শিবির হটাও এখনই সময়
লিখেছেন লিখেছেন চন্দ্রোদয় ০৮ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৪৬:৪৮ রাত
শিবির হটাও এখনই সময়
কাজ করব আমি আর ক্রেডিট নেবে শিবির। তা হবেনা, তা হবেনা।
বি. দ্র: আমি শিবিরের কোনো সাথী/সদস্য নই।
ঘটনা : ১
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উল্কা-২ বাসে বাসায় ফিরছি। আমার ঠিক সামনের সিটে দর্শনের এক ছাত্র তার চার-পাঁচজন বন্ধুকে নিয়ে আল্লাহ, ভগবানের অস্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করছে। তীক্ষ্ণ যুক্তি দিয়ে সে প্রমাণ করতে চাইছে আল্লাহ/ঈশ্বর/ভগবান বলতে পৃথিবীতে কিছুই না…। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে আনুগত্য করতে ভালবাসে…। তাই মানুষের কল্পনাপ্রসূত ধারনাই হল আল্লাহ/ঈশ্বর/ভগবান……ইত্যাদি ইত্যাদি। তার ওপরে কথায় কথায় সক্রেটিস, প্লেটোর উক্তি ঝরতেছে বৃষ্টির মতো…। তার সহপাঠীরা মন্ত্রমুগ্ধের মত গিলতে লাগল এবং তার সাথে একমত পোষণ করে মাথা ঝাঁকাতে লাগল। তার প্রত্যেকটি প্রশ্নের বিপরীতে যুক্তিগুলো আমার ভালোকরেই জানা ছিল। বহুক্ষণ শুনলাম, যখন অসহ্য ঠেকল, তখন অনুমতি নিয়ে তার যুক্তিগুলোর পিঠে যুক্তি দিলাম, সাথে ৪/৫ খানা প্রশ্ন করে উত্তর চাইলাম। “শিশুর অট্টহাস্যমিশ্রিতমুখে হঠাত চপেটাঘাত করলে যে রুপ হয়, তার মুখখানা ঠিক সেরকম আরক্ত হইল”। আমি নিজেই ঘাবড়ে গেলাম!! তার বন্ধুরাও চুপচাপ। একটু পরে আবার শুরু হল আলোচনা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনার পর তার গর্দভ বন্ধুরা এবার আমার দিকে ফিরে মাথা দোলাতে লাগল এবং মগবাজারে নামার আগে বললেন, “ভাই মনে হয় শিবির করেন”। আমি টাস্কিত।!!! বললাম, ভাই এই কথাগুলো জানার জন্যেতো শিবির করার প্রয়োজন নাই! তিনি উত্তর না দিয়ে মগবাজারে নেমে গেলেন…
মনে ভাবিলাম, শিবিরের ছেলেরা কি সব কিছুকে যুক্তি দিয়ে বোঝে……? না হলে এই “শিবির করেন তত্ত্ব”-র উদয় হল কি করে!! আমি অন্তত ওদের কাছ থেকে “শিবির করেন” কথাটি শুনব ভাবিনি।
ঘটনা : ২
বাড়ি থেকে গাড়ি পথে ঢাকায় ফিরছি। মাঝে সি-ট্রাকে (এক প্রকার লঞ্চ বিশেষ) করে মেঘনা পাড়ি দিতে হয়। সময় কাটাতে গিয়ে কথা প্রসঙ্গে ইসলাম বিষয়ক আলোচনায় যোগ দিলাম এক অপরিচিত লোকের সঙ্গে। আলোচনায় বাংলাদেশের রাজনীতি বা শিবির প্রসঙ্গ না থাকলেও একপর্যায়ে তিনি যোগ করলেন “ভাই কি শিবির……।
ভাবনায় পড়লাম, ইসলাম নিয়ে আলোচনার সাথে শিবিরের সম্পর্ক কি এতোই বেশি…
ঘটনা : ৩
একবার আমরা তিন বন্ধু জামায়াতে নামাজ ধরতে না পেরে মসজিদের কোনায় আমার ইমামতিতে তিন জন নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম। যেহেতু, ইসলামের বিধান মতে কমপক্ষে ৩ জন হলে জামায়াত করা যায়, তাই আমরা সেটাই করলাম। এইখানেও ঐ একই তত্ত্ব। “আপনারা কি শিবির করেন?”
আবারও ভাবিত হলাম………
ঘটনা : ৪
একবার এক পরিচিত লোকের সাথে সাক্ষাত হল। হ্যান্ডসেক করে বুকে হাত রাখলাম (নিজ বুকে হাত রেখে দোয়া পড়া)। পরিচিতজন বলল ভাই এইটাতো জামাত/শিবিরের কাজ !! বললাম কোনটা ? তিনি বললেন, এই যে আপনার বুকে হাত রাখলেন। আমি আবারও টাস্কিত হইলাম। বুকে হাত রাখার পক্ষে-বিপক্ষে কোনো সহীহ হাদিস না জানলেও ছোটবেলা থেকে যত আলেম/ওলামা দেখেছি তাদেরকেও এই কাজটি করতে দেখছি। জিজ্ঞেস করলাম, এইখানে জামাত/শিবির কোথায় পেলেন ভাই ?
উত্তরে বললেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ভাবে শিবির চিহ্নিত করে ধোলাই দেওয়া হয়। যারা হ্যান্ডসেক করে বুকে হাত রাখে তাদের শিবির বলে ধরে নেওয়া হয়।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খাইলাম……।
ঘটনা : ৫
৭/৮ দিন আগের ঘটনা এটি। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীম উদ্দীন হলে কাজ শেষ করে শাহবাগ থেকে বাসে রওয়ানা দিলাম উত্তরার উদ্দেশ্যে। কোলের উপর অনেকগুলো বই সমেত এক ভদ্র লোক আমার পাশে বসলেন। বইগুলোর নাম দেখা যাচ্ছিল না। মলাট দেখে বইগুলো চিনলাম। কিন্তু অবাক হলাম এই ভেবে যে, যেখানে হাদীস শরিফ পেলে জিহাদি বইয়ের ধোঁয়া তুলে জামাত/শিবির/জঙ্গি (?) বানিয়ে ডিম থেরাপিসহ (রিমান্ড) লাল দালানে পাঠানো হয়, সেখানে এতবড় স্পর্ধা(!)। শাহবাগ সংলগ্ন এলাকায় কিছু সময় অতিবাহিত করায় হয়তবা আমার মুক্তি্যুদ্ধের চেতনা প্রবল হল বলে মনে হল(!!!)। সন্দেহ দূর করতে সাহস সঞ্চয় করে জিজ্ঞেস করলাম, ভাইয়া উপরের বইটা কি সাইয়্যেদ কুতুব শহীদের “ফী যিলালিল কোরআন ?"। তিনি হ্যাঁ সূচক জবাব দিলেন। অন্য বইগুলোও চিনলাম। দেশের অবস্থা নিয়ে তিনি কথা বললেন। ডিবির লোকও হতে পারে ভেবে আমি নিউট্রাল থেকে তার আলোচনায় যোগ দিলাম। কাকতালীয়ভাবে তিনিও উত্তরা নামলেন এবং জানালেন যে তিনি আমার পাশের সেক্টরে থাকেন। রাত্র তখন পৌণে বারোটা বাজে। ৩ নাম্বার সেক্টরের কাছে এসে যখন বিদায় নেব তখন তিনিও কাংক্ষিত তত্তটি ব্যক্ত করলেন, ভাইজান কি জামাত/শিবিরের লোক ??
আমি থ ।
এহেনবস্থায় আমার মত হচ্ছে “শিবির হটাও”। নইলে হয়ত তোমারও ভালো কাজের তকমাটা ছাত্রশিবির লুফে নেবে!!!!!!!
আমি আসলেই বুঝিনা- ইসলামের এইসব একেবারে সাধারণ আলোচনা বা কাজকর্ম জামাত/শিবির ছাড়া আর কেউ কি করেনা ??? মনে হয় জামাত-শিবির বাংলাদেশে ইসলামের ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। শুধু জামাত-শিবির কেন ? আসুন আমরা সবাই ইসলামের পতাকা তলে নিজেদের স্থান করে নেই।
মনে প্রশ্ন জাগে--
------ ইসলাম ফোবিয়ায় আক্রান্ত মিডিয়া, সুশীল (?) সমাজ ও বাম রাজনীতির ভন্ডরা সাধারণ মানুষের মনে ইসলাম ধর্ম পালনে নিষিদ্ধতার জাল পেতেছে কী ???
বিষয়: বিবিধ
৩৪২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন