ইমাম বুখারী রহঃ এর কাঠগড়ায় কথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায়
লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ১০ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:২৪:৫৬ রাত
আহলে হাদীস দাবিদাররা সর্বদা বলে থাকে বুখারী মুসলিম থাকতে কোন ফিক্বহের কিতাবের দরকার নেই। সবার আগে বুখারী মান, তারপর মুসলিম। আবার অনেককেই বলতে শুনা যায় যে, বুখারী মুসলিমের হাদীস যেহেতু সবই সহীহ। তাই আমরা শুধু বুখারী মুসলিমের সবগুলো হাদীস আগে মানি। তারপর অন্য কিছু।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল, বুখারীর এসব বুখারওয়ালারা বুখারী বিরোধী তা কিন্তু আমরা জানি না। ইমাম বুখারী রহঃ তার সংকলিত গ্রন্থ বুখারীতে এরকম অসংখ্য মাসআলা এনেছেন হাদীসের আলোকে যা বুখারওয়ালা এসব বুখারী অনুসারীরা মানে না। বরং বিরোধীতা করে থাকে। বক্ষ্যমান প্রবন্ধে আমরা সেসব বর্ণনা উপস্থাপিত করবো ইনশাআল্লাহ। প্রবন্ধটি আগাগোড়া পড়লে আশা করি পাঠকরা বুঝতে পারবেন। আসলে বুখারী অনুসরণের তাদের দাবিটি কেবলই মুখরোচক স্লোগান। বাস্তবে মিথ্যাশ্রয়ী এক ধোঁকা মাত্র।
বুখারী অনুসারী দাবিদারদের বুখারী বিরোধীতার দলীল
কিবলামুখী হয়ে পেশাব পায়খানা করা জায়েজ?
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারীতে হাদীস এনেছেন-
عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الأَنْصَارِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «إِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الغَائِطَ، فَلاَ يَسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ وَلاَ يُوَلِّهَا ظَهْرَهُ، شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا
হযরত আবু আইয়্যুব আনসারী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন টয়লেটে আসে, তখন সে যেন পেশাব পায়খানা করার সময় কিবলামুখী না হয়, বা কিবলার দিকে পিঠ না দেয়। {সহীহ বুখারী-১/৬৬, হাদীস নং-১৪৪}
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, পেশাব পায়খানা করার সময় উজর ছাড়া কিবলামুখী হওয়া বা কিবলার দিকে পিঠ দেয়া মুতলাকানভাবে জায়েজ নয়। চাই তা কোন খোলা স্থানে হোক বা কোন রূমে হোক। কেননা, রাসূল সাঃ এ থেকে মুতলাকানভাবে নিষেধ করেছেন। কোন স্থানকে পৃথক করা হয়নি।
কিন্তু বুখারী শরীফের এ সহীহ, সরীহ, মারফূ কওলী হাদীসের বিপরীত গায়রে মুকাল্লিদদের বক্তব্য হল যে, পেশাব পায়খানা করার সময় কিবলামুখী হওয়া বা পিঠ দেয়া সম্পূর্ণ জায়েজ। না-জায়েজ হওয়াতো দূরে থাক মাকরূহও নয়। বরং এ কাজ নাকি সুন্নত। দেখুন কি বলে বুখারী অনুসারী দাবিদাররা-
# মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুস কুরায়শী সাহেব লিখেছেনঃ “কিন্তু ঘরে বা কোন বস্তুর আড়ালে জায়েজ আছে। {দস্তুরুল মুত্তাকী-৪৫}
# মাওলানা ওহীদুজ্জামান খান সাহেব লিখেছেনঃ “কিবলামুখী হয়ে বা কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে ইস্তেঞ্জা করাতে কোন কারাহাত নেই। {নুজুলুল আবরার-৫৩}
# করাচির আহলে হাদীস মসজিদের টয়লেটের মুখ রাখা হয়েছে কিবলামুখী। অর্থাৎ পেশাব পায়খানা করতে বসতে হবে কিবলামুখী হয়ে। তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন মুফতীয়ে আজম পাকিস্তান মাওলানা রশীদ আহমাদ লুধিয়ানবী রহঃ, তখন জবাবে ওরা বলে যে, কিবলামুখী ফিরে ইস্তোঞ্জা করা সুন্নত। আর তা চৌদ্দশত বছর যাবত মৃত ছিল। সেই মৃত সুন্নততে তারা জিন্দা করেছে। {আহসানুল ফাতাওয়া-৩/১০৯}
ইমাম বুখারী রহঃ এর কাছে বীর্য নাপাক
বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ৩৬ নং পৃষ্ঠায় ইমাম বুখারী রহঃ একটি পরিচ্ছেদ এনেছেন। সেটি হল- بَابُ إِذَا غَسَلَ الجَنَابَةَ أَوْ غَيْرَهَا فَلَمْ يَذْهَبْ أَثَرُهُ তথা “যখন কেউ বীর্য ইত্যাদি ধৌত করা হয়, কিন্তু তার চিহ্ন না যায়”।
এ পরিচ্ছেদের অধীনে গায়রে মুকাল্লিদ আলেম ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ “ইমাম বুখারী রহঃ এ পরিচ্ছেদে বীর্য ছাড়া অন্য কোন নাপাকীর কথা উল্লেখ করেননি। হয়তো বাকি নাপাককে বীর্যের উপরই কিয়াস করেছেন। এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট বীর্য নাপাক।{তাইসীরুল বারী-১/১৭০}
# গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মাওলানা ওহীদুজ্জামান সাহেবের বক্তব্য দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে বুঝা গেল যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট বীর্য নাপাক। অথচ গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের মত হল যে, বীর্য পাক। এ কারণেই বুখারীর মতের বিরোধীতা করে অহীদুজ্জান সাহেব লিখেনঃ
“বীর্য পাক, চাই তা ভিজা হোক, বা শুকনো হোক, ঘাঢ় হোক বা পাতলা। {কানযুল হাকায়েক-১৬, নুজুলুল আবরার-১/৪৯}
# গায়রে মুকাল্লিদ নওয়াব নূরুল হাসান সাহেব লিখেছেনঃ “বীর্য সর্ববস্থায় পবিত্র”। {আরফুল জাদী-১০}
# গায়রে মুকাল্লিদ নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব লিখেছেনঃ “মানুষের বীর্য নাপাক হওয়ার কোন দলীল নেই”। {বুদুরুল আহিল্লাহ-১৫}
ইমাম বুখারীর বিরোধীতা করে বীর্যকে তারা সর্ববস্থায় পবিত্র বলেন। খাওয়া-পান করা সবই মনে হচ্ছে জায়েজ তাদের কাছে?!
অল্প পানিতে নাপাক পড়লে পানি নাপাক হয়ে যাবে
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ৩৭ নং পৃষ্ঠায় পরিচ্ছেদ নির্ধারণ করেছেন-بَابُ البَوْلِ فِي المَاءِ الدَّائِمِতথা আবদ্ধ পানিতে পেশাব করা কেমন?উক্ত পরিচ্ছেদের অধীনে তিনি হাদীস এনেছেনঃ
لاَ يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِي المَاءِ الدَّائِمِ الَّذِي لاَ يَجْرِي، ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيهِ তথা রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন আবদ্ধ পানিতে পেশাব না করে যা প্রবাহমান নয়। তারপর আবার তাতেই গোসল করে। {সহীহ বুখারী-১/৯৪, হাদীস নং-২৩৯}
এ হাদীস দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, আবদ্ধ পানিতে নাপাক পড়লে তাহলে উক্ত পানি নাপাক হয়ে যাবে। এ কারণে তা থেকে গোসল করা যাবে না। চাই পানির তিনটির গুণ তথা রং, স্বাধ এবং গন্ধ পাল্টে যাক বা না যাক। কেননা, রাসূল সাঃ আবদ্ধ পানিতে পেশাব করে তার থেকে আবার গোসল করতে নিষেধ করেছেন। যা প্রমাণ করছে যে, পেশাব করার দ্বারা উক্ত পানি নাপাক হয়ে যাচ্ছে, তাই তা দ্বারা গোসল করা যাবে না।
আর একথাতো পরিস্কার যে, পানিতে পেশাব করার দ্বারা না উক্ত পানির রং পাল্টে, না গন্ধ পাল্টে, না তার স্বাদ পাল্টে যায়।
কিন্তু বুখারীর উক্ত বর্ণনার বিপরীত কথিত আহলে হাদীসদের মাযহাব হল যে, পানি ততক্ষণ পর্যন্ত নাপাক হবে না, যতক্ষণ না পানির রং, স্বাধ বা গন্ধ পরিবর্তিত হয়। {আরফুল জাদী-৯, নুজুলুল আবরার-১/৩১}
অর্থাৎ তাদের মতে বালতির পানিতেও পেশাব করে তা দিয়ে অজু গোসল করা যাবে।
ফরজ গোসলের সময় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া প্রসঙ্গে
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে ফরজ গোসল করার সময় কুলি করা এবং নাকে পানি দেয়া ওয়াজিব নয়। ইমাম বুখারী রহঃ তার বুখারীর ১ম খন্ডের ৪০ নং পৃষ্ঠায় বাব কায়েম করেছেনঃ بَابُ المَضْمَضَةِ وَالِاسْتِنْشَاقِ فِي الجَنَابَةِ তথা গোসল ফরজ অবস্থায় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার অধ্যায়।
ইমাম বুখারী রহঃ এর উক্ত বাবের ব্যাপারে গায়রে মুকাল্লিদ ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ “এর দ্বারা ইমাম বুখারী রহঃ এর উদ্দেশ্য হল যে, গোসলের সময় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া ওয়াজিব নয়। আর রাসূল সাঃ যে কুলি ও নাকে পানি দিয়েছেন সেটি অজু করার জন্য। গোসলের জন্য নয়।
তবে আহলে হাদীস ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ এর নিকট অজু ও গোসলে উভয় অবস্থায় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া ওয়াজিব। আর হানাফীদের নিকট অজুতে সুন্নত এবং গোসলের মাঝে ফরজ। {তাইসীরুল বারী-১/১৮৮]
মাওলানা ওহীদুজ্জামান সাহেবের উক্ত বক্তব্য দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট ফরজ গোসলের সময় কুলি করা, নাকে পানি দেয়া ওয়াজিব নয়। অথচ গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট উভয় কাজই ওয়াজিব।
তাহলে বুখারীর অনুসরণ হল না বিরোধিতা?
অজু ও গোসলে মুআলাত তথা এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে আরেক অঙ্গ ধৌত করা প্রসঙ্গে
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে অজুতে বা গোসলের সময় এক অঙ্গ ধৌত করার পর তা শুকানোর আগে আরেক অঙ্গ ধৌত করা জরুরী নয়। এ কারণেই তিনি বুখারী শরীফের একটি বাব কায়েম করেছেন যার শিরোনাম হল- بَابُ تَفْرِيقِ الغُسْلِ وَالوُضُوءِ তথা অজু ও গোসলের [অঙ্গ ধৌত করার] মাঝে বিচ্ছিন্নতার অধ্যায়।
উক্ত শিরোনামের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ উল্লেখ করেছেনঃ وَيُذْكَرُ عَنْ ابْنِ عُمَرَ: «أَنَّهُ غَسَلَ قَدَمَيْهِ بَعْدَ مَا جَفَّ وَضُوءُهُ» তথা হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি অজুর এক অঙ্গ শুকানোর পর আরেক অঙ্গ ধৌত করতেন। {সহীহ বুখারী-১/১০৪}
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী নিম্ন বর্ণিত মারফু হাদীস উল্লেখ করেছেনঃ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَتْ مَيْمُونَةُ: «وَضَعْتُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاءً يَغْتَسِلُ بِهِ، فَأَفْرَغَ عَلَى يَدَيْهِ، فَغَسَلَهُمَا مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا، ثُمَّ أَفْرَغَ بِيَمِينِهِ عَلَى شِمَالِهِ، فَغَسَلَ مَذَاكِيرَهُ، ثُمَّ دَلَكَ يَدَهُ بِالأَرْضِ، ثُمَّ مَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ، وَغَسَلَ رَأْسَهُ ثَلاَثًا، ثُمَّ أَفْرَغَ عَلَى جَسَدِهِ، ثُمَّ تَنَحَّى مِنْ مَقَامِهِ، فَغَسَلَ قَدَمَيْهِ»
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত মাইমুনা রাঃ বলেছেনঃ আমি রাসূল সাঃ এর জন্য পানি রাখলাম। যেন তিনি তা দ্বারা গোসল করেন। তখন রাসূল সাঃ স্বীয় উভয় হস্তে পানি ঢাললেন। তারপর তাকে দুইবার বা তিনবার ধৌত করলেন। তারপর তিনি তার ডান হাত দিয়ে বাম হাতের উপর পানি ঢাললেন। তারপর তিনি তার নিম্নাঙ্গকে ধৌত করলেন। তারপর তিনি তার স্বীয় হাতকে জমিনের সাথে ঘষলেন। তারপর তিনি কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। তারপর তিনি তার চেহারা এবং হাত ধৌত করলেন। এবং তিনবার মাথা ধৌত করলেন। তারপর তিন পূর্ণ শরীরে পানি ঢাললেন। তারপর তিনি তার স্বীয় স্থান থেকে হটে গেলেন। তারপর তিনি তার পা ধৌত করলেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৬৫}
ইমাম বুখারী রহঃ এর কায়েম করা বাব এবং আনীত হাদীস দ্বারা একথা প্রমাণিত হচ্ছে যে, তার নিকট অঙ্গ ধৌত করার ক্ষেত্রে দেরী করা জায়েজ আছে। আর মুআলাত তথা এক অঙ্গ শুকানোর পর আরেক অঙ্গ ধৌত করা জায়েজ আছে। শুকানোর আগেই আরেক অঙ্গ ধৌত করা জরুরী নয়।
এ কারণে গায়রে মুকাল্লিাদ মাওলানা ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ মুআলাত করা ইমাম আবু হানীফা রহঃ এবং ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর নিকট ওয়াজিব নয়। একই মাযহাব ইমাম ইমাম বুখারী রহঃ এরও। {তাইসীরুল বারী-১/১৯২}
কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদরা ইমাম বুখারী রহঃ এর দৃষ্টিভঙ্গি এবং উপস্থাপিত মারফু হাদীসের সাথে একমত নয়। তাদের নিকট মুআলাত ছেড়ে দেয়া বিদআত।
গায়রে মুকাল্লিদ ইমাম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেব লিখেছেনঃ তরকে মুআলাত বিদআত। আর হযরত ইবনে ওমর রাঃ কর্মের দ্বারা দলীল পেশ করা যবে না। কারণ সাহাবীর কাজ দলীল হতে পারে না। যদিও তা সহীর দরজায় পৌঁছে থাকুক না কেন।{বুদুরুল আহিল্লাহ-৩৮}
ইমাম বুখারী রহঃ যেখানে বাব কায়েম করেছেন অজু ও গোসলের মাঝে তাফরীকের। আর হযরত ইবনে ওমর রাঃ এর বক্তব্য দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। তারপর মারফু হাদীস দ্বারাও প্রমাণ করেছেন যে, মুআলাত জরুরী নয়। কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদরা চরম ধৃষ্টতার সাথে হযরত ইবনে ওমর রাঃ এর আমলকে বিদআত সাব্যস্ত করে দিল। সেই সাথে বুখারীর অনুসারী দাবি করা সত্বেও ইমাম বুখারীর মাযহাবকে বিদআতি মাযহাব বলে দিল।
হায়রে কথিত আহলে হাদীস!
ইমাম বুখারীর মতে শুধু সহবাসের দ্বারা গোসল ফরজ হয় না
হযরত ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ৪৩ নং পৃষ্ঠায় বীর্যপাত ছাড়া শুধু সহবাস দ্বারা গোসল ওয়াজিব হওয়া ও না হওয়ার একাধিক হাদীস উপস্থাপন করার পর স্বীয় সিদ্ধান্ত বলেনঃ قال ابو عبد الله الغسل احوط তথা ইমাম বুখারীর নিকট সতর্কতামূলক গোসল করা উচিত।
এর দ্বারা বুঝা গেল যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট মূলত বীর্যপাতহীন সহবাস দ্বারা গোসল করা ওয়াজিব হয় না। তবে সতর্কতামূলক গোসল করা যেতে পারে।
উটের আস্তাবলে নামায পড়া প্রসঙ্গে
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে উটের আস্তাবলে নামায পড়া বিলা-কারাহাত জায়েজ আছে।
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ৬১ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ الصَّلاَةِ فِي مَوَاضِعِ الإِبِلِ তথা উটের আস্তাবলে নামায পড়া প্রসঙ্গে।
উক্ত বাবের অধীনে গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা অহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ “ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর নিকট উটের আস্তাবলে নামায পড়া মাকরূহ। ইমাম বুখারী রহঃ এ মতকে রদ করেছেন। {তাইসীরুল বারী-১/৩০৪}
মাওলানা অহীদুজ্জামান সাহেবের উক্ত বক্তব্য দ্বারা একথা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট উটের আস্তাবলে নামায পড়া মাকরূহ হওয়া ছাড়াই জায়েজ।
অথচ গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের দৃষ্টিভঙ্গি হল, উটের আস্তাবলে নামায পড়া হারাম। শুধু হারামই নয়, বরং উক্ত নামায দোহরিয়ে পড়া আবশ্যক। {তাইসীরুল বারী-১/৩০৪}
মসজিদে মিম্বর ও মেহরাব তৈরী
ইমাম বুখারী রহঃ তার বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ৭১ নং পৃষ্ঠায় হযরত সালমা বিন আকওয়া রাঃ থেকে একটিহাদীস বর্ণনা করেছেন। যার শব্দ হল-
عَنْ سَلَمَةَ، قَالَ: «كَانَ جِدَارُ المَسْجِدِ عِنْدَ المِنْبَرِ مَا كَادَتِ الشَّاةُ تَجُوزُهَا»
হযরত সালামা থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃএর মসজিদে নববীর [কিবলার] দেয়াল এবং মিম্বরের মাঝে এতটুকু দূরত্ব ছিল যে, একটি বকরী অতিক্রম করতে পারতো। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৯৭}
এ হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গায়রে মুকাল্লিদ ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ“হাদীস দ্বারা একথা জানা যাচ্ছে যে, মসজিদের মেহরাব এবংি মম্বর বানানো সুন্নত নয়। মেহরাবতোএকেবারে না’ই হওয়া উচিত। আর কাঠের মিম্বরও আলাদা করে রাখা উচিত। আমাদের জমানায় এটি ছড়িয়ে গেছে যে, মসজিদে মেহরাব ও মিম্বর চুনি শুরকি দিয়ে বানায়। {তাইসীরুল বারী-১/৩৪২}
বুখারী শরীফের হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, রাসূল সাঃএর জমানায় মসজিদের মেহরাব ছিলনা। আর অহীদুজ্জামান সাহেবের ব্যাখ্যা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, মেহরাব বানানো গায়রে মাসনূন তথা সুন্নতের খেলাফ। আরেকটু বেড়ে গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা আব্দুস সাত্তার সাহেবের মতে মেহরাব বানানো নাজায়েজ ও বিদআত। {ফাতাওয়া সেতারিয়া-১/৬৩}
কিন্তু আফসোস! বুখারী শরীফের বর্ণণা এবং কথিত আহলে হাদীসদের আকাবীরদের মতের উল্টো সকল আহলে হাদীস মসজিদেই মিম্বরেরর সাথে মেহরাবের এ বিদআত প্রচলিত।
এর নাম বুখারী অনুসরণ? না মনের পূজা?
প্রত্যেক স্থানেই সুতরা জরুরী
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে সকল স্থানেই সুতরা দেয়া জরুরী। ইমাম বুখারী তার বিখ্যাত বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ৭২ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ السُّتْرَةِ بِمَكَّةَ وَغَيْرِهَا তথা মক্কা ও অন্যত্র সুতরা কায়েম করার অধ্যায়।
উক্ত বাবের উপর গায়রে মুকাল্লিদ ওহীদুজ্জামান সাহেব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেনঃ “এ বাব দ্বারা ইমাম বুখারী রহঃ এর উদ্দেশ্য হল যে, সুতরা লাগানো সর্বত্রই আবশ্যক। মক্কায়ও। আর কতিপয় হাম্বলীদের মতে মক্কায় নামাযীর সামনে দিয়ে যাওয়া জায়েজ আছে। আর শাফেয়ী ও হানাফীদের মতে সর্বত্রই নিষেধ। আর ইমাম বুখারী রহঃ এরও একই মাযহাব প্রতীয়মান হচ্ছে। আব্দুর রাজ্জাকে একটি হাদীস এসেছে যে, রাসূল সাঃ মসজিদে হারামে সুতরা ছাড়াই নামায পড়তেন। কিন্তু ইমাম বুখারী রহঃ উক্ত হাদীসটিকে জঈফ মনে করতেন। {তাইসীরুল বারী-১/৩৪৪}
গায়রে মুকাল্লিদ অহীদুজ্জামান সাহেবের উক্ত বক্তব্য দ্বারা একথা সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর মতানুসারে মক্কায় হোক বা অন্যত্র হোক কোথাও নামাযীর সামনে দিয়ে সুতরা দিয়ে অতিক্রম করা জায়েজ নয়।
কিন্তু কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা ইমাম বুখারী রহঃ এর উক্ত মতটি মানেন না। তাদের মতে মসজিদে হারামে সুতরা ছাড়াই নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েজ। {ফাতাওয়া আহলে হাদীস-১/৪৫৭}
গরমকালে জোহরের নামায দেরী করা পড়া সুন্নত
হযরত ইমাম বুখারী রহঃ স্বীয় বুখারীর ১ম খন্ডের ৭৬ পৃষ্ঠায় একটি বাব নির্ধারণ করেছেন। সেটি হল, بَابُ الإِبْرَادِ بِالظُّهْرِ فِي شِدَّةِ الحَرِّ তথা প্রচন্ড গরমকালে জোহরের নামায ঠান্ডার সময় পড়ার অধ্যায়।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ একাধিক হাদীস উল্লেখ করেছেন। যেমন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، وَنَافِعٌ مَوْلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ: أَنَّهُمَا حَدَّثَاهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «إِذَا اشْتَدَّ الحَرُّ فَأَبْرِدُوا عَنِ الصَّلاَةِ، فَإِنَّ شِدَّةَ الحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ»
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যখন গরম তীব্র হয়, তখন তোমরা নামায ঠান্ডা করে পড়। কেননা, গরমের তীব্রতা জাহান্নামের শ্বাস থেকে হয়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৩৩, ৫১০}
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ: أَذَّنَ مُؤَذِّنُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الظُّهْرَ، فَقَالَ: «أَبْرِدْ أَبْرِدْ» أَوْ قَالَ: «انْتَظِرِ انْتَظِرْ» وَقَالَ: «شِدَّةُ الحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ، فَإِذَا اشْتَدَّ الحَرُّ فَأَبْرِدُوا عَنِ الصَّلاَةِ» حَتَّى رَأَيْنَا فَيْءَ التُّلُولِ
হযরত আবু জর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ এর মুয়াজ্জিন [হযরত বেলাল রাঃ] জোহরের আজান দিতেছিলেন। রাসূল সাঃ বললেনঃ কিছুটা ঠান্ডা হতে দাও! কিছুটা ঠান্ডা হতে দাও!! অথবা তিনি এই বলেছেন যে, কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর! কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর! তিনি আরো বলেন, গরমের তীব্রতা জাহান্নামের শ্বাস থেকে হয়। তাই যখন গরম তীব্র হয়, তখন তোমরা নামাযকে ঠান্ডা করে পড়। এমনকি আমরা টিলার ছায়াও দেখেছি। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৩৫, ৫১১}
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا اشْتَدَّ الحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلاَةِ، فَإِنَّ شِدَّةَ الحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ গরম তীব্র হলে নামাযকে ঠান্ডা করে পড়। কেননা, গরমের তীব্রতা জাহান্নামের শ্বাস থেকে হয়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৩৬, ৫১২}
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَبْرِدُوا بِالظُّهْرِ، فَإِنَّ شِدَّةَ الحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ»
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা জোহর নামাযকে ঠান্ডা করে পড়। কেননা, গরমের তীব্রতা জাহান্নামের শ্বাস। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৩৮, ৫১৩}
বুখারীর এ চারটি বর্ণনাই বলছে যে, জোহরের নামায গরমের সময় দেরী করে পড়তে হবে। রাসূল সাঃ এর নির্দেশও তাই। কিন্তু বুখারীর এ চারও বর্ণনার বিপরীত কথিত আহলে হাদীসদের মত হল, নামায সর্ববস্থায় প্রথম সময়ে পড়া উত্তম। {ফাতাওয়া সানাবিয়্যাহ-১/৫৫৩, সালাতুর রাসূল-১৪৬}
ফজর নামাযের সূর্য উঠার আগে এবং আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত নফল নামায পড়া
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ৮২ ও ৮৩ নং পৃষ্ঠায় ফজর এবং আসরের পর নামায পড়া সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। যেমন-
১
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: ” أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ بَيْعَتَيْنِ، وَعَنْ لِبْسَتَيْنِ وَعَنْ صَلاَتَيْنِ: نَهَى عَنِ الصَّلاَةِ بَعْدَ الفَجْرِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، وَبَعْدَ العَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ،
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ দুই পদ্ধতির ক্রয়-বিক্রয় এবং দুই ধরণের পরিচ্ছদ এবং দুই সময়ে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। ফজরের পর সূর্য উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত নামায পড়তে নিষেধ করেছেন, এবং আসরের পর সূর্য ডুবে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৮৪}
২
«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصُّبْحِ حَتَّى تَشْرُقَ الشَّمْسُ، وَبَعْدَ العَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ»،
রাসূল সাঃ ফজরের নামাযের পর সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য ডুবা পযন্ত নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। {সহীহ বুখারী হাদীস নং-৫৮১}
৩
أَبَا سَعِيدٍ الخُدْرِيَّ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لاَ صَلاَةَ بَعْدَ الصُّبْحِ حَتَّى تَرْتَفِعَ الشَّمْسُ، وَلاَ صَلاَةَ بَعْدَ العَصْرِ حَتَّى تَغِيبَ الشَّمْسُ»
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, “ফজরের নামাযের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত কোন নামায নেই। আর আসরের পর সূর্য ডুবা পর্যন্ত কোন নামায নেই। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৮৬}
عَنْ مُعَاوِيَةَ، قَالَ: «إِنَّكُمْ لَتُصَلُّونَ صَلاَةً لَقَدْ صَحِبْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا رَأَيْنَاهُ يُصَلِّيهَا، وَلَقَدْ نَهَى عَنْهُمَا»، يَعْنِي: الرَّكْعَتَيْنِ بَعْدَ العَصْرِ
হযরত মুয়াবিয়া রাঃ বলেন, নিশ্চয় তোমরা নামায পড়ছো, অথচ আমরা রাসূল সাঃ এর সঙ্গী ছিলাম। অথচ কখনো তাঁকে এ দুই রাকাত পড়তে দেখিনি। শুধু তাই নয়, তিনি আমাদের এ দুই রাকাত নামায নিষেধ করতেন। অর্থাৎ আসরের পরের দুই রাকাত। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৮৭}
বুখারী শরীফের উক্ত বর্ণানাগুলো স্পষ্ট ভাষায় প্রমাণ করছে যে, ফজরের পর সূর্য উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য ডুবে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কোন নামায পড়া যাবে না। রাসূল সাঃ এ নামায পড়তে নিষেধ করেছেন।
এখন প্রশ্ন হল, কথিত আহলে হাদীস দাবিদাররা বুখারীর এসব বর্ণনাকে বাদ দিয়ে তারা কেন ফজরের সুন্নত না পড়তে পারলে ফজরের নামাযের পরও সূর্য উঠার আগে তা আদায় করে? এটা কি বুখারীর উক্ত সহীহ মারফু হাদীস অস্বিকার করা নয়?
সেই সাথে আসরের পর দুই রাকাত নামায পড়ারও তারা প্রবক্তা। যা বুখারীর উক্ত হাদীসগুলোকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করে করা হচ্ছে।
তাহলে বুখারীর হাদীস অমান্য করার নাম বুখারী অনুসারী? না বুখারী বিদ্বেষী?
কাযা নামায প্রসঙ্গে
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফে একটি শিরোনাম কায়েম করেছেন। যার নাম হল- بَابُ مَنْ صَلَّى بِالنَّاسِ جَمَاعَةً بَعْدَ ذَهَابِ الوَقْتِ তথা যে লোকদের সাথে সময় চলে যাওয়ার পর জামাতের সাথে নামায আয়াদ করেছে এর অধ্যায়।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ হাদীস এনেছেনঃ
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ، جَاءَ يَوْمَ الخَنْدَقِ، بَعْدَ مَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ فَجَعَلَ يَسُبُّ كُفَّارَ قُرَيْشٍ، قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا كِدْتُ أُصَلِّي العَصْرَ، حَتَّى كَادَتِ الشَّمْسُ تَغْرُبُ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَاللَّهِ مَا صَلَّيْتُهَا» فَقُمْنَا إِلَى بُطْحَانَ، فَتَوَضَّأَ لِلصَّلاَةِ وَتَوَضَّأْنَا لَهَا، فَصَلَّى العَصْرَ بَعْدَ مَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى بَعْدَهَا المَغْرِبَ
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। খন্দক যুদ্ধের দিন হযরত উমর রাঃ সূর্য ডুবে যাওয়ার পর কুরাইশের কাফেরদের বকা দিতে দিতে উপস্থিত হলেন। এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি আসরের নামায পড়তে পারিনি। অথচ সূর্য ডুবে গেছে। রাসূল সাঃ বললেনঃ হায় আল্লাহ! আমিওতো পড়িনি। তারপর আমরা বুতহান নামক স্থানে দাঁড়ালাম। তারপর তিন নামাযের জন্য অজু করলেন। সেই সাথে আমরাও অজু করলাম। তারপর তিনি সূর্য ডুবার পর আসরের নামায পড়লেন। তারপর মাগরিবের নামায পড়লেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৯৬}
ইমাম বুখারী রহঃ একটু পরই একটি হাদীস উল্লেখ করেন-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ [ص:123] قَالَ: ” مَنْ نَسِيَ صَلاَةً فَلْيُصَلِّ إِذَا ذَكَرَهَا، لاَ كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذَلِكَ {وَأَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي} [طه: 14]
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি নামায ভুলে যাবে, তখন সে যেন তা আদায় করে যখন তার স্মরণ হয়। উক্ত নামাযটি আদায় করা ছাড়া এর কোন কাফফারা নেই। “আর তোমরা আমার স্মরণে নামায আদায় কর”। {সূরা ত্বহা-১৪}
ইমাম বুখারী রহঃ একটু পর আরো একটি শিরোনাম দেন, তা হল- بَابُ قَضَاءِ الصَّلاَةِ، الأُولَى فَالأُولَى তথা কাযা নামায একের পর এক আদায় করা।
উক্ত বাবের অধীনেও ইমাম বুখারী রহঃ প্রথমেই হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত হযরত উমর রাঃ এর ঘটনা সম্পর্কিত পূর্বোক্ত হাদীসটি আবার উল্লেখ করেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৯৮}
বুখারী শরীফের উক্ত বর্ণনাগুলো দ্বারা একথা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, ভুলে নামায কাযা করলে উক্ত নামায জিম্মা থেকে মাফ হয় না। বরং উক্ত নামাযের কাফফারা কেবল তা আদায়ের মাঝেই। এছাড়া এর কোন কাফফারা নেই।
যেখানে ওজরের কারণে কাযা নামায জিম্মা থেকে মাফ হয় না। বরং তা আদায় কর্ইা এর কাফফারা সেখানে ইচ্ছেকৃত কাযা করা নামায জিম্মা থেকে কি করে মাফ হয়? বরং এটি আদায় করাতো আরো কঠিনভাবে আবশ্যক হওয়া প্রয়োজন।
বুখারীতে উল্লেখিত হাদীসতো একথা প্রমাণ করছে যে, ভুলে ছেড়ে দিলেও নামায জিম্মা থেকে মাফ হয় না। সেখানে ইচ্ছেকৃত নামায ছেড়ে দিলে তা জিম্মা থেকে মাফ হয়ে যাওয়ার দলীল বুখারীর কোন সরীহ হাদীস দিয়ে প্রমানিত?
অথচ গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের মতে ইচ্ছেকৃত নামায ছেড়ে দিলে উক্ত নামায আর কাযা করতে হয় না। {দস্তুরে হক-১৪৯, ফাতাওয়া আহলে হাদীস-১/৪১৫, ফাতাওয়া সেতারিয়া-৪/১৫৪, রাসূলে আকরাম কি নামায-১১৫}
বাহ! কি সহজ! নবীজী সাঃ থেকে সরীহ সনদে বুখারীতে এল অনিচ্ছায় ছেড়ে দিলেও মাফ হয় না, কাযা করা আবশ্যক হয়, সেখানে ইচ্ছেকৃত নামায তরককারীকে কি পরিমাণ সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।
বুখারীর কোন সনদযুক্ত সরীহ হাদীস দিয়ে এ মত প্রমানিত?
এর নাম বুখারী বিরোধিতা নয়তো কি?
ইমাম বসে নামায পড়ালে মুসল্লি কীভাবে নামায পড়বে?
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে ইমাম যদি কোন কারণে বসে নামায পড়ায়, তাহলে মুক্তাদীগণ দাঁড়িয়েই নামায পড়বে। বসে পড়বে না।
হযরত ইমাম বুখারী রহঃ তার বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ৯১ পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابٌ: حَدُّ المَرِيضِ أَنْ يَشْهَدَ الجَمَاعَةَ তথা “অসুস্থ্য ব্যক্তির জন্য কতক্ষণ পর্যন্ত জামাতে শরীক হওয়া উচিত”।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত হাদীস নকল করেছেন। যারা সারমর্ম হল, রাসূল সাঃ মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় রাসূল সাঃ এর আদেশে হযরত আবু বকর রাঃ নামায পড়াতেন। একদিন রাসূল সাঃ স্বীয় অসুস্থতায় কিছুটা সুস্থ্য বোধ করলে মসজিদে আসেন। সে সময় হযরত আবু বকর রাঃ রাসূল সাঃ দেখে কিছুটা পিছনে হটে যান। আর রাসূল সাঃ বসে বসেই নামায পড়ালেন। আর হযরত আবু বকর রাঃ সহ বাকি সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তাঁর অনুসরণ করলেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৬৪}
এ হাদীসের উপর আলোচনা করতে দিয়ে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ লিখেছেনঃ এ হাদীস দ্বারা দলীল দেয়া হয় যে, দাঁড়াতে সক্ষম ব্যক্তি বসে নামাযে ইমামতীকারী পিছনে ইক্তিদা করা সহীহ আছে। {ফাতহুল বারী-২/১৫৬}
এটাই জমহুর সাহাবাগণ এবং ইমাম আবু হানীফা রহঃ, ইমাম শাফেয়ী রহঃ এবং ইমাম বুখারী রহঃ এর এর মত।
উক্ত বাবের একটু পর ইমাম বুখারী রহঃ আরেকটি বাব নির্ধারণ করেছেন, যার শিরোনাম হল, بَابٌ: إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ তথা ইমামকে নির্ধারণ করা হয়েছে, তার অনুসরণ করার জন্য।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ ঐ সকল হাদীস উদ্ধৃত করেছেন, যাতে রাসূল সাঃ বলেছেন যে, ইমাম বসে নামায পড়লে মুসল্লিগণও যেন বসে নামায পড়ে। {সহীহ বুখারী হাদীস নং-৬৮৮}
তাহলে বুখারীতে প্রথমে উদ্ধৃত এ হাদীস যেহেতু বাহ্যিকভাবে জমহুর উলামা এবং খোদ ইমাম বুখারীর উদ্ধৃত প্রথম হাদীস এবং তার স্বীয় রায়ের বিপরীত মনে হচ্ছে, তাই ইমাম বুখারী রহঃ তার উস্তাদ ইমাম হুমায়দী রহঃ থেকে এর সমাধান তিনি নিজেই বুখারীতে উল্লেখ করেছেন-
قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: قَالَ الحُمَيْدِيُّ: قَوْلُهُ: «إِذَا صَلَّى جَالِسًا فَصَلُّوا جُلُوسًا» فَهُوَ فِي مَرَضِهِ القَدِيمِ، ثُمَّ صَلَّى بَعْدَ ذَلِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا، وَالنَّاسُ خَلْفَهُ قِيَامًا، لَمْ يَأْمُرْهُمْ بِالقُعُودِ، وَإِنَّمَا يُؤْخَذُ بِالْآخِرِ فَالْآخِرِ، مِنْ فِعْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
হযরত আবু আব্দুল্লা তথা ইমাম বুখারী রহঃ বলেন, হুমায়দী রহঃ বলেছেনঃ রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, “যখন ইমাম বসে নামায পড়ে, তখন তোমরাও বসে নামায পড়”।
একথাটি রাসূল সাঃ বলেছেন তার অনেক আগের অসুস্থ্যতার সময়ে। [৫ম হিজরী] তারপর [মৃত্যুর সময়ের অসুস্থ্যতার সময়] রাসূল সাঃ বসে নামায পড়িয়েছেন, আর লোকেরা তার পিছনে দাঁড়ানো ছিল। অথচ রাসূল সাঃ তাদের বসতে নির্দেশ দেননি। এ কারণে রাসূল সাঃ এর আমলকে আমলের জন্য গ্রহণ করা হবে যেহেতু এটিই সর্বশেষ আমল। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৮৯}
ইমাম বুখারী রহঃ এর উস্তাদ থেকে এ বর্ণনা একথা সুষ্পষ্টভাবে প্রমান করছে যে, যেহেতু রাসূল সাঃ এর মৃত্যুর সময়ের শেষ আমল ছিল, ইমাম বসে নামায পড়লেও মুক্তাদী দাঁড়িয়ে ইক্তিদা করতে পারে। বসার কোন দরকার নেই। যা রাসূল সাঃ এর শেষ আমল। তাই এটি পূর্বের বসার নির্দেশসূচক হাদীসকে রহিত করে দিয়েছে।
এটাই ইমাম বুখারী রহঃ এর মাযহাব।
কিন্তু ইমাম বুখারী রহঃ এর অনুসারী দাবিদার কথিত আহলে হাদীস দাবিদাররা ইমাম বুখারী রহঃ এর মত ও বর্ণিত হাদীসের প্রতি সামান্যতম সম্মান প্রদর্শন করে না। ঔদ্ধত্বের সাথে ঘোষণা করল যে, ইমাম বসে নামায পড়লে মুক্তাদীদেরও বসে নামায পড়া জরুরী। {তাইসীরুল বারী-১/৪৩৯}
ইমামতীর অধিক হকদার প্রসঙ্গে
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে ইমামতীর অধিক হকদার ঐ ব্যক্তি যিনি বড় আলেম।
বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ৯৩ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব রয়েছে। যার শিরোনাম হল, بَابٌ: أَهْلُ العِلْمِ وَالفَضْلِ أَحَقُّ بِالإِمَامَةِ তথা ইমামতীর অধিক হকদার হলেন বড় আলেম ও সম্মানিত।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ
عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ: مَرِضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَاشْتَدَّ مَرَضُهُ، فَقَالَ: «مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ» قَالَتْ عَائِشَةُ: إِنَّهُ رَجُلٌ رَقِيقٌ، إِذَا قَامَ مَقَامَكَ لَمْ يَسْتَطِعْ أَنْ يُصَلِّيَ بِالنَّاسِ، قَالَ: «مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ» فَعَادَتْ، فَقَالَ: «مُرِي أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ، فَإِنَّكُنَّ صَوَاحِبُ يُوسُفَ» فَأَتَاهُ الرَّسُولُ، فَصَلَّى بِالنَّاسِ فِي حَيَاةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
হযরত আবূ মুসা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন। তখন তিনি বললেন, আবূ বকরকে বল, লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে। হযরত আয়শা রাঃ বললেন, তিনিতো কোমল হৃদয়ের মানুষ। যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে পারবেন না। রাসূল সাঃ আবার বললেন, আবূ বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। আয়শা রাঃ আবার সে কথা বললেন, তখন তিনি আবার বললেন, আবূ বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। তোমরা ইউসুফ আঃ এর সাথীদের মতই। তারপর এক সংবাদদাতা হযরত আবু বকর রাঃ এর কাছে সংবাদ নিয়ে আসলেন, এবং তিনি রাসূল সাঃ এর জীবদ্দাশায়ই লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৭৮}
তারপর উদ্ধৃত ৬৭৯, ৬৮০, ৬৮১ এবং ৬৮২ নং হাদীসও একই বক্তব্য নির্ভর। তথা রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় অন্যান্য ভাল ও উত্তম তিলাওয়াতকারী কারী থাকা সত্বেও বড় আলেম হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ দিয়ে রাসূল সাঃ ইমামতি করিয়েছেন। অথচ সে সময় ভাল ও উত্তমরূপে তিলাওয়াতকারী হযরত উবাই বিন কাব রাঃ জীবিত ছিলেন। অথচ রাসূল সাঃ ভাল কারী হওয়া সত্বেও তাকে ইমাম না বানিয়ে বড় আলেম হিসেবে হযরত আবু বকর রাঃ কে ইমাম নির্ধারণ করাই স্পষ্ট প্রমাণবাহী যে, বড় কারীর চেয়ে বড় আলেম ইমামতীর অধিক হকর্দা।
এটিই ইমাম বুখারী রহঃ এর মাযহাব। যা বুখারীর শিরোনাম এবং হাদীসের আলোকে স্পষ্ট। এটাই চার ইমামের মাযহাব।
কিন্তু ইমাম বুখারী রহঃ এর মাযহাব এবং বুখারীর হাদীসের বিপরীত বুখারীর অনুসারী দাবিদার কথিত আহলে হাদীসদের মতে ইমামতীর অধিক হকদার বড় আলেম নয় বড় কারী। {তুহফাতুল আহওয়াজী-১/৯৭, আরফুল জাদী-৩৬, নুজুলুল আবরার-১/৯৬}
ইমাম নামায সংক্ষিপ্ত ও হালকা পড়ানো উচিত
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ৯ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব নির্ধারণ করেছেন, যার শিরোনাম হল, بَابُ تَخْفِيفِ الإِمَامِ فِي القِيَامِ، وَإِتْمَامِ الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ তথা ইমাম কর্তৃক নামাযে কিয়াম সংক্ষিপ্ত করা এবং রুকু ও সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করা প্রসঙ্গে।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ একটি হাদীস নকল করেছেন। যা হল এই যে,
أَبُو مَسْعُودٍ، أَنَّ رَجُلًا، قَالَ: وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي لَأَتَأَخَّرُ عَنْ صَلاَةِ الغَدَاةِ مِنْ أَجْلِ فُلاَنٍ مِمَّا يُطِيلُ بِنَا، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَوْعِظَةٍ أَشَدَّ غَضَبًا مِنْهُ يَوْمَئِذٍ، ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ مِنْكُمْ مُنَفِّرِينَ، فَأَيُّكُمْ مَا صَلَّى بِالنَّاسِ فَلْيَتَجَوَّزْ، فَإِنَّ فِيهِمُ الضَّعِيفَ وَالكَبِيرَ وَذَا الحَاجَةِ»
হযরত আবু মাসঊদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সাহাবী এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি অমুকের কারণে ফজরের সালাতে অনুপস্থিত তাকি। তিনি [জামাআতে] সালাতকে খুব দীর্ঘ করেন। আবূ মাসঈদ রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাঃ কে নসীহত করতে গিয়ে সে দিনের ন্যায় এত বেশি রাগাম্বিত হতে আর কোন দিন দেখিনি। তিনি বলেন, তোমাদের মাঝে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী রয়েছে। তোমাদের মধ্যে যে কেউ অন্য লোক নিয়ে সালাত আদায় করে, সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা, তাদের মধ্যে দুর্বল, বৃদ্ধ ও হাজতমন্দ লোকও থাকে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭০২}
এ হাদীস স্পষ্ট ভাষায় প্রমাণ করছে যে, ইমামের জন্য নামাযকে দীর্ঘায়িত করে পড়ানো উচিত নয়। এটি রাসূল সাঃ নিষেধ করেছেন।
কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদদের আমল এর ভিন্ন।
গায়রে মুকাল্লিদ ফজলে হুসাইন বাহারী আহলে হাদীস মাযহাবের প্রতিষ্ঠা লগ্নের বড় আলেম মাওলানা নজীর হুসাইনের ব্যাপারে তার ছেরে মিয়া শরীফ হুসাইনের বরাতে উল্লেখ করেন যে, মিয়া নজীর হুসাইন সাহেব ফজরের নামায ৪৫ মিনিট, আর জোহরের নামায আধা ঘন্টা সময় এমনিভাবে রুকু সেজদায়ও দীর্ঘ সময় ব্যয় করে নামাযে ইমামতী করতেন। এমন কি নজীর সাহেব নিজেই বলতেন, আমার মত এমন ইমাম দিল্লী থেকে কলিকাতা পর্যন্ত কোথাও নেই। [আল হায়াত বাদাল মামাত-২৭, ১৩৭}
নামাযে বিসমিল্লাহ আস্তে পড়া প্রসঙ্গে
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১০২ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ مَا يَقُولُ بَعْدَ التَّكْبِيرِ তথা তাকবীরে তাহরীমা পর কী বলবে?
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ এ হাদীস নকল করেছেন-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ: " أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا بَكْرٍ، وَعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا كَانُوا يَفْتَتِحُونَ الصَّلاَةَ بِ {الحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ العَالَمِينَ} [الفاتحة: 2] “
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ, আবু বকর রাঃ এবং হযরত উমর রাঃ নামাযে কিরাত আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন দ্বারা শুরু করতেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭৪৩}
অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূল সাঃ তাকবীরে তাহরিমার পর সানা তারপর আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়তেন।
কিন্তু বুখারীর এ হাদীসে এল যে, রাসূল সাঃ, আবু বকর রাঃ ও হযরত উমর রাঃ এর কিরাতের সূচনা হতো আলহামদুলিল্লাহ দিয়ে। বিসমিল্লাহের কথা উল্লেখ নেই। কারণ হল, তারা সূরা ফাতিহা শুরু করতেন জোরে জোরে। তাই সবাই শুনতো। কিন্তু বিসমিল্লাহ যেহেতু জোরে বলতেন না, তাই তা বর্ণনায় আসেনি।
অর্থাৎ উঁচু আওয়াজে কিরাতের সূচনা আলহামদু থেকে শুরু হতো, বিসমিল্লাহ থেকে নয়।
কিন্তু বুখারী শরীফের এ হাদীস ও অন্যান্য সহীহ হাদীসের খেলাফ কথিত আহলে হাদীসের মাযহাব হল, জেহরী নামায তথা যে নামাযের কিরাত জোরে পড়া হয়, উক্ত নামাযে বিসমিল্লাহও জোরে পড়তে হবে। {আরফুল জাদী-৩৬, দস্তুরুল মুত্তাকী-৯২}
মুক্তাদীর কিরাত পড়া প্রসঙ্গে
ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট সমস্ত নামাযে যেমনিভাবে ইমামের উপর কিরাত পড়া আবশ্যক, তেমনি মুক্তাদীর উপরও কিরাত পড়া আবশ্যক। ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১০৪ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ وُجُوبِ القِرَاءَةِ لِلْإِمَامِ وَالمَأْمُومِ فِي الصَّلَوَاتِ كُلِّهَا، فِي الحَضَرِ وَالسَّفَرِ، وَمَا يُجْهَرُ فِيهَا وَمَا يُخَافَتُ তথা সকল নামাযে ইমাম ম্ক্তুাদী উভয়ের উপর কিরাত পড়া ওয়াজিব। চাই মুসাফির হোক বা মুকিম হোক, জোরে কিরাতওয়ালা নামায হোক বা আস্তে কিরাতওয়ালা নামায হোক”।
ইমাম বুখারী রহঃ এর কায়েম করা এ বাব দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে সকল নামাযে যেমন ইমামের উপর কিরাত পড়া আবশ্যক, তেমনি মুক্তাদীর উপরও কিরাত পড়া আবশ্যক। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর মতানুসারে ইমামের জন্য যেমন সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব, তেমনি মুক্তাদীর উপরও সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। তেমনি ইমামের জন্য যেমন সূরা ফাতিহার পর আরেক সূরা মিলানো ওয়াজিব, তেমনি মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতিহার পর আরেক সূরা মিলানো ওয়াজিব। যদি তাই না হতো, তাহলে ইমাম বুখারী রহঃ এরকম বাব কায়েম করতেন যে, “ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ের জন্য সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক।”
সূরা ফাতিহা নির্দিষ্ট না করে মুতলাকানভাবে বলা যে, ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ের জন্য সকল নামাযে কিরাত পড়া আবশ্যক বলার দ্বারা সূরা ফাতিহা ও অতিরিক্ত সকল সূরাই শামিল হয়ে যাচ্ছে।
অথচ গায়রে মুকাল্লিদরা ইমাম বুখারী রহঃ এর কায়েমকৃত উক্ত বাবের উল্টো শুধুমাত্র সূরা ফাতিহাকে মুক্তাদীর জন্য পড়া আবশ্যক বলে, আর অন্য সূরা মিলানোকে ওয়াজিব বলে না। {তাইসীরুল বারী-১/৪৯৮}
এর নাম বুখারী অনুসরণ না বিরোধিতা?
ফরজের শেষের দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়া উচিত
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابٌ: يَقْرَأُ فِي الأُخْرَيَيْنِ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ তথা শেষের দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ার অধ্যায়।
উক্ত হাদীসের আলোকে ইমাম বুখারী রহঃ এ হাদীস উল্লেখ করেছেনঃ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ، عَنْ أَبِيهِ: «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ فِي الأُولَيَيْنِ بِأُمِّ الكِتَابِ، وَسُورَتَيْنِ، وَفِي الرَّكْعَتَيْنِ الأُخْرَيَيْنِ بِأُمِّ الكِتَابِ
হযরত আবু কাতাদা রাঃ থেকে বর্র্ণিত। রাসূল সাঃ জোহরের নামাযের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়লেন, এবং দু’টি সূরা। আর শেষের দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়লেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭৭৬}
বুখারীর উক্ত বাব এবং তাতে উদ্ধৃত হাদীস একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, ফরজ নামাযের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা মিলানো আর শেষের দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়া উচিত। সাথে কোন সূরা মিলানো যাবে না।
কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদদের মতে শেষের দ্ইু রাকাতে সূরা ফাতিহা ছাড়াও অন্যান্য সূরাও মিলানো যায়। {নুজুলুল আবরার-১/৭৮}
মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পড়া প্রসঙ্গে
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে মুক্তাদীর নামায সূরা ফাতিহা পড়া ছাড়াও হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি রুকু অবস্থায় মুদরিক হয়, সে ব্যক্তি উক্ত রাকাতের মুদরিক বলে সাব্যস্ত হবে।
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১০৮ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ إِذَا رَكَعَ دُونَ الصَّفِّ তথা কাতারে পৌঁছার আগেই রুকু করে নেয়ার অধ্যায়।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ একটি হাদীস নকল করেছেন। সেটি হল,
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، أَنَّهُ انْتَهَى إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ رَاكِعٌ، فَرَكَعَ قَبْلَ أَنْ يَصِلَ إِلَى الصَّفِّ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «زَادَكَ اللَّهُ حِرْصًا وَلاَ تَعُدْ»
হযরত আবু বাকরা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল সাঃ এর কাছে এমন সময় পৌঁছলেন যে, তখন রাসূল সাঃ রুকুতে ছিলেন। তখন তিনি কাতারে পৌঁছার আগেই রুকু করলেন। তারপর যখন তিনি রাসূল সাঃ কে উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করলেন, তখন রাসূল সাঃ বললেনঃ আল্লাহ তাআলা তোমাকে এর চেয়ে বেশি [নেক কাজ করার] আকাঙ্খা দান করুন। কিন্তু এমনটি আর করো না। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭৮৩}
উক্ত হাদীস দ্বারা দুইটি বিষয় প্রমাণিত হচ্ছে। যথা-
১-মুক্তাদীর নামায সূরা ফাতিহা ছাড়াই আদায় হয়ে যায়।
২- যে ব্যক্তি ইমামকে রুকুতে পায়, সে উক্ত নামায পেয়ে নিল।
হযরত আবু বাকরা রাঃ সূরা ফাতিহা পড়েন নি। আর তিনি ইমামের সাথে এসে রুকুতে শরীক হয়েছেন। উক্ত বিষয়টি রাসূল সাঃ এর কাছে বর্ণনা করা হলে, রাসূল সাঃ উৎসাহতো দিয়েছেন, কিন্তু কিন্তু নামায আবার পড়ার হুকুম কিন্তু দেননি।
এর দ্বারা বুঝা গেল যে, নামায সূরা ফাতিহা ছাড়াই হয়েগিয়েছিল। নামায না হলে, রাসূল সাঃ তাকে নামায দোহরাতে তথা পুনরায় পড়তে আদেশ নিশ্চয় দিতেন।
বুখারী শরীফের এ হাদীসের খেলাফ গায়রে মুকাল্লিদদের মাযহাব হল যে, সূরা ফাতিহা না পড়লে নামায হবেই না। আর রুকুতে শরীক হওয়া ব্যক্তি উক্ত পায়নি। বরং তাকে উক্ত রাকাত পুনরায় পড়তে হবে। {ফাতাওয়া নজীরিয়া-১/৪৯৬, আরফুল জাদী-২৬, নুজুলুল আবরার-১/১৩৩, দস্তুরুল মুত্তাকী-১২১}
জুমআর দিনের গোসল প্রসঙ্গে
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে জুমআর দিন গোসল করা ওয়াজিব নয়।
বুখারী রহঃ তার বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১২০ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ فَضْلِ الغُسْلِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، তথা জুমআর দিনে গোসল করার ফযীলতের অধ্যায়।
ইমাম বুখারী রহঃ এর বাবের শিরোনাম দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট জুমআর দিন গোসল করা ফযীলতের বিষয়, সওয়াবের বিষয়। কিন্তু আবশ্যকীয় তথা ওয়াজিব নয়।
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ উক্ত বাবের অধীনে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেনঃ
(قَوْلُهُ بَابُ فَضْلِ الْغُسْلِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ)
قَالَ الزَّيْنُ بْنُ الْمُنِيرِ لَمْ يَذْكُرِ الْحُكْمَ لِمَا وَقع فِيهِ من الْخلاف وَاقْتصر علىالفضل لِأَنَّ مَعْنَاهُ التَّرْغِيبُ فِيهِ وَهُوَ الْقَدْرُ الَّذِي تَتَّفِقُ الْأَدِلَّةُ عَلَى ثُبُوتِهِ
জায়েন বিন মুনীর বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ জুমআর দিনের গোসলের হুকুম বর্ণনা করেননি। [যে তা সুন্নত, নফল না ওয়াজিব?] কারণ এই যে, এতে মতভেদ আছে। বরং ইমাম বুখারী রহঃ এতে ফযীলতের উপরই সীমিত থেকেছেন। যার দ্বারা উৎসাহদান উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, এটা ঐ বিষয়, যার দলীল মতভেদহীন। {ফাতহুল বারী-২/৩৫৭}
গায়রে মুকাল্লিদ ওয়াহীদুজ্জামান সাহেব উক্ত বাবের অধীনে লিখেছেনঃ “আর ইমাম বুখারী রহঃ সামনের হাদীসের ভিত্তিতে এটাকে সুন্নত প্রমাণিত করেছেন”। {তাইসীরুল বারী-২/২}
ইমাম বুখারী রহঃ এর সাথে চার ইমাম এবং জমহুর ফুক্বাহাগণের রায় এটাই যে, জুমআর দিন গোসল করা সুন্নত ওয়াজিব নয়।
কিন্তু ইমাম বুখারী রহঃ এবং জমহুর ফুক্বাহাগণের রায়ের বিপরীত গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট জুমআর দিন গোসল করা ওয়াজিব। {আরফুল জাদী-১৪, নুজুলুল আবরার=১/২৫, তাইসীরুল বারী-২/২, দস্তুরুল মুত্তাকী-৫৭}
জুমআর সময় কখন শুরু হয়?
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে জুমআর নামাযের সময় শুরু হয়, সূর্য হেলে যাওয়ার পর থেকে।
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১২৩ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ وَقْتُ الجُمُعَةِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ
তথা জুমআর নামাযের সময় হল সূর্য হেলে যাওয়ার পর থেকে।
উক্ত বাব কায়েমের পর ইমাম বুখারী রহঃ উল্লেখ করেনঃ وَكَذَلِكَ يُرْوَى عَنْ عُمَرَ، وَعَلِيٍّ، وَالنُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، وَعَمْرِو بْنِ حُرَيْثٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ তথা এমনটিই বর্ণিত হযরত ওমর রাঃ, হযরত আলী রাঃ, হযরত নুমান বিন বাশীর রাঃ এবং হযরত আমর বিন হুরাইস রাঃ থেকে।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ নি¤œ বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করেনঃ
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي الجُمُعَةَ حِينَ تَمِيلُ الشَّمْسُ»
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ জুমআর নামায পড়তেন সূর্য হেলে যাওয়ার পর। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৯০৪}
ইমাম বুখারী রহঃ এর কায়েম করা বাব এবং বর্ণিত হাদীস দ্বারা একথা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, জুমআর নামাযের সময় শুরু হয় সূর্য হেলার পর থেকে। এ কারণেই আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ এর ব্যাখ্যায় লিখেনঃ
(قَوْلُهُ بَابُ وَقْتِ الْجُمُعَةِ)
أَيْ أَوَّلِهِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ جَزَمَ بِهَذِهِ الْمَسْأَلَةِ مَعَ وُقُوعِ الْخِلَافِ فِيهَا لِضَعْفِ دَلِيلِ الْمُخَالِفِ عِنْدَهُ
ইমাম বুখারী রহঃ এ মাসআলাকে [জুমআর সময়ঃ সূর্য হেলার পর থেকে] খুবই দৃঢ়তা ও নিশ্চয়তার সাথে বর্ণনা করেছেন। অথচ এতে মতভেদ আছে। কারণ হল এই যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর কাছে এর বিরুদ্ধবাদীদের দলীল খুবই দুর্বল। {ফাতহুল বারী-২/৩৮৭}
গায়রে মুকাল্লিদ ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ “ইমাম বুখারী রহঃ এ মতই গ্রহণ করেছেন, যা জমহুরের রায়। অর্থাৎ জুমআর নামাযের সময় শুরু হয়, সূর্য হেলে যাওয়ার পর থেকে। কেননা, এটি জোহর নামাযের স্থলাভিষিক্ত। {তাইসীরুল বারী-২/১৬}
কিন্তু ইমাম বুখারী রহঃ এর এ মতের বিরুদ্ধে গায়রে মুকাল্লিদদের বক্তব্য হল যে, জুমআর নামাযের সময় সূর্য হেলার আগেই হয়ে যায়। {আর রাওজাতুন নাদিয়্যাহ-১/১৩, আলহুজাজুল মাকুল ফি শারায়িয়ির রাসূল-২৮, নুজুলুল আবরার-১/১৫২}
জুমআর দুই আজানই সুন্নত
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১৩৭ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ التَّأْذِينِ عِنْدَ الخُطْبَةِ তথা খুতবার সময় আজান দেয়ার বর্ণনার অধ্যায়।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ এ হাদীস নকল করেনঃ
عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ السَّائِبَ بْنَ يَزِيدَ، يَقُولُ: «إِنَّ الأَذَانَ يَوْمَ الجُمُعَةِ كَانَ أَوَّلُهُ حِينَ يَجْلِسُ الإِمَامُ، يَوْمَ الجُمُعَةِ عَلَى المِنْبَرِ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، فَلَمَّا كَانَ فِي خِلاَفَةِ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، وَكَثُرُوا، أَمَرَ عُثْمَانُ يَوْمَ الجُمُعَةِ بِالأَذَانِ الثَّالِثِ، فَأُذِّنَ بِهِ عَلَى الزَّوْرَاءِ، فَثَبَتَ الأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ»
হযরত ইমাম জুহরী রহঃ থেকে বর্ণিত। হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ রাঃ বলেনঃ জুমআর প্রথম আজান জুমআর দিন ইমাম মিম্বরে বসার পর দেয়া হত, রাসূল সাঃ এর জমানায়, হযরত আবু বকর রাঃ এর জমানায়, এবং হযরত ওমর রাঃ এর জমানায়। তারপর যখন হযরত উসমান বিন আফফান রাঃ এর সময়কাল আসলো, আর নামাযী সংখ্যাও অনেক বেড়ে গেল, তখন তিনি তৃতীয় আজান [যা সূর্য হেলার পর দেয়া হতো] হুকুম দেয়া হল। যা যাওরা নামক স্থানে দেয়া হতো। পরবর্তীতে এটি আলাদা সুন্নতে পরিণত হয়ে যায়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৯১৬}
বুখারী শরীফের উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, রাসূল সাঃ এর জামানা এবং খেলাফতে রাশেদার মাঝে হযরত আবু বকর রাঃ এবং হযরত উমর রাঃ এর জমানায় জুমআর প্রথম আজান মিম্বরের সামনে ইমামকে সামনে রেখে দেয়া হতো। কিন্তু যখন হযরত উসমান রাঃ এর আমলে লোকসংখ্যা বেড়ে গেল, তখন হযরত উসমান রাঃ এর আদেশে আরো একটি আজান দেয়া শুরু হয়। উক্ত আজান সাহাবায়ে কেরামের উপস্থিতিতেই দেয়া হতো। কোন সাহাবী উক্ত আজানের ব্যাপারে কোন আপত্তি উপস্থাপন করেনি। সুতরাং এ আজান সাহাবায়ে কেরামের ঐক্যমত্বে প্রচলিত হয়ে যায়। প্রতিটি জমানায়ই এর উপর আমল বাকি থাকে। কোন ইমাম বা ফক্বীহ কিংবা কোন মুজতাহিদ এর বিরুদ্ধাচরণ করেননি। আর বিরুদ্ধাচরণ করবেনই বা কি করে? কেননা, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, আমার ও আমার খলীফায়ে রাশেদের সুন্নতকে তোমরা আঁকড়ে ধর।
যেহেতু এ আজান খলীফায়ে রাশেদ হযরত উসমান রাঃ চালু করেছেন, তাই এটি সুন্নত। আর রাসূল সাঃ এর নির্দেশ অনুপাতে এর উপর আমল করা জরুরী। প্রথমে এ আজান যাওরা নামক স্থানে দেয়া হতো, তারপর এ আজান মসজিদের মাঝে দেয়া শুরু হয়। আজো সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্রে এ আজান মসজিদের মাঝে দেয়া হয়ে থাকে। হজ্বে যাওয়া ব্যক্তিরা নিজের চোখে দেখে থাকবেন যে, মক্কা মুকাররমায় মসজিদে হারামের ভিতরে এবং মসজিদে নববীর ভিতরে জুমআর তৃতীয় আজান দেয়া হয়ে থাকে।
এ আজান মসজিদের মাঝে দেয়ার ব্যাপারে কেউ আপত্তি উপস্থাপন করে না। কিন্তু হাদীসে মুবারক, ইজমায়ে উম্মত, এবং উম্মতের ধারাবাহিক নিরবচ্ছিন্ন আমলের বিপরীত যেসব গায়রে মুকাল্লিদরা বিশ রাকাত তারাবীহকে বিদআত বলে থাকে, তারাই জুমআর এ আজানকে বিদআত বলে থাকে।
এসব গায়রে মুকাল্লিদের বক্তব্য হল, এ আজান যেহেতু রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত নয়, তাই এটি সুন্নত হতে পারে না। এ কারণে গায়রে মুকাল্লিদরা তাদের মসজিদে তৃতীয় আজান দেয় না। যারা এ আজান দিয়ে থাকে, তাদের বিদআতি বলে প্রচার করে থাকে। {ফাতাওয়া সেতারিয়া-৩/৮৫,৮৭, ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীস-২/১৭৯, মাজমুআ রাসায়েল মুকাম্মাল নামায ওয়া হিদায়াত-৩১, তাইসীরুল বারী-২১, নামাযে নববী-২৫৭}
ইমাম বুখারী রহঃ সহ পুরো উম্মত একদিকে আর কথিত আহলে হাদীস নামধারীরা একদিকে। এর নামই আহলে হাদীস!
বিতির, তাহাজ্জুদ, নফল ইত্যাদি প্রতিটি নামাযই আলাদা
ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট বিতির নামায, তাহাজ্জুদ নামায এবং নফল নামায স্বতন্ত্র বিষয়।
বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, ابواب الوتر তথা বিতরের অধ্যায়সমূহ।
উক্ত বাবের উপর বুখারী শরীফের বিখ্যাতা ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ লিখেনঃ
ولم يتعرض البخارى لحكمه لكن افراده بترجمة عن ابواب التهجد والتطوع يقتضى انه غير ملحق بها عنده
ইমাম বুখারী রহঃ বিতিরের হুকুম বর্ণনা করেননি [যে এটি সুন্নত না ওয়াজিব না ফরজ?]। কিন্তু তিনি যে, তাহাজ্জুদ এবং নফল না বলে আলাদাভাবে যে বিতিরের শিরোনাম কায়েম করলেন। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, তার নিকট বিতির নামায তাহাজ্জদ ও নফল নামাযের অন্তুর্ভূক্ত নয়। [বরং এটি একটি আলাদা নামায] {ফাতহুল বারী-২/৪৭৮}
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ এর উক্ত বক্তব্য দ্বারা একথা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট তাহাজ্জুদ ও নফল নামায থেকে সম্পূর্ণ ্আলাদা এক প্রকার নামায হল বিতির নামায।
কিন্তু ইমাম বুখারী রহঃ এর উক্ত মতামতের উল্টো গায়রে মুকাল্লিদদের বক্তব্য হল যে, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ এবং বিতির নামায এক প্রকার নামাযই। {তাইসীরুল বারী-২/৭৭}
বিতির নামাযে দুআয়ে কুনুত পড়া প্রসঙ্গে
ইমাম বুখারী রহঃ এর মত হল, বিতির নামাযে দুআয়ে কুনুত রুকুতে যাওয়ার আগে পড়া উচিত।
সহীহ বুখারীর ১ম খন্ডের ১৩৬ নং পৃষ্ঠায় এমন একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেনঃ
عَاصِمٌ، قَالَ: سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ عَنِ القُنُوتِ، فَقَالَ: قَدْ كَانَ القُنُوتُ قُلْتُ: قَبْلَ الرُّكُوعِ أَوْ بَعْدَهُ؟ قَالَ: قَبْلَهُ، قَالَ: فَإِنَّ فُلاَنًا أَخْبَرَنِي عَنْكَ أَنَّكَ قُلْتَ بَعْدَ الرُّكُوعِ، فَقَالَ: «كَذَبَ إِنَّمَا قَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ الرُّكُوعِ شَهْرًا، أُرَاهُ كَانَ بَعَثَ قَوْمًا يُقَالُ لَهُمْ القُرَّاءُ، زُهَاءَ سَبْعِينَ رَجُلًا، إِلَى قَوْمٍ مِنَ المُشْرِكِينَ دُونَ أُولَئِكَ، وَكَانَ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَهْدٌ، فَقَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَهْرًا يَدْعُو عَلَيْهِمْ»
হযরত আসেম বলেন, আমি হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ এর কাছে বিতির নামাযের কুনুতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ অবশ্যই পড়া হতো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, রুকু আগে না পরে? তিনি বললেন, রুকুর আগে। আসিম রহঃ বললেন, অমুক ব্যক্তি আমাকে আপনার বরাত দিয়ে বলেছেন যে, আপনি বলেছেন, রুকুর পরে। তখন আনাস রাঃ বলেন, সে ভুল বলেছে। রাসূল সাঃ রুকুর পর এক মাস ব্যাপী কুনূত পাঠ করেছেন। আমার জানা মতে, তিনি সত্তর জন সাহাবীর একটি দল, যাদের কুররা তথা অভিজ্ঞ কারী বলা হতো তাদেরকে মুশরিকদের কোন এক কওমের উদ্দেশ্যে পাঠান। এরা সেই কওম নয়, যাদের বিরুদ্ধে রাসূল সাঃ বদ দুআ করেছিলেন। বরং তিনি এক মাস ব্যাপি কুনুতে সে সব কাফিরদের জন্য বদ দুআ করেছিলেন, যাদের সাথে তাঁর চুক্তি ছিল। [এবং তারা চুক্তি ভঙ্গ করে কারীগণকে হত্যা করেছিল।] {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০০২}
একই হাদীস ইমাম বুখারী রহঃ সংক্ষিপ্তকারে বুখারী শরীফের ২য় খন্ডের ৫৮৬ নং পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত করেছেন। যার শব্দ হল এমন-
قَالَ عَبْدُ العَزِيزِ وَسَأَلَ رَجُلٌ أَنَسًا عَنِ القُنُوتِ أَبَعْدَ الرُّكُوعِ أَوْ عِنْدَ فَرَاغٍ مِنَ القِرَاءَةِ؟ قَالَ: «لاَ بَلْ عِنْدَ فَرَاغٍ مِنَ القِرَاءَةِ»
হযরত আব্দুল আজীজ রহঃ বলেন, এক ব্যক্তি আনাস বিন মালিক রাঃ কে কুনুতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করল, তা কি রুকুর পর না কিরাত থেকে ফারিগ হওয়ার পর পড়া হবে? তখন তিনি জবাবে বলেন, কিরাত শেষ করার পর পড়া হবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪০৮৮}
বুখারী শরীফের উক্ত দুটি হাদীস প্রমাণ করছে যে, বিতির নামাযে দুআয়ে কুনুত রুকু আগেই আদায় করা হবে। কিন্তু বুখারীর উক্ত বর্ণনার বিপরীত গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট বিতর নামাযে রুকুর পর দুআয়ে কুনুত পড়া মুস্তাহাব। {ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীস-৩/২০৫, তুহফাতুল আহওয়াজী-১/২৪৩, ফাতাওয়া আহলে হাদীস-১/৬৩২}
গায়রে মুকাল্লিদদের মিথ্যাচার
ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীসে লিখা হয়েছে যে, বুখারী শরীফে নাকি রুকুর পর দুআয়ে কুনুত পড়ার কথা এসেছে। একথা স্পষ্ট মিথ্যা কথা। যদি থেকে থাকে, তাহলে আরবী ইবারতসহ প্রমাণ পেশ করুন।
সাদেক শিয়ালকুটির ধোঁকা এবং খেয়ানত প্রসঙ্গে
হাকীম সাদেক শিয়ালকুটি সাহেব রুকুর পর দ্আুয়ে কুনুত প্রমাণ করার জন্য নিকৃষ্টতর ধোঁকা ও খেয়ানতপূর্ণ আচরণ করেছেন। যেমন-
১
স্বীয় কিতার সালাতুর রাসূলের ৩৫৭-৩৬০ পৃষ্ঠার টিকায় নাসায়ী ও আবু দাউদের বরাতে দু’টি হাদীস উল্লেখ করেছেন। যার দ্বারা সাধারণ পাঠকগণ এটা মনে করবে যে, উক্ত হাদীসদ্বয়ে যেহেতু রুকুর পর কুনুতের কথা উল্লেখ আছে, সুতরাং বিতির নামাযে দুআয়ে কুনুত রুকুর পরই আদায় করা উচিত।
অথচ হাদীস সম্পর্কে অভিজ্ঞ যে কেউ উক্ত হাদীস দেখলেই বুঝতে পারবেন যে, উক্ত হাদীস দু’টির সম্পর্ক বিতিরের দুআয়ে কুনুতের সাথে নয়। বরং তা কুনুতে নাজিলার সাথে সম্পর্কিত। যা ফজরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর পর দাঁড়িয়ে জোরে জোরে পড়া হয়ে থাকে। অথচ এটাকে উল্লেখ করা হলো বিতির নামাযের দ্আুয়ে কুনুতের দলীল হিসেবে।
এরকম ধোঁকাবাজীর নাম হাদীসের অনুসরন না শয়তানের অনুসরন?
২
উক্ত কিতাবে সাদেক শিয়ালকুটি সাহেব মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ শরহে নববী এর একটি বাবের উল্লেখ করে এর দ্বারা একথা প্রমাণ করতে চাইলেন যে, বিতির নামাযে দুআয়ে কুনুত রুকুর পরই পড়া উচিত।
ইমাম নববী রহঃ বিতির নামাযে দুআয়ে কুনুত রুকুর পর পড়ার বিষয়ে লিখেছেনঃ
ومحل القنوت بعد رفع الرأس فى الركوع فى الركعة الآخرة
আর কুনূত পড়ার স্থান হল, শেষ রাকাতে রুকু থেকে মাথা উঠানোর পর। {সহীহ মুসলিম, সালাতুর রাসূল-৩৬০}
এ উদ্ধৃতিতে হাকীম শিয়ালকুটি সাহেব যে খেয়ানত করেছেন, তাহলো, এ ইবারতের শুরুতে উল্লেখিত সমস্ত অংশকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। যাতে উল্লেখিত রয়েছে যে, উক্ত কুনুতের সম্পর্ক কুনুতে নাজেলার সাথে। বিতির নামাযের দুআয়ে কুনুতের সাথে নয়।
পাঠকদের জন্য শরহে মুসলিমের পূর্ণ ইবারতটি উল্লেখ করে দিচ্ছি, যাতে করে পাঠকগণ নিজেরাই শিয়ালকুটি সাহেবের খিয়ানত বুঝতে পারেন।
باب استحباب القنوت فى جميع الصلوات اذا نزلت بالمسلمين نازلة والعياذ بالله واستحباب فى الصبح دائما وبيان ان محله بعد رفع الرأس من الركوع فى الركعة الآخرة واستحباب الجهر به (مسلم-1-237)
গায়রে মুকাল্লিদ নওয়াব ওয়াহীদুজ্জামান সাহেব উক্ত ইবারতের অনুবাদ এভাবে করেছেন যে, “বাব, যখন মুসলমানদের উপর কোন বিপদ আপতিত হয়, তখন নামাযের মাঝে উঁচু আওয়াজে কুনূত পড়া, এবং আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাওয়া মুস্তাহাব। আর এটা পড়ার স্থান হল, শেষ রাকাতের রুকুর পর মাথা উঠানোর পর। আর সকালের নামাযে সর্বদা কুনূত পড়া মুস্তাহাব। {সহীহ মুসলিমের উর্দু অনুবাদ-২/২০১}
ইমাম নববী রহঃ উক্ত ইবারত দ্বারা একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, এ কুনুতের সম্পর্ক কুনুতে নাজেলার সাথে। বিতির নামাযের কুনুতের সাথে এর কোন ন্যুনতম সম্পর্ক নেই। কিন্তু সাদেক শিয়ালকুটি সাহেব পূর্ণ ইবারত এ কারণে উদ্ধৃত করেননি, যাতে তার ধোঁকাবাজির মুখোশ উন্মোচিত না হয়ে পরে।
আল্লাহ তাআলা কথিত আহলে হাদীসদের এরকম জঘন্য মিথ্যাচার থেকে জাতিকে হিফাযত করুন।
সফরের দূরত্ব ৪৮ মাইল
ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট সফরের দূরত্ব হল ৪৮ মাইল।
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১৪৭ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابٌ: فِي كَمْ يَقْصُرُ الصَّلاَةَ তথা কতটুকু দূরত্বে কসর করা উচিত? এর অধ্যায়।
এ বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ উল্লেখ করেনঃ
وَسَمَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَوْمًا وَلَيْلَةً سَفَرًا» وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ، وَابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ، يَقْصُرَانِ، وَيُفْطِرَانِ فِي أَرْبَعَةِ بُرُدٍ وَهِيَ سِتَّةَ عَشَرَ فَرْسَخًا
আর রাসূল সাঃ এক দিন আর এক রাতের দূরত্বকেও সফর বলেছেন। হযরত ইবনে ওমর রাঃ এবং হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ চার বারীদ সফরের সময় কসর পড়ার কথা বলেছেন। আর সেটি হল, ১৬ ফরসখ তথা ৪৮ মাইল হয়। {গায়রে মুকাল্লিদ ওহীদুজ্জামান সাহেবের অনুবাদ}
ইমাম বুখারী রহঃ এর কায়েম করা উক্ত বাব দ্বারা একথা সুস্পষ্টরূপে প্রমানিত হচ্ছে যে, সফরের দূরত্ব হল ৪৮ মাইল। কেননা, চার বুরদ দ্বারা ১৬ ফরসখ হয়, আর এক ফরসখ তিন মাইল হয়ে থাকে। সেই হিসেবে ষোলকে তিন দিয়ে গুণ দিলে হচ্ছে ৪৮। সুতরাং ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট সফরের দূরত্ব দাঁড়াচ্ছে ৪৮ মাইল।
কিন্তু ইমাম বুখারী রহঃ এর কায়েম করা উক্ত বাবের উল্টো কতিপয় গায়রে মুকাল্লিদ বলে থাকে যে, সফরের জন্য কোন নির্ধারিত কোন সীমাই নেই। আর কতিপয় গায়রে মুকাল্লিদ বলে থাকে যে, ৯ মাইল হল সফরের দূরত্ব। আর কেউ কেউ বলে থাকে ৩ মাইল। {তাইসীরুল বারী-২/১৩৬, ফাতাওয়া নজিরীয়া-১/৬৩০, ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীস-৩/৮}
মাগরিব নামাযের পূর্বে নফল পড়া প্রসঙ্গে
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে মাগরিব নামাযের পূর্বে নফল নামায পড়া সুন্নত নয়।
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১৫৭ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ الصَّلاَةِ قَبْلَ المَغْرِبِ তথা মাগরিবের আগের নফল নামাযের অধ্যায়।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ দু’টি হাদীস উল্লেখ করেছেন। যথা-
১
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، قَالَ: حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ المُزَنِيُّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «صَلُّوا قَبْلَ صَلاَةِ المَغْرِبِ»، قَالَ: «فِي الثَّالِثَةِ لِمَنْ شَاءَ كَرَاهِيَةَ أَنْ يَتَّخِذَهَا النَّاسُ سُنَّةً»
হযরত আব্দুল্লাহ বিন বারিদা বলেন, আমাকে আব্দুল্লাহ বিন মুগাফফাল রাঃ রাসূল সাঃ থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, মাগরিবের পূর্বে নামায পড়, তৃতীয়বার রাসূল সাঃ বললেন যে ব্যক্তি চায় [ সে যেন পড়ে]। এ বিষয়কে অপছন্দ করে যে, লোকেরা এটাকে [মাগরিবের আগের নামাযকে] সুন্নত মনে করে বসবে। [অথচ এটি সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত নয়]{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১১৮৩}
২
مَرْثَدَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ اليَزَنِيَّ، قَالَ: أَتَيْتُ عُقْبَةَ بْنَ عَامِرٍ الجُهَنِيَّ، فَقُلْتُ: أَلاَ أُعْجِبُكَ مِنْ أَبِي تَمِيمٍ يَرْكَعُ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ المَغْرِبِ؟ فَقَالَ عُقْبَةُ: «إِنَّا كُنَّا نَفْعَلُهُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»، قُلْتُ: فَمَا يَمْنَعُكَ الآنَ؟ قَالَ: «الشُّغْلُ»
হযরত মারসাদ বিন আব্দুল্লাহ ইয়াজানী রাঃ বর্ণনা করেন। আমি উকবা বিন আমের রাঃ এর কাছে আসলাম। আমি তাকে বললামঃ আমি কি আপনাকে আবূ তামীমের আশ্চর্যজনক কর্মকান্ড সম্পর্কে বলবো? তারা মাগরিবের নামাযে আগে দুই রাকাত নামায পড়ে থাকে। হযরত উকবা বিন আমের রাঃ বললেন, রাসূল সাঃ এর সময়কালে আমরাও পড়তাম। আমি বললাম, এখন কি প্রতিবন্ধকতা এসে গেল? তিনি বললেন, ব্যস্ততা। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১১৮৪}
বুখারী শরীফের উক্ত দু’টি হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, মাগরিবের আগের দুই রাকাত নামায সুন্নত নয়। কেননা, রাসূল সাঃ নিজেই এটাকে সুন্নত মনে করে পড়াকে মাকরূহ মনে করতেন। যা প্রথমোক্ত হাদীসের শব্দে স্পষ্ট। তাই এর মর্যাদা সর্বোচ্চ দাঁড়াচ্ছে নফল নামাযের স্তরে।
আর দ্বিতীয় বিষয় হল, প্রথম প্রথম সাহাবায়ে কেরাম উক্ত আমলটি করতেন। পরে তা সাহাবাগণ একেবারেই ছেড়ে দেন। যা দ্বিতীয় হাদীস দ্বারা স্পষ্ট।
এর দ্বারাও বুঝা যাচ্ছে যে, এটি পড়া নফল সুন্নত নয়। যদি সুন্নত হতো, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম তা এভাবে ছেড়ে দিতেন না। এটি অসম্ভব বিষয় যে, সাহাবাগণ রাসূল সাঃ এর কোন সুন্নত বিষয়কে দুনিয়াবী কোন ব্যস্ততার কারণে একদম ছেড়ে দিবেন।
সুতরাং বুখারী শরীফের উক্ত দু’টি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, মাগরিবের আগের দুই রাকাত নামায সুন্নত নয়। বরং নফল।
অথচ গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট মাগরিবের আগের দুই রাকাত নামায সুন্নত। শুধু তাই নয়, যারা একে সুন্নত মনে করে না, তারা তাদের ভাষায় জালেম এবং বেদআতি। {ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীস-৪/২৩২, ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীস-৪/২৩৫}
আট রাকাতওয়ালী হাদীস এবং গায়রে মুকাল্লিদীন
হযরত ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১৫৪ পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ قِيَامِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِاللَّيْلِ فِي رَمَضَانَ وَغَيْرِهِ তথা রাসূল সাঃ এর রমজানের রাতে এবং অন্য সময় রাতে কিয়াম করা [ নামায পড়া] প্রসঙ্গে।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ থেকে বর্ণিত এ হাদীস উল্লেখ করেন-
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ أَخْبَرَهُ: أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ؟ فَقَالَتْ: «مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا، فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا، فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا»
قَالَتْ عَائِشَةُ: فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ: أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ؟ فَقَالَ: «يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي»
হযরত আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত আয়শা রাঃ এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন যে, রাসূল সাঃ এর নামায রমজান মাসে কেমন হতো? তিনি জবাবে বললেন, রাসূল সাঃ এর নামায রমজান ও গায়রে রমজানে এগার রাকাত থেকে বেশি পড়তেন না। তিনি চার রাকাত পড়তেন। তুমি এর সৌন্দর্যতা আর দীর্ঘতা আর জিজ্ঞেস করো না। তারপর আবার চার রাকাত পড়তেন, আর বলো না, সে যে কত সুন্দর আর দীর্ঘ হতো। তারপর তিনি তিন রাকাত পড়তেন। হযরত আয়শা রাঃ বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতির নামায পড়ার আগেই শুয়ে যান? তিনি বললেনঃ হে আয়শা! আমার চোখ ঘুমায়, কিন্তু অন্তর ঘুমায় না। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১১৪৭}
গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসরা এ হাদীসকে বিশ রাকাত তারাবীহের বিরুদ্ধে খুব জোর দিয়ে প্রচার করে থাকে। আর বিশ রাকাত তারাবীহের পক্ষে সকল হাদীস ও আসারে সাহাবাকে অস্বিকার করে দেয়।
অথচ এ হাদীসের সম্পর্ক হল তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে। তারাবীহ নামাযেরর সাথে নয়। যার অনেক প্রমান বিদ্যমান।
এছাড়া ইনসাফের দৃষ্টিতে দেখলে স্পষ্ট হবে যে, কথিত আহলে হাদীসরা উক্ত হাদীসের উপর নিজেরাই আমল করে না। আমল করাতো দূরে থাক, উক্ত হাদীসের বিরোধীতাও করে থাকে জোরে শোরে।
কয়েকটি প্রমান নিচে উপস্থাপন করা হল-
১
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, রাসূল সাঃ চার রাকাত করে নামায পড়তেন। অথচ কথিত আহলে হাদীসরা তারাবীহ পড়ে দুই রাকাত করে।
২
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, রাসূল সাঃ এ নামায একাকী পড়তেন। পড়ানোর কথা নেই। নেই জামাতের কথাও। অথচ কথিত আহলে হাদীসরা সারা রমজান মাস এ নামায জামাতের সাথেই পড়ে থাকে।
৩
হযরত আয়শা রাঃ ও রাসূল সাঃ এর কথোপকথন তথা-
হযরত আয়শা রাঃ বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতির নামায পড়ার আগেই শুয়ে যান? তিনি বললেনঃ হে আয়শা! আমার চোখ ঘুমায়, কিন্তু অন্তর ঘুমায় না। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১১৪৭}
এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে রাসূল সাঃ এ নামায ঘরেই পড়তেন। মসজিদে নয়। কারণ বিতির পড়ে ঘুমানোর কথা জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, আর রাসূল সাঃ সফরে না থাকলে ঘরেই সুন্নত পড়েন, এবং ঘুমান।
অথচ গায়রে মুকাল্লিদরা এ নামায মসজিদে পড়ে থাকে। ঘরে নয়।
৪
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, রাসূল সাঃ নামায পড়ে শুয়ে যেতেন। তারপর ঘুম থেকে উঠে বিতির নামায পড়তেন।
অথচ গায়রে মুকাল্লিদরা নামায শেষ করার পরই শুয়ার আগেই বিতির নামায পড়ে ফেলে।
৫
এ হাদীস প্রমাণ করছে যে, রাসূল সাঃ বিতির নামায একাকী আদায় করতেন। অথচ গায়রে মুকাল্লিদরা রমজান মাসে বিতির নামায জামাতের সাথে আদায় করে থাকে।
৬
এ হাদীস প্রমাণ করছে যে, রাসূল সাঃ সারা বছর বিতির নামায এক সালামে তিন রাকাত পড়তেন। অথচ গায়রে মুকাল্লিদরা অধিকাংশই এক রাকাত বিতির পড়ে থাকে। আর যদি কখনো তিন রাকাত পড়েও থাকে, তাহলে দুই সালামে পড়ে, এক সালামে নয়।
এক হাদীসের এতগুলো বিষয়ে বিরোধীতা করার পরও তারা এ হাদীস দিয়ে কি করে দলীল দেয়। তাদের লজ্জা থাকা উচিত।
জানাযার নামাযে ইমাম সাহেব লাশের কোথায় দাঁড়াবে?
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে জানাযার নামাজে ইমাম সাহেব মৃত পুরুষ হোক বা মহিলা হোক উভয়ের লাশের কোমর সোজা দাঁড়ানোর হুকুম।
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১৭৭ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابٌ: أَيْنَ يَقُومُ مِنَ المَرْأَةِ وَالرَّجُلِ
তথা ইমাম মহিলার জানাযার নামায পড়ালে দাঁড়াবে কোথায়? আর পুরুষের পড়ালে কোথায় দাঁড়াবে?
উক্ত বাবের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ লিখেনঃ
ولهذا اورد المصنف الترجمة مورد السوال واراد عدم التفرقة بين الرجل والمرأة
এ কারণে লেখক উল্লেখিত বাবের শিরোনাম প্রশ্ন আকারে উল্লেখ করেছেন। আর একথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, এ মাসআলায় পুরুষ ও নারীর মাঝে কোন পার্থক্য নেই। {ফাতহুল বারী-৩/২০১}
গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেনঃ
“ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট মহিলা ও পুরুষ উভয়ের কোমর বরাবর ইমাম সাহেব দাঁড়াবে। {তাইসীরুল বারী-২/২৯২}
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ ও মাওলানা ওহীদুজ্জামান সাহেবের বক্তব্য দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর কাছে জানাযার নামাযে ইমাম দাঁড়ানোর বিষয়ে পুরুষ ও মহিলার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। বরং উভয়ের ক্ষেত্রেই ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে ইমাম লাশের কোমর বরাবর দাঁড়াবে।
অথচ কথিত আহলে হাদীসদের মতানুসারে পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে পার্থক্য ্আছে। তাদের মতে পুরুষের ক্ষেত্রে ইমাম মাথা বরাবর দাঁড়াবে। আর মহিলার ক্ষেত্রে ইমাম কোমর বরাবর দাঁড়াবে। {তাইসীরুল বারী-২/২৯১, ফাতাওয়াা উলামায়ে হাদীস-৫/২০৮, ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীস-৫/২১৩}
মৃত ব্যক্তি শুনে
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১৭৮ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابٌ: المَيِّتُ يَسْمَعُ خَفْقَ النِّعَالِ তথা মৃত ব্যক্তি ফিরে যাওয়া ব্যক্তির পদধ্বনি শুনতে পায়।
ইমাম বুখারী রহঃ উক্ত বাবের অধীনে এ হাদীস উদ্ধৃত করেনঃ
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” العَبْدُ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ، وَتُوُلِّيَ وَذَهَبَ أَصْحَابُهُ حَتَّى إِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ، أَتَاهُ مَلَكَانِ، فَأَقْعَدَاهُ، فَيَقُولاَنِ لَهُ: مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ الخ
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয়, আর তার সাথীরা পিঠ দিয়ে চলে আসে, তখন তাদের জুতার আওয়াজ সে শুনতে পায়। তারপর দু’জন ফেরেস্তা আসে। এসে তাকে বসায়। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করে, তুমি এ মুহাম্মদ সাঃ সম্পর্কে কি বল? {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৩৩৮}
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ এ হাদীস দ্বারা মৃত ব্যক্তির শুনতে পাওয়া প্রমাণিত। যা আহলে হাদীসের মাযহাব। {তাইসীরুল বারী-২/২৯৫}
অথচ বর্তমানের কথিত আহলে হাদীসরা মৃত ব্যক্তির শুনা বিষয়ের শক্ত বিরোধিতা করে থাকে। তাদের মতে মৃত ব্যক্তি কোন কিছুই শুনতে পায় না। {রূহ আজাবে কবর আওর সেমায়ে মাওতা-৪২, মাসআলায়ে সেমায়ে মাওতা-২৪}
মুশরিকদের নাবালেগ সন্তান কি জান্নাতী?
ইমাম বুখারী রহঃ এর মাযহাব হল, মুশরিকদের নাবালেগ সন্তান জান্নাতী।
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১৮৭ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ مَا قِيلَ فِي أَوْلاَدِ المُشْرِكِينَ তথা মুশরিকদের নাবালেগ সন্তানদের ব্যাপারে যা কিছু বলা হয়েছে এর বর্ণনা।
উক্ত বাবের অধীনে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ আলোচনা করতে গিয়ে লিখেনঃ
(قَوْلُهُ بَابُ مَا قِيلَ فِي أَوْلَادِ الْمُشْرِكِينَ)
هَذِهِ التَّرْجَمَةُ تُشْعِرُ أَيْضًا بِأَنَّهُ كَانَ مُتَوَقِّفًا فِي ذَلِكَ وَقَدْ جَزَمَ بَعْدَ هَذَا فِي تَفْسِيرِ سُورَةِ الرُّومِ بِمَا يَدُلُّ عَلَى اخْتِيَارِ الْقَوْلِ الصَّائِرِ إِلَى أَنَّهُمْ فِي الْجَنَّةِ كَمَا سَيَأْتِي تَحْرِيرُهُ
তথা এ শিরোনাম দ্বারা জানা যায় যে, ইমাম বুখারী রহঃ এ ব্যাপারে মন্তব্যহীন। কিন্তু তিনি তথা ইমাম বুখারী রহঃ এর সূরা রূমের তাফসীরের মাঝে ুেযভাবে দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, এর দ্বারা বুঝা যায় যে, তার নিকট মুশরিকদের নাবালেগ সন্তান জান্নাতী। এ ব্যাপারে তার মন্তব্য সামনে আসছে। {ফাতহুল বারী-২/২৪৬}
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ এর এ বক্তব্য দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট গ্রহণযোগ্য মত হল, মুশরিকদের মৃত নাবালেগ সন্তান জান্নাতী।
এ ব্যাপারে গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ
“মুমিনদের সন্তানতো জান্নাতী। কিন্তু কাফেরদের নাবালেগ সন্তান যদি মারা যায়, তাহলে তার কী হুকুম? এ ব্যাপারে বিস্তর মতভেদ আছে। ইমাম বুখারী রহঃ এর মাযহাব হল, তারা জান্নাতী। কেননা, তারা গোনাহ করা ছাড়া শাস্তি হতে পারে না। আর তারাতো নিষ্পাপ অবস্থায় ইন্তেকাল করেছে। {তাইসীরুল বারী-২/২৩০}
অহীদুজ্জামান সাহেব আরো লিখেনঃ
“এ হাদীস দ্বারা ইমাম বুখারী রহঃ নিজের মাযহাব প্রমাণ করেছেন যে, প্রতিটি সন্তান ইসলামের ফিতরাতের উপর জন্ম লাভ করে। তাই যদি সে বাচ্চা থাকা অবস্থায়ই মারা যায়, তাহলেতো সে ইসলামের উপরই মারা গেল। আর যখন ইসলামের মারা গেল, তাহলেতো সে জান্নাতীই হবে। {তাইসীরুল বারী-২/৩৩১}
অথচ বর্তমান গায়রে মুকাল্লিদদের মাযহাব হল যে, মুশরিকের নাবালেগ সন্তান মারা গেলে সেও জাহান্নামী হবে। বা তাদের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করা যাবে না। {তাইসীরুল বারী-২/৩১০, আসসিরাজুল ওয়াহহাজ-২/৬১২}
মিকাতের আগে ইহরাম বাঁধা কি জায়েজ?
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে মিকাতের আগে ইহরাম বাঁধা জায়েজ নয়।
বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ২০৬ নং পৃষ্ঠায় ইমাম বুখারী রহঃ একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ فَرْضِ مَوَاقِيتِ الحَجِّ وَالعُمْرَةِ তথা হজ্ব ও উমরার মিকাত প্রসঙ্গে।
উক্ত বাবের অধীনে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ আলোচনা করতে গিয়ে লিখেনঃ
وَهُوَ ظَاهِرُ نَصِّ الْمُصَنِّفِ وَأَنَّهُ لَا يُجِيزُ الْإِحْرَامَ بِالْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ مِنْ قِبَلِ الْمِيقَاتِ
মুসান্নিফ রহঃ [ইমাম বুখারী রহঃ] এর ইবারত দ্বারাও একথা বুঝা যায় যে, মুসান্নিফ রহঃ এর নিকট হজ্ব বা উমরার ইহরাম মীকাতের আগে জায়েজ নয়। {ফাতহুল বারী-৩/৩৮২}
এর দ্বারা বুঝা গেল যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট মীকাতে যাওয়ার আগে হজ্ব বা উমরার ইহরাম বাঁধা জায়েজ নয়। এ কারণেই গায়রে মুকাল্লিদ ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ “হয়তো ইমাম বুখারী রহঃ এর মাযহাব এই যে, মীকাতের আগে ইহরাম বাঁধা জায়েজ নয়। {তাইসীরুল বারী-২/১৪১}
ইমাম বুখারী রহঃ এর উক্ত মতের বিপরীত গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের কাছে মীকাতের আগেই ইহরাম বাঁধা জায়েজ আছে। {আসসিরাজুল ওয়াহহাজ-১/৪০৫}
ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করা প্রসঙ্গে
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে মুহরিম অবস্থায় বিবাহ করা জায়েজ।
হযরত ইমাম বুখারী রহঃ সহীহ বুখারীর ১ম খন্ডের ২৪৮ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ تَزْوِيجِ المُحْرِمِ তথা মুহরিম ব্যক্তির বিবাহ করার অধ্যায়।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ এ হাদীস উল্লেখ করেছেনঃ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزَوَّجَ مَيْمُونَةَ وَهُوَ مُحْرِمٌ»
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল সাঃ মায়মুনা রাঃ কে মুহরিম অবস্থায় বিবাহ করেছেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৮৩৭, ১৭৪০}
একটু সামনে অগ্রসর হয়ে ইমাম বুখারী রহঃ নিকাহ অধ্যায়ে এ শিরোনামে একটি বাব কায়েম করেছেনঃ بَابُ نِكَاحِ المُحْرِمِ তথা মুহরিমের বিবাহ করার অধ্যায়।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ এ হাদীস এনেছেনঃ
جَابِرُ بْنُ زَيْدٍ، قَالَ: أَنْبَأَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: «تَزَوَّجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُحْرِمٌ»
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ মুহরিম অবস্থায় বিবাহ করেছেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫১১৪, ৪৮২৪}
ইমাম বুখারী রহঃ এর কায়েম করা বাব এবং উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমানিত হচ্ছে যে, মুহরিম অবস্থায় বিবাহ করা জায়েজ আছে। আর ইমাম বুখারী রহঃ এর বর্ণনাভঙ্গি দ্বারাও স্পষ্ট হচ্ছে যে, তার কাছেও মুহরিম অবস্থায় বিবাহ করা জায়েজ। এ কারণেই আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ এর ব্যাখ্যায় লিখেনঃ
(قَوْلُهُ بَابُ نِكَاحِ الْمُحْرِمِ)
كَأَنَّهُ يَحْتَجُّ إِلَى الْجَوَازِ لِأَنَّهُ لَمْ يَذْكُرْ فِي الْبَابِ شَيْئًا غير حَدِيث بن عَبَّاسٍ فِي ذَلِكَ وَلَمْ يُخَرِّجْ حَدِيثَ الْمَنْعِ كَأَنَّهُ لَمْ يَصِحَّ عِنْدَهُ عَلَى شَرْطِهِ
এমনটি মনে হয় যে, ইমাম বুখারী রহঃ [এ হাদীস উল্লেখ করে মুহরিম ব্যক্তির বিবাহ] জায়েজ হওয়ার উপর দলীল পেশ করছেন। কেননা, তিনি এ বাবের অধীনে মুহরিমের বিবাহ নিয়ে ইবনে আব্বাস রাঃ এর হাদীস ছাড়া আর কোন হাদীস উল্লেখ করেননি। সেই সাথে মুহরিমের বিবাহের নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদীসও উল্লেখ করেননি। যার দ্বারা বুঝা যায় যে, তার কাছে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদীস সহীহ নয়। {ফাতহুল বারী-৯/১৬৫}
গায়রে মুকাল্লিদ আলেম মাওলানা ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ
“হয়তো এ মাসআলায় ইমাম বুখারী রহঃ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এবং আহলে কুফার সাথে একমত হয়েছেন যে, মুহরিম ব্যক্তির বিবাহ জায়েজ আছে। {তাইসীরুল বারী-৩/৪২}
কিন্তু এ স্পষ্ট শব্দের হাদীস এবং ইমাম বুখারী রহঃ এর মতের উল্টো কথিত আহলে হাদীসদের মতে ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করা জায়েজ নয়। {তুহফাতুল আহওয়াজী-২/৮৮, আসসিরাজুল ওয়াহহাজ-২য় খন্ড}
আম্মাজান আয়শা রাঃ এর বিয়ের সময়ের বয়স প্রসঙ্গে
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ৫৫১ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব উল্লেখ করেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ تَزْوِيجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَائِشَةَ، وَقُدُومِهَا المَدِينَةَ، وَبِنَائِهِ بِهَا তথা হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ এর রাসূল সাঃ এর সাথে বিবাহ হওয়া, এবং মদীনায় আগমণ এবং রাসূল সাঃ এর গৃহে আগমন প্রসঙ্গে।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ হাদীস উল্লেখ করেনঃ
১
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «تَزَوَّجَنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا بِنْتُ [ص:56] سِتِّ سِنِينَ،
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে রাসূল সাঃ এমন সময় বিবাহ করেন, যখন আমার বয়স ছিল ৬ বছর। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮৯৪, ৩৬৮১}
২
عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: «تُوُفِّيَتْ خَدِيجَةُ قَبْلَ مَخْرَجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى المَدِينَةِ بِثَلاَثِ سِنِينَ، فَلَبِثَ سَنَتَيْنِ أَوْ قَرِيبًا مِنْ ذَلِكَ، وَنَكَحَ عَائِشَةَ وَهِيَ بِنْتُ سِتِّ سِنِينَ، ثُمَّ بَنَى بِهَا وَهِيَ بِنْتُ تِسْعِ سِنِينَ»
হযরত হিশাম স্বীয় পিতা উরওয়া রাঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাঃ মদীনায় হিজরত করার তিন বছর আগে হযরত খাদিজা রাঃ ইন্তেকাল করেন। তারপর তিনি দুই বছর বা এর কাছাকাছি সময় বিরত রইলেন। তারপর হযরত আয়শা রাঃ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সে সময় হযরত আয়শা রাঃ এর বয়স ছিল ছয় বছর। আর রাসূল সাঃ এর ঘরে সে সময় আসেন, যখন তার বয়স ছিল নয় বছর।{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮৯৬, ৩৬৮৩}
আর বুখারী শরীফের ২য় খন্ডের ৭৭৫ নং পৃষ্ঠায় আম্মাজান আয়শা রাঃ এর বিয়ের সময়ের বয়স ছয়, আর রাসূল সাঃ এর গৃহে আগমনের বয়স নয় উল্লেখ করে হাদীস উল্লেখ রয়েছে। ইমাম বুখারী রহঃ বাব নির্ধারণ করেছেনঃ بَابُ مَنْ بَنَى بِامْرَأَةٍ، وَهِيَ بِنْتُ تِسْعِ سِنِينَ তথা যিনি স্ত্রীকে ঘরে এনেছেন এমন সময়, যখন তাঁর স্ত্রীর বয়স নয় বছর।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ উল্লেখ করেনঃ
عَنْ عُرْوَةَ، تَزَوَّجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَائِشَةَ وَهِيَ بِنْتُ سِتِّ سِنِينَ، وَبَنَى بِهَا وَهِيَ بِنْتُ تِسْعٍ، وَمَكَثَتْ عِنْدَهُ تِسْعًا “
হযরত ওরওয়াহ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ হযরতসহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫১৫৮, ৪৮৬৪}
বুখারী শরীফের এসব হাদীস দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, আম্মাজান আয়শা রাঃ এর বয়স বিয়ের সময় ছিল ছয় বছর। আর রাসূল সাঃ এর ঘরে আসার সময় বয়স ছিল নয় বছর।
কিন্তু বুখারীর এসব স্পষ্ট বর্ণনার খেলাফ কতিপয় গায়রে মুকাল্লিদদের মত হল, এসব বর্ণনা জাল ও বানোয়াট। {সিদ্দিকায়ে কায়েনাত-৮০, ৮২}
গাজওয়ায়ে খন্দক কোন হিজরীতে হয়েছে?
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতানুসারে গাযওয়ায়ে খন্দক ৪র্থ হিজরীতে হয়েছে।
হযরত ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ২য় খন্ডের ৫৮৮ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ غَزْوَةِ الخَنْدَقِ وَهِيَ الأَحْزَابُ তথা খন্দক যুদ্ধ, যাকে গাযওয়ায়ে আহযাবও বলা হয় এর অধ্যায়।
উক্ত বাবের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ উল্লেখ করেনঃ قَالَ مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ: «كَانَتْ فِي شَوَّالٍ سَنَةَ أَرْبَعٍ» তথা মুসা বিন উকবা বলেন যে, এটি হয়েছে চতুর্থ হিজরীর শাওয়াল মাসে।
ইমাম বুখারী রহঃ এ বক্তব্য উদ্ধৃত করার পর এটাকে রদ করেননি। বা এর বিপরীত কোন বক্তব্য উপস্থাপন করেননি। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর কাছে এ বক্তব্যটি সঠিক। অর্থাৎ খন্দক যুদ্ধ চতুর্থ হিজরীতে সম্পন্ন হয়েছে।
কিন্তু ইমাম বুখারী রহঃ এর এ মতের উল্টো প্রায় সকল গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট খন্দক যুদ্ধ পঞ্চম হিজরীতে সম্পন্ন হয়েছে। {আররহীকিল মাখতূম আরবী-১/৩৫১, উর্দু-৪২৪}
ইফকের ঘটনা সম্বলিত হাদীস
হযরত ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ২য় খন্ডের ৫৯৩ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابُ حَدِيثِ الإِفْكِ তথা ইফকের ঘটনা সম্বলিত অধ্যায়।
আর ২য় খন্ডের ৬৯৬ নং পৃষ্ঠায় আয়াতে কারীমা إِنَّ الَّذِينَ جَاءُوا بِالْإِفْكِ এর তাফসীরে আম্মাজান আয়শা রাঃ এর সম্পর্কিত দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেছেন। বেশি দীর্ঘ হাদীস হওয়ার কারণে তা এখানে উল্লেখ করছি না। প্রয়োজন মনে হলে দেখে নিন- সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৯১০, ৪১৪১, ৪৭৫০, ৪৪৭৩।
আম্মাজান আয়শা রাঃ এর এ ঘটনাটি বুখারী ছাড়াও প্রায় প্রায় সমস্ত তাফসীর ও হাদীসের কিতাবে এসেছে।
কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদদের বড় আলেম হাকীম ফয়েজ আলম সাহেব এ ঘটনা হযরত আয়শা সিদ্দীকা রাঃ এর বলে স্বীকার করে না। সমস্ত মুফাসসীরগণ এবং হাদীস বেত্তাগণ, সেই সাথে ইমাম বুখারীর মতকে এক কথায় অস্বিকার করে বসলেন। {সিদ্দীকায়ে কায়েনাত-১৫০, ১০৬, ১০৭}
দুগ্ধপান দ্বারা হুরমত প্রমাণিত হওয়া
ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে মুতলকানভাবে দুধ পান করার দ্বারা উক্ত মহিলা দুগ্ধপানকারীর জন্য হারাম হয়ে যায়। চাই দুধ সামান্য পান করে থাকুক বা বেশি পান করে থাকুক।
ইমাম বুখারী রহঃ বুখারী শরীফের ২য় খন্ডের ৭৬৪ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল,
بَابُ مَنْ قَالَ: لاَ رَضَاعَ بَعْدَ حَوْلَيْنِ لِقَوْلِهِ تَعَالَى: {حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ} [البقرة: 233] وَمَا يُحَرِّمُ مِنْ قَلِيلِ الرَّضَاعِ وَكَثِيرِهِ
তথা যে ব্যক্তি বলে দুই বছর পর দুগ্ধপানের দ্বারা হুরমত প্রমাণিত হয় না, তার দলীল প্রসঙ্গে, কেননা, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, [সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে] পূর্ণ দু’ বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ পান করাবার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। {সূরা বাকারা-২৩৩} আর দুধ কম পান করুক বা বেশি পান করুক, এর দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়ে যাবে।
এ বাব দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট বাচ্চা অল্প দুধ পান করুক বা বেশি পান করুক এর দ্বারা দুগ্ধপান সম্পর্কিত হারাম হওয়া সাব্যস্ত হয়ে যাবে। বাচ্চার তিন বার বা চারবার চোষন দেয়া শর্ত নয়।
এ কারণেই আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ উক্ত বাবের অধীনে ব্যাখ্যায় লিখেনঃ
هذا مصير منه الى التمسك بالعموم الوارد فى الأخبار مثل حديث الباب وغيره، وهذا قول مالك وابى حنيفة
তথা ইমাম বুখারী রহঃ [অল্প বা বেশি দুধ পান করার দ্বারাই হুরমত সাব্যস্ত হওয়া প্রমাণিত করতে] এর ব্যাপকতা তথা উমূমিয়্যাত দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। যা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন খোদ শিরোনামের অধীনে ইমাম বুখারী রহঃ যে হাদীস উল্লেখ করেছেন এর দ্বারা, এবং এছাড়া অন্যান্য হাদীস দ্বারা। আর এটাই ইমাম মালিক রহঃ এবং ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মাযহাব। {ফাতহুল বারী-৯/১৪৬}
কিন্তু ইমাম বুখারী রহঃ এর মত এবং তার উল্লেখিত হাদীসের খেলাফ গায়রে মুকাল্লিদদের মাযহাব হল, দুগ্ধপানের দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কমপক্ষে পাঁচবার চোষণ দেয়া জরুরী। {তাইসীরুল বারী-৭/৩২}
বিষয়: বিবিধ
৪০৬৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
সকল নামাযে ইমাম ম্ক্তুাদী উভয়ের উপর কিরাত পড়া ওয়াজিব। চাই মুসাফির হোক বা মুকিম হোক, জোরে কিরাতওয়ালা নামায হোক বা আস্তে কিরাতওয়ালা নামায হোক”। (এটা সঠিক)
তার পর আপনি কপি পেস্ট করেছেন,
ইমাম বুখারী রহঃ এর কায়েম করা এ বাব দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে সকল নামাযে যেমন ইমামের উপর কিরাত পড়া আবশ্যক, তেমনি মুক্তাদীর উপরও কিরাত পড়া আবশ্যক।
তারপর কপি পেস্ট,
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর মতানুসারে ইমামের জন্য যেমন সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব, তেমনি মুক্তাদীর উপরও সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব।(খুব ভাল কথা) তেমনি ইমামের জন্য যেমন সূরা ফাতিহার পর আরেক সূরা মিলানো ওয়াজিব, তেমনি মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতিহার পর আরেক সূরা মিলানো ওয়াজিব। যদি তাই না হতো, তাহলে ইমাম বুখারী রহঃ এরকম বাব কায়েম করতেন যে, “ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ের জন্য সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক।”
=======================
আপনি যে শুধু কপি পেস্ট করেন কিন্তু নিজ চোখে দলিল গুলো দেখেন না তার প্রমান এখানেই পাওয়া যায়।
কেননা ইমাম বুখারী (র)এই বাবটি নিয়ে আসার পরে যে হাদিস নিয়ে এসেছেন তা দিয়ে তিনি শুধু সুরা ফাতিহাকেই বুঝিয়েছেন,
হাদিস টি হলো,
"লা সলাতা লিমান লাম ইয়াকরবি ফাতিহাতিল কিতাব"
অর্থঃ সুরা ফাতিহা ছাড়া কোন সালাত নাই।
(অধ্যায়ঃ ১০/৯৫বুখারী হা/৭৫৬)
কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেছেন,
"মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।" (হুজুরাত আয়াত ৬)
রসুল (সা) বলেছেন,
"কোন ব্যাক্তির মিথ্যাবাদী হবার জন্য এতটুকুই যথেস্ট যে সে যা শোনে (যাচাই ছাড়া) তাই বর্ণনা করে"
(মুসলিম)
নিজে আগে জানুন ভালো করে তারপর অন্যকে জ্ঞান দান করুন।
=======================
আপনাকে একটা প্রশ্ন করি,
আপনি তো দেওবন্দীদের খুব ভক্ত।
তো দেওবান্দের প্রতিস্ঠাতা মাওলানা কাসেম নানুতুবি (রহ) বলেছেন, "হুজুর (সা)
আপনি তো দেওবন্দীদের খুব ভক্ত।
তো দেওবান্দের প্রতিস্ঠাতা মাওলানা কাসেম নানুতুবি (আল্লাহ তাকে জান্নাত বাসী করুন)খতমে নবুয়াত গবেষনায় বলেছেন, "হুজুর (সা) এর যুগ পরবর্তী নবীদের যুগের পরে এবং তিনি সবার মাঝে শেষ নবী এটা সাধারন লোকের ধারনা। বুদ্ধিমান ব্যাক্তিরা সময়ের আগে ও পরে হওয়ার ব্যাপারে কোন মহাত্ব স্বীকার করেন না। তাহলে প্রশংসার ক্ষেত্রে আল্লাহর খাতামুনন্নাবিয়্যিন বলাটা কি করে সঠিক হতে পারে?"
(তাহযীরুল নাস পৃস্ঠাঃ৩)
প্রশ্নঃ কাদীয়ানীরা খাতামুনন্নাবিয়্যিন অস্বীকার করার কারনে যদি কাফের হয়ে যায়? তাহলে মাওলানা কাসেম নানুতুবি(আল্লাহ তাকে জান্নাত বাসী করুন)তার ক্ষেত্রে কি হবে???
আর এটা আপনার ব্যাখ্যা মাওলানা সাহেবের নয়। তাই আল্লাহই ভালো জানেন তার মনের কথা। তাই বিষয়টি আল্লহার হাতেই ন্যাস্ত রাখা ভালো।
এই খন্ডের বাংলা পি.ডি.এফ এর লিঙ্ক আপনাদের কারও কাছে থাকলে – একটা পোষ্টের মাধ্যমে জানাবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন