একটি "ইয়ে" প্রদর্শনের এর গল্প

লিখেছেন লিখেছেন স্বঘোষিত ব্লগার ০৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:০৮:৫৩ সকাল
এটা কোনো গল্প নয়, একেবারে সত্য ঘটনা। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম। থাকতাম গ্রামের বাড়িতে। আমাদের বাড়ির সামনে অল্প দূরত্বে পাশাপাশি আরও দুইটা বাড়ি আছে। ঐ দুই বাড়ির লোকজন বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া লেগে থাকত। এ ধারা এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। সেদিন ছিল আমার দ্বিতীয় ভাই’র বিয়ের দিন। সেজন্যই ঘটনাটি হুবহু মনে আছে। আমরা বৌ-বাড়িতে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ঐ দুই বাড়ি থেকে তীব্র ঝগড়া-ঝাটির আওয়াজ শুনতে পাই। ঝগড়-ঝাটি,মারা-মারি দেখার মধ্যে এক ধরণের আনন্দ আছে, অদ্ভুত আনন্দ। দেখুন না, আমাদের দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে কিছু লোক এক ধরণের নিষ্ঠুর আনন্দ পায়। দলীয় লোকের ক্যাডার দ্বারা বিরোধীদলের কেউ খুন হলে কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ উল্লসিত হয়। তো আমিও সেদিন মহিলাদের ঝগড়া উপভোগ করার জন্য ঐদিকে পা বাড়াই। গিয়ে দেখি, আমার বয়সী বা তার চেয়ে কম বা বেশি বয়সী আরও অনেক ছেলে-মেয়ে এসেছে ঝগড়া দেখতে। ঐ দুই বাড়ির ঠিক মাঝখানে একটা পুকুর আছে। পুকুরটির পশ্চিম পাড়ে ছিল এক পক্ষ, অন্য পক্ষ ছিল পূর্ব পাড়ে। আমরা দর্শকরা ছিলাম পুকুরের উত্তর পাড়ে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য, অশ্লীল গ্রাম্য গালি-গালাজ বিনিময় চলছিল। গ্রামের ঝগড়াগুলো এভাবেই শুরু হয়, চূড়ান্ত পর্যায়ে হাতাহাতি কিংবা মারামারি পর্যন্ত পৌঁছে যায়, পুরুষরা বাড়িতে থাকলে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ঐদিন সম্ভবত দুই বাড়িরই কর্তা ব্যক্তিরা কাজে গিয়েছিল। ফলে আমরা ঝগড়ার চূড়ান্ত পর্যায়টা উপভোগ করতে না পেরে আশাহত হচ্ছিলাম। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের মধ্যেই তাদের ঝগড়া এগুচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর পশ্চিম পক্ষের ১২/১৩ বছর বয়সের একটা ছেলে তার মাকে থামানোর জন্য এগিয়ে আসে। ছেলেটার বড় ভাই মিন্টু ছিল মানসিক রোগী, এ ছেলেটা ছিল সাংঘাতিক বোকা। ফলে আমরা তাকেও মিন্টু ডাকতাম। কিন্তু সে ঝগড়া-স্থলে এসে নিজেও বিপক্ষের সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে। গালিগালাজের তীব্রতা আরও বাড়ে। এক পর্যায়ে পশ্চিম পক্ষের মহিলা বিপক্ষের মহিলাকে অপমান বা লজ্জা দেওয়ার জন্য আমাদের সবার সামনে নিজ ছেলের লুঙ্গি খুলে ছেলের “ইয়ে” অপর মহিলাকে দেখিয়ে গালি দিতে থাকে
। বিপক্ষের (পূর্ব পাড়) মহিলা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে এদিক সেদিক তাকায়। কিন্তু তার কাছে তো আর “ইয়ে” নাই, ফলে সে কী বুঝে যেন বাড়ির ভিতরে দৌড় দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সেও তার ছেলের(১৪/১৫ বছর বয়স্ক) হাত ধরে টানতে টানতে পুকুর পাড়ে নিয়ে আসে। বলাবাহুল্য, এ ছেলেটা ছিল কিছুটা তোতলা। ভালোভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারতো না। ঐ মহিলা ছেলেকে পুকুর পাড়ে এনে আমদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিপক্ষ দলের অপমানের প্রতিশোধ নেয়। অর্থাৎ এবারও “ইয়ে” প্রদর্শন! মজার বিষয় হলো, দুই পক্ষের মহিলাই ইয়ে প্রদর্শনে ছেলের লুঙ্গি খুলতে নিজ হাতে হেল্প করেছিল।
আমাদের রাজনীতির মাঠে এখন চলতেছে “ইয়ে” প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। গত কয়েক মাস দু-দলই রাজনীতির মাঠে বেশ শক্তি দেখিয়েছিল। ক্ষমতাসীন পক্ষ বিপক্ষকে কাবু করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে, কিন্তু ফল হয়েছে হিতে বিপরীত। বিরোধীদলের প্রতি জনসমর্থন বেড়ে গেছে যেকোনো সময়ের চেয়েও বেশি। তাই তারা বিরোধীদলকে আরও কাবু করতে এবং নিজেদের জনসমর্থন বাড়ানোর জন্য প্রবাসী ছেলেকে দেশে নিয়ে আসে। ছেলে এসেই ঘোষণা দিল, “আমার কাছে “ইয়ে” আছে, আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতায় আসবে”। “ইয়ের” কারিশমা দেখে চারদিক থেকে আওয়ামী সমর্থকরা তালিয়া বাজাতে লাগলো। ইতোপূর্বে রাজনীতির মাঠ গরম করা নেতারও বিদেশী ছেলের ইয়ের সাথে সাথে তালিয়া বাজাচ্ছিল। ফলে বিরোধীদল আর চুপ করে থাকতে পারলো না। “ইয়ের” উত্তর “ইয়ে” দিয়েই দিতে হয়। তাই তারাও তাদের ছেলের ইয়ের গুণগান গাওয়া শুরু করে দিলো।
ফেসবুকে দুই পক্ষের কিছু ফ্যান পেজ আছে। কিছুদিন ধরে ঐসব পেজেও এ দুই নরাধম ছেলের গুণগান গাওয়া হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীর মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ প্রজন্ম। এসব তরুণরা যেভাবে এ দুই নরাধমকে স্যালুট,স্যালুট করতেছিল, তা দেখে তাদের তারুণ্যের ব্যাপারে আমার মনে প্রশ্ন জাগে। বাঙ্গালী তরুণীর হাতে Afridi, marry me! লেখা প্ল্যাকার্ড দেখলে আমার যেরকম ঘেন্না লাগে, সেরকমই ঘেন্না পায় এসব তরুণদের প্রতি যখন তারা এ দুই নরাধমকে স্যালুট স্যালুট করে। আচ্ছা আপনারাই বলুন, এ ছেলেকে কি আমরা রাজনীতিবিদ বলতে পারি? রাজনীতি তো আর ছেলেখেলা নয়, কিংবা গ্রাম্য মহিলার মতো “ইয়ে” প্রদর্শনও নয়। মা কিংবা নানা রাজনীতিবিদ বলে ছেলেও যে রাজনীতিবিদ হবে এমন তো কথা নেই। তাহলে তো হুমায়ুন আহমদের ছেলেও হুমায়ুন আহমেদের মতো সাহিত্যিক, কিংবা নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের মেয়েও উত্তরাধিকারসূত্রে নোবেল পাওয়ার দাবিদার। আমরা এতোটাই দলকানা যে, বার বার এ দুই অযোগ্য দলকেই ক্ষমতায় আনি। আমাদের কাছে মেধার মূল্যায়ন নাই। আছে দলের মূল্যায়ন। নিজেদের দল যদি কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি করে আমরা তখন চুপ করে সমর্থন দিয়ে যাই কিংবা কচ্ছপের মতো মুখ লুকাই। অন্ধ সমর্থনের কারণে আমাদের প্রতিবাদ শক্তি মরে গেছে। অতএব হে তরুণ, তোমার এমন তারুণ্যকে ধিক!!
বিষয়: রাজনীতি
১৯৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন