পৃথিবীতে নেতৃত্বের মাপকাঠি-একটি নৈতিক ও তাত্বিক গবেষনা।
লিখেছেন লিখেছেন ইসলাম_ ১১ মার্চ, ২০১৩, ০৩:৫৩:৪৬ দুপুর
এই লেখাটি যারা ইসলাম, সমসাময়িক রাজনীতি ও বিশ্বপরিস্হিতি নিয়ে চিন্তা করেন, তারা অবশ্যই পড়বেন।
আল্লাহতায়ালা সুরা আল আনফালে ইরশাদ করেছেন:
৬৫) হে নবী! মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করো৷ তোমাদের মধ্যে বিশজন সবরকারী থাকলে তার দুশ জনের ওপর বিজয়ী হবে৷ আর যদি এমনি ধরনের একশ জন থাকে তাহলে তারা সত্য অস্বীকারকারীদের মধ্যে থেকে এক হাজার জনের ওপর বিজয়ী হবে৷ কারণ তারা এমন এক ধরনের লোক যাদের বোধশক্তি নেই৷
৬৬) বেশ, এখন আল্লাহ তোমাদের বোঝা হালকা করে দিয়েছেন৷ এবং তিনি জেনেছেন যে এখনো তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে৷ কাজেই যদি তোমাদের মধ্যে একশ জন সবরকারী হয় তাহলে তারা দুশ জনের ওপর এবং এক হাজার লোক এমনি পর্যায়ের হলে তারা দুহাজারের ওপর আল্লাহর হুকুমে বিজয়ী হবে৷ আর আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন৷
এবার আসুন উপরের দুটি আয়াত ও নেতৃত্ব সম্পর্কে আল্লাহর নীতির সমন্বয়ে একটি সহজ ফর্মুলা আকারে লিখার চেস্টা করিঃ
নেতৃত্বের মাপকাঠি=মৌলিক মানবিক গুনাবলী x ( ইসলামী নৈতিক চরিত্র + পার্থিব উপায় উপাদান ও জড়শক্তি)
উপরের সুত্রে মৌলিক মানবিক গুনাবলীর মান সর্বোচ্চ এক এবং ইসলামী নৈতিক চরিত্রের মান দুই থেকে দশ পর্যন্ত হতে পারে।
এখানে মৌলিক মানবিক গুনাবলী বলতে ইচ্ছাশক্তি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ শক্তি, প্রবল বাসনা, উচ্চাশা ও নির্ভীক সাহস, সহিষ্ণুতা ও দৃঢ়তা তিতিক্ষা ও কৃচ্ছ্রসাধনা, বীরত্ব ও বীর্যবত্তা, সহনশীলতা ও পরিশ্রম প্রিয়তা, উদ্দেশ্যের আকর্ষণ এবং সে জন্য সবকিছুরই উৎসর্গ করার প্রবণতা, সতর্কতা, দূরদৃষ্টি ও অন্তরদৃষ্টি বোধশক্তি ও বিচার ক্ষমতা, পরিস্থিতি যাচাই করা এবং তদুনুযায়ী নিজেকে ঢেলে গঠন করা ও অনুকূল কর্মনীতি গ্রহণ করার যোগ্যতা নিজের হৃদয়াবেগ, ইচ্ছা বাসনা, স্বপ্ন সাধ ও উত্তেজনার সংযমশক্তি এবং অন্যান্য মানুষকে আকৃষ্ট করা, তাদের হৃদয়মনে প্রভাব বিস্তার করা ও তাদেরকে কাজে নিযুক্ত করার দুর্বার বিচক্ষণতা, আত্মসম্মান জ্ঞান, বদান্যতা, দয়া-অনুগ্রহ, সহানুভূতি, সুবিচার, নিরপেক্ষতা, ঔদার্য ও হৃদয়মনের প্রসারতা, বিশালতা, দৃষ্টির উদারতা, সত্যবাদিতা ও সত্যপ্রিয়তা, বিশ্বাসপরায়ণতা, ন্যায়-নিষ্ঠা, ওয়াদাপূর্ণ করা, বুদ্ধিমত্তা, সভ্যতা, ভব্যতা, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা এবং মন ও আত্মার সংযম শক্তি প্রভৃতি বুঝায়।
ইসলামী নৈতিকতা বলতে আমরা যা বুঝে থাকি, কুরআন ও হাদিসের শিক্ষানুযায়ী এর চারটি ক্রমিক পর্যায় রয়েছে। প্রথম ঈমান, দ্বিতীয় ইসলাম, তৃতীয় তাকওয়া এবং চতুর্থ ইহসান।
উপরের ফর্মুলার সাহায্যে দ্বন্দ-সংগ্রামে দুটি দল, জাতি বা দেশের মধ্যে যাদের নেতৃত্বের মাপকাঠির আনুপাতিক হার বেশী হবে, তারাই জয়ী হবে অর্থাৎ পৃথিবীতে নেতৃত্ব পাবে।
উপরের ফর্মুলা থেকে আরও একটা জিনিস স্পস্ট, মৌলিক মানবিক গুনাবলী শুন্য হলে নেতৃত্বের মাপকাঠি শুন্য হবে অর্থাৎ কোন সম্ভাবনা নেই, অন্যান্য উপাদানের পরিমান যতই বেশী হোক না কেন।
আবার মৌলিক মানবিক গুনাবলী ও ইসলামী নৈতিক চরিত্র পুর্নমাত্রায় থাকিলে, পার্থিব উপায় উপাদান ও জড়শক্তি কম থাকিলেও নেতৃত্বের সম্ভাবনা অসীম।
এবার আসুন আমরা ইতিহাসের সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনার চেস্টা করি:
আফগানিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ব:
এখানে রাশিয়ার ক্ষেত্রে ইসলামী নৈতিক চরিত্র শুন্য ছিল, মৌলিক মানবিক গুনাবলী একক থেকে অনেক কম এবং পার্থিব উপায় উপাদান ও জড়শক্তি তুলনামুলকভাবে বেশী ছিল।
অপরদিকে আফগানদের ছিল ইসলামী নৈতিক চরিত্র যার মান দুই থেকে দশের মাঝামাঝি, মৌলিক মানবিক গুনাবলীর মান রাশিয়ানদের তুলনায় বেশী। ফলে আফগানদের নেতৃত্বের মাপকাঠির আনুপাতিক হার রাশিয়ানদের তুলনায় বেশী হওয়ায় তারাই জয়ী হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্বে উভয়পক্ষে ইসলামী নৈতিক চরিত্রের কোন ভুমিকা ছিল না। মৌলিক মানবিক গুনাবলী পাকবাহিনীর শুন্যের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল(অন্যায়ের কারনে), পার্থিব উপায় উপাদান ও জড়শক্তির পরিমান উভয়পক্ষে খুব একটা পার্থ্ক্য ছিল না বিধায় পাকবাহিনী পরাজিত হয়।
ইরাক যুদ্বে সাদ্দাম হোসেনে বাথপার্টির ইসলামী নৈতিক চরিত্রের কোন ভুমিকা ছিল না , মৌলিক মানবিক গুনাবলী ছিল মাকিনীদের তুলনায় নিম্নে এবং পার্থিব উপায় উপাদান ও জড়শক্তি ছিল
মাকিনীদের তুলনায় কম যার ফলে তারা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।
লেবাননে হিজবুল্লাহর ইসরায়ীলদের তুলনায় পার্থিব উপায় উপাদান ও জড়শক্তি অনেক কম হওয়া সত্বেও মৌলিক মানবিক গুনাবলী ও ইসলামী নৈতিক চরিত্রের সমন্বয়ে বারবার ইসরাইলকে পরাজিত করেছে কারন ইহুদীদের ইসলামী নৈতিক চরিত্র শুন্য ও মৌলিক মানবিক গুনাবলী শুন্যের কাছাকাছি।
আগামী পর্বে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্হতি বিশ্লেষন করব ইনশাল্লাহ।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৮১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন