলসতা হ’তে, ভীরুতা ও কৃপণতা হ’তে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের যবরদস্তি হ’তে-মিশকাত হা/২৪৫৮)
৪। ইতোপূর্বে যদি আল্লাহ্র হক নষ্ট করে থাকেন, ছালাত, সিয়াম ও যাকাতে অমনোযোগী থাকেন ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসুন ।
কুরআন ও সহীহ হাদিসে বর্ণিত সহীহ আক্বীদা রাখুন । বিশেষ করে “আল্লাহ আরশে অবস্থিত” “আল্লাহ্র আকার আছে তবে তুলনীয় নয়” “রাসুল (সাঃ) মাটির তৈরী” বিশ্বাস করাই সহীহ আক্বীদা ।
হারাম ভক্ষণ করবেন না । বিশেষ করে তামাক (বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল, হুক্কা) জাতীয় দ্রব্য খাবেন না ।
একটু চিন্তা করুন দুনিয়ার সকল বিশেক্ষজ্ঞ তামাক ক্ষতিকর বলেছে । আপনি কেন খাবেন ?
আল্লাহ বলেছেন - وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ
“তিনি তোমাদের জন্য পবিত্র ও ভাল (তাইয়েবাত) বস্তু হালাল করেন আর তিকর - নোংড়া (খাবায়িস) জিনিষ হারাম করেন (সূরা আল-আরাফ :১৫৭)
আউয়াল ওয়াক্ত সালাত আদায় করুন, যেমনটি মক্কা-মদিনা করে আসলেন । সমাজে জামায়াত দেরিতে হলে, একাই পড়ে নিবেন আবার সম্ভব হলে জামাতেও শরীক হ’তে পারেন (এটা নফল হবে)
সালাতের সহীহ ত্বরিকা ইকামত আযানের অর্ধেক, পায়ের সাথে পা-কাধের সাথে কাধ মিলিয়ে দাঁড়ানো, বুকের উপরে হাত বাঁধা, সুরা ফাতেহা পাঠ করা, আমীণ জোড়ে বলা, তাকবীরে তাহরীমা, রুকুর আগে ও পরে এবং মধ্য বৈঠক থেকে উঠে রফউল ইয়াদাইন করা...... ইত্যাদি গ্রহন করুন ।
সালাতের সহীহ ত্বরিকা জানার জন্য বুখারী ও মুসলিম শরীফের সালাত অধ্যায় অনুবাদ কিনে পড়ুন ।
প্রচলিত সম্মিলিত মুনাজাত, মিলাদ, শবে-বরাত, মিলাদুন্নবী......ইত্যাদি সকল বেদাত সহীহ না জানা পর্যন্ত আর করব না ।
সকল প্রকার বেদ’আত এবং সন্দেহযুক্ত বিষয় বর্জন করব । সমাজের ইমাম বা আলেমদের নিকট থেকে “লিখিত পূর্ণাঙ্গ সহীহ দলিল” না পাওয়া পর্যন্ত আর করব না ।
যত বড় পীর বুজুর্গ আলেম হোক না কেন কুরআন হাদিসের সহীহ দলিল দেখাতে না পারে তার কথাও মানব না ।
কোন সু-সজ্জিত মাযারে আশা পূরণের উদ্দেশ্যে মান্নত ও দান খয়রাত করব না । জ্ঞাতব্যঃ মাযার করা ইসলামে যায়েজ নাই ।
হজ্জের পড় নিয়ত করুন-আমি সকল ইবাদত কুরআনের তাফসীর, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম......এর অনুবাদ কিনে অধ্যায়ন করে মিলিয়ে পালন করব ।
হজ্জের দিনগুলো আল্লাহর নিকট হতে ক্ষমা লাভের বিশেষ দিন । সকল প্রকার শিরক, বেদাত, হারাম হ’তে খাটি তাওবা করে ফিরে আসুন কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ্র দিকে । মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আর শিরক, বেদাত, হারামে লিপ্ত হব না এই বলে দৃঢ় অঙ্গীকার করুন ।
যারা কুরআন ও সহীহ হাদিস অনুযায়ী আক্বীদা রাখে, ইবাদত বন্দেগী করে বা পূর্ণাঙ্গ দলিল সহ বলে, প্রচার করে, অন্য কারো কথা বা যুক্তি দিয়ে বিরোধিতা না করে দলিলগুলো যাচাই করে আপনিও সহীহ তরিকা ধরুন ।
ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) বলেছেন, মুসলমানগণ ইজমা করেছেন যে, যার সামনে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাত প্রকাশ পাবে-অন্য কারো কথার নির্ভরতায়-তা উপেক্ষা করা বৈধ হবে না (ইবনুল কাইয়েমঃ মাদারিযুস্সালিন ২/৩৩২)
৫। হজ্জ করলেও হক্কুল ইবাদ (বান্দার হক) ক্ষমা হবে না, যতক্ষণ না ক্ষতিপূরণ দিয়ে বা ক্ষমা চেয়ে ওই ব্যক্তিকে রাজি খুশি করা হবে ।
গণ মানুষের হক ঘুষ এবং জন কল্যানের কাজের টাকা আর নিব না বলে খাটি তাওবা করুন এবং বেনামে সওয়াবেন নিয়ত না করে দান করুন ।
বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘হে লোকসকল!......। অতএব সাবধান! তোমরা আজকের দিনের পর যেন পুনরায় পথভ্রষ্ট হয়ো না(মিশকাত হা/২৬৫৯)
হজ্জে যাচ্ছি এবং হাজী বা আলহাজ্জ টাইটেল বলা/দেওয়া যায়েজ কি!!!
আত্মশুদ্ধীঃ
হজ্জে যাওয়ার পূর্বে ইচ্ছা করে লোকজনকে বলে বেড়ানো, আমি হজ্জে যাচ্ছি বা ১,২,৩,...এত বার হজ্জ করেছি এবারও যাচ্ছি । অথবা
সমাজের ইমাম দ্বারা দো’আর ব্যবস্থা করা যাতে ইমাম সাব মুনাজাতে অমুক সাব, অমুক সাব বার বার নাম ধরে বলে সমাজের লোকদের জানান । এতে রিয়া হ’তে পারে ।
কেউ জিজ্ঞাসা করলে হজ্জে যাচ্ছেন কি বা কত বার করেছেন তখন বলতে পারেন । এছাড়া না বলাই ভাল । হজ্জ হবে আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে, মানুষকে জানানোর জন্য নয় ।
আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ওমরাহ পরিপূর্ণভাবে পালন কর (বাক্বারাহ ২/১৯৬)
ছালাত, ছিয়াম, যাকাতের মত হজ্জও ফরজ । হজ্জ পালন করে নামের আগে হাজী বা আলহাজ্জ টাইটেল দেই কিন্তু ছালাতী, ছিয়ামী, যাকাতী দেই না কেন !!!
রাসুল (সাঃ) বা তাঁর কোন সাহাবী, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন, আইয়ামে মুজতাহীদিন কেউ কি এরকম টাইটেল দিয়েছেন । প্রমাণ না থাকলে আাপনি কেন দিবেন ??? !!!
রাসুল (সাঃ) আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করে বলেছেন-
আল্লাহুম্মা হাজ্জাতুন লা রিয়ায়া ফিহা ওয়ালা সুমআতু (হে আল্লাহ! এমন হজ্জের তাওফিক দাও যা হবে রিয়া ও সুনাম কুড়ানোর মানসিকতা হতে মুক্ত-ইবনে মাজাহ ২৮৯০)
মক্কা-মদিনা থেকে বিশেষ যা আনবেনঃ
মসজিদে নববীর দোতালায় ফ্রী বই ডিসট্রিবিউশন সেকশন আছে, সেখান থেকে বাংলা, ইংলিশ বই সংগ্রহ করে আনতে পারেন ।
খুব ভাল মানের আজওয়া খেজুর আনতে পারেন । হাদিসে আছে-যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে ৭টি আজওয়া খেজুর আহার করে, সেদিন তাকে কোন বিষ বা যাদু ক্ষতি করতে পারে না (সহীহ মুসলিম)
বরকতময় জমজমের পানি অবশ্যই আনবেন ।
আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) এর বর্ণিত ছহীহ ত্বরীকায় সকল ইবাদত-বন্দেগী করুন, যাবতীয় শিরক-বিদ’আত ও হারাম বর্জন করুন । আমীণ!
বিষয়: বিবিধ
১৬০৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন