ব্যাংক-সুদে লাভ-ক্ষতি
লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ২৮ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:১১:৩২ সকাল
প্রচলিত ব্যাংকিং-ব্যবস্থার সুদ সম্বন্ধে আমার ধারণা দিয়ে লিখেছিলাম আগের কিছু পোষ্টে। এখানে আরও কিছু ব্যাপার পরিস্কার করার দরকারঃ মূলত এ ধরনের ব্যাংকিং-ব্যবস্থায় পূর্ব থেকেই নির্ধারিত একটা রেইট-এ সুদ দেয়া বা নেয়া হয়। এখানে থাকে তিনটা পক্ষ (এসব পক্ষের ব্যাপারে আমার ধারণাও পূর্বের পোষ্টে দিয়েছি) –
(১) বসে বসে খাওয়ার জন্য সুদ নেয়ার দল,
(২) ব্যবসা করার জন্য সুদ দেয়ার দল, এবং
(৩) মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ফাক-তালে ডিফারেন্সিয়াল সুদ খাওয়ার দল বা ব্যাংক।
অনেক অর্থনীতিবিদেরা ভোগের জন্য সুদ এবং উৎপাদনের জন্য সুদ এর ব্যাপারগুলো আলাদা ভাবে দেখে থাকে এবং তাদের একদল গলাবাজ (খুব সম্ভবত এদের পলিটিক্যাল ইকোনোমিষ্ট বলে কেউ কেউ) বলে, যা অনেকটা এরকম – “এ সুদী-ব্যাংকিং ব্যবস্থা মূলত বসে বসে খাওয়ার/খাওয়ানোর জন্য না, এটা একটা দেশের উৎপাদন-কে আরও গতিশীল করার এবং বাড়িয়ে তোলার জন্য এবং এ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এ উৎপাদন এবং অর্থনীতিকে সচল ও গতিশীল করে।” কিন্তু তারা যা-ই বলুক না কেন, এক পক্ষ বসে বসে সুদ খাওয়ার পক্ষপাতী বা বাধ্য না হলে আরেক পক্ষের উৎপাদনের জন্য সুদের বিনিময়ে ঋন পাওয়ার প্রশ্নই আসে না এবং মাঝখানে ব্যাংকের মকার হওয়ার কোন চান্স-ই নেই, তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় – ঐ অর্থনীতিবদরা কোন এক পক্ষের হয়ে এসব অপরিপক্ক ও অসংলগ্ন কথা বলে হৈ-চৈ করছেঃ সে পক্ষ হতে পারে ব্যাংক অথবা ঋন-গ্রহীতা/ব্যবসায়ী অথবা বসে বসে খাওয়ার দল, তবে বসে খাওয়ার দলের পক্ষের হওয়ায় যেহেতু কোন অর্থনৈতিক ফায়দা নেই, তাই অর্থনীতিবিদ হিসেবে তাদের পক্ষ অবলম্বনের প্রশ্নও আসে না; তাই অবশ্যই তারা ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকের পক্ষের।
তাদের এ ধরনের অপরিপক্ক ও অসংলগ্ন বক্তব্যের বিপরীতে অনেক কথা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম একটা হচ্ছে সুদ-ভিত্তিক ঋনের দ্বারা তাদের পক্ষের লোকের উৎপাদন গতিশীল করার ফলে তাদের ব্যবসার ক্ষেত্র এবং লাভ বেড়ে যায়। সেটা কিভাবে হয় বোঝার জন্য অর্থনীতিবিদ না হলেও চলে, তো একটা পরিস্থিতিতে দেখবো এ সুদী ব্যাংক ব্যবস্থায় উৎপাদন ও অর্থনীতির চাকা গতিশীল করে কার লাভ হচ্ছে এবং কার ক্ষতি হচ্ছে –
যেহেতু পৃথিবী এখন একটা পরিবার, তাই সমগ্র পৃথিবী নিয়েই হিসেব করলে ভালোভাবে পরিস্কার হয় বিষয়টা! আমাদের এ গ্লোবাল-ভিলেজে একপক্ষে রয়েছে ব্যবসায়ী এবং তাদের সঙ্গী/সাথী শ্রেণী, আরেকপক্ষে রয়েছে ভোক্তা ও গোলাম শ্রেণী এবং আগের পোষ্টে বলেছিলাম কিভাবে এ গোলাম ও ভোক্তা-শ্রেণী থেকেই ব্যাংকগুলো সুদের মূলা ঝুলিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়! এখন আমরা বোঝার সুবিধার জন্য ধরে নেবো ভিলেজে কারেন্সী/বিনিময়-মুদ্রা একটাই এবং সেটা টাকা।
আরও ধরে নিবো এ ভিলেজের সমস্ত ভোক্তাদের হাতে সঞ্চয় করা মোট ১০০ টাকা রয়েছে এবং ব্যাংকের ১০% সুদের মুলা খাওয়ার জন্য তারা সবাই ব্যাংকিং এর আওতায় চলে গিয়ে ব্যাংকে ১০০ টাকা ডিপোজিট করে ফেলেছে। এখন ব্যাংকের পরিশোধ করতে হবে সুদের ১০ টাকা এবং তা অবশ্যই আরেক জায়গা থেকেই কামাই করতে হবে ব্যাংকের! তাই ধরে নিলাম ডিপোজিটের ১০০ টাকার পুরোটাই ব্যাংক ঋন হিসেবে দিয়ে দিলো উৎপাদনমূখী ব্যবসায়ীদের কাছে। এবার উৎপাদনকারী এর হিসেবের দিকে নজর দিতে হবে আমাদের -
ধরে নিলাম মোট উৎপাদন-প্রক্রিয়া-বিপনন খরচ ঋনের পুরো ১০০ টাকা এবং সুদের ১৫ টাকাও, এতে করে মোট ১১৫ টাকা খরচ হলো, আরও ধরে নিলাম ব্যবসায়ী এগুলো ভিলেজের সমস্ত ভোক্তা-গোলাম শ্রেণীর কাছে বিক্রি করে লাভ করবে আরও ১০ টাকা। তাহলে বিক্রয় মূল্য দাড়ালো ১২৫ টাকা।
এবার বেলা শেষে আমাদের লাভ-ক্ষতি হিসেব কষে দেখতে হবে কার কি হলো?
গোলাম-ভোক্তাঃ ছিলো ওদের কাছে ১০০ টাকা, সুদ হিসেবে পেলো আরও ১০ টাকা; হলো মোট ১১০ টাকা এবং এর বিনিময়ে উৎপাদিত পণ্য ক্রয়ে তারা খরচ করলো এবং অবশ্যই করতে হবে, পূর্ব-নির্ধারিত বিক্রয়মূল্য, ১২৫ টাকা; তো এদের ক্ষতি হলো ১৫ টাকা।
ব্যবসায়ীঃ মোট ১১৫ টাকা মাল বানাতে এবং ভোক্তার কাছে পৌছে দিতে খরচ করে বিক্রয়মূল্য হিসেবে আয় করলো ১২৫ টাকা, এদের লাভ হলো ১০ টাকা।
ব্যাংকঃ অর্থনীতি এবং উৎপাদনে গতিশীলতা এনে দিয়ে ব্যবসায়ীর কাছে থেকে দৌড়ে ১৫ টাকা সুদী-আয় হিসেবে এনে সঞ্চয়কারীদের সুদী-ব্যয় হিসেবে দিলো ১০ টাকা, এর লাভ হলো ৫ টাকা।
এটা এক চলমান প্রক্রিয়া, এবং চলছে এভাবেই - বিভিন্ন দেশকে একেকটা ক্লাসিফাইড প্রোডাকশান, প্রোফিট এবং ইনভেষ্টমেণ্ট সেন্টার হিসেবে ধরে নিয়ে। এবং এ প্রক্রিয়া চলমান রাখতে মূল উপাদান রয়েছে –
(১) কারেন্সী ইন সার্কুলেশান (মোট কতো টাকা কখন প্রিন্ট করে ছাড়বো/ছেড়েছে),
(২) ডিটারমিনেশান অফ সেলিং-প্রাইস (লোনের টাকায় মাল বানিয়ে কতোতে বেচবো), এবং
(৩) ব্যাংক ইন্টারেষ্ট রেট (কতো সুদ দিলে ওরা গোলামী করে টাকা কামাবে আর আমাদের কাছে লাভের আশায় এভাবে দিতেই থাকবে, এবং আরও বেশী অস্থির হয়ে উঠবে)
এবং এটা চলবে ততক্ষন, যতক্ষন সাধারণ মানুষ এ কাগুজে সুদের মোহে আবদ্ধ থাকবে; আমিও আছি আপনাদের সাথেই ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়!
এবং আরও বলতে হয় আমাদের আল্লাহ ভুল করেন-নি সুদ হারাম করে! কেননা যে বসে বসে সুদ পেতে গেলো লস-টা তো তারই হলো এবং হচ্ছে!
আশা করি এর পরের পোষ্টে ইসলামীক ব্যাংক নিয়ে আমার আরও যে ভাসা ভাসা ধারণা রয়েছে, সে সম্বন্ধে আরও জানার জন্য কিছু প্রশ্ন রেখে লিখবো।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন