স্বপ্ন ---- ( পর্ব এক)
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:২২:১২ দুপুর
(এক)
কয়েকদিন হতে কয়েকটা বই প্রয়োজন, কিন্তু যানজটের কারনে কোথাও যেতে ইচ্ছে হয় না অপুর।
আজ অনেক কষ্টে বাড়ি হতে বের হয়েছে। যেতে হবে সেই নীলক্ষেতে । কিন্তু যানজটের কারনে দূরত্ব মনে হয় সেই ১০০ মাইল।
শুধু বই কিনা না আর একটি উদ্দেশে বের হয়েছে ঘর হতে।
রথ দেখা আর কলা বেচা টাইপের আর কি।
রামপুরা টিভি ভবনের সামনে ফালগুণ পরিবহণের কাউন্টারে টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়াল ও। কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে আল্লাহ মালুম।
পাক্কা ৪১ মিনিট পর ফালগুণ পরিবহণের একটা বাস এসে দাঁড়াল ওদের সামনে।
বাসে উঠার সময় বুজল, অনেকে অপেক্ষা করছিল।
ধাক্কা ধাক্কি করে কোন মতে বাসে উঠে ,এ মাথা হতে ও মাথা চোখ বুলিয়ে খালি কোন ছিট নজরে পড়ল না অপুর।
অগত্য দাড়িয়ে দাড়িয়ে যেতে হবে আর কি করা ।
মালিবাগ রেল গেটে ১০ মিনিটের একটা ছোট্ট বিরতির পর বাস যখন ছাড়ল তখন অপুর মত অনেকেই মনে মনে স্বস্থির এক একটা গোপন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়েছে এই ভেবে-- এই যানজট অল্পের উপর দিয়ে গেছে।
(দুই)
বই কিনে বিহঙ্গ পরিবহণের একটি বাসে উঠে জানালার ধারে একটি ছিটে আরাম করে বসে বাহিরে চেয়ে রং বেরঙের পুরুষ নারির ভিড়ের দিকে তাকিয়ে একটা কথা মনে হল অপুর।
ঢাকাতে প্রায় এক কোটি জনগণ বসবাস করে। এই নিউমার্কেটে না এলে এটি ধারণা করা জায় না। ওহ বাবারে এত মানুষ, আর প্রতিনিয়ত বাড়ছে মানুষ। আর ৫-১০ বছর পর কি যে অবস্থা হবে ভাবনা আর সামনে চলে না ওর।
বাস ধিরে ধিরে গতি পেতে যাচ্ছে। বাহির হতে দু নয়ন বাসের ভিতর আনল অপু।
এক বয়স্ক মহিলা হাতে কতগুলি কাগজের প্যাকেট নিয়ে ওর ছিটের দিকে আসছে। যেহেতু সামনে আর খালি ছিট নাই তাই ওর ছিটেই বসবে আতে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই। ।আপু একটু নড়েচড়ে তাকে জায়গা দেবার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। ছিট গুলি এতই ছোট ছোট যে দু জনে বসতে খুব কষ্ট হয়। মাশাল্লাহ মহিলা ছোট খাট হাতি না হলেও ভালুক তো হবেই।
মহিলা বা মেয়েদের হুদাই হুদাই অপ্রয়োজনীয় মার্কেট কেন যে করে এটি অপুর ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক আজও বের করতে পারেনি।ও ওর ভাবি এবং আপাদেরও দেখেছে এই অনাবশ্যক মার্কেট করতে। আর ও বাবারে এত ঘুরাফিরা আর দোকানে দোকানে একই জিনিস বার বার দেখে যে ,এটি আর এক আশ্চর্য।
একবার ওর বড় ভাবি কি একটা বস্তু কিনতে ১৫-২০ টা দোকান ঘুরে ঘুরে তারপর কিনেছিল। ঐ একটা বস্তু কিনতে সকাল গড়িয়ে সেই শেষ দুপুর। ঐদিন হতে কান ধরে তওবা করেছে, বাড়ি বসে বসে বিটিভির হুদাই অনুষ্ঠান দেখা ভাল তো মেয়েদের সঙ্গে মার্কেটে যাওয়া ভাল না।
(তিন)
আবল তাবল এই সব ভাবতে ভাবতে বাইরে হতে দু চোখ বাসের ভিতরে নিতেই মনটা ভাল হয়ে গেল অপুর। ওর সামনের সিটে এক দম্পতির পিচ্চি ওর বাবার কোল হতে ওদের দিকে মুখ করে দাড়িয়ে।
বড় বড় ডাগর ডাগর কাজল রাঙ্গা চোখে এতি উতি তাকাচ্ছে।
ওর খুব ভাল লাগে বাচ্চাদের। কেমন করে যেন খুব তাড়া তাড়ি ভাব হয়ে যায় পিচ্চিদের সঙ্গে। আর ভাব হলে দুষ্টমিও যে হয় না তা কিন্তু নয়।
পিচ্চির দিকে ভাল করে ওর ঝাঁকড়া চুল আর পরনের পোশাক দেখে অপুর মনে হল মেয়ে। আহ কি ছুইট মুখ খানি। আর চোখে কি অপরসিম কৌতূহল।
পিচ্চিটির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পিছকি একটা হাসি দিল অপু।
ব্যর্থ হল পিচ্চির চঞ্চল চোখের দৃষ্টি আকর্ষণে।
এবার চোখের সাহায্যে বিশেষ ভঙ্গি ও ঠোঁটে সেই আগের ফিছকে হাঁসি।
অবশেষে ওর দিকে তাকাল পিচ্চি। প্রথমে একটু অবাক ও বিস্মিত হল । যখন বুজল ভয়ের কিছু নাই সামনের মানুষটির মধ্যে। তেমনি ফিক করে হেসে দিল ও।
এবার চোখ টেরা করে মুখটা মিস্টার বিনের নকল করতেই শব্দ করে হেসে দিল পিচ্চিটি।
এই কাজ অবশ্য অপু করে চলেছে পাশে বসা ভালুক ও পিচ্চির মা বাবার অগোচরে।
(ক্রমশ)
বিষয়: বিবিধ
১১৬৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন