স্মৃতির অমলিন চিত্রপটে হযরত সদর সাহেব হুযুর (রহ.)
লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর আ ফ ম খালিদ হোসেন ১৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৫:১৭:৫৫ বিকাল
هَيْهَاتَ لاَ يَأْتي الزَّمَانُ بِمْثْلِهِ ... إنَّ الزَّمَانَ بِمِثْلِهِ لَبَخِيْلُ
কক্সবাজার অঞ্চলের রূহানী পেশোয়া, প্রবাদ প্রতীম সাধক পুরুষ টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা দারুচ্ছুন্নাহ মাদরাসার শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা শাহ মুহাম্মদ ইসহাক সাহেব, যিনি এতদঞ্চলে ‘সদর সাহেব হুজুর’ নামে সমধিক পরিচিত পরিশেষে চলে গেলেন চিরকালের তরে। একে একে সব মুরব্বি এভাবে বিদায় হয়ে যাচ্ছেন। যিনি বিদায় হচ্ছেন তাঁর স্থান অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। বলা হয়ে থাকে দুনিয়াতে কোন মানুষ অপরিহার্য নয়; দুনিয়ার গতি থেমে থাকে না। একজন চলে গেলে আরেকজন আসেন কিন্তু মরে রাখা দরকার লক্ষ মানুষ এক যোগ হলেও ওই বিশেষ একজনের স্থান পূরণ করতে পারে না। হযরত সদর সাহেব তাঁদের মধ্যে অন্যতম যার শূণ্যস্থান পূরণ হবার নয়। জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান পরিচালক শায়খুল মাশায়েখ হযরত আল্লামা মুফতি আযিযুল হক (রহ.) স্নেহ ছায়ায় বেড়ে উঠা অনেক মনীষী স্বল্পতম সময়ের ব্যবধানে পরকালের মেহমান হয়ে গেছেন। এ তালিকায় রয়েছেন হযরত আল্লামা হাজী মুহাম্মদ ইউনূস (রহ.), হযরত আল্লামা আহমদ, ইমাম সাহেব (রহ.), হযরত আল্লামা মীর আমির হোসাইন (রহ.), হযরত আল্লামা আলী আহমদ বোয়ালভী (রহ.), হযরত আল্লামা গাজী ইসহাক (রহ.), হযরত আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী (রহ.), হযরত আল্লামা আনোয়ারুল আযীম (রহ.), হযরত আল্লামা হাফেয আনোয়ার (রহ.), হযরত আল্লামা ছিদ্দিকুল্লাহ রহ.), হযরত আল্লামা মুহাম্মদ আয়ুব (রহ.), হযরত আল্লামা নূরুল ইসলাম জাদীদ (রহ.) অন্যতম। তাঁদের মধ্যে অনেকে আমার উস্তাদ। আজ বেশী করে তাঁদের কথা মনে পড়ে। একে একে সব ফুলের বৃন্তচ্যুতি ঘটছে। এ মিছিলে নতুন যোগ হলো ‘সদর সাহেব হুজুর’।
বড় মাপের আহলে ইলম হওয়া সত্ত্বেও হযরত মাওলানা শাহ মুহাম্মদ ইসহাক সাহেব (রহ.) ছিলেন নিরহংকার, বিনয়ী, ও বন্ধুবৎসল। চলা-ফেরায়, কথা-বার্তায় ও লেনদেনে সুন্নতে নববীর অনুসরণ তাঁর জীবনকে মহিমান্বিত করে তুলে। মার্জিত আচরণ ও কোমল ব্যবহারের কারণে তাঁর জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছে। দল-মত-পথ নির্বিশেষে কক্সবাজার অঞ্চলের সব মানুষের কাছে তিনি ছিলেন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। খাবার দাবার ও পোষাক-পরিচ্ছদ ছিল একেবারে সাদামাটা। সর্বদা কুরআন তেলাওয়াত ও যিকির আযকারে মশগুল থাকতেন। রাতের শেষ প্রহরে বিশেষত রামযান মাসে ইবাদতের প্রতি তাঁর মনোযোগ বহু গুণে বৃদ্ধি পেত।
প্রচার বিমুখ এ সাধক পুরো জীবনটাই ইলমে দ্বীন আহরণ ও বিতরণে ব্যয় করেন। তিনি জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় অনেক জটিল কিতাব বিশেষত শ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থ বুখারী শরীফের র্দাসে নিজকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। শিক্ষকতা বাদ দিয়ে অন্য কোন পেশা তিনি গ্রহণ করেননি। তাঁর হাজার হাজার ছাত্র ইলমে দ্বীনের মশাল নিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলে তাঁর উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন। বহু মাদরাসা তাঁর পরামর্শে পরিচালিত হতো। বক্তৃতা বা ওয়াযের ময়দানে তাঁর সদর্প পদচারণা না থাকলেও যখন ওয়ায করতে বসতেন কুরআন হাদীসের বর্ণনায় শ্রোতৃমন্ডলী কান্নায় বুক ভাসাতেন। কথায় আছর ছিল।
হযরত সদর সাহেব হুজুর ব্যক্তিগতভাবে আমাকে বেশ মুহাব্বত করতেন। দারুচ্ছুন্নাহ মাদরাসার বার্ষিক সালানা জলসায় দাওয়াত দেয়ার জন্য প্রধান পরিচালক জনাব মাওলানা আফসার সাহেবসহ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতেন। ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় আমি দাওয়াত কবুল করতে পারিনি বা হাযির হতে পারিনি। পরবর্তীতে তাঁর সাথে দেখা হলে তিনি না আসার কারণ জানতে চাইতেন। হ্নীলার আশে পাশে কোন মাহফিল হলে সাধারণত আমি দারুচ্ছুন্নাহ মাদরাসায় রাত যাপন করতাম। ফযরের নামাযের পর ছাত্রদের উদ্দেশ্যে কিছু নসীহত করার জন্য তিনি হুকুম করতেন। আমি হুযুরের উপস্থিতিতে বহুবার দারুচ্ছুন্নাহ মাদরাসার মসজিদে তাকরির করেছি। ২০১৪ সালের অনুষ্ঠেয় বার্ষিক মাহফিলে দাওয়াত নিয়েছি। কোন দুর্যোগ-দুর্বিপাকের শিকার না হলে যাবো ইনশাআল্লাহ। এবার সদর সাহেব হুজুর নেই- এটা ভাবতেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে।
কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। হ্নীলা দারুচ্ছুন্নাহ মাদরাসা যতদিন থাকবে ততদিন তিনি স্মরিত হবেন প্রতিষ্ঠানে প্রধান মুরব্বি হিসেবে। কক্সবাজার অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ তাঁর সোহবত ও সান্নিধ্যে সিরাতুল মুস্তাকিমের সন্ধান পান। প্রভাব বিস্তারকারী চারিত্রিক গুণাবলীর কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষ নামায ও কুরআন তেলাওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে নামাযে জানাযায় লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি তাঁর জনপ্রিয়তার ও গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ বহন করে। আমি এ মনীষীর রূহের মাগফিরাত কামনা করি এবং প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন, আমীন।
বিষয়: বিবিধ
২৩৮৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
হুজুরের ছবিটা দেখে মনটা শান্তি পেলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন