দেশপ্রেম ঈমানের অংগ !!!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৬ জুন, ২০১৪, ১১:১২:৫১ রাত
(আমরা অনেক সময় এভাবে এদের মত বুঝি,আমাদের কর্মকান্ড এটাই বলে)
আর আমি যেসকল জাল হাদীস দেখেছি সেটার অনেকাংশই আমাদের মৌলিকত্ত্বে আঘাত করেনা, তবে কিছু কিছু জাল হাদীস মারাত্মক। সাধারণ মানের বানোয়াট হাদীস কেউ না বুঝে বিশ্বাস করলেও তেমন কিছু এসে যায় না(বানোয়াট হাদীস জানার সাথে সাথে পরিত্যাগ করতে হবে),তবে জ্ঞান অর্জন করা ফরজ,আমাদেরকে সাবধানী হতে হবে। জ্ঞানী ব্যক্তিদের ওপর দায়িত্ব,তারা সত্য অনুসন্ধান করবে তাদের সাধ্য মত। কিন্তু কোনো হাদীসকে জাল হিসেবে পাওয়ার পর তা অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে।
একটি বহুল প্রচলিত জাল হাদীস উল্লেখ করছি-“ সুদূর চীন দেশে হলেও বিদ্যা অর্জন করতে যাও” আরেকটি বহুল প্রচলিত জাল হাদীস হল-“দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।” প্রথম জাল হাদীসটি কেউ না জেনে বিশ্বাস করলে কিছু এসে যায় না, কিন্তু দ্বিতীয়টি গ্রহণ করলে ঈমানের ক্ষেত্রে ব্যপক গড়বড় দেখা দিতে পারে।
প্রথম জাল হাদীসটি-“ সুদূর চীন দেশে হলেও বিদ্যা অর্জন করতে যাও” সম্পর্কে মুহাদ্দীস আল্লামা শাওকানী(রহ বলেন-এই হাদীসটি মুহাদ্দীস উকাইলী(রহ এবং মুহাদ্দীস ইবনে আদী(রহ কর্তৃক হযরত আনাস(রাএর সূত্রে মারফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। শাওকানী(রহ বলেন-এই হাদীসটি সম্পর্কে মুহাদ্দীস ইবনে হিব্বান বলেন এটি একটি বানোয়াট হাদীস,এর কোনো ভিত্তি নেই। এই হাদীসের সনদে আতেকা নামক একজন মুনকারুল হাদীস বা হাদীস শাস্ত্রের অগ্রহনযোগ্য ব্যক্তি রয়েছে। আল্লামা ইবনুল জওজী(রহ তার ‘মওযুআতে’ বা জাল হাদীসের কিতাবে এই হাদীসটি অন্তর্ভূক্ত করেছেন। ইমাম আযযাহাবী(রহতার ‘তালখীছুল ওয়াহিয়াহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে,এই হাদীসটি অনেক সনদে বর্ণিত হয়েছে,যার কিছু অংশ গ্রহনযোগ্য আর কিছু অংশ অগ্রহনযোগ্য। হাদীসটির দুটি অংশ রয়েছে। একটি হল বিদ্যা অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ,আরেক অংশ হল চীন দেশে গিয়ে বিদ্যা অর্জন। এই হাদীসে চীন দেশ সংক্রান্ত প্রতিটি সনদই মওযু বা অগ্রহনযোগ্য। আর বিদ্যা অর্জনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপের বিষয়টি সত্য।
(কাশফুলখফা-১/১৫৪,কিতাবুল মাওযুআত-১৫৪,আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুআ-২৭২)
আর ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’ সু-মধুর বাক্যটি সম্পর্কে মুহাদ্দীস আল্লামা ইসমাইল অললুনী উল্লেখ করেছেন যে-ইমাম সাগানী(রহ বলেন যে,এটি একটি বানোয়াট উক্তি,হাদীস নয়। এ সম্পর্কে মুল্লা আলী কারী(রহ বলেন হাফেজুল হাদীসগনের কাছে এই হাদীসটির কোনো ভিত্তি নেই। আল মাওযুয়াতুল কুবরা গ্রন্থে তিনি উল্লেখ করেছেন যে-হাদীস শাস্ত্রের প্রখ্যাত পন্ডিত মুহাদ্দীস যারকানী(রহ বলেন আমি এই হাদীসটি সম্পর্কে অবগত নই। আর মুহাদ্দীস মুঈনুদ্দিন(রহ বলেন এটি কোনো হাদীস নয়,বরং পূর্ববর্তী কোনো মনীষীর উক্তি। আল মাকাসিদুল হাসানাহ-১৮৯,কাশফুলখফা ১/৪১৩,আল মাসনু-৯১)
আসলে হাদীসটির আধুনিক সূত্র হল লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফী। দেশবাসীর ব্যপক আনুগত্য দরকার হলে তার ভাড়াকরা বুদ্ধিজীবীরা দেশপ্রেমের ওপর পত্রিকায় একটি কলাম লিখেছিল এবং পুরোনো এই বাক্যটি বিবৃত করেছিল। বিষয়টি এতটা ব্যপকভাবে প্রচার করা হয় যে সাধারণ মানুষ এটাকে হাদীস হিসেবে গ্রহণ করে। তিনি নিজে উঁচু দরের কমিউনিস্ট হলেও হাদীসের নামে ফায়দা তুলতে কার্পণ্য করেননি। রসূল(সাঃ) সকল গোত্রগত,বংশগত,অঞ্চলগত,বর্ণগত,ভাষাগত জাতিয়তাবাদকে মানুষের চিন্তা ও সমাজ থেকে ধবংশ করে এক উম্মাহর চিন্তা সরবরাহ ও প্রতিষ্ঠা করেছেন। ফলে এসকল ক্ষুদ্র উপাদানে মুসলিম যদি নিজেকে উদ্বুুদ্ধ করে; তাহলে সে আবারও ইসলামপূর্ব জাহেলিয়াতে ফিরে গেল, যেখানে এসবের ভিত্তিতে আবেগ অনুভূতি নির্ণিত হত।
রসূল(সাঃ) বলেন-“যে ব্যক্তি জাতীয়তাবাদের দিকে ডাকে ,সে আমার উম্মত নয়”-(আবু দাউদ,নাসাঈ,রিয়াদুস-সালেহিন) “...এবং সতর্ক থাক গোত্রগত জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখেন।”-(আল-কুরআন,৪ঃ১)
তবে কেউ কোনো ভূখন্ডে বসবাস করলে; সেখানকার আবহাওয়া জলবায়ু,মানুষকে তার ভাল লাগবে এটা স্বাভাবিক এবং এ কারনে কোনো অঞ্চলকে ভাল লাগতে পারে। এই দূর্বলতা বা ভালবাসা অন্যায় নয়। কিন্তু এই ভাললাগা,ভালবাসা বা দূর্বলতার ভিত্তিতে বিচার ফয়সালা করা,আবেগ সৃষ্টি করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া চরমভাবে নিষিদ্ধ। এই দূর্বলতাটাকে আদর্শের ভিত্তি বানানো যাবে না। রসূল(সা মক্কা থেকে মদীনায় হিযরতের সময় বারবার পেছনের দিকে তাকাচ্ছিলেন, তার প্রিয় মক্কা নগরীকে দেখছিলেন। মক্কায় জন্মানো এবং সেখানে বেড়ে ওঠার কারনে মক্কার প্রতি তার স্বাভাবিক টান ছিল বা আবেগ-ভালবাসা ছিল। কিন্তু তিনি এই ভূখন্ডগত অনুভূতীর ভিত্তিতে তার উম্মতকে পরিচালিত করেননি বা আদেরকে ঐক্যবদ্ধ করেননি। ওটা ব্যক্তির একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়,যাতে সে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। খ্যাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারটিও তাই। এগুলি তার মধ্যে ভাল লাগার অনুভূতী সৃষ্টি করে। পুরোনো অভ্যাসের ব্যাপারটি মনে করিয়ে দেয়,তাতে সে মানুষিক সুখ অনুভব করে। এ বিষয়গুলিতে একের সাথে অন্যের বিস্তর পার্থক্য থাকতে পারে। রসূল(সা আল্লাহর বিধান দ্বারা এসকল জাতিয়তাবাদী আদর্শ ধবংশ করে দিয়েছেন,যাতে তার উম্মত এগুলোর ওপর নির্ভর করে নিজেরা মানুষিক ও আদর্শগতভাবে বিভক্ত না হয়ে পড়ে।
জাতিয়তাবাদী আদর্শ থেকে অন্যরা সহজে আবেগ-অনুভূতীগতভাবে এবং পদ্ধতিগতভাবে পরিত্যাজ্য হয়। আর এই জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে নির্ণিত সিদ্ধান্তে ভুল হয় ,কারণ এখানে স্পষ্ট পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। ইসলাম আমাদেরকে চিন্তাগত ঐক্যের কথা শেখায়, যেটি হল জীবনাদর্শ এবং সারা বিশ্বে এটি এক। আর বিধানটি সকল মানুষের স্রষ্টার কাছ থেকে অবতীর্ণ হওয়ার কারনে সেটি সকলের ক্ষেত্রে সমান এবং একমাত্র সঠিক।
আমরা পৃথিবীর যে ইতিহাস পড়ি তা অনেকটা একতরফা। সেটি সত্য কিনা বা কতটুকু সত্য তা বিচারের কোনো রাস্তা খোলা নেই। কিন্তু আসমাউর রেজাল শাস্ত্র এমন একটি শাস্ত্র; যার প্রশংসা করেছে ইসলামের শত্রুরাও। বহু মনীষী স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন এর শ্রেষ্ঠত্বের কথা। জার্মানীর আরবী ভাষার পন্ডিত ডক্টর স্পেঙ্গর,যিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন এবং এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য থাকা কালে ইসাবা নামক গ্রন্থ প্রণয়ন করেন,সেখানে তিনি লেখেন- “ পৃথিবীতে অতীতে এমন কোনো জাতি ছিলনা,বর্তমানেও নেই,যারা মুসলিমদের রিজাল শাস্ত্রের ন্যায় একটি শাস্ত্র তৈরী করতে পেরেছে, যার সাহায্যে আজ আমরা অনায়াসে পাঁচ লক্ষ লোকের বাস্তব জীবনী অবগত হতে পারি।”
পৃথিবীর বহু সংখ্যক লেখক মহান আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসূল মুহাম্মদ(সাঃ) এর জীবনী লিখেছেন। এতটা ব্যপকভাবে পৃথিবীতে আর কোনো মানুষের জীবনী লিখিত হয়নি এবং পঠিত হয়নি। কোনো মহামানবের জীবনী এতটা ব্যপকভাবে অনুসৃতও হয়নি। পূর্বের সকল নবীকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করা হলেও মুহাম্মদ(সাঃ) কে গোটা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্যে আদর্শ হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে, যাতে সকল মতাদর্শের ওপর তার আনিত জীবন বিধান বিজয় অর্জন করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“তিনি সুস্পষ্ট বিধানসহ তার রাসূলকে প্রেরণ করেছেন, যাতে তা সকল বিধানের ওপর বিজয়ী হতে পারে,তা মুশরিকদের কাছে যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন।”-(আল-কুরআন,৬১: ৯)
ইসলাম নামক বিধানের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত (“হে মুহাম্মদ ! আমি আপনাকে সকল মানুষের হেদায়েতের জন্যেই প্রেরণ করেছি”-আল-কুরআন,সূরা সাবাহ:২৮,
“তিনি বরকতময়,যিনি স্বীয় বান্দা(রসূল সাঃ)এর প্রতি আল-কুরআন অবতীর্র্ণ করেছেন, যেন তিনি নিখিল বিশ্বকে সতর্ক করতে পারেন।”-আল-কুরআন,সূরা ফুরকান:১)।
রসূল(সা বলেন-“গোটা বিশ্বের মাখলুকের জন্যে আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে”-(মুসলিম)
“প্রত্যেক নবী প্রেরিত হয়েছেন শুধুমাত্র আপন সম্প্রদায়ের জন্যে,কিন্তু আমি প্রেরিত হয়েছি সকল জাতির মানুষের জন্যে।”-(বুখারী ও মুসলিম)
তিনিই সর্বশেষ নবী এবং রাসূল। তারপর আর কেউ নবীরূপে আবির্ভূত হবে না। তার মাধ্যমে নবুয়্যতের মিশন সু-সম্পন্ন হয়েছে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-“মুহাম্মদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নন,বরং তিনি আল্লাহর রসূল এবং সর্বশেষ নবী”-(আল-কুরআন,সূরা আহযাব: ৪০)
রসূল(সাঃ)বলেন-“আমার এবং অন্যান্য রসূলের উদাহরণ এইরূপ যে, কোনো একটি সুরম্য অট্টালিকা নির্মিত হল এবং মানুষ এর সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে থাকল এবং প্রশংসা করতে লাগল। কিন্তু এই সুরম্য অট্টালিকার এক কোনে একটি ইটের পরিমান স্থান শূণ্য দেখে তারা বলতে লাগল, আহা ! কতই না সুন্দর হত যদি এই ইটের পরিমান শূণ্যস্থান পূরণ হত ! অত:পর তিনি(সাঃ) বলেন- আমিই সেই শূণ্যস্থান পূরণস্বরূপ ইট খন্ড,আর আমিই সর্বশেষ নবী।” -(সহীহ বুখারী)
রসূল(সা বলেন- “নিশ্চয়ই রিসালাত ও নবুয়্যতের সূত্র বন্ধ হয়ে গেল,অনন্তর আমার পর আর কোনো রসূলও হবেন না, নবীও হবেন না।” -(আল-মুসনাদ-ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড,পৃ-২৪৮)
রসূল(সা বলেন- “আমার পরে আর কোনো নবীর আবির্ভাব হবে না”-(তিরমিযি)
“রসূলের(সাঃ) ওফাতে ওহী নাযিল হওয়ার রাস্তা চীরতরে বন্ধ হয়ে গেছে”- (সহিহ মুসলিম)
রসূল(সা বলেন- “...আমিই হলাম আকেব, আর ‘আকেব’ হল ঐ ব্যক্তি,যার পরে আর কোনো নবী নেই” -(বুখারী ও মুসলিম)
বিষয়: বিবিধ
৩৩২৭ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/8257/DORANTO/43892#.U6CAPZSSxJk
ছোটবেলা হতেই শুনে আসছি১৮ হাজার মাখলুকাত। তখন খটকা লাগলেও নিজের বুঝার ভুল মনে করতাম। কারণ বিজ্ঞান বইয়ে দেখতাম তার বিপরীত কথা।
মাত্র কিছুদিন আগে জানলাম- এ ধরণের কোনো যয়ীফ হাদীস পর্যন্ত নেই কোনো হাদীসের গ্রন্থে ।
বি:দ্র: আমি আমার নিজের কথা বলিনি, রেফারেন্স দেখেন।
Nationalism is a terrible fitna within Muslim Ummah - specially countries with Muslim majority. Nationalism costs trillions of dollars a year on Muslim nations together, enslaves million more Muslims, kills tens of thousands of Muslims. Still we are entertaining nationalism denying the facts available in the Quran and shah Hadith in the name of politics, hikmah, pragmatism etc.
Brothers with knowledge in Islam, history, politics, economics, defence should keep writing and debating on this issue as it is becoming so urgent under the new context of world politics.
Thank You indeed.
মন্তব্য করতে লগইন করুন