“যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তসমূহ, যাকাত দেয়ার সঠিক নিয়ম এবং যাকাত আদায় না করার শাস্তি......”
লিখেছেন লিখেছেন মন্টি পাগলা ০৯ আগস্ট, ২০১৩, ১২:০৩:১৮ রাত

প্রিয় ধনী ও স্বচ্ছল ভাই ও বোনেরা,
আসুন আমরা সঠিকভাবে যাকাত আদায় করি, সঠিকভাবে যদি যাকাত আদায় করা হয় তবে দেশের দারিদ্র সহজেই দুর করা সম্ভব ।
ইসলামী ব্যাংকের এই বছরের জরিপে দেখা গিয়েছে, দেশে যে পরিমান ধনী ও স্বচ্ছল অর্থাৎ যাকাত দেয়ার উপযুক্ত মানুষ আছেন, তারা সবাই যদি যাকাত দিতেন তবে এই বছর ২৫ হাজার কোটি টাকা যাকাত দেয়া হতো দরিদ্র মানুষদের কে ।
এই বিপুল পরিমান অর্থ দিয়ে দেশের দারিদ্র দূরীকরন কোন ব্যপার ই হতো না ।
তা্ই আসুন এই দরিদ্র মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে তাদের দুঃখ আমরা কিছুটা অনুভব করার চেষ্টা করি ।
*যাকাত ফরজের শর্তসমূহঃ
কোন ব্যাক্তির উপর তখনই যাকাত ফরজ হবে যখন সেই ব্যাক্তির কাছে সাড়ে ৭ ভরি সোনা বা সাড়ে ৫২ ভরি রূপা কিংবা সমপরিমান টাকা পয়সা ১ বছর বা তার বেশি সময় ধরে জমা থাকে । সোনা, রূপা বা অর্থসম্পদের বেলায় শতকরা আড়াই টাকা হিসেবে দিতে হবে । আর গৃহপালিত পশুর যাকাত হলো বিশটি পশু থাকলে একটি পশু যাকাত দিতে হবে ।
এমন অনেকে আছেন যাদের কাছে সাড়ে ৭ ভরি সোনা নেই, ২/৩ ভরি আছে, অথচ ব্যাংকে তার ৩ লাখ টাকা ১ বছর ধরে জমা আছে, তবে তার উপর যাকাত ফরজ । কারন, ৩ লাখ টাকায় প্রায় ৬ ভরি সোনা ক্রয় করা যায়, আর তার কাছে আছে আরো ২/৩ ভরি । অর্থাৎ যোগ করলে দেখা যায়, ৮/৯ ভরি সোনার সমপরিমান সম্পদ আছে উক্ত ব্যাক্তির কাছে । অনেকেই অজ্ঞতাবশত মনে করে থাকেন যে, কেবল সাড়ে সাত ভরি সোনা কিংবা কেবল সাড়ে ৫২ ভরি রূপা কিংবা কেবল ঐ পরিমান টাকা থাকলেই যাকাত ফরজ হবে । অথচ, উভয় সম্পদ যোগ করে নিসাব পরিমান হলেও যে যাকাত ফরজ হবে, এটা অনেকেই জানেন না ।
দয়া করে সবাই এই বিষয়ে সবাই সাবধান হবেন, কারন যে সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হওয়া সত্বেও যাকাত আদায় করা হয়না, সেই সম্পদ আল্লাহর কাছে হারাম সম্পদ বলে বিবেচিত হয় । আর হারাম সম্পদের দ্বারা কেনা খাবার যাদের শরীরে প্রবেশ করে ঐসব শরীরকে আল্লাহ তায়ালা হারাম শরীর বলে উল্লেখ করেছেন ।
*যাকাত আদায়ের সঠিক নিয়মঃ
ইসলামী রাষ্ট্রে যাকাত অবশ্যই রাষ্ট্র কর্তৃক আদায় করে শরীয়তের বিধান মোতাবেক নির্দিষ্ট খাতে বন্টন করতে হবে । রাসূলের (সঃ) জীবদ্দশায় এবং তাঁর পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনের কার্যক্রম ছাড়াও হযরত মুয়াযকে ইয়েমেনের শাসক রূপে প্রেরনের মূহুর্তে রাসূল (সঃ) যাকাত সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রঃ) থেকে বর্ণিত,
নবী করীম (সঃ) হযরত মুয়াযকে ইয়েমেনের শাসক রূপে প্রেরনের মূহুর্তে এই মর্মে উপদেশ দিয়েছিলেন যে,
“তুমি তাদের বলবে, আল্লাহ যাদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন, ঐসব ধনীদের কাছ থেকে যাকাত আদায় করে দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করা হবে । যদি তারা এটা মেনে নেয় তবে সাবধান তাদের সর্বোত্তম মাল যাকাত হিসেবে গ্রহন করবে না ।”
এই বাক্যের দ্বারা রাসূল (সঃ) বুঝিয়েছেন, সর্বোত্তম মাল গ্রহন না করে মাঝামাঝি ধরনের (Quality’র) মাল গ্রহন করতে হবে ।
(বুখারী, মুসলিম)
কিন্তু, যদি রাষ্ট্রব্যবস্থা ইসলামী না হয়, তাহলে ধনবান ব্যক্তিরা নির্ভরযোগ্য কোন ইসলামী সংস্থার মাধ্যমে যাকাত একত্রিত করে উপযুক্ত খাতে বন্টন করবে । আর যদি এ ধরনের কোন সংস্থাও না থাকে তবে, নিজ দায়িত্বেই তারা যাকাত উপযুক্ত খাতে ব্যয় করবে ।
*যাকাত না দেয়ার শাস্তিঃ
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূল (সঃ) বলেন,
“যে সম্পদে যাকাত দেয়া হয় না, বরং যাকাতের সাথে তা মিশ্রিত হয়ে যায়, পরিনামে সে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায় ।”
(বুখারী, শাফেঈ)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূল (সঃ) বলেন,
“যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন অথচ সে যাকাত আদায় করেনা, কিয়ামতের দিন ঐ সম্পদ এমন এক বিষধর সাপের রূপ ধারন করবে যার মাথায় থাকবে দুটি কালো বর্নের ফোটা (কালো ফোটা হলো ভয়াবহ বিষধর সাপের চিহ্ন) ।
উক্ত সাপ তার গলায় হাসলীর ন্যায় জড়িয়ে দেয়া হবে । এরপর সাপ উক্ত ব্যাক্তির দুই চোয়াল কামড়িয়ে ধরে বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমাদের জমাকৃত সম্পদ ।”
এরপর রাসূল (সঃ) নিচের আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন,
“আল্লাহ যাদের সম্পদ দান করেছে অথচ কৃপনতা করে, তারা যেন একথা মনে না করে যে, তাদের এই কৃপনতা তাদের জন্য কোন কল্যান আনয়ন করবে । বরং তা তাদের চরম অকল্যানেরই কারন হবে ।”
(বুখারী)
এছাড়াও আল কুরআন ও হাদিসে যাকাত না দেয়ার আরো অনেক কঠিন শাস্তির উল্লেখ আছে যা ১টি পোস্টে লেখার আধিক্য হয়ে যাওয়ায় দেয়া সম্ভব হলো না ।
ভাই ও বোনেরা, আমরা সঠিকভাবে আমাদের সম্পদের যাকাত আদায় করে এই দরিদ্র মুখগুলোতে কি একটু হাসি ফোটাতে পারি না…..???
(ছবি গুলো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত)
লেখাটি ফেইজবুকে পড়তে এখানে ক্লিক করুন...!!!
বিষয়: বিবিধ
৪৪২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন