আমার দেখা পিপি হায়দার হোসেন
লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ১৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:০৪:৩৩ দুপুর
১৯৮০ সালে হায়দার হোসেন ভাইয়ের সাথে প্রথম পরিচয় । আমি তখন বরিশাল শহরে দায়িত্ব পালন করছি । হায়দার ভাই ঝালকাঠি শহরে একটা কর্পোরেট অফিসের দায়িত্বে । তখন ঝালকাঠি ছিল একটা ছোট্ট মহাকুমা শহর । সাংগঠনিক সফরে ঝালকাঠি গেলে তার অফিসেই তার সাথে প্রথম পরিচয় । অত্যন্ত আবেগী ও দৃঢ়চেতা হিসাবে তাকে মনে হয়েছিল । অত্যন্ত দ্রুত তিনি সাংগঠনিক কাজে এগিয়ে গেলেন । কিছুদিনের মধ্যেই জেলা দায়িত্বশীল বৈঠকে তাকে ঝালকাঠি থানার নাযেম হিসাবে নিযুক্ত করা হয় । সাংগঠনিক কাজের অন্তরায় ভেবে তিনি চাকুরীতে ইস্তফা দেয়ার কথা জানালেন জেলা দায়িত্বশীলদের । আমি ব্যক্তিগত ভাবে এবং জেলা দায়িত্বশীলগন তাকে রুজি-রুটির কথা মাথায় রেখে ইস্তফা না দিতে অনুরোধ করেন । কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা । ইস্তফা দিয়েই ফেললেন । এরপর এলএলবি পাশ করে ওকলাতি শুরু করলেন । ওকলাদি পেশার পাশাপাশি তিনি ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা করতেন । ঝালকাঠি ও তার আশেপাশে তাকে বাদ দিয়ে কোন ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হতনা । ইসলামের নামে যারা ইসলামী আন্দোলনের বিরোধীতা করত হায়দার ভাই ছিলেন তাদের কাছে এক আতংক । কোরান হাদিসের দলিল দিয়ে তিনি সরাসরি কুপোকাত করে ফেলতেন । ঝালকাঠি জেলা ঘোষিত হলে তিনি জেলা আমীর মনোনীত হন ।
ঝালকাঠিতে দুই বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহম্মেদকে হত্যার মামলায় আদালত ২০০৬ সালের ২৯ মে শায়খ রহমান ও বাংলা ভাইসহ সাতজনকে ফাঁসির আদেশ দেন। ২০০৭ সালের ২১ মার্চ বিভিন্ন কারাগারে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সংগঠনের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ জঙ্গি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করায় ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল তিনি এশার নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার পথে জেএমবির কিলিং মিশনের সদস্যরা মাথায় পিসত্মল ঠেকিয়ে গুলি করে তাকে হত্যা করেছিল৷ এই মামলার আসামিদের মধ্যে মুরাদ হোসেন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে মুরাদ স্বীকার করেন, হায়দার হোসাইন জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করেছেন এবং নেতাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন। তাই সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর পার হয়ে গেলেও আজও বিচার পায়নি পিপি হায়দার হোসেনের পরিবার। ৬ বছরেও পিপি হত্যার বিচার না হওয়ায় তার পরিবারের পক্ষ হতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল বিকালে ঝালকাঠি নতুন কলেজ রোডে পিপি হায়দার হোসেনের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলন করে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে পিপি হায়দার হোসেন হত্যার বিচার, হায়দার হোসেনের নামে একটি সড়কের নামকরণ ও তাকে সরকারি স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শহীদ পিপি হায়দার হোসেনের মেয়ে ছানিয়া সুলতানা। সংবাদ সম্মেলনে পিপি হায়দার হোসেনের একমাত্র ছেলে তারেক বিন হায়দারের বক্তব্য রাখার কথা থাকলেও গতকাল দুপুরে পুলিশ হায়দার হোসেনের বাসায় গিয়ে তারেক শিবির আখ্যা দিয়ে খোঁজাখুঁজি করে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। তাই পুলিশি হয়রানির ভয়ে তারেক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে তার পরিবার জানায়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছানিয়া সুলতানা বলেন, জেএমবির বোমা হামলায় নিহত ঝালকাঠির দুজন বিচারক হত্যার মামলা পরিচালনা করায় এবং সেই মামলায় জঙ্গিদের ফাঁসি হওয়ায় আমার বাবা জঙ্গিদের টার্গেটে পরিণত হন। ওই কারণে জেএমবির সদস্যরা আমার বাবাকে ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল গুলি করে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর অতিবাহিত হলেও আজও এর বিচারকার্যের কোনো কুলকিনারা হয়নি।
বিষয়: বিবিধ
১২৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন