বনভোজন : দাওয়াতি কাজের উত্তম হাতিয়ার

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০১ মার্চ, ২০১৪, ১১:২১:২৩ রাত

বনভোজন,এই নামটা যখন ছোটকালে শুনতাম তখন মনে হত বনের মাঝে গিয়ে কিছু একটা খাওয়া দাওয়া করাকেই বনভোজন বলে। আসলে সত্যিকার অর্থে অনেকের বনভোজন মানেই সেই রকম কিছু একটা। তার প্রমানও পেলাম যখন একবার বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে কোন এক বনভোজনে গিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে বিরিয়ানী রোষ্ট রান্না করে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। যাত্রা পথে গাড়িতে মাইক লাগিয়ে উচ্চ আওয়াজে হিন্দি বাংলা ঝুমুর ঝুমুর গান বাজানো আর স্পটে গিয়ে দল বেধে ঘুরাঘুরি এবং দুপুরে একসাথে খাওয়া দাওয়া ছাড়া আর কিছুই দেখিনি। হিন্দি গানের ক্যাসেটই বেশি বাজতো এবং সম্ভবত এখনো বাজে।
বড়লেখা শহরের প্রাণকেন্দ্রে বাড়ি হওয়ার সুবাধে সারাদিনই শুনতে পেতাম হাওয়া হাওয়া ও হাওয়া, আই এম এ ডিস্কো ডান্সার আর ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়, ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায় মার্কা হিন্দি বাংলা গান গুলো। এখনো বাজে কেননা আমরা আগের থেকে এখন অনেক বেশি ডিজিটাল হয়েছি। আর এখনতো হিন্দি গানের ছড়াছড়ি। মাইকের উচ্চ আওয়াজ থেকে মসজিদ মাদ্রাসাও রক্ষা পায়না।
কিছুদিন পর শিবিরের উদ্যোগে এক বনভোজনে গিয়ে জানতে পারলাম এটা শুধু বনভোজন নয় এটা একটা শিক্ষা সফর। তাদের ব্যানারেও লেখা দেখলাম বনভোজনের যায়গায় শিক্ষা সফর। সে আরেক সমস্যা, মাথায় প্রশ্ন বনভোজনে গেলে আবার শিক্ষা অর্জন হয় কিভাবে ? দেখা যাক কিভাবে শিক্ষা অর্জন হয়। ছুটলাম তাদের সাথে। দেখলাম সফরটা শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্তই শিক্ষা। সব কিছুতে সুন্দর ডিসিপ্লিন। কি গাড়িতে উঠা,কি গাড়িতে থেকে নামা কোন ধাক্কা ধাক্কি নাই। প্রত্যেকে সুন্দরমত গাড়ির সীটে গিয়ে বসলো। খাবার নিয়ে নেই কোন টানাহেছড়া,মারামারি। সবাই যেন অন্যকে ভালোটা খাইয়ে তৃপ্তি পাবে। নামাজের সময় নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করা। খেলাধুলা সহ নানা রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন । যেখানে কুরআন হাদিসের বিষয়াদিও থাকে। থাকে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। পুরস্কার বিতরনি ও আলোচনা । আলোচনায় ফুটে উঠে আল্লাহর সৃষ্টি জগতের নানান দিক।
আমার মনে পড়ে, একবার আমাদের মাধবকুন্ড জলপ্রপাত পরিদর্শনে এসে শিবিরের এক কেন্দ্রীয় নেতা (সাবেক) বলেছিলেন, তার কাছে মনে হচ্ছে পুরো পাহাড়টি যেন আল্লাহর ভয়ে সদা কাঁদছে। অথচ আমরা সবাই মাধবকুন্ডে যাই আর পানির মধ্যে কিছুক্ষন ধাপাধাপি করে দিন শেষে বাড়ি ফিরি। ঐ নেতার বক্তব্য শুনার পর এখন কোথাও গেলে আমি আল্লাহর নিদর্শন দেখে কিছু শেখার চেষ্টা করি।
বলছিলাম,বনভোজন দাওয়াতি কাজের অন্যতম হাতিয়ার। হা, আমি এখন পর্যন্ত অসংখ্য জনকে পেয়েছি যারা শুধুমাত্র বনভোজন বা শিক্ষা সফরে গিয়ে ইসলামি আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। যারা বিভিন্ন সময়ে অন্যদের সাথে বনভোজনে গিয়ে তাদের পরিবেশ ও বিশৃংখলা দেখে এসেছেন তারা যখন কোন ইসলামি আন্দোলনের সাথে বনভোজনে যান তখন আন্দোলনের শৃংখলা ও সুন্দর আয়োজন দেখে তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে পরবর্তি সময়ে আন্দোলনে শরিক হবেন। যেখানে খাবার দাবার নিয়ে অহরহ মারামারি হয় সেখানে এধরনের বনভোজনে অন্যকে খাওয়ার প্রতিযোগিতা হয়। যাদেরকে এমনি এমনি সংগঠনের কোন প্রোগ্রামে আনা যায়না তাদেরকে বনভোজনের মাধ্যমে কাছাকাছি নিয়ে আসা যায় এবং তাদের অন্তরে ভালো মন্দ দুইটির রেখাপাত সৃষ্টি হয়।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুক খুলে দেখলাম ৩ হাজার মানুষ নিয়ে কাতারে বনভোজন হচ্ছে। আমার বিশ্বাস এই ৩ হাজারে অন্তত ১ হাজার হবে যারা আন্দোলনে হয়তো জড়িত নয়। কিন্তু আজকের এই বনভোজনের পর অনেকেই এই আন্দোলনে জড়িত হবেন এতে কোন সন্দেহ নেই, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বানী তোমরা আল্লাহর পথে মানুষকে ডাক বুদ্ধিমত্তা ও উত্তম ভাষনের মাধ্যমে। আর এই কাজটি যেন করছে ইসলামি আন্দোলন। তারা উত্তম ভাষনের পাশাপাশি এই ধরনের আয়োজন করে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছেন।
বিষয়: বিবিধ
১৮৩৪ বার পঠিত, ৩৯ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
ফেইস বুকে আধা শিক্ষিত মানুষের ইনবক্সে এই ম্যাসেজটি পাঠিয়েছেন আবু তাহের মিয়াজী। আশা করি প্যারিস থেকে আমি এ ব্যাপারে উনার বক্তব্য প্রদান করবেন।
আমি যে দেশে থাকি সেখানে এর অনেক ফল পেয়েছি। কিন্তু বর্তমানে পারছি না কড়াকড়ির কারণে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন