জামাত যেখানে আছে , সেখানে আমি নাই ও লিটনের কর্মকান্ডের যৌক্তিকতা

লিখেছেন লিখেছেন এম আর সুমন ১৩ জুন, ২০১৩, ০৬:৫১:৪৭ সন্ধ্যা

কথাটি খাইরুজ্জামান লিটনের। তিনি রাসিক এর মেয়র পদপ্রার্থি। তিনি জাতীয় নেতা কামরুজ্জামানের ছেলে। এস এ টিভির একটি অনুষ্ঠানে দর্শক হিসেবে জামাতের সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি অনুষ্ঠান বর্জন করে চলে যান। সবই ঠিক আছে।

আমি শুধু কিছু বিষয় স্পষ্ট করি। জামাত আছে বলে যদি একটি এলাকা বর্জন করতে হয় তাহলে কি কি করা উচিত দেখা যাক।

১। যেহেতু রাজশাহী শহরে জামাতের নেতাকর্মীরা আছেন, একটু বেশি মাত্রায়ই আছেন। সেহেতু খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী শহর বর্জন করতে পারেন।

২। যেহেতু মহান সংসদের এখোনো দু'জন সংসদ সদস্য জামাতের , সেহেতু সরকারী দল সংসদ বর্জন করে নজির স্থাপন করতে পারেন। যেহেতু সরকারী দলের হরতাল করার রেকর্ড আছে, সুতরাং আমি মনে করি এটা সম্ভব।

৩। যেহেতু জামাত ইসলামীর সমর্থকদের বিদেশী জরীপ মোতাবেক এখোনো প্রায় ৫ শতাংশ ভোট আছে, সুতরাং আওয়ামী লীগ সকল ধরনের নির্বাচন বর্জন করতে পারেন।

এভাবে বর্জন করলে হয়তো দেশটাকেও একসময় ওনাদের বর্জন করতে হতে পারে। কিন্তু আমাদের অতীত কি বলে। একটু খতিয়ে দেথা যাক।

বর্তমানে যারা সরকারের সাথে থেকে জামাতকে বর্জনের ষ্টান্টবাজি খেলছেন, তাদের সাথে জামাতের সখ্যতার দীর্ঘ ইতিহাস দেখে নেয়া যাক।

১। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় ৭৮ সালে বহুদলীয় গনতন্ত্রের পথ উম্মুক্ত হয়। তখন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সহ বেশ কিছু দল নিবন্ধিত হয়। তবে জামাতকে নিবন্ধন দেয়া হয় নি।

শহীদ জিয়ার সময় দুটি নির্বাচনে জামাত অংশ নিতে পারে নি। যদিও আওয়ামী লীগ অংশ নেয়।

পরে ১৯৮৬ সালে প্রথম জামাত এদেশে নির্বাচন করার সুযোগ পায়। ইতিহাসটি সবার জানা। বেঈমানী করে আওয়ামী লীগ এরশাদের অধীনে নির্বাচন করে। আর সেই নির্বাচনে বিএনপি না আসায় বিব্রত আওয়ামী লীগ দেখাতে চায় যে অন্যান্য দলও সেই নির্বাচনে গেছে। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তারা জামাতের সাথে আলোচনা করে। এরশাদ সরকার জামাতকে নির্বাচন করার জন্য ইসির নিবন্ধন দেন ও জামাত আর আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যায়। এভাবেই আওয়ামী লীগের সহায়তায় জামাত এদেশে প্রথমবারের মত নির্বাচন করার সুযোগ পায়।

২। ৯১ সালে আপোষহীন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে জামাত ও আওয়ামী লীগের সখ্যতা বহুগুনে বেড়ে যায়। ৯৪ সালে জামাত ও আওয়ামী লীগ একত্রিত হয়ে তত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করে। সেই সময় শেখ হাসিনা লন্ডনের রেডিওকে বলেন, সংসদে আমি বিরোধী নেত্রী হিসেবে জামাত ও জাতীয় পার্টিরও নেত্রী।

আর জামাত তখন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য পাগল হয়ে যায়। খালেদা জিয়ার নামে হেন খারাপ কথা নাই যা তারা রটায়নি। প্রায়ই তখন খালেদা জিয়াকে কটাক্ষ করে জা-শি মিছিল করতো। সেই সময়ে আওয়ামী লীগ এর প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে দোয়া চাইতে গো.আজমের বাসায় পাঠানো হয়।

তখনকার জামাতের হাব ভাব ছিল, যে কোনো মূল্যেই হোক হাসিনাকে ক্ষমতায় বসাতে হবে।

আর আওয়ামী লীগেরও হাব ভাব ছিলো জামাত মহা পবিত্র একটি সংগঠন। তারা তাদের সাথে আছে। কার্যত ৯৫ সালে মহান সংসদে বৈঠক করে , আওয়ামী লীগ ও জামাতের সদস্যবৃন্দ একযোগে পদত্যাগ করেন।

আমি জানি আমার এই লেখা পড়ে জা-শির সমর্থকরাও একটু বিব্রত হবেন। তবে ভাইজানেরা , আপনারা অনেকেই একাত্তরের পরে জন্ম নিয়েছেন। সুতরাং আপনাদের মধ্যে অনেকেই তো রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী না। আপনারা সুস্থভাবে চিন্তা করে দেখুন যে জামাতের তখনকার স্টান্টবাজি কতটা ভুল ছিলো। তখন জামাত এই আওয়ামী লীগকে পাকা পোক্ত হতে সাহায্য করেছে। আর আজ আওয়ামী লীগ আপনাদের সাথে একত্রে বসতেও রাজি না। আপনারা তাদের কাছে এতটাই ঘৃনিত !

ক্ষমতার পালাবদল হতেই থাকবে। এই সরকার গেলে জণগণই আবার হয়তো বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাবে। তখন যেন জামাতিরা তাদের ইতিহাস ভুলে না যায়।

বিষয়: বিবিধ

১৪৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File