বস্তু এবং বুদ্ধিবৃত্তি
লিখেছেন লিখেছেন চক্রবাক ১৬ আগস্ট, ২০১৪, ১১:০৫:১৯ রাত
জন্ম পক্রিয়ায় প্রাণীয় সত্ত্বাগুলো যান্ত্রিক প্রোডাক্টের অনুরূপেই পৃথিবীকে জানান দেয় তার উপস্থিতি। সত্ত্বাকে মানবরূপে গড়ে তুলতে অনেকটা সাহায্য করে সামাজিকীকরণ। প্রকিৃতির সত্ত্বাগুলোর মধ্যে পার্থক্য করতে বস্তুগত প্রক্রিয়া থেকে জ্ঞানগত কাঠামোকে অধিক মূল্যায়ন করেই সত্ত্বার উপর গুন আরোপ করা হয়। তাকে ভাগ করা হয় বিভিন্ন শ্রেণীতে যেমনঃ মনুষ্যসত্ত্বা, পশুসত্ত্বা ইত্যাদি। মানুষ যখন তার ওরিজিনকে অস্বীকার করে কেবলমাত্র বস্তুগত সত্ত্বায় নিজেকে রূপান্তরিত করে তখন তার মধ্যে আর মনুষ্যস্পৃহা থাকে না। তার সাথে প্রাণীয় আচরণের যোগসূত্রই তাকে মনুষ্যসত্ত্বা থেকে বিচ্যুতি ঘটায়। তাই প্রত্যেক মানব সত্ত্বার উচিৎ স্প্রিচুয়ালিটিকে কেন্দ্র করে জীবন পরিচালিত করা। মানুষ যেহেতু একটি পবিত্র সৌল থেকে উদ্ভূত সেহেতু তার উচিত জ্ঞানীয় কাঠামোকে প্রাধান্য দিয়ে বস্তুগত সমিৃদ্ধিকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করা। বস্তু সবসময় মানবীয় গুনাবলির উল্টো দিকে অবস্থান করে। মানুষের যখন বস্তুপ্রীতি বেড়ে যায় তখন সে মানবীয় গুনাবলির বিরুদ্ধাচারন করে।
সামাজিকীকরণ এ’ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে। লুকিন গ্লাস সেলফ থিওরিতে লক্ষ্য করলে দেখা যায় মানুষ সব সময় নিজেকে সমাজের চোখে দেখতে চায়, আর সেখানে সমাজ কাঠামোটা যদি বস্তুবাদী হয় তখন মানুষ স্রোতের তালে নিজেকে হারিয়ে ফেলে বস্তুবাদী জীবন যাপন করতে থাকে। এর থেকে উত্তোলনের জন্য মানুষের একমাত্র উপায় হচ্ছে রেশনাল হওয়া, তার আত্মিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করা।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও আমাদেরকে চরম ভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক/বস্তুবাদী করে তোলে। ২০০ বছর ইংরেজ উপনিবেশ ফলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে উপনিবেশিক কাঠামো তৈরি হয়েছে, সেই শিক্ষা ব্যাবস্থায় বিদ্যা অর্জন করে আমরা কেবল মাত্র পুঁজিবাদের শ্রমের প্রোডাক্টই তৈরি হচ্ছি। আর আমাদের মূল্যবোধ দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ হয়ে যাচ্ছি বুদ্ধিভিত্তিক দালাল, কেউবা সাধারণ শ্রমিক। সমাজের এমন কাঠামোকে মেনে নিলে আমরা কেবল কেবল বুর্জুয়া শ্রেণীর পুঁজির একটা হাতিয়ার হিসেবে তৈরি হব। আমরা আমাদের উপনিবেশিক চিন্তা মুক্ত হয়ে নতুন ধারা সৃষ্টি করতে হবে, যেটা পরিচালিত হবে মূল্যবোধ, বুদ্ধিবিত্তি দ্বারা। জ্ঞানই শক্তি আমাদের এই শ্লোগানটি সবার কাছে পরিচিত করতে হবে।
বিংশ সতাব্দিতে ইউরোপে স্প্রিচুয়াল জ্ঞান বিমুখ বর্বর সময় যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখন কিছু আত্মা সর্বস্ব মানুষ জেগে উঠেছিল এবং ফ্রিডরিখ নীটশে, জঁ-পল সার্ত্র্, মার্টিন হাইডেগারদের দ্বারা তৈরি হয়েছিল নতুন সম্ভাবনা তত্ত্ব অস্তিত্ববাদ। যেখানে মনে করা হয় মানুষ এনিমেলের মত বস্তুগত সত্ত্বা নয় তাদের নিজস্ব একটা সত্ত্বা আছে যেটাকে কাজে লাগিয়ে তারা নিজের ব্যক্তি সত্ত্বাকে বিকশিত করে। কারণ বস্তুবাদের ফলে মানুষের মূল্যবোধ হারিয়ে যাওয়ায় বস্তুগত উন্নতির লক্ষ্যে তারা নানা ধরনের অন্যায় কাজকে পরিচালনা করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। তাই মানুষের মধ্যকার সামজিক নিরাপত্তাহীনতা, ভয় উৎকন্ঠাজনিত ইত্যাদি সমস্যার কথাকে অস্তিত্বের সংকট বিবেচনা করে অস্তিত্ববাদ। পরবর্তীতে অস্তিত্ববাদও আত্মা সর্বস্ব মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলে। সাঁৎরে তার বিং এন্ড নাথিংনেস গ্রন্থে সত্ত্বার সর্বাত্মক স্বাধীনতার কথা বলেন, যেটাতে সামষ্টিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়। যেহেতু মানবিক সত্ত্বা একটি শৃঙ্খলিত নির্ভরতা সূত্রে আবদ্ধ। আর স্বভাবতই মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হতে পারেনা। কারণ দুই বা ততোধিক আত্মা মিলে একটি নতুন সত্ত্বার সৃষ্টি করে যেটি হয়ত নতুন গুনে গুণান্বিত। যদি সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি তার সতন্ত্র ইচ্ছার উপর কর্তৃত্ব চালায় তখন সমঝোতার পথ অবরুদ্ধ হয় এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মানুষের অন্যের প্রতি ভালবাসা, সম্প্রিতি, সহযোগিতা, আইনের অবক্ষয় তৈরি হয়। মোট কথা সমাজ পরিণত হয় দ্বন্দ্বাত্তিক একটি কাঠামোতে।
আর তাই প্রয়োজন নৈতিক জ্ঞান যার মাধ্যমে মানুষ সততা এবং মানবিকতাবোধ জাগাতে পারবে। যার দ্বারা মানুষের অধিকার রক্ষা করা যাবে। যেখানে দেবতা প্রোমিথিউস জ্ঞানের উৎকর্ষতাকে প্রাধান্য দিয়ে, জিউসের নিষেধ অমান্য করে মানুষের জন্য অগ্নি (জ্ঞান) চুরি করে নিজে শৃঙ্খলিত হয়েছেন। সেখানে আমাদের জ্ঞানের প্রতি এত অনীহা সত্যি বেদনাদায়ক। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে প্রায় পঞ্চাশটিরও বেশি আয়াতে জ্ঞান, যুক্তি বিচার বিশ্লেষণের কথা বলা হয়েছে সেখানে আমরা কেন জ্ঞান বিমুখ !!
তাই আমাদের প্রয়োজন বস্তুকে পেছনে ফেলে নিজের পবিত্র যৌক্তিক সত্ত্বাকে প্রাধান্য দেয়া। একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি বহিঃ জ্ঞানের ধারাকে অব্যাহত রাখা। ফলতই আগামীতে তৈরি হবে এক যুবক শ্রেণী যারা বস্তু নয় জ্ঞানের গুনেই গুণান্বিত, যারা ট্যাকনোরেশনাল নয় রেশনালিটিকেই টেকনো খাতে ব্যবহার করবে। তাহলেই সমাজ সামনে এগিয়ে যাবে। নিশ্চয়ই রাতের পর’ই দিন আসে, কষ্টের পর’ই সুখ আসে। আমরা নতুন ভোরের প্রত্যাশায়…
পূর্ব প্রকাশঃ- আমার ব্যাক্তিগত ব্লগ স্ফুলিঙ্গ এবং চক্রবাকে
বিষয়: বিবিধ
১৮৪৩ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
কথাটি মটেও সত্য নির্ভর নয়।। লক্ষ বছরের মানব উন্নয়নের ইতিহসে মানুষ কখনো ওরিজিনকে অস্বীকার করেনি। প্রকৃতিতে গড়ে উঠা পুরাতন পাথর যুগ, নতুন পাথর যুগ এবং উন্নয়ন, সম্মৃদ্ধির প্রাক বিজ্ঞান যুগের দলবদ্ধ মানুষ কখনো নৈতিকতাহীন ছিল না। সবক্ষেত্রই মানুষ বুদ্ধির উৎকর্ষতা, উদারতা, হারমনি কখনো বিনষ্ট হয় নি
মূলত মানুষের নৈতিকতার অধঃপতন শুরু হয় অতি সম্প্রতি- যখন প্রকৃতিতে বেয়ে উঠা মানুষের মাঝে অপার্থিব অবস্তুগত অলৈকিক দেব দেবতা, খোদা, আল্লা...........র আবির্ভাব ঘটে। তখন থেকে শুরু হয় দল, উপদল, গোত্র, ধর্মের বিভাজন। শুরু হয় অনৈতিকতা, মামুষের উপর মানুষের অধিপত্যি, দখল, কাইজ্যা, ফ্যাসাদ, যুদ্ধ, রক্তপাত। যা পৃথিবীর বহু অঞ্চলে এখনো চলছে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
কিরে ভাই ! আপনি আম না বাম কিছুই বুঝতে পারছি না। বিকৃত সভ্যতায় পড়ে কি ইতিহাস বিকৃতি ঘটেছে কিনা তা সম্পর্কে আমি নাওয়াকিফহাল ! হিরোডোটাস মশাই জানতে পারলে নিশ্চয়ই ইতিহাস রচনার কৃতিত্ব নিজ ঘাড় থেকে ফেলে দিবেন(ইতিঃ যাচ্ছেতাই ব্যবহারে)। আপনি প্রিমিটিক যুগকে সভ্য যুগ বলছেন আর মার্ক্স মশাই, ওয়েবের, রাসেল সাহেবগন প্রিমিটিক সোসাইটিকে বর্বর যুগ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এখানে আপনার সাথে ওনাদের কন্ট্রাডিক্টরি অবস্থান যারা কিনা আপনাদের ঈশ্বর! ইউরোপে রেনেসাঁর আবির্ভাবের কারণও কিন্তু বর্বর সভ্যতা থেকে বেরিয়ে আসার অভিপ্রায়। ইতিহাস বলছে অতীতে ক্রিশ্চিয়ান ধর্মযাজকদের গির্জা শোষণ থেকে বেরিয়ে আসার ইচ্ছেই রেনেসাঁর রুট। যেখানে রাসেল মশাই সহকারে আরও অনেক "প্রগতিবাদিরা" বলেছেন প্রাচীন যুগে মানুষ ঘূর্নিজড়, বন্যা, সূর্যের তাপ, রোগ এই বিষয়গুলিকে ভয় করে ঈশ্বর নামক একটি সত্ত্বার সৃষ্টি করেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয় থেকেই ঈশ্বরের সৃষ্টি, তারা কতই না অন্ধ, বর্বর !! যেখানে কার্লমাক্স সহ বিভিন্ন প্রগতিবাদিরা তাদের বিভিন্ন গ্রন্থে প্রিমিটিক সোসাইটিকে বর্বর বলে উল্লেখ করেছেন আপনি তাকে সভ্য বলছেন ?
দ্বিতীয়তঃ ধর্মের জন্য নয় মানুষের মূলত বস্তুবাদী উৎকর্ষতার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছানোর অভিপ্রায় মানুষের অধিপত্যি, দখল, কাইজ্যা, ফ্যাসাদ, যুদ্ধ, রক্তপাতের মূল কারণ। এ সম্পর্কে পড়ুন >> Click this link
আপনি ঠিকই বলেছেন বস্তু এবং বুদ্ধিবৃত্তি সব সময় পরিবর্তনশীল বস্তু এবং বুদ্ধিবৃত্তি যুগের উৎকর্ষতায় নিজেকে ঝালিয়ে নেয়ার অভিপ্রায় দমিয়ে রাখতে পারে না। ধর্মগ্রন্থগুলোও কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে শুধুমাত্র রেডিকেল গ্রন্থ ছাড়া। কারণ যে ধর্মগ্রন্থ মানুষের মুক্তির সমাধান তার পরিবর্তীত হতে যাবে কেন ? একমাত্র কোরআনই যুগ উপযোগী গ্রন্থ। যেগুলো যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না সেগুলোর অপরিবর্তনতা সমস্যার মূল হতেই পারে !
যা বলেছেন, এগুলো সব সাইন্স-ফিকশন বলেই নূন্যতম-জ্ঞান্সম্পন্ন-সাধারণ-শিক্ষিতরা জানে; এ্যাকচুয়াল হিষ্টোরী আর নন-ফ্যাকচুয়াল লিটারেচার গুলিয়ে ফেলে এমন মানুষ নামক জন্তু এখনও পৃথিবীতে আছে – তা আপনাকে দেখে নতুন করে জানলাম!
এ্যাকচুয়াল হিষ্টোরী অনুযায়ী মানব-সভ্যতা এখনও ১০,০০০ বছরও পেরোয়নি আর নন-ফ্যাকচুয়াল লিটারেচার তো অনেক আছে – এখনও কতো সিনেমা দেখা যায় কতো-শত লেখকের সেসব লিটারেচার অবলম্বনে! সেরকম সাহিত্য-সিনেমা-কে সত্য-ইতিহাস-জ্ঞান করা কথা মানবসমাজে বলে নিজেকে ভিন্ন-জন্তু হিসেবে পরিচয় না করিয়ে জঙ্গলে গিয়ে বানরকে বোঝানোর চেষ্টা করেন গিয়ে – তাতে করে নতুন-ইতিহাস গঠিত হইলেও হইতে পারে, আমরাও এমন গোবরধনের ফিকশনাল বুলি থেকে মুক্তি পেয়ে কিছু সত্য তথ্য পেলেও পেতে পারি!
আপনার চোখে সবই যখন নন-ফ্যাকচুয়াল, তা হলে ফ্যাকচুয়াল কোনটি? ১৪০০ বছর আগে হেরা পর্বতের শিয়ালের গর্তে আল্লার ওহী নাজিল? খচ্চচরে পিঠে নবী মোহাম্মদের মহাশুন্য ভ্রমন? দোজকের আগুন? জান্মাতের ৭২ বেশ্যা? নাকি অন্য কিছু???? বলেন তো, শুনি।
ওহ আচ্ছা! তোমারই আরেক নাম ফুয়াদ পাশা!
সেটা আমার বা আমাদের মতামত জেনে কি করবে? মানব সভ্যতার ইতিহাস, সে সভ্যতার বয়সকাল জানতে বৈজ্ঞানিক ইহিদীদের কিতাবাদী দেখে জ্ঞানার্জন করো! ওদের ইতিহাসেই জানা যায় মানব-সভ্যতার বয়সকাল!
হুমম! বটেই!!!! যুগের সাথে তাল মিলাতে যেয়ে কোরান এখন গিঠ্ঠু খেয়ে হামাগড়ি দেয়ার শক্তিটুকুও নিঃশেষ করেছে।
আমার দুধদাঁত ভেঙে গেলে জরিমানা কে দেবে?
তবে আপনার ব্যাক্তিগত ব্লগের ঠিকানা পেয়ে খুব ভালো লাগলো।
আসলে আপনাকে কষ্ট দেয়া বা নিরুৎসাহিত করা উদ্দেশ্য ছিলো না আমার।
জাস্ট একটু মজা করতে চেয়েছিলাম তবে আপনি সিরিয়াস হবেন সেটে ভাবতে পারিনি।
আরো বারেবার সরি বলছি।
আপনার শুভকামনা করছি।
পড়ে এসে পড়ে মন্তব্য করে যাবো ইনশাআল্লাহ।
এখন মাথা জ্যাম হয়ে আছে।
জাজাকাল্লাহু খাইরান ভাইয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন