এবার সরকারী খড়গ মানবাধিকার কর্মির উপর
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ১১ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:১৬:৩৩ বিকাল
সিকদার মোহাম্মদঃ
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের ধারাবাহিকতার স্বীকার দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান ।ঈদের আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার সরকারের জুলুম নির্যাতনের খড়গ নেমে এলো মানবাধিকার কর্মির উপর ।রাজধানীর গুলশান-১ এ নিজ বাসার সামনে থেকে শনিবার রাত ১০টার দিকে আদিলুর রহমান খানকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ।
আদিলুর রহমানের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬ লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।হেফাজতের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতিঝিল অভিযান নিয়ে ‘অধিকার’ তথ্য বিকৃতি ঘটিয়েছিল বলে দাবি করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরার হবে বলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন ।কিন্তু গ্রেফতারের ১৪ ঘন্টার মধ্যেও এ বিষয় আনুষ্ঠানিক ভাবে সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হয়নি ।
বর্তমান সময়ে অধিকার-কে বাংলাদেশের অন্যতম সক্রিয় ও নির্ভরযোগ্য বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে মনে করা হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রতিবেদন প্রকাশে অনেকাংশে এই সংস্থাটির তথ্য ব্যবহার করে থাকে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে সরকারি বাহিনীর হামলায় নিহত ৬১ জনের নাম জানতে পেরেছে দেশের বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন-‘অধিকার’।
শাপলা চত্বরে গণহত্যা নিয়ে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সমাবেশ ও মানবাধিকার লংঘন’ শীর্ষক ২৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে যৌথ বাহিনীর রায়ট কার, নিহতদের লাশের ছবি, লাশ নিয়ে গাড়িতে তোলার দৃশ্য, অভিযানের পর সিটি করপোরেশনের পানিবাহী গাড়ি দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করার দৃশ্যসহ বেশকিছু আলোকচিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্লেষক মহলের ধারণা হেফাজতের গণহত্যার বিষয় অধিকারের এই বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি কারণে সরকারের খড়গ এর সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানের উপর নেমে এলো ।
কি তথ্য বিকৃত করা হয়েছে তা এখনো সরকার থেকে পরিস্কার করা হয়নি ।
সরকার প্রথমে কেউই হতাহত হয়নি বলে দাবি করেছিল। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় সেদিন রাতের অভিযানের ছবি ও নির্বিচারে মানুষ হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সরকার সেই দাবি থেকে সরে আসে এবং সারাদিন বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্ঘাতে তিনজন পথচারী, একজন পুলিশ সদস্যসহ মোট ১১ জন নিহত হওয়ার কথা জানায়।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতার বরাতে ‘অধিকার’ ২০২ জনের মৃত্যুর এবং প্রায় ২৫০০ জন নিখোঁজের খবর নিস্চিত করে। তবে এ ব্যাপারে চলমান অনুসন্ধানের একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অধিকার নিহত ৬১ জনের নাম সংগ্রহ করেছিল। আল-জাজিরা টেলিভিশনও চ্যানেল ৫০ জন নিহত হবার কথা জানিয়েছে।
অধিকারের প্রতিবেদনে শিশু-কিশোর হত্যার বিবরণ তুরে ধরে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে যোগ দিয়েছিল অনেক শিশু-কিশোর। প্রায় প্রত্যেক শিশুই ছিল কওমি মাদরাসার ছাত্র। এই কওমি মাদরাসার শিশুরা সাধারণত খেটে খাওয়া গ্রাম-বাংলার অসহায় দরিদ্র মানুষের সন্তান। এই শিশুদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে এতিম। যারা রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। ৬ মে ২০১৩ রাতের অন্ধকারে যৌথবাহিনীর হামলা থেকে বাদ পড়েনি সেসব শিশুও। বিশেষ করে এতিম শিশুদের মধ্যে থেকে যারা নিখোঁজ রয়েছে, কেউ তাদের সন্ধান না করায় এতিম শিশুদের নিখোঁজ কিংবা হতাহতের সংখ্যা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে বলে ‘অধিকার’ তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল।
‘অধিকার’ এর পক্ষ থেকে সেদিন রাতের পরিস্থিতিতে সেই রাতে কত লাশ কীভাবে কোথায় সরানো হয়েছে এবং নিহতদের সঠিক সংখ্যা কত সে সকল গুরুতর মানবাধিকারের প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছিল ।
এছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ মানুষের বর্ণনা, প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকের বর্ণনা ,নিহতের আত্মীয়-স্বজনদের বর্ণনায় নিরাপত্তা বাহিনীর বর্বরতার বর্ণনা তুলে ধরা হয় ।
নিখোঁজদের স্বজনদের বর্ণনায় শাপলা চত্বরের ভয়াবহতা কথা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়
এবং গণহত্যা সংগঠনের পর লাশ গুম ও সিটি কপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার সহ রক্ত ধুয়ে রাস্তা পরিস্কার করার মত বিষয় গুলো ফুটে উঠে ।
৬ মে মধ্যরাতে শাপলা চত্বরে অভিযানের পরপরই হেফাজতে ইসলামের নেতারা দাবি করেন, ঘুমন্ত ও ইবাদতরত মুসল্লিদের ওপর গুলি চালিয়ে ওই রাতে অন্তত তিন হাজার লোককে হত্যা করা হয়।
দেশ-বিদেশের একাধিক মানবাধিকার সংগঠন এবং গণমাধ্যমও হেফাজতের এ দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়েছে। হংকংভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ার হিউম্যান রাইটস কমিশন জানিয়েছিল, শাপলা চত্বরে নিহতের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি হতে পারে।
প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট বলছে, ৫ ও ৬ মে অন্তত ৫০ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এটাকে ‘গণহত্যা বলেই মনে হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছে ইকোনমিস্ট। এভাবে দেশে বিদেশে সরকার এর দ্বারা প্রবল চাপের মধ্যে পড়ে ।মূলত অধিকারের এই রিপোর্ট শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যার দেশের মধ্যে একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করে । ইত্যকার ঘটনার কারণে আদিলুর রহমান খান সরকারের কোপানলে পড়েছেন কিনা সে বিষয়ে অনেকে সন্দেহ করছেন ।
এদিকে ‘অধিকার’ এর সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে আটকের অল্প সময়ের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন গুলোর মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে । আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি)তাকে ‘হুইসলব্লয়ার’ (যিনিন সরকারের অপকর্ম জনগণের কাছে তুলে ধরেন) আখ্যায়িত করে কড়া ভাষায় বিবৃতি প্রদান করে পুলিশি হেফাজতে তার জীবন বিপন্ন হবার আশংকা করে এবং অবিলম্বে তার মুক্তির জন্য ঢাকার কূটনৈতিক মিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সংগঠনটি। বিবৃতিতে সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ২০০৬ এর অপপ্রয়োগের অভিযোগও আনা হয়েছে ।সুপ্রিমকোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে তার আটকের ব্যাপারে আদালতের হস্তক্ষেপও আশা করে এএইচআরসি।
সরকারের এই ঘটনাকে মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে সকল কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়া বাংলাদেশে মানবাধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে সংকুচিত করা হচ্ছে বলে মনে করা হয়।
অধিকারের সম্পাদক ও সাবেক ডেপুটি এটর্নি জেনারেল আদিলুর রহমান খানের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির পক্ষ থেকে।
আদিলুর রহমান খানের মতো একজন মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতার সরকারের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের চরম বহিঃপ্রকাশ বরে মন্তব্য করে বেগম জিয়া অবিলম্বে এই নির্ভিক ও সত্য প্রকাশে সাহসী মানবাধিকার কর্মীর মুক্তি দাবি করেন।
বিষয়: বিবিধ
১৬০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন