আমেরিকার দিনগুলি-১
লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ২৯ মার্চ, ২০১৬, ০৮:৩৪:২১ রাত
আমেরিকায় এলাম দেখতে দেখতে বেশ অনেক বছর হয়ে গেল | মনে হয় এইতো মাত্র সেদিন নিউইউয়র্কের কেনেডি এয়ারপোর্টে এসে নামলাম |আমার ভাই বোনদের মধ্যে আমি ছিলাম সবচেয়ে ঘরকুনো | একেবারেই বেড়াতে পছন্দ করতাম না | স্কুল কলেজের অবসরে ঘরে বসে বই পড়াই ছিল আমার নেশা | আব্বা আম্মাতো সেই পঞ্চাশের দশকেই প্লেনে করে ঘুরে বেড়িয়েছেন | আমার ভাইবোনদের সবাই দেশে বিদেশে আমার চেয়ে অনেক বেশি ঘুরাঘুরির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন | ওদের কাছে এই ব্যাপারে সবসময়ই ৫-০ গোলে বা দশ উইকেটে হারি আমি | বড় ভাই তার চাকুরীর কারণেই সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াচ্ছেন | আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া আর এশিয়ার বেশির ভাগ দেশই তার দ্যাখা হয়ে গেল | আমার ঠিক ইমিডিয়েট বড় ভাই যার সাথে খেলে একসাথে বড় হলাম সেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের পরা শেষ করে ইংল্যান্ডে এলো পড়তে |তারপর কানাডায় সেটেলড হয়ে গেছে অনেক দিন | আমি যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি মেঝো ভাইয়ের মনে হয় তখনি আমেরিকা, ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া আর আফ্রিকা মিলিয়ে সারা পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশী দেখা শেষ |এন্টার্টিকা কোনো কারণে বাদ পরে গেছে | আমার ধারণা ভুলে | যাহোক বাসার সবচেয়ে ছোটো ছেলেটা ঘরকুনো আমিও একদিন পিএইচডি করার ইচ্ছে নিয়ে চলে এলাম আমেরিকায় | তারপর পৃথিবী কতবার তার আহ্নিক গতিকে সাথে করে নিজ অক্ষে চলতে চলতে সূর্যকে ঘুড়ল ! কতগুলো বছর গেল! তবুও মনে হয় এইতো মাত্র সেদিনই এলাম |
আগের লিখাটাতেই বলেছিলাম যে আমেরিকার এই বছরটায় মুসলিমরা আলোচনায় চলে এসেছে সাম্প্রতিক দুটি ঘন্টার কারণে | এক নাম্বার হলো প্যারিস হামলা আর দ্বিতীয় কারনটা প্রেসিডেন্ট ইলেকশন | আরেকটি ঘটনাও যোগ হয়ে গেল এই এক সপ্তাহের মধ্যেই | তৃতীয় ঘটনাটিকে ঠিক কি বলব বুঝতে পারছি না | বেলজিয়ামের এই হামলাকে তীব্র মুসলিম বিরোধিতার আগুনে 'ঘি' ঢালা বলা যেতে পারে (এখানে সবিনয়ে বলে রাখছি আগুনে ঘি ঢাললে কি হয় সে বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র ধারনাও নেই | এর প্রাক্টিকাল কোনো এক্সপেরিমেন্টের সুযোগ কখনো হয়নি | আমার অভিজ্ঞতার পরিমান তাই একেবারেই শূন্য | বাংলা সাহিত্যে এই বাগধারাটার ব্যবহার দেখে আমার মনে হয়েছে এর মানে হলো আগুনকে আরো উস্কে দিয়ে দাউ দাউ করে জ্বালিয়ে দেওয়া | সেই ধারণা থেকেই এই উধাহরনটা দিলাম) এই বেলজিয়াম হামলা নিয়ে এখন আমেরিকার নির্বাচন মহা উত্তাল | রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নুতন উদ্যোগে আবার আক্রমনাত্মক বক্তব্য দেয়া শুরু করেছেন মুসলিমদের বিষয়ে | প্রবল সমালোচনার মুখে আগে মুসলিম বন্দিদের ওয়াটার বোর্ডিং -এর মতো ইন্টারোগেশন টেকনিক ব্যবহার না করার বক্তব্য থেকে সরে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ওয়াটার বোর্ডিং- এর গুরুত্বের কথা বলছেন এখন এই সাম্প্রতিক হামলার পর | কিন্তু আজ আর এইসব মন খারাপ করা ব্যাপারগুলো নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না | আমেরিকায় আমার কিছু ভালো অভিজ্ঞতাও আছে সেগুলোর থেকেই কিছু বলি |
কিছুদিন আগে ইন্টারনেটে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরের একটা ফটো দেখছিলাম |১৯৫৪ সালের মার্চের ১ তারিখে মার্শাল আইল্যান্ডে পনের মেগাটনের আনবিক বোমা ‘ব্রাভো’ (Bravo) টেস্টের একটা ফটো| এই বোমাটার ধ্বংসক্ষমতা ছিল হিরোশিমাতে ফেলা বোমাটার থেকে প্রায় একহাজার গুনেরও বেশি |মার্শাল আইল্যান্ডের উপর বিশাল এলাকা জুড়ে পারমানবিক বিস্ফোরণে রেডিও একটিভ ফলআউটের কারণে আকাশ জোড়া কালো মেঘ ! ফটোটার দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে ভয় লাগতে শুরু হয় নিজের মনে | কি অকল্পনীয় ধ্বংস ক্ষমতা মানুষ তৈরী করেছে শুধু মানুষকেই মারতে ! আমেরিকার বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার উচ্চাশা আর এর জন্য প্রায় গত একশ' বছর ধরে ওয়ার ইন্ডাসট্রির পেছনে মারনাস্র তৈরিতে এর বিনিয়োগ আর সারা পৃথিবী জুড়ে যে যুদ্ধগুলোতে আমেরিকা জড়িয়েছে আর তার ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির কথা যখন মনে হয় তখন আমি এই আমেরিকাতেই নিজে জড়িয়ে যাওয়া বা খুব কাছ থেকে দ্যাখা কিছু ঘটনা কিছুতেই মেলাতে পারি না |
কয়েক বছর আগের কথা | পিএইচডি তখনও শেষ হয় নি | থিসিসের কাজ করছি দিনরাত | কোর্স ওয়ার্ক শেষ হয়ে যাওয়াতে রিসার্চের কাজ ছাড়া আর কোনো নিয়মিত ক্লাস নেই | থাকি ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট হাউজিঙে | স্টেডিয়াম ড্রাইভ আর হাওয়ার্ড স্ট্রীটের কোনায় এক পাহাড়ের নীচে একটি ভ্যালিতে প্রায় পঞ্চাশ একরের উপর ছবির মত সুন্দর একটি জায়গায় আমাদের এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স | চারটা বিল্ডিং-এ বাহাততুরটা এপার্টমেন্ট | বেশির ভাগ এপার্টমেন্টেই গ্রাজুয়েট ষ্টুডেন্টরা থাকে | বিশেষ করে ইন্টারন্যাশনাল ষ্টুডেন্টরা প্রায় সবাই ফ্যামিলি নিয়ে থাকত | এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স পুরোপুরি আলাদা ইউনিভের্সিটির অন্য সব একাডেমিক আর অফিস এরিয়া থেকে |এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের দু'দিকে স্টেডিয়াম ড্রাইভ আর হাওয়ার্ড স্ট্রীট | অন্য একদিক থেকে পাহাড় আর পূর্বদিক থেকে একটা ছোটো পনড আর বড় বড় পাইন গাছের সারি আড়াল করে রেখেছে পুরো এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটাকে |পশ্চিমে হাওয়ার্ড স্ট্রীটের দিক থেকেই কমপ্লেক্সের এন্ট্রান্স | হাওয়ার্ড স্ট্রীটে উঠে রাইট টার্ন করলে স্টেডিয়াম ড্রাইভ|স্টেডিয়াম ড্রাইভ দিয়েই ইউনিভার্সিটির মূল কাম্পাস | ওই একই রাস্তা দিয়ে আমাদের এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স থেকে মসজিদে যেতে হয়|কম্পাসের পাশেই আমাদের শহরের একমাত্র মসজিদটা| বাসা থেকে এক মাইলেরও কম দুরত্ব| ক্লাস না থাকায় মসজিদে জামাতে নামাজ পরার খুবই সুবিধা হয়েছে |শুধু জোহরের নামাজে মাঝে মধ্যে ঝামেলা হয়ে যায় রিসার্চ আসিস্টান্টশীপের কাজের জন্য |তাছাড়া অন্য সময় মসজিদে জামাতে নামজ পরবার কোনো সমস্যা নেই |
তেমনি একদিন ভোরে ফজরের নামজে গিয়েছি মসজিদে | নামাজ শেষ করে যখন ফিরছি তখন সুবেহ্সাদিকের আলো মাত্রই চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করছে | স্টেডিয়াম ড্রাইভ থেকে হাওয়ার্ড স্ট্রিটে লেফ টার্ন নিয়ে একটুকুই সামনে এগিয়েছি দেখি আমাদের কমপ্লেক্সের গাছপালার দিক থেকে দৌড়ে একটা হরিণ হাওয়ার্ড স্ট্রিট পার হয়ে সামনের মাঠ পেরিয়ে টিলার গাছগুলোর আড়ালে চলে গেল | তেমন অবাক করা কিছু নয় | এখানে অনেক হরিণ দিন রাতই দেখছি | আমাদের কমপ্লেক্সের ভেতরে যে মাঠ তাতেও ভোরে বা সন্ধ্যায় পাহাড় থেকে হরিণ নেমে আসে | বেশ বড় এই হরিণটা তাই চোখে লাগলো খুব | যাহোক এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে ঢুকে গাড়ি পার্ক করছি হঠাত সামনের ঘাসে গাছ পালাগুলো ঘেষে কিছু একটা চোখে পড়ল | বড় ঘাসের মধ্যে বেশির ভাগই আড়াল হয়ে যাওয়ায় বুঝতে পারলাম না ঠিক কি ওটা | গাড়ি পার্ক করে দরজা খুলে পার্কিঙে দাড়াতেই চোখে পড়ল হালকা ব্রাউন কালারের উপর সাদা ফুটি ফুটি কিছু একটা | আমদের এদিকে সাপ নেই | বছরের পাঁচ মাসই এত স্নো ফল হয় যে ঠান্ডা মাটির গর্তে সাপ থাকতে পারেনা | তবুও কুন্ডলী পাকানো একটা বার্মিজ পাইথনের কথাই সবচেয়ে মনে হলো | কারো পোষা পাইথন কি এখানে চলে এলো !
পার্কিঙে দাড়িয়ে ভাবছি এমন সময় হঠাত দেখি ঘাসের আড়াল থেকে মাথা তুলেছে সেটা -কোথায় পাইথন এত দেখছি একটা ছোট্ট হরিনের বাচ্চা ! একটু দাড়িয়েই আবার ধপাস করে পড়ে গেল ঘাসের উপর (বসে গেল তাও হতে পারে)| দ্রুত এগিয়ে গেলাম ওটার দিকে | একেবারে ছোটো | মনে হলো একদিন বা দুদিনের হবে হয়ত | পকেট থেকে ফোনটা বের করে ইউনিভার্সিটির পুলিশের নাম্বারে ফোন করলাম | জানালাম আমাদের এপার্টমেন্টের লোকেশন | বললাম খুবই ছোটোএকটা বেবি ডিয়ার এখানে পড়ে আছে | মনে হয় উনডেড | জানতে চাইলাম তোমারা কি কাউকে পাঠাতে পারো বেবিটাকে চেক করার করার জন্য? ওদিক থেকে আমার নাম জানতে চাইল | তারপর বলল তুমি কি ওই লোকেশনে কিছুক্ষণ থাতে পারবে ? আমি বললাম, ওকে | পুলিশের রিসেপশনিস্ট তখন আমাকে বলল আমার এখানে এত সকালে কেউ নেই বেবি ডিয়ারটাকে ট্রিটমেন্ট করার মত ট্রেইনড| আমি এনিমাল কন্ট্রোলে এখনি ফোন করছি তোমার ওখানে যেতে | তোমার ফোন নাম্বারটা কি ওদের দিতে পারি | আমি বললাম, দাও |
আমার ছেলে মেয়ে আর একটু পরেই স্কুলে যাবে | আমিই ড্রপ করব ওদের স্কুলে | দ্রুত বাসায় গিয়ে বাসায় ছেলেকে বলেছি ডিয়ার কাবটা দেখতে চাইলে আসতে পার্কিং লটে | বলেই আমি আবার ফিরে এসেছি পার্কিং লটে | অপেক্ষা করছি এনিমাল কন্ট্রোলের থেকে কারো আসবার | ওমা, সাত আট মিনিটও যায়নি মনে হয় পুলিশের সাথে কথা বলবার পর থেকে | এর মধ্যেই গাড়ি নিয়ে সাদা এক লোক হাজির | আমার কাছে জানতে চাইল তুমি একটা বেবি ডিয়ারের জন্য কল করেছিলে? আমি বললাম,হ্যা | জানতে চাইল কোথায় বেবি ডিয়ারটা | সাথে নিয়ে দেখালাম | সে ওটাকে দুই হাত দিয়ে তুলে দেখল | জানতে চাইল কতক্ষণ এখানে আছে সেটা | আমি বললাম আমি ফিফটিন মিনিট আগে এখানে এসে এটাকে দেখেছি | আরোও বললাম, আমি দেখেছি এটা একবার দাড়াতে গিয়ে পরে গিয়েছে | এও বললাম আমি গাড়িতে আসতে আসতে দেখেছি একটা বড় ডিয়ার রাস্তা ক্রস করে অন্য দিকের পাহাড়ে চলে যেতে | সে বলল ওটা সম্ভবত মাদার ডিয়ার | আর এই বেবি ডিয়ারটার বয়স কয়েক ঘন্টা | এটা উনডেড নয় | এখনো হাটার বা দাড়াবার মত শক্ত হয়নি | মাদার ডিয়ারটা এটার জন্মের পরপরই গিয়েছে খাবার জন্য | কারণ ওটা বেবিটার বার্থের জন্য অনেকক্ষণ কিছু খায়নি | ওটা আবার আসবে এখানে | এই সময়ে বেবিটার যেন কিছু না হয় সেটা আমি দেখব | আমাকে থাঙ্কস বলল কল করার জন্য | বাচ্চাদের স্কুলে ড্রপ করতে হবে | বাসায় গিয়ে আগে ড্রেস চেনজ করতে হবে | আমি তাই বাসার দিকে রওনা দিলাম | বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে ফিরে এসেছি | তখনও দেখি সেই লোক একটু দুরেই দাড়িয়ে আছে |অপেক্ষা করছে কখন মাদার ডিয়ারটা আসবে তার বেবিটার কাছে |সূর্য মাথার উপর উত্তপ ছড়াতে শুরু করেছে |আমি আর দাড়ালাম না | গাড়ি পার্ক করে দ্রুত বাসায় ঢুকে পরলাম|
এখানে রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে এরকম হয় অনেকই | বিচিত্র সব কারণে গাড়ি চালাতে চালাতে অনেক সময়ই হঠাত থামাতে হয় | একদিন ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যেতে একটু দেরী হয়েছে | একটু জোরেই তাই গাড়ি চালাচ্ছি | সোজা রাস্তা উঠে গেছে ভ্যালির থেকে পাহাড়ে | হঠাত দেখি সোজা রাস্তা কিন্তু সামনে দু দিকের গাড়িগুলোই দাড়িয়ে আছে | কোনো হর্ন নেই , কারো কোনো কথা নেই| চুপচাপ সব গাড়ি রাস্তায় দাড়িয়ে রয়েছে | একটু এগিয়ে যেতেই দেখি দুটো হরিন রাস্তার মধ্যে নেমে এসেছে | পাহাড় থেকে নেমে আসা হরিনকে নিরাপদে রাস্তা পার হতে দিতে সবাই তাই থেমেআছে |হরিন দুটো রাস্তা পার হবে তারপর সব গাড়ি যাবে | আরেকদিন, সকাল বেলা মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে ফিরে আসছি | বাসার খুব কাছে এসেও আর আসা হচ্ছে না | বিরাট গাড়ির লাইন | আমিও দাড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ | তারপর গাড়িগুলো চলতে শুরু করতেই দেখি সামনে দিয়ে পাচ ছয়টা বিরাট ডাক একটার পর একটা হেলেদুলে রাস্তা পার হচ্ছে | আর সেগুলোকে নিরাপদে পাড় হতে দিতে সব গাড়ি রাস্তায় স্থির হয়ে দাড়িয়ে |
পশুপাখির প্রতি এদের মায়া ভালোবাসা দেখলে অবাক হয়ে হয় | আমাদের ছোটো শহরেই আছে ১৮৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া হিউমেন সোসাইটি (Humane Society ) | পশুদের ক্রূয়েলিটি থেকে রক্ষার সংঘঠন | এদের কাজ হলো পশুদের সবধরনের ক্রূয়েলিটি থেকে বাঁচাবার জন্য কাজ করা | পশুদের অধিকার রক্ষায় সবাইকে সচেতন করা | টিভির প্রাইম টাইমে পশুদের উপর ক্রূয়েলিটি বন্ধের দাবি জানিয়ে এডভেরটাইজ চলছে ন্যাশনাল চ্যানেলগুলোয় প্রতিদিনই |
এই ঘটনাগুলো আমি যখনি ভাবি তখনই পাজল্ড হই | কিছুদিন আগেই দ্যাখা মার্শাল আইল্যান্ডের ‘ব্রাভো’ টেস্টের ফটোটা চোখের সামনে যেন ভেসে উঠে | মনে হয় এই আমেরিকানরাই প্রথম নিউ ক্লিয়ার বোম বানিয়েছিল পৃথিবীর সবার উপর শ্রেষ্টত্ব বজায় রাখতে | হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে এটম বোমা ফেলার কথা মনে হয় |যেই বোমা ফেলার প্রথম মিনিটেই হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল | এখনো হিরোশিমার কিছুকিছু জায়গায় হাই রেডিওএকটিভ তেজস্ক্রিয়তার জন্য শিশুরা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মায়| মনে হয় নাপাম বোমায় পুরে ছারখার হয়ে যাওয়া দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের টোকিওর কথা | ১৯৪৫ সালের মার্চের ৯ তারিখে মাত্র একঘন্টার মধ্যে ৩৩০টি মার্কিন বোম্বারের ফেলা ৬৯0,000 পাউনড নাপাম বোমায় ঝলসে যাওয়া টোকিওতে সে এক রাত্রিতেই এক লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়ে ছিল |মনে হয় কোনো যুদ্ধে না জড়িয়েও শুধু মাত্র আমেরিকান শ্রেষ্টত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থের বলি ভিয়েতনামের কথা, মনে হয় ভিয়েতনামের মাইলাই হত্যাযজ্ঞের কথা | মনটা বাস্তবে ফিরে আসতেই মনে হয় আমেরিকাতে থেকেই দ্যাখা ইরাক আর আফগানিস্থানের যুদ্ধ শুরুর কথা | টুইন টাওয়ার ধ্বংসে কোনো ভুমিকা না থাকার পরও অন্যায় ভাবে অভিযুক্ত করে ইরাকে হামলার কথা | এয়ার টু সারফেস মিসাইলের আঘাতে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ইরাকের শহরের পর শহর আর আর লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষের হত্যার কথা | আফগানিস্থানে ড্রোন এটাক, ক্লাস্টার বোমার আঘাতে ঘর বাড়ি ,চূর্ণ বিচূর্ণ করে নিপরাধ মানুষ হত্যার কথা | আর সেই আমেরিকানরাই আবার উতল হয় একটি সদ্যজাত হরিনের বাচ্চাকে সুস্থ্য রাখতে | এই আমেরিকানরাই ছোটো ছোটো ডাকগুলোকে রাস্তা দেবার জন্য অফিস আওয়ারের দারুন ব্যস্ততার মাঝেও গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করে | পাহাড় থেকে ভ্যালির রাস্তায় নেমে আসা হরিন্গুলোকে রাস্তা পার হতে দিতে নিঃশব্দ অপেক্ষা করে |
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিমদের প্রতি উগরে দেয়া প্রতিদিনের ঘৃনা আরো তীব্র হয়েছে বেলজিয়াম হামলার পর | রিপাবলিকান পার্টির সেকেন্ড ফ্রন্ট রানার টেড ক্রূজও খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন | প্রিকর্শন হিসেবে মুসলিম নেইবরহুডগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন আমেরিকাকে সন্ত্রাসী মুসলিম আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য | মুসলিমদের প্রতি এই ঘৃনা ক্রমশই বাড়ছে | এর মধ্যে কোনো রাখ ঢাক নেই | অনেক ভাবি কিন্তু কিছুতেই এদের এই চরিত্রের এই দারুন বৈপরিত্যের ব্যাপারগুলো মেলাতে পারি না | অংক না মিললে স্কুলের অঙ্ক ক্লাসে কত কষ্ট পেয়েছি | স্কুলে অংকের ক্লাসে অবিনাশ বাবুর শেখানো নিয়ম কানুনগুলো মেনে নির্ঘুম কত চেষ্টা করেছি অংকগুলো মেলাতে | কিন্তু আজ এতদিন পরে অবিনাশ বাবু আর এখানে নেই | না মেলা অঙ্ক মেলাতে আমিও আর চেষ্টা করিনা | আমার কিন্তু ভালই লাগে এই না মেলা অংকের ব্যাপারগুলো | হোকনা ছোটো একটা হরিণের বাচ্চা, বা ছোটো ডাক বা পথভুলে ব্যস্ত রাস্তায় চলে আসা পাহাড়ি হরিণ তাদের জন্য মানুষের এই ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে |মানুষের প্রতি একটা জাতির এত ঘৃনা কিন্তু পশুদের ব্যাপারে এত ভালোবাসা ! আমি একটা পাজল হিসেবেই এই ঘটনাগুলো দেখতে চাই | খুব বেশি চিন্তা করতে চাই না এগুলোর কার্য কারণ সম্পর্কে | ভাবি, কিইবা হয় জীবনেরএকটা অঙ্ক না মিললে ?
বিষয়: বিবিধ
১৮১০ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাইয়া মাঝে মাজে ১ হরিন বা নদী থেকে হাস বা পাখি ধরে টাটকা খেয়ে দেখবেন যা টেস্টি ।নাগরিক হিসাবে এটা আমাদের অধিকার । তবে বেশি বছরে একটা ।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
খাদকের মনের মত কথা হল,লাইক দিলাম
লেখাটা এক নিমিষে পড়লাম দারুন লাগল
আপনার লিখা পড়লে কেনো জানি মনে হয় ডায়েরি পড়ছি! ভালো লাগা প্রবল থেকেই বলছি দুঃখিত হবেন না!
তারপর পৃথিবী কতবার তার আহ্নিক গতিকে সাথে করে নিজ অক্ষে চলতে চলতে সূর্যকে ঘুড়ল ! কতগুলো বছর গেল! তবুও মনে হয় এইতো মাত্র সেদিনই এলাম | চমৎকার লেখক অভিব্যাক্তি
বেবি ডিয়ারের বৃত্তান্ত পড়তে খুবি ভালো লাগছিলো, তুলনামূলক মানুষের মূল্য আসলেই বিবেক কে নাড়া দিয়ে গেলো!
এন্টার্কটিকা ঘুরে আসুন সময় সুযোগ মত এই শুভকামনা রইলো! সুন্দর পোস্টের জন্য শুকরিয়া।
চমৎকার লেখা। আমেরিকায় একটা হরিণের বাচ্চার উপর যতটুকু সহানুভূতিশীল একজন মুসলিমের প্রতি ততটুক সহনশীল নয়।
তথ্যবহূল লেখা।
আমেরিকা, সারা বিশ্বে পুলিশের ভূমিকায় আছে।
আপনাদের আব্বা আম্মা কার কাছে ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন