হযরত মূসা(আঃ) এর কাহিনী থেকে যা বুঝলাম
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৫ এপ্রিল, ২০১৫, ১০:৫৮:০৬ রাত
পিস টিভিতে একটা অনুষ্ঠান দেখছিলাম,সেখানে ৪ জন বিশিষ্ট আলিম হযরত মূসা(আঃ)এর একটি কাহিনী বর্ণনা করছিলেন হাদীস অনুসারে।
মূসা(আঃ)এর একটি বৈশিষ্ট্য আল্লাহ দান করেছিলেন যে, যারাই তাকে দেখত তার প্রতি মায়া জন্ম হত। একইভাবে ভাসমান সিন্দুক খুলে যখন ফিরআউনের স্ত্রী আছিয়া তাকে দেখলেন,তিনি মায়ায় পড়ে গেলেন। আছিয়া ছিলেন আমাদের জানা ইতিহাসের অন্যতম সেরা একজন মুমিনা,যাকে আল্লাহ সম্মানিতা করেছেন। ফিরাউনের স্ত্রী হয়েও তিনি আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দী ছিলেন।
মূসা(আঃ) ফীরআউনের প্রাসাদে লালিতপালিত হলেও তিনি ফিরআউনের চিন্তা চেতনা দ্বারা অনুপ্রানিত হননি। এখানে এই বিষয়টি পরিষ্কার বোঝা যায় যে-আমরা যদি কারো আশ্রিত হই,অন্যের দয়ায় বেড়ে উঠি,তাহলে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে। তাকে খুশী করতে হবে,তাকে সার্ভিস দিতে হবে। অনুরূপ দয়ালু আচরণ তার সাথে করতে হবে। কিন্তু যদি তিনি আল্লাহ বিরুদ্ধ পথে পরিচালিত হবার কথা বলেন,সেটা মোটেও মানা জাবেনা। মূসা(আঃ)এর ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটেছিল। তিনি যখন নুবয়্যত পেলেন,তখন আল্লাহ তাকে ফিরআউনের সামনে গিয়ে দ্বীন প্রচারের কথা বলতে আদেশ করেন এবং তিনি তা পালন করেন। আল্লাহর আদেশ মানার ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে। তবেই আল্লাহ আমাদেরকে সেরা মুত্তাকীদের কাতারে সামিল করবেন।
একদা দুপুরে যখন সকলে বিশ্রাম গ্রহন করছিল,সেসময় মূসা(আঃ)শহরে ঘুরছিলেন আর তিনি দেখলেন একজন লোক আরেকজন লোককে অত্যাচার করছে। সে লোকটি মূসার(আঃ) সাহায্য চাইলো আর মূসা(আঃ) অসৎ কাজের নিষেধ করতে মজলুমের পক্ষ নিলেন। তিনি অত্যাচারী লোকটিকে থাপ্পড় মারলেন কিন্তু সেটা এতটাই ভারী থাপ্পড় ছিল যে লোকটি মারা যায়। মূলত এই লোকটি ছিল শহরের দারোগা,যিনি ফিরআউনের লোক। এরপর মূসা(আঃ)চলে আসলেন। প্রথমে তিনি বুঝতে পারেননি যে লোকটি মারা গেছে। আর হত্যার নিয়তেও তিনি সেটা করেননি। তাই তিনিহত্যার অপরাধে অপরাধী হওয়ার যোগ্য নন। কিন্তু ফিরআউনের লোকেরা হত্যাকারীকে খোজার চেষ্টা করতে লাগল। তবে তাকে কোনোভাবেই পেলনা।(আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল-সম্ভবত মূসা (আঃ) থাপ্পর দিলেন এবং লোকটি পড়ে গেল,তিনি হয়ত ভেবেছিলেন সে অজ্ঞান হয়ে গেছে। আর তিনি বাড়ি ফিরে আসলেন। এটাকে তিনি সম্ভবত গুরুত্ব দেননি আর তাই দ্বিতীয় দিনও তিনি শহরে ঘুরছিলেন। মূসা(আঃ) আবারও দেখলেন পূর্বের দিনে যাকে তিনি উদ্ধার করেছেন সেই লোকটিই আবারও অন্যের সাথে মারামারি করছে। তখন মূসা(আঃ) বললেন,তুমি তো দেখী আসলেই একজন ঝগড়াবাজ লোক ! তোমার তো শিক্ষা হওয়া দরকার। কিন্তু মূসা(আঃ) আবারও এই লোকটিকে বাচানোর জন্যে তাদের কাে গেলেন। আর সেই লোকটি ভাবল মূসা(আঃ) তাকে শায়েস্তা করতে আসছে। এই ভুল বোঝার কারনে সে চিৎকার করে বলতে থাকল, তুমি মানুষকে মেরে শহরের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাও ! তোমার চাল আমি বুঝি,তোমার বাড় বেড়েছে। সেদিন একজনকে হত্যা করেছো,আর আজ আমাকে মারতে আসছ,দাড়াও তোমার দেখাচ্ছি ...
সেই লোকটিই ফিরআউনের লোকেদের বলে দেয় যে মূসাই উক্ত দারোগাকে হত্যা করেছে। ফিরআউনের সভাসদবর্গকে নিয়ে ফিরআউন বসেন এবং সিদ্ধান্ত নেন মূসাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হবে। সেখানে হযরত মূসার একজন কঙ্গলকামী লোক ছিল। তিনি মূসাকে ঘটনা গোপনে অবহিত করেন এবং বলেন দ্রুত পালিয়ে যেতে। তিনিই পালানোর রাস্তা দেখান।
মূসা(আঃ)অআল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন এবং মাদায়েনের দিকে চলে গেলেন। তিনি ছিলেন তখন যুবক। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে তিনি মাদয়েনের একটি এলাকায় আসেন। সেখানে দেখেন কিছু রাখাল তাদের বকরীগুলোকে কুয়া থেকে পানি তুলে পানি পান করালো আর কূয়ার উপর বড় সাইজের একটি পাথর কয়েকজন মিলে চাপিয়ে রেখে চলে গেল। একপাশে মার্জিত পোষাকে ৩ তরুনীকে দেখলেন খালি মশক নিয়ে দাড়িয়ে আছেন।
তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন আপনারা কেন অপেক্ষা করছেন ? তারা বলল-আমাদের পিতা বৃদ্ধ এবং আমাদের কোনো ভাই নেই, তাই বাধ্য হয়েই আমরা পানি নিতে এসেছি কিন্তু রাখালরা ভারী পাথর চাপিয়ে চলে গেল,যাতে কেউ এখান থেকে পানি তুলতে না পারে।
মূসা(আঃ) তার শারীরিক শক্তির জন্যে বিখ্যাত ছিলেন। তিনি একাই সেই ভারী পাথরখন্ডকে সরিয়ে ফেললেন এবং তাদেরকে পানি তুলে দিলেন অথবা তাদেরকে সুযোগ করে দিলেন। এরপর তিনি আড়ালে চলে যান।
মূসা(আঃ) ৩ জন সুন্দরী মেয়েকে নির্জনে পেলেন এরপর মেয়েগুলো তার কথা,আচরন,তার অবনত দৃষ্টি,ব্যক্তিত্ব এসব অবলোকন করলেন। তারা ফীরে গেল এবং তাদের পিতাকে সবকিছু অবহিত করল। এবং এটাও বলল যে, লোকটাকে গরিব মনে হয়,আপনি তাকে যদি আপনার কাজে নিয়োগ দেন সেটা মঙ্গলজনক হয়। তিনি শক্তিশালী আবার বিশ্বস্ত এবং চরিত্রবান বলেই মনে হয়েছে। তখন তাদের পিতা মূসা(আঃ)কে ডেকে আনতে পাঠান।
মূসা(আঃ) যখন মেয়েগুলোর সাথে হাটছিলেন,তখন তারা ছিল সামনে,কারন তারা রাস্তা চিনে। কিন্তু মূসা(আঃ) বললেন, আপনাদের পাশের নীচের অংশ আমার গোচরিভূত হচ্ছে,ফলে আপনারা আমার পেছনে আসুন আর আমাকে বলুন কোনদিকে হাটতে হবে। এভাবে তিনি তাদের বাড়িতে পৌছলেন।
টিভিতে ঘটনা এই পর্যন্তই শুনলাম। এখান থেকে যে সকল শিক্ষা আমরা পাই তা হল:
১. আল্লাহ বলেছেন,তিনি তার কাজ কখনও কখনও কাফিরকে দিয়েও করিয়ে নেন। ফিরআউনের ঘরে মূসা(আঃ)কে পাঠিয়ে তিনি তাই দেখালেন।
২. কারো অবদানে কৃতজ্ঞ থাকা যায়, বা অবশ্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাম করতে হবে, কিন্তু সেটার সীমা রয়েছে। সেটা যদি আল্লাহর আদেশের বিপরীত হয়,তবে পালন করা যাবেনা, যদিও মনিব অসন্তুষ্ট হয়। রসূল(সাঃ)এমনটিই বলেছেন অমুসলিম পিতা-মাতার ক্ষেত্রে।
৩. অত্যাচারিতের সাহায্য করতে হবে। যালিমের যুলুমের প্রতিবাদ,প্রতিরোধ করতে হবে। রসূল(সাঃ)বলেন-"শ্রেষ্ঠ জিহাদ হল যালিম শাসকের সামনে দাড়িয়ে হক কথা বলা"-(রেফারেন্স সহি কিন্তু কিতাবের কথা মনে নেই), তিনি(সাঃ)বলেন-তোমার ভাইকে সহযোগীতা করো সে অত্যারিত হোক,অথবা অত্যাচারী। জিজ্ঞেস করা হল অত্যাচারীকে আবার কিভাবে সাহায় করব ? তিনি(সাঃ)বললেন-তাকে অত্যাচার করতে না দিয়ে-(সম্ভবত বুখারী) মূসা(আঃ) একাজটি করেছেন। রসূল(সাঃ) বলেন-অন্যায় দেখলে হাত দিয়ে প্রতিহত করো, না পারলে মুখ দিয়ে,তাও না পারলে অন্তরে ঘৃনা করো,তবে এর নীচে ঈমানের আর শরিষা পরিমান স্থানও নেই-(মুসলিম)।
৪. পর্দা। এটা এমন যে মানুষ আল্লাহর বিধান অনুসারে নিজেদেরকে ঢেকে রাখবে। আর নিজেদের(নারী ও পুরুষ) দৃষ্টিশক্তি ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে। হযরত মূসার(আঃ) আচরন ছিল এরকম। তিনি নারীদের প্রয়োজন মেটালেন কিন্তু শরিয়তের গন্ডির মধ্যে অবস্থান করলেন। যদিও তখন পর্যন্ত তিনি নবুয়্যত পাননি,তবুও আল্লাহ তাকে তার মায়ের মাধ্যমে এবং কখনও স্বয়ং সাহায্য করেছেন।
আল-কুরআনে যেসব কাহিনী আল্লাহ আমাদেরকে শুনিয়েছেন, সেসব নিছক কোনো গল্প নয়। সেববের মধ্যে আমাদের জন্যে আদেশ,উপদেশ রয়েছে। এটা অনুধাবনেই কল্যান। মূলত উদাহরনস্বরূপ সেসব আমাদেরকে জানিয়েছেন। জ্ঞানীরাই উপদেশ গ্রহন করে। কুরআনের অনেক স্থানে আল্লাহ বলেছেন..তোমরা কি দেখো না ! তোমরা কি বোঝোনা ! তোমরা কি চিন্তা করোনা !!!
বিষয়: বিবিধ
২৭৬৬ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা যদি এই শিক্ষা পেতাম তাহলে চাকরি বা সামান্য টাকা সাহাজ্য পাওয়ার কৃতজ্ঞতায় বারবার জেনেশুনে মুনাফিকদের নির্বাচিত করতাম না।
ফেরাউনরা ছিল কিবতী সম্প্রদায়ের । এই পূর্বাভাসের পর তারা বনী ইসরায়েলের পুত্র সন্তানদের মেরে ফেলতো এবং কন্যাদের জীবিত রাখতো ।
আল্লাহ নির্দেশে মুসা (আঃ) এর মা তাকে একটি সিন্দুকে ভরে নদীতে ফেলে দেন এবং তার বোনকে সেটার অনুসরন করতে বলেন । সিন্দুকটা গিয়ে ভিড়ে ফেরাউনের প্রাসাদের ঘাটে ।
নব্যুয়ত পাবার সময় মুসা (আঃ) আল্লাহকে অনুরোধ করেছিলেন তার সাথে তার ভাই হারুনকেও যেন নবী করে দুজনকে একসাথে ফেরাউনের কাছে পাঠানো হয় কারণ হারুন (আঃ) বাগ্মী ছিলেন এবং মুসা (আঃ) এর জিহ্বায় আড়ষ্টতা ছিল । শিশুকালে কোলে থাকার সময় মুসা (আঃ) ফেরাউনের দাড়ি ধরে টান দেওয়ায় ফেরাউন নাকি তার জিহবা পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল (তাফসীরে দেখেছি)।
ছোট মুসা (আঃ)কে কি কারণে ফেরাউনের প্রাসাদ হতে বের হয়ে আসতে হয়েছিল যেখানে ফেরাউনের স্ত্রী তাকে পুত্রবত লালন পালন করে আসছিলেন ?
আপন উপরে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা সঠিক। তবে মূসার(আঃ) জিহবা পোড়ার ব্যাপারে যেটা শুনেছিলাম তা হল, ছোটবেলায় তিনি আগুন মুখে পুরে দিয়েছিলেন ভুল করে...এ বিষয়ে আমি এখনও হাদীস পড়িনি অথবা ভুলে গেছি
চমৎকার লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
অসাধারন লিখবার জন্য অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন