বড় ধরনের একটা ভুল হয়ে যাচ্ছে কোথাও
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ০৩ জুন, ২০১৪, ০৮:২৫:৫৬ সকাল
হোয়াট মাস্ট বি টেরিবলি রং
কয়েকদিন আগেই এলে বেলে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি লাইন লিখেছিলাম যার শিরোনাম ছিল, "সামথিং মাস্ট বি টেরিবলি রং"।
আজ সারা বিশ্বময় মুসলমানদের যে করুন অবস্থা, সবখানেই মুসলমানরা মার খাচ্ছে, এর কারণটা কি? কোথাও না কোথাও বড় ধরনের ভুল হয়ে যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে কোথাও মারাত্নক ভুল রয়ে গেছে। আমরা যদি এব্যাপারে কোন মহাপরিচিত বা বিশ্বপরিচিত ইসলামী ব্যাক্তিত্ব বা যেসব নেতারা বা যাদের সংগঠন সরাসরি এই ভিক্টিমদের অংশ তাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করি তাদের অনেকেরই প্রথম এবং সম্ভবত প্রধানতম উত্তর হবে, যুগে যুগে নবী রাসুল, সাহাবায়ে কেরাম মহামনীষিগণ এমনিভাবে নির্যাতনের শিকার ছিলেন।
কথাটা কি সর্বাংশে ঠিক? না কথাটা সর্বাংশে ঠিক নয়, এবং এটা নিঃসন্দেহে একটি ভুল উত্তর এবং বলা যায় ভুল শিক্ষা। এবং এই পর্যালোকের দৃষ্টিতে পরাজয় বা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম।
এটা নিশ্চিত আমার এ মন্তব্যে অনেক ইসলামিস্টই খুশী তো হবেনই না বরং ক্ষুব্ধ হবেন বা কেউ কেউ আহত হবেন। কেউ কেউ মনে করবেন এটা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা।
কথাটা নিরেট একটা ইসলামিক উদাহরণ দিয়েই বুঝানো যাক। ইসলামের দৃষ্টিতে কোন ব্যাক্তি ভুল করলে ভুল সংশোধনের সর্বপ্রথম পদক্ষেপ হলো ভুলটা বুঝতে পারা, এমনকি তওবা করার ক্ষেত্রেও এই শর্ত রয়েছে যে, কোন ব্যাক্তি গুনাহ করলে তওবা করতে হলে প্রথমে গুনাহটা বুঝা এবং স্বীকার করে নেয়া, তারপর সে গুনাহর পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে ঘোষনা দেয়া, তারপর সে গুনাহ বন্ধের জন্য কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়া।
শুধু ইসলামিক ক্ষেত্রেই নয়, ব্যাবস্থাপনা বা প্রফেশনাল জীবনে একটা মেীলিক শিক্ষা হলো যে কোন সমস্যা দেখা দিলে প্রথমেই এর রুট কজ বা সমস্যা কি কারণে ঘটেছে সেটা বের করা এবং পর্যালোচনা করা।
আজকে বিশ্বের মুসলমানদের যে কঠিন অবস্থা সেটার রুট কজ অবশ্যই পর্যালোচনা করা দরকার। পৃথিবীর যে কোন ঘটনা দুর্ঘটনার রুট কজ বা মুল কারণ পর্যালোচনা না করলে সে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে, কে বের করবে এর রুট কজ। দায়িত্বটা সবারই, এতে একটি পি.এইচ.ডি থিসিস ও হতে পারে। তবে রুট কজ বের করা, বা পর্যালোচনা, থিসিস রিসার্চ যিনি বা যারাই করেন না কেন, এখানে একটা বিষয় মেীলিকভাবে মনে রাখতে হবে, এই রুট কজ বের করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক মুসলমান নিজের দিকে তাকাতে হবে যে আমার নিজের ক্রটি কি ছিল, কোন ব্যাক্তিই নিজের ক্রটি পর্যালোচনা না করে অন্যের দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ কোন ফলাফলই বয়ে আনবে না।
মুসলমানদের সমস্যাগুলোর একটা প্রধান সমস্যা হচ্ছে অন্য সংগঠন, দল বা ব্যাক্তিকে আঘাত করা। এখানে এটাও ধরে নেয়া যেতে পারে সাধারণত বেশীরভাগ মুসলমানই নিরীহ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বোকা ধরনের, সে কারণে অনেকগুলো ভুলই নিজের অজান্তেই হয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়গুলো সামনে রেখেই আজকের এই সংক্ষিপ্ত লেখায় মুসলিম বিশ্বের সমস্যার কয়েকটি হেডলাইনের দিকে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষন করা হচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এই লেখকের নিবেদনে পাঠকের মতামত, আলোচনা পর্যালোচনা আসলে, পরবর্তীতে এই লেখকের নিজস্ব কিছু মতামত সন্নিবেশিত হবে।
একটা বিষয়ে আমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছি মুসলমলানরা যতনা অমুসলিম দেশে নির্যাতিত হচ্ছে তার চে' মুসলিম দেশে কম নির্যাতিত হচ্ছে না । বর্তমান যুগে মিশর, বাংলাদেশ এবং সিরিয়া বাদ দিলে আমরা স্মরণ করতে পারি বসনিয়ার কথা, কসভোর কথা, ভারতের কাশ্মিরের কথা, ফিলিস্তিনের কথা। আলজেরিয়ার কথা, বার্মা বা মায়ানমারের কথা। এছাড়াও মুসলমানর নির্যাতিত হয়েছে বা হচ্ছে বা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে ফিলিপাইনের মিন্দানাও দ্বীপের মরো জাতীয় মুসলমানরা, চীনেও উইঘোর বা পশ্চিম দক্ষিণাঞ্চলের মুসলমানরা। মুসলমানদের অনেক অনেক গেীরবোজ্জল ইতিহাস ছিল রাশিয়ায়। আমরা যারা বোখারী শরীফ পড়ি বা জানি, পবিত্র কোরআন মজিদের পরই যার স্থান আমরা দেই সেই বোখারী শরীফ নামকরন হয়েছে রাশিয়ার বোখারা শহরের ইমাম বোখারী রহঃ নামানুসারে।
এই দেশগুলো, বা সময়গুলো ঐ সময়ের শাসক বা শাসন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করলে কিছুটা স্পষ্ট হবে মুসলমানরা কেন কোন সময় নির্যাতিত হয়েছে, কাদের কারণে। কিন্তু সে সময়গুলো পর্যালোচনা করার আগে মুসলমানদের নিজেদেরকে নিয়ে গভীর পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এবং খুবই বেদনার বিষয় হলো, মুসলমানদের নিজেদের নিয়ে পর্যালোচনা করলেই একটি কঠিন সত্য এবং বাস্তবতা আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসবে।
প্রায় সপ্তাহখানেক আগে ফেইসবুকে একটা পোস্টিং দেখলাম, পোস্টিংটা অবশ্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের পুতুল পোস্ট করেছেন। পোস্টটার প্রতিপাদ্যা বিষয় হলো সেীদি আরবের কোন এক শায়খ ফতোয়া দিয়েছেন যে, সরকারের আনুগত্য করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ। সেীদি আরবে চলছে রাজতন্ত্র। এছাড়া সেীদি আরবের মেীলিক মানবীয় গুণাবলী নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন।
হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। সামর্থ থাকলে প্রতিটি মুসলমানের একবার হজ্জ করা ফরজ। সে দৃষ্টিতে সেীদি আরব বা মক্কা মদিনা মুসলমানদের তীর্থ ভুমি বা পবিত্র স্থান, প্রতি বছরই বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান হজ্জ করতে সেীদি আরব যান। আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের প্রাচীনতম ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র। তেমনিভাবে প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল ইরাক এবং ইরানে। তেমনি ছিল সিরিয়ায়। রাসুল সাঃ এর পর যে সমস্ত স্থানে হাদীসের শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল তন্মধ্যে ছিল ইরাক ইরান সিরিয়া, বিলাদ আশ শাম। সাম্প্রতিককালে সিরিয়ায় যে ধ্বংশযজ্ঞ হয়ে গেল বা এখনো চলছে শেষ পর্যন্ত কে লাভবান হচ্ছে বা হলো, আর ক্ষতিটাই বা কার হলো এবং কি ক্ষতি হলো। ইরাক ছিল সভ্যতার সুতিকাগার। যে সময় আমেরিকা নামের কোন রাষ্ট্রের জন্ম হয়নি সে সময়ই ইরাক ছিল মানব্ সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু, মিশর ছিল জ্ঞান বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির স্থান, যে মিশরের পিরামিড আজো আধুনিক প্রযুক্তির কাছে এক আশ্চর্য শিল্প সে মিশর ধ্বংসের দিকে। মিশরের সাহিত্য আজো বিশ্ব সাহিত্যকে তাক লাগিয়ে দেয় এই সেদিনও মিশরের নগীব মাহফুজ মিশরের সাহিত্য দিয়েই সাহিত্যে নোবেল পেলেন। (চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১০৯৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন