গতকালকের লাঞ্চটা ছিলো জটিল !

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৯ জুলাই, ২০১৮, ০৯:১৪:০৩ সকাল



=====================

বাইরে ব্যপক ঘোরাঘুরি করে ক্লান্ত হয়ে বাসা ফিরে যেইনা ঘুমাতে গেছি, অমনি প্রফেসর সাহেবের ফোন। ইতস্তত করে বললেন,তুমি বলেছিলো যে কোনো প্রয়োজনে যেন তোমাকে কল করি,তাই কল করলাম। ...বললাম--বান্দা রেডী, বলেন কি করতে হবে ! উনি বললেন,, না না এখনই না। আগামী সপ্তাহে তোমাকে কয়েক ঘন্টার জন্যে লাগবে। বললাম,,আগামী ১০ দিন একাধারে কাজ করব,,কারন ২ সপ্তাহের ছুটি একবারে নিতে যাচ্ছি ঘোরার জন্যে। ফলে দ্রুত করলেই ভালো। উনি বললেন, তাহলে আগে ঘুরে আসো,আমার অত তাড়া নেই।

বললাম,,আরে না দেরী কইরেন না,দ্রুত করেন,,কালকেই করেন। উনার সুবিধামত সময়ে যাব বলে নির্ধারিত হল। গতকাল পথিমধ্যে স্যামুয়েলের বাসায় গিয়ে তার সাথে ১৫ মিনিট খেলাধুলা করলাম, সে ব্যপক খুশী। দাত সর্বমোট ৮টার মত উঠেছে। ওখান থেকে চলে গেলাম প্রফেসর সাহেবের বাসায়।

দেখী উনি ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছেন, ইউটিউবে দেখছেন কিভাবে জানালার স্লাইডিং পর্দা খুলে,নতুন ধরনেরটা লাগাতে হয়। উনি ৭টা উইন্ডোর জন্যে নতুনটা লাগাবেন। এসব কাজে প্রফেশনাল মিস্ত্রী ডাকলে পকেট খালি করে ফেলে বিরাট অংকের পারিশ্রমিক নিয়ে। যাইহোক আমরা ইউটিউব দেখে মোটামুটি অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম, এরপর কর্মে ঝাপিয়ে পড়লাম।

জীবনে প্রথমবারের মত কডলেস ড্রিল মেশিন হাতে নিয়ে ধরলাম। এর আগে কোনোদিন ধরিওনি। এবার পুরোনো পর্দা খুলে ফেললাম অনেক কষ্টে। এরপর বিপত্তি বাধল ড্রিল করে স্ক্র বসানোর সময়। লম্বা স্ক্র অর্ধেক এর পর আর যায়না। সেই বরাবর স্টিলের পাত ছিলো। তারপর অনেক কষ্টে,চরম কসরতের পর প্রথম জানালাটা ঠিক করলাম। সময় লাগল ১ ঘন্টারও বেশী। অত্যধিক প্রেসারে স্ক্রু ঢুকাতে হচ্ছিলো। লম্বা স্ত্রু প্রবল শক্তিতে ড্রিল করে ঢুকিয়ে ছেড়েছিলাম। এভাবে ৩টা জানালার কাজ সম্পন্ন করতে আড়াই ঘন্টা লেগে গেল। জানালাগুলো ছিলো উচু ও বড়। বিশেষ মই দিয়ে উঠে কাজ করলাম।

৩টা জানালা সম্পন্ন করে যোহরের নামাজ পড়লাম। উনি খুব খুশী যে আমি পেরেছি। ওদিকে ড্রিলের প্রবল ভাইব্রেশনে আমার এক দাতের পুরোনো ফিলিং উঠে আসল। আল্লাহর কসক করে বলছি, আমি আমার জীবনে কখনই এরকম কষ্ট করিনি। কাজটা সুক্ষ্ণ এবং খুব শক্তি দিয়ে করতে হচ্ছিলো। একেক স্ক্রু একেক রকম আচরন করছিলো। যাইহোক দুপুরে খেতে বসে সব ক্লান্তি চলে গেল। কি নেই টেবিলে ! বিশাল রুইমাছ ভাজা,ছোটমাছ,সব্জী,মুরগী,গরু,,মিস্টি মিঠাই...ওহ শুধু খাবলা মেরে খাচ্ছিলাম ভাল্লুকের মত। পা থেকে মাথা পর্যন্ত আনন্দে জর্জরিত হল।

এবার কফি টেনে বাকী কাজ শুরু করলাম। আমার হাত অবশ হয়ে আসছিলো। একেকটা স্ক্রু বসাতে ঘেমে যাচ্ছিলাম। পরবর্তী ২ ঘন্টায় সবকাজ শেষ করলাম। উনার বাড়িটা আসলেই সুপার। অনেক দামী বাড়ি, লোকটা ধনী। আর বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন, ফলে লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম।

এটা ঠিক যে এরকম কাজ জীবনেও করিনি,তবে যে অভিজ্ঞতা পেলাম তাতে ভবিষ্যতে হয়ত কাজে লাগবে। তবে এইটা আমার নিজের কাজ হলে প্রফেশনাল লোক দিয়ে করাতাম,তা যত টাকাই লাগুক। কিন্তু উনার কাজা করেছি পুরো সদাকা মনে করে। আর একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই এই কাজ করেছি। উনি যদি আমাকে অনেক টাকাও দিতেন, তবুও এই ছুটির দিনে এই কাজ করতে আসতাম না।

ফেরার সময় আবারও নানান খাবারদাবার খাওয়ালেন। কিভাবে যেন উনি বুঝে ফেলেছেন যে আমি খাদক ! ফেরার সময়ও বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন। বললাম- অভিজ্ঞতা তো আমিই অর্জন করলাম, কৃতজ্ঞতা তো আমাকেই প্রকাশ করতে হয়, আমি কৃতজ্ঞ যে দারুন কিছু অভিজ্ঞতা হল। আর দিন রাতের যেকোনো সময়ে যে কোনো প্রয়োজনে ডাকবেন, দ্রুততম সময়ে হাজির হব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমার সকল সাধারন কাজকেও অসাধারন হিসেবে গ্রহন করে আমার দুনিয়া ও আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করুক !

বিষয়: বিবিধ

৯৫১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385676
২৩ জুলাই ২০১৮ দুপুর ১২:৩৭
বাকপ্রবাস লিখেছেন : ইউটিউব এসব অনেক ব্যাপার সহজ করে দিয়েছে, দেখে দেখে করা যায়।
১৪ আগস্ট ২০১৮ দুপুর ১২:৫৪
317905
দ্য স্লেভ লিখেছেন : কথা ঠিক
385680
২৬ জুলাই ২০১৮ রাত ১২:০৩
আবরার লিখেছেন : ভালো লাগলো , অনেক ধন্যবাদ .
১৪ আগস্ট ২০১৮ দুপুর ১২:৫৪
317906
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
385683
২৬ জুলাই ২০১৮ সকাল ০৯:৪৮
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : অনেকদিন পর ব্লগে আসলাম। আপনারা কয়েকজন নিয়মিত আছেন দেখে ভালো লাগলো। ভাবছি, আমিও এখন হতে মাঝে মাঝে আসবো ইনশাল্লাহ।
১৪ আগস্ট ২০১৮ দুপুর ১২:৫৫
317907
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এটা শ্মশানঘাট রে ভাই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File