আমাদের মৃত্যু হয়েছে
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ২৩ জুন, ২০১৩, ১০:৪৩:৫৪ রাত
বাংলাদেশের প্রতিদিনের ঘটনা পড়লে দেখলে বা শুনলে কেমন লাগে? ধাতস্থ হই? তটস্থ হই? কিংকর্ত্যব্যবিমূঢ় হই, রাগ, দুঃখ ক্ষোভে, ব্যাথা, বেদনায় বিমূঢ় হই? ভাষা হারিয়ে ফেলি? আর কি? আর কি কিছু বলার আছে। কেউ হয়তো চিৎকার দেই, কান্না করি, কেউবা লিখতে চেষ্টা করি। তারপর? কোন সমাধান কি কখনো হয়, হয়েছে?
কোন ঘটনার কথা বলবো কোনটা দিয়ে শুরু করবো। প্রতিদিনই এমন কিছু ঘটে যাচ্ছে যার একটি দিয়েই তোলপাড় হয়ে যেতে পারতো, এ সরকারের পতন হত, হাসিনা এবং সকল সন্ত্রাসীগুলো দেশ ছেড়ে পালাতো। কিন্তু না কিছু হয়নি, হয়না। আমি শুধু দু একটি এমন ঘটনার শিরোনাম ব্যাবহার করে স্মৃতিচারণ করতে চাই যে এর একটি ঘটনাই কি হাসিনা সরকারের পালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। শেয়ার বাজার কেলেংকারী, হলমার্ক কেলেংকারী কত কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে এখানে। গ্রামীন ব্যাংক এবং ডঃ ইউনুসকে নিয়ে সরকারের ছুদুর বুদুর, তারপর আসেন বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড। আসলে আমরা কি মানুষ? না আমরা পশুও নই, কারণ পশুরও অনুভুতি আছে, দয়া মায়া আছে, ভালবাসা আছে। আর আমরা, প্রকাশ্যে দিন দুপুরে এভাবে রামদা দিয়ে একজন মানুষকে এভাবে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করলো আর এটা নিয়ে সরকারের বালখিল্য কথা বলা, একবার বলে এরা ছাত্রলীগে কেউ না, আবার বলে কিছু খারাপ ছেলে থাকেই। একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে একটা সভ্য দেশের প্রধান হয়ে এমন প্রকাশ্য জলজ্যান্ত মিথ্যাচার পৃথিবীর ইতিহাসে অসম্ভব। আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মানুষের সাথে সংসদে দাঁড়িয়ে জলজ্যান্ত মিথ্যাচার করে তো যাচ্ছেনই আমরা দেখেছি সি.এন.এন এর রিপোর্টার আমানপুরের সাথেও তিনি কিভাবে মিথ্যা বলেছেন। অবশ্য হাসিনার রক্তে মিথ্যার ইতিহাস নতুন নয়। হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান এর মিথ্যাচারের অনেকগুলো ঘটনা অনেকে বর্ণনা দিয়েছেন। অধ্যাপক ফিরোজ মাহবুব কামাল তাঁর কয়েকটি লেখায় এর কিছু বর্ণনা দিয়েছেন। সর্বোপরি বিশ্বখ্যাত ফরাসী সাংবাদিক যিনি হেনরি কিসিঞ্জার, গোল্ডা মায়ার, ্ইন্দিরা গান্ধি, জুলফিকার আলি ভুট্রো, আয়াতুল্লাহ খোমেনি সহ বিশ্বের নামকরা অনেক নেতার সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন তাঁর সে সব সাক্ষাতকার ইন্টাভিউ উইথ দ্যা হিস্ট্রি নামক বইতে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের শেখ মুজিবের সাক্ষাতকারও তিনি নিয়েছিলেন কিন্তু মুজিবের সাক্ষাতকারে শেখার মত কিছুই ছিলনা বিধায় মুজিবের সাক্ষাতকার হিস্ট্রি বইতে স্থান পায়নি। ওরিয়ানা ফালাচির সাক্ষাতগুলোর কয়েকটি প্রধান দিক হলো তিনি, যত বাঘা বাঘা নেতা সবাইকে খেপাতেন, রাগাতেন পাগল করে দিয়ে তারপর মুখ দিয়ে না চাইলেও কথা বের করতেন। মুজিবের সাথে ওরিয়ানা ফালাচির সাক্ষাতকারে ফালাচি মুজিবকে প্রশ্ন করেছিলেন ৭২ সালে বাংলাদেশের বিজয়ের পর ঢাকা স্টেডিয়ামে যে গনহত্যা হয়েছিল সেটা কে করেছে, সে সময়তো পাকিস্তানী বাহিনী ছিলনা, সে সময় তো নতুন দেশের মুজিব সরকার ক্ষমতায় তাহলে সেই গনহত্যা করলো কে, তখন মুজিব রেগে গিয়ে ফালাচিকে বললেন "মিথ্যে কথা"। তখন ফালাচি কোন বিরক্তি না দেখিয়ে, একই প্রশ্ন আবার করলে, মুজিব তখন আরো রেগে গিয়ে বললেন মিথ্যে কথ্য। ফালাচি এবারও না রেগে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে আরো কিছু প্রমান সাপেক্ষে প্রশ্নটা আবার করলেন, মুজিব তখন চিৎকার দিয়ে আবার বলে উঠলেন মিথ্যে কথা। এবার ফালাচি নিজেও মুজিবকে ধমকের সুরে বললেন, "খবরদার! আপনাকে আর একবার আমাকে মিথ্যাবাদি বলার অধিকার দিচ্ছি না্" এ সময় মুজিব বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠেন, তেলে বেগুনে জ্বলে চিতকার শুরু করেন। ফালাচি জানতেন এমন ঘটতে পারে তাই তিনি বঙ্গভবন থেকে সরে পড়েন এবং সরাসরি বিমান বন্দরে চলে যান।
সে যাক, কথা শুরু করেছিলাম বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। শেয়ার বাজার, হলমার্ক, পিলখানা বি.ডি. আর হত্যাকান্ড, সাগর রুনি হত্যাকান্ড, বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড, ইলিয়াস আলী গুম, রানা প্লাজা ট্রাজেডি, তারপর রেশমা নাটক, প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীর টিকিটি না ছুয়ে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নাটক, স্কাইপ কেলেংকারী।
সবচে' কষ্টের ব্যাপার হলো, চোর চুরি করে রাতে। চোর চোরই। কিন্তু চোর চুরি তো করেই তারপর আবার শিনাজুরি দেখায়, চুরির পর গেরস্থকে পাল্টা অপরাধী বানান দিনে দুপুরে গেরস্থকে অপমান করেন তখন আর আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি কোন প্রতিবাদ করি না তখন একথা কি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের আসলেই মৃত্যু হয়েছে। আমরা আমাদের শ্রবণ শক্তি হারিয়েছি, বোধশক্তি হারিয়েছি, কথা বলার শক্তি হারিয়েছি, আমাদের হ্রদয় প্রান হারিয়েছি। ৃ
বিষয়: বিবিধ
১২৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন