সূর্য্যগ্রহন ২০১৭
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২২ আগস্ট, ২০১৭, ০৭:৪০:৪০ সন্ধ্যা
ইউরোপ -আমেরিকানরা মজা করার জন্যে যে কোনো একটি উপলক্ষ্য খুঁজতে থাকে। জীবন মানেই হল ফুর্তিকে বর্ধিত করা। ইহলৌকিক জীবনকে যেকোনো মূল্যে আরও দুদিন ভালোভাবে চালিয়ে নেওয়ার নামই হল ফুর্তি। এবারকার ফুর্তির উৎস্য হল পূর্ণ সূর্য্যগ্রহন।
গত কয়েক সপ্তাহ থেকে চারিদিকে যেন সাজসাজ রব পড়ে গিয়েছিলো। চারিদিকে আলোচনা, নানান সব পণ্য কেনার হিড়িক। সুপারস্টোরগুলোতে উপচে পড়া ভীড়। মনে হচ্ছিলো কেনাকাটা না করলে সব ফুরিয়ে যাবে ! মদের কোম্পানীগুলো এক্লিপস নামক মদ বের করল, দেদারছে তা বিক্রীও হল। আরও কত শত পণ্য বিকিকিনি হল তার পুরো খবর নেই।
এবার আমেরিকার কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের কিছু কিছু এলাকা থেকে পূর্ণ সূর্য্যগ্রহন দেখা যাবে, যার ভেতর আমার এলাকা পড়েছে। সারা বিশ্ব থেকে ধনী / স্বচ্ছল ও ফুর্তিবাজ লোকেরা আমেরিকার উক্ত অঞ্চলগুলোতে ইতিমধ্যেই জড় হয়েছে। ওরেগনের সাইজ প্রায় বাংলাদেশের দ্বিগুন কিন্তু লোক সংখ্যা মাত্র ৪০ লক্ষ, এর উপর ১২ লক্ষ লোক এসে হাজির হয়েছে বিদেশ ও এদেশের অন্য এলাকা থেকে। ফলে পুলিশ ও ফায়ার ডিপার্টমেন্ট থেকে নানান সব সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ৩/৪ দিন আগে অনেক রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম ছিলো। সেটা দেখে ও লোকমুখে শুনে মানুষেরা ভয় পেয়েছে। সকলে বলছিলো ঘরে বসে থাকাই শ্রেয়, এর ফলে আমি রাস্তা দেখলাম প্রায় ফাকা। কারন অধিকাংশই ট্রাফিক জ্যামের ভয়ে বাইরে বের হয়নি। আমার এলাকায় রাস্তার সিগন্যালে ১০টি গাড়ি একসাথে দাড়িয়ে থাকার ঘটনা তেমন ঘটেনা, এটাকেই বড় জ্যাম হিসেবে ধরা হয়। তবে পোর্টল্যান্ডে এমনটা প্রচুর ঘটে।
সকাল প্রায় সাড়ে আটটার সময় ব্রায়ান্ট পার্কে গেলাম। গিয়ে দেখী অনেক মানুষ। জিমের সেই বিশেষ কাপুড়ের চেয়ারটি মাটিতে বসিয়ে চিৎ হয়ে থাকলাম। ফায়ার ডিপার্টমেন্ট থেকে বিশেষ ভয়ার্ত রিংটনে একটি মেসেজ আসলো: সাবধান ! দীর্ঘ সময় ধরে চালানো গরম কার শুকনো ঘাসের উপর পার্ক করবেন না, আগুন লেগে যেতে পারে ! খানিক পর পুলিশ ডিাপার্টমেন্ট থেকেও সতর্কতার সংবাদ দিল। আবারও ফায়ার ডিপার্টমেন্ট সাবধান বানী দিল: পাহাড় থেকে যারা সূর্য্যগ্রহন দেখবেন, সাবধান ! খসে পড়া পাথরের দিকে লক্ষ্য রাখুন ! আমাদের উদ্ধারকারী টিম কম।
আসলেই নানানভাবে বড় অঘটন ঘটে। বড় বড় অঘটনের সূত্রপাত হয় সাধারন সাবধানতার অভাবে এবং সাধারন বিষয়কে তুচ্ছজ্ঞান করার কারনে। সকাল ৯.০৪ এ সূর্য্যগ্রহন শুরু হল। বিশেষ গগলসের মাধ্যমে দেখলাম। এই চশমা দিয়ে সূর্য্য ছাড়া অন্যকিছু দেখা যায় না। অন্যদিকে তালে কেবল অন্ধকার দেখায়। দেখলাম চন্দ্র তাশরিফ আনলো সূর্য্যের উপর ডান দিক থেকে ৪৫ডিগ্রী কোনে। ধীরে ধীরে তা নীচে নামতে থাকল।
চারিদিকে লোকজন নানান সব ক্যামেরা ও বিশেষ টেলিস্কোপ নিয়ে বসে আছে। তাদের একটাই ধ্যান। মাঝে মাঝে কালাপোইয়া নদীতে পুলিশরা স্পিডবোটে করে টহল দিয়ে যাচ্ছিলো। অনেকে আনন্দের আতিশয্যে খারাপ ঘটনা ঘটায়।
মনে পড়ল রসূল(সাঃ)সূর্য্যগ্রহনের সময় ভীত হয়ে পড়তেন। উম্মতের চিন্তায় চিন্তিত হতেন। ভাবতেন পূর্ববর্তী উম্মতের মত আবার গযব না এসে পড়ে। তিনি এ সময় বিশেষ সালাত আদায় করতেন আর উম্মতের জন্যে প্রার্থনা করতেন। অথচ আমরা কতটা নিশ্চিন্তভাবে উপভোগ করে যাচ্ছি ! সূর্য্য গ্রহনের সময় সূর্য্য,প্রথিবী ও চাঁদ একই সরল রেখায় থাকার কারনে অতিরিক্ত মহাকর্ষন শক্তি তৈরী হয় এবং কক্ষপথে থাকা গ্রহানুপুঞ্জের পৃথিবীতে আঘাত করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ফলে ব্যাপারটা আসলেই চিন্তার।
হঠাৎ চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেল, মানে চাঁদ ঠিক সূর্য্যের মাঝে চলে এসেছে। সম্ভবত ৩০সেকেন্ডের মত ছিলো এই রাত। তারপর আবার সূর্য্যের আলো দেখা গেল। এই সময়ে বিশেষ চশমা ছাড়াই তাকিয়ে দেখলাম। আসলেই খুব দারুন দৃশ্য। সূর্য্যের মাঝে কালো গোল চাঁদ। বিখ্যাত দৃশ্য। কিছুক্ষন পর যখন চাঁদ একটু সরে গেল এবং একপাশ থেকে সূর্য্যকিরন ছড়িয়ে পড়ল তখন যে কি দারুন লাগল ! অসাধারন এক দৃশ্য দেখলাম।
তবে ২০০৯সালে আমি চায়নার চ্যাংশুতে ছিলাম, সেখানে ছিলো সুর্য্যগ্রহনের মূল কেন্দ্র,সাংহাইসহ আরও কয়েক এলাকায় ছিলো এটা। সেদিন দুপুরে হঠাৎ সব শিক্ষক ও ছাত্ররা বাইরে বেরিয়ে আসলো। আমি খানিক বসে থাকলাম কারন চানতাম না যে সূর্য্যগ্রহন চলছে। আরেকজনের ডাকে বাইরে গিয়ে দেখী রাত। প্রথম ধাক্কায় বুঝতে পারলাম না। পরক্ষনেই বুঝলাম এটা পূর্ণ সূর্য্যগ্রহন। একেবারে গাঢ় অন্ধকার। আশপাশের মানুষও ভালো দেখা যাচ্ছিলো না। আকাশের দিকে আমরা তাকিয়ে ছিলাম। প্রায় ৩/৪ মিনিট হবে এরকম ছিলো। তারপর আস্তে আস্তে অন্ধকার সরে গেল এবং আলো বের হল। সে এক অসাধারন দৃশ্য ছিলো। বেশী ভালো লাগল তাই অসহ্য হয়ে চলে আসলাম।
খানিক পর আবার গেলাম পার্কে, দেখী তখনও অনেক লোক সমাগম। এরপর গেলাম ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি। এরা সূর্য্যগ্রহন উপলক্ষ্যে মেলার আয়োজন করেছে ৩দিনের। এখানে এক চক্কর দিয়ে গেলাম বাজার নামক হালাল স্টোরে। প্রথমবারের মত ইরানী খেজুর এসেছে। খুব দারুন। আরও কিছু টুকটাক জিনিস কিনলাম। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা। এদের আছে আল জাবাল নামক মধ্যপ্রাচ্যের রেস্টুরেন্ট। ভেজার গোস্তের নানান আয়োজন। লোভে শেষ হয়ে গেলাম, তখন মনে হল এভারগ্রীনে খেলে আরও বেশী খেতে পারব কারন তারা বুফে লাঞ্চ করায়। গেলাম এভারগ্রীনে। দেখী আজ তারা ভেড়া রান্না করেনি,,,,,ওরে সর্বনাশ ! অতি লোভে তাতী নষ্ট। মনের দু:খে চলে আসলাম বাসায়। এসে ডিম ভেজে ডাল দিয়ে টানলাম। বিশাল এক তরমুজ কিনেছিলাম....সেটা চলমান রয়েছে...
বিষয়: বিবিধ
৯২০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চারপাশ বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছিল । পাখিরা নিড়ে ফিরে যাবার মত উড়ো উড়ি করছিল। এক্সরে ফিল্মের ভেতর দিয়ে তাকাতে হচ্ছিল সূর্যগ্রহন দেখার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন