সহিংসতা না সমঝোতা - পাঁচ
লিখেছেন লিখেছেন ফরীদ আহমদ রেজা ৩০ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:৪৭:৩৪ রাত
চট্টগ্রাম শহরে দায়িত্ব পালনের সময় সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র শিবিরের বিজয় অর্জন। এ বিজয় পক্ষের লোকদের জন্যে ছিল অফুরন্ত প্রেরণার উৎস, আর বিরোধী পক্ষের জন্যে ছিল উৎকন্ঠা ও আতঙ্কের ব্যাপার। দেশ-বিদেশের অনেকে নানা ভাবে শিবিরের বিজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করেছেন। আমার মতে চট্টগ্রামে শিবিরের সাংগঠনিক মজবুতি, ভিপি-প্রার্থী জসিম উদ্দীন সরকারের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, চাকসু এবং বিভিন্ন হলে যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীর সংখ্যাধিক্য এবং ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীন কোন্দল শিবিরের বিজয়কে নিশ্চিত করেছে।
নির্বাচন ঘোষিত হবার আগেই শহর, বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তর-দক্ষিণ জেলার দায়িত্বশীলদের বৈঠকে চাকসু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত হয়। সাথে সাথে শহর ও জেলার সকল জনশক্তিকে নির্বাচনী কাজে জড়িত করা, প্রচার ও প্রকাশনা, নির্বাচনী বাজেট তৈরি ও অর্থ-সংগ্রহ, নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনা, বিশ্ববিদ্যালয় ও শহরে নির্বাচনী প্রচারণা প্রভৃতি কাজ পরিচালনার জন্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনের আর্থিক প্রয়োজন পূরণের কাজে সহযোগিতার জন্যে শুভাকাঙ্খীদের অনেকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে এগিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে মাওলানা শামসুদ্দীন, শাহ জাহান চৌধুরী, মাওলানা মুমিনুল ইসলাম চৌধুরী, সালাহ উদ্দীন কাদের চৌধুরী প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আল্লাহর রহমতে নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণ পর্যন্ত কোথাও বড় ধরণের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সকল ছাত্র সংগঠনের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে উৎসব মুখর পরিবেশে তা সম্পন্ন হয়। এরপর শুরু হয় অপেক্ষার পালা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীলগণ নিজ নিজ হলে অবস্থান করছিলেন। আমি জেলা এবং শহরের কয়েকজন দায়িত্বশীলকে নিয়ে শ’ পাঁচেক কর্মীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একস্থানে অবস্থান গ্রহণ করি। আমাদের কাজ ছিল ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা এবং শৃঙ্খলা ও সহনশীলতার সাথে যে কোন পরিস্থিতি মুকাবেলার জন্যে তৈরি রাখা।
এক সময় একজন সুখবরটি নিয়ে এলেন। আলহামদুল্লিাহ বলে অপেক্ষমান কর্মীদের তা আবহিত করলাম। সবাই খুশিতে আত্মহারা। তাদের চোখ-মুখের ভাষা পড়ে বুঝলাম, তারা এক্ষুণি বিজয় মিছিল নিয়ে বেরিয়ে যেতে প্রস্তুত। তাদের বললাম, দায়িত্বশীলরা এখনই বসছি। সেখানে যা সিদ্ধান্ত হয় সে অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে। আমার অনুপস্থিতিতে কর্মীদের সাথে কথা বলার দায়িত্ব, যতটুকু মনে পড়ে, উত্তর জেলার সভাপতি নুরুল আবসারের কাছে দিয়ে আমি বৈঠকের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।
বৈঠক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির, তাই এর সভাপতির দায়িত্ব আমার উপর বর্তায়। সেখানে কেন্দ্রিয় অতিথি আহমদ আব্দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। সে সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি অথবা কেন্দ্রিয় প্রশিক্ষণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক মফিজুর রহমান, জসিম উদ্দীন সরকার, আব্দুল গাফফার, মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম প্রমুখ। শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আরো কয়েকজন সেখানে ছিলেন। বিজয় হয়েছে, সুতরাং বিজয় মিছিল হবে, অন্ততঃ চট্টগ্রামের এটাই নিয়ম। উপস্থিত সবাই এ ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত ছিলেন। এটা কোন ছোটখাটো বিজয় ছিল না। চাকসুতে পূর্ণ প্যানেল এবং হলসমূহের প্রায় সকল পদে শিবিরের প্রার্থী জিতেছেন। বিজয় মিছিল অবশ্যই করতে হবে। সেটা আজ রাতে হবে, না কাল হবে - সেটা ছিল তাদের আলোচনার বিষয়।
কয়েক জনের মতামত শোনার পর আমি বললাম, আমি বিজয় মিছিলের পক্ষে নয়। আল্লাহর হুকুমে বিজয় হয়েছে। কুরআনের সুরা নসর অনুযায়ী বিজয় হলে আল্লাহর প্রশংসা ও ইস্তেগফার করতে হবে। গৌরব বা অহংকার প্রদর্শন না করে বিনয় ও নম্রতা দেখতে হবে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হবার পর বিজয় মিছিল না করলে কেউ এ বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারবে না। এখন শান্তিপূর্ণভাবে অভিষেক সম্পন্ন করা আমাদের প্রধান টার্গেট হওয়া দরকার। নির্বাচনের আগে বিরোধীরা পরস্পর বিভক্ত ছিল। একে অন্যের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করেছে। শিবির বিজয়ী হবার পর এখন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে শিবিরের বিপক্ষে অবস্থান নেবে। বিজয় মিছিল আজ হোক বা কাল হোক, আমি নিশ্চিত তারা মিছিলে আক্রমণ করবে। শিবিরকে বাধ্য হয়ে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে। সংঘর্ষ বাঁধলে সেটা হবে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও এ রকম ঘটনা ঘটেছে। মাত্র কিছুদিন আগে বিভিন্ন হলে শিবিরের উপর আক্রমণ হয়েছে। বহু কর্মীর রুম তারা পুড়িয়ে দিয়েছে। বিজয় মিছিল বের করলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। অবস্থা বেগতিক দেখে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেবে। অভিষেক করা তখন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। করতে পারলেও সেটা শান্তিপূর্ণ উপায়ে করার নিশ্চয়তা থাকবে না। আমাদের এতো বড় একটা বিজয়কে এ ভাবে নষ্ট হতে দেয়া ঠিক নয়।
আমার কথা শেষ হলে তা হজম করতে অনেকে সময় নেন। তারপর ঘন্টা খানেক এ নিয়ে বিতর্ক হয়। এক ফাঁকে কেন্দ্রিয় প্রতিনিধির মতামত জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আমার চেয়ে আপনারা ভালো জানেন। আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাই আমার মতামত। দীর্ঘ বিতর্কের উপর মতামত গ্রহণ করলাম। এক বা দু ভোটে আমার প্রস্তাব গৃহীত হলো। সিদ্ধান্তের পর পরই দ্রুত কর্মীদের সমাবেশে গিয়ে হাজির হলাম। কর্মীরা সেখানে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং এর প্রেক্ষাপট তাদের অবহিত করলাম। এটাও বললাম, তারা যেন নিজ নিজ হলে বা বাড়িতে চলে যান। সতর্ক করে দিলাম, যাওয়ার পথে যেন সাবধানে যান এবং পথে যেন কোন বিরোধে জড়িয়ে না পড়েন।
সবাইকে বিদায় করে দিয়ে সে রাতে শহরে ফিরে না গিয়ে হলেই থেকে গেলাম। আমি মনে হয় সে রাতে আলাওল হলে রাত কাটিয়েছি। আমার সাথে আরো কেউ কেউ ছিলেন। হলে ঢুকতে গিয়ে দেখলাম ইতোমধ্যে শিবির বিরোধী মিছিল শুরু হয়ে গেছে। শ্লোগান দেয়া হচ্ছে, ‘চাকসুতে রাজাকার – মানি না মানবো না।’ আমরা সতর্কতার সাথে মিছিলকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
চলবে ......
বিষয়: বিবিধ
১৫১০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
আপনার পোস্ট গুলি চেক করে বুঝলাম আপনি দাম্ভিক টাইবের লোক। আমার সত্য কথায় দুঃখু ফেলে সরি। ব্লগ জগতে রুচিশিল ব্লগারেরা মন্তব্যর জবাব দেয় এবং সেটা তাদের বিনয়। ধন্যবাদ বা অন্তত একটা ইমো হলে ও ছুড়ে মারে। আপনি কারো কোন জবাব দেন নি।
জানি জবাব দিবেন না তারপরও "এক বা দু ভোটে আমার প্রস্তাব গৃহীত হলো।" বিষয়টা বুঝা গেল না। মোট ভোট কয়টা ছিল? বি্নীত
মন্তব্য করতে লগইন করুন