বুকের মধ্যে যা কিছু ( লুকানো ) আছে সব বের করে এনে যাচাই করা হবে ?
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ২৭ জুন, ২০১৩, ০৭:৫৭:০৪ সকাল
৯) তবে কি সে সেই সময়ের কথা জানে না যখন কবরের মধ্যে যা কিছু ( দাফন করা ) আছে সেসব বের করে আনা হবে৭
৭. অর্থাৎ মরা মানুষ যেখানে যে অবস্থায় আছে সেখান থেকে তাকে বের করে এনে জীবিত মানুষের আকারে দাঁড় করানো হবে।
১০) এবং বুকের মধ্যে যা কিছু ( লুকানো ) আছে সব বের করে এনে যাচাই করা হবে ?৮
৮. অর্থাৎ বুকের মধ্যে যেমন ইচ্ছ ও নিয়ত , স্বার্থ ও উদ্দেশ্য , চিন্তা , ভাবধারা এবং বাহ্যিক কাজের পেছনে যেসব গোপন অভিপ্রায় লুকিয়ে আছে সেসব খুলে সামনে রেখে দেয়া হবে। সেগুলো যাচাই করে ভালো ও খারাপগুলোকে আলাদা আলাদা করে দেয়া হবে। অন্য কথায় শুধুমাত্র বাইরের চেহারা দেখে মানুষ বাস্তবে যা কিছু করেছে সে সম্পর্কে শেষ সিদ্ধান্ত শুনিয়ে দেয়া হবে না। বরং মনের মধ্যে লুকানো রহস্যগুলোকে বাইরে বের করে এনে দেখা হবে যে , মানুষ যেসব কাজ করেছে তার পেছনে কি উদ্দেশ্য ও স্বার্থ - প্রেরণা লুকিয়েছিল । এ বিষয়টি চিন্তা করলে মানুষ একথা স্বীকার না করে পারে না যে , আসল ও পূর্ণাংগ ইনসাফ একমাত্র আল্লাহর আদালতে ছাড়া আর কোথাও কায়েম হতে পারে না। নিছক বাইরের কাজকর্ম দেখে কোন ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া যায় না বরং কি উদ্দেশ্যে সে এ কাজ করেছে তাও দেখতে হবে। দুনিয়ার ধর্মহীন আইন ব্যবস্থাগুলোও নীতিগতভাবে একথা জরুরী মনে করে। তবে নিয়ত ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চালিয়ে তার সঠিক চেহারা সনাক্ত করার মতো উপকরণ দুনিয়র কোন আদালতেরও নেই। একমাত্র আল্লাহই এ কাজ করতে পারেন একমাত্র তিনিই মানুষের প্রত্যেকটি কাজের বাইরের চেহারার পেছনে যে গোপন প্রেরণা ও উদ্দীপনা সক্রিয় থাকে তা যাচাই করে সে কোন ধরনের পুরস্কার বা শাস্তির অধিকারী হতে পারে তা নির্ধারণ করতে পরেন। তাছাড়া আয়াতের শব্দাবলী থেকে একথা সুস্পষ্ট যে মনের ভেতরে, ইচ্ছা , সংকল্প ও নিয়ত সম্পর্কে আল্লাহ পূর্বাহ্নেই যে জ্ঞান রাখেন নিছক তার ভিত্তিতে এ ফায়সালা হবে না। বরং কিয়ামতের দিন এ রহস্যগুলো উন্মুক্ত করে সবার সামনে রেখে দেয়া হবে এবং প্রকাশ্য আদালতে যাচাই ও পর্যালোচনা করে এর কতটুকু ভালো ও কতটুকু খারাপ ছিল তা দেখিয়ে দেয়া হবে। এজন্য এখানে ( আরবী ------------------------) বলা হয়েছে। কোন জিনিসকে বের করে বাইরে নিয়ে আসাকে ' হুসসিলা ' বা ' তাহসীল ' বলে । যেমন , বাইরের ছাল বা খোসা ছড়িয়ে ভেতরের মগজ বের করা। এভাবে বিভিন্ন ধরনের জিনিসকে ছেটে পরস্পর থেকে আলাদা করার জন্যও এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাজেই মনের মধ্যে লুকানো রহস্যসমূহের ' তাহসীল ' বা বের করে আনার মধ্যে এ দু'টি অর্থ শামিল হবে। সেগুলোকে খুলে বাইরে বের করে দেয়াও হবে আবার সেগুলো ছেটে ভালো ও মন্দ আলাদা করে দেয়াও হবে। এ বক্তব্যটিই সুরা আত তারিকে এভাবে বলা হয়েছে : ( আরবী ------------------) " যেদিন গোপন রহস্য যাচাই বাছাই করা হবে। " ( ৯ আয়াত )
১১) অবশ্য সেদিন তাদের রব তাদের সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত থাকবেন৷ ৯
৯. অর্থাৎ কে কি এবং কে কোন ধরনের শাস্তি বা পুরস্কারের অধিকারী তা তিনি খুব ভালোভাবেই জানবেন।
সূরা আল আদিয়াত-৯-১১
সেদিন এক ভাইয়ের সাথে আমি অনেক্ষণ গল্প করলাম....
গল্পের এক পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তুমিকি নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো???
সে চট করে উত্তর দিলো না। (!!!!)
আমি বললাম কত ওয়াক্ত পড়ো??
সে বলল, কোন দিন ২/৩ ওয়াক্ত পড়ি,কোন দিন পড়িনা..(!!!!)
আমি তাকে বললাম, তুমিকি জান ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া আল্লাহ ফরজ করে দিয়েছেন। নামাজ না পড়লে জাহান্নামে যেতে হবে। সে অনেকটা কৌতুক করে বলল "জানি". বললাম তাহলে কেন নামাজ মিস করছো?? জাহান্নামে যেতে চাও নাকি???
সে বলল আমি এমন আল্লাহর উপর ঈমান আনি নাই, যে আল্লাহ্ আমাকে জাহান্নামে দিয়ে দিবে..আমি এক আল্লাহর উপরেই বিশ্বাস স্থাপন করেছি..আর এই ঈমানের কারণেই আল্লাহ্ আমাকে জান্নাত দিবেন..
তার উত্তর শুনে আমি টাস্কি খাইয়া ফেললাম।
তার পর তাকে এক উদাহারন দিলাম এভাবে..
মনে করো আমি এমন এক স্কুলে পড়ি, যে
স্কুলের প্রিন্সিপাল খুব ভালো..আমকে খুব ভালোবাসেন। নিয়মিত আমার খোঁজ-খবর নেন, এবং ভালো রেসাল্ট করার জন্য আমায় পড়তে বলেন। এবং আরও বলেন যদি পড়া শুনা ঠিক মতো না করি, তবে পরীক্ষায় ফেইল করবো। কিন্তু তার পরেও আমি পড়িনা। কেন পড়িনা জান? কারণ প্রিন্সিপাল স্যারের প্রতি আমার শত ভাগ্ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। আমাকে উনি এতই আদর করেন যে; আমি যদি না পড়ে ফেইল করি তারপরেও উনি আমাকে পাঁশ করিয়ে দিবেন। এমনকি আমি যদি পরীক্ষার খাতায় কিছুই না লিখি তারপরেও..
এবার তাকে বললাম, এটাকি সম্ভব????
সে বললো না। এটাতো অসম্ভব।
আমি তাকে বললাম, পড়াশুনা না করে দুনিয়ার একটি স্কুলের প্রিন্সিপালের হুকুম অমান্য করায় তিনি যদি আমাকে ফেইল থেকে পাঁশ করিয়ে দিতে না পারেন, তবে সারা দুনিয়ার মালিক এক আল্লাহর হুকুম অমান্য করার পরেও তিনি কিকরে আমাদেরকে জাহান্নাম না দিয়ে জান্নাত দিয়ে দিবেন???
তখন তাকে বললাম ক্লাসে পাঁশ করার জন্য যেমন করে নিয়মিত পড়তে হয়, ঠিক তেমনি কিয়ামতের দিনেও পাঁশ করে জান্নাত পেতে হলে নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সহ আল্লাহ্ ও তার রাসুলের দেখানো পথে চলতে হয়.. তবেই পরম সুখের জান্নাত পাওয়া যাবে...
আমার মনে হলো সে চিন্তার সাগরে ডুবে গেলো। এবং হয়তো আগামীতে নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলবে, যদি আল্লাহ্ তাকে হেদায়াত দান করেন।
আসলে আমাদের সমাজের লোকদের ধারনাই এরকম "নামাজ পরিনাতো কী হয়েছে?? ঈমানত ঠিক আছে। যতই গুনাহ করিনা কেন, শবে বরাত বা শবে ক্বদরে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নিবো। আল্লাহতো রহমান। মাফ করেই দিবেন।"
কিন্তু আল্লাহর নাম যেমন রহমান বা দয়ালু, তেমনিত কাহহার বা কঠিন শাস্তি দাতা। আফসোস মানুষ এটা বুঝতেই রাজি হয়না যে, আল্লাহর হুকুম নিয়মিত মেনে জীবন পরিচালনা করতে পারলেই কেবল ক্ষমা আছে, আর নাহলে রয়েছে কঠোর শাস্তি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার হুকুম যথাযথভাবে পালন করে তার পথে চলার তাওফীক দিন..আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন