দুটি ভিন্ন ধরনের মৃত্যু কামনা

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:৫৭:১৭ রাত

এক

প্রত্যেকে তার নির্দিষ্ট সময়ে মৃত্যু বরন করবে।যখন কারো সেসময়টি উপস্হিত হবে তখন সে যত বড় শক্তির অধিকারি হোক না কেন মৃত্যু থেকে পালানোর কোন সুযোগ পাবেনা।পৃথিবীর অনেক ক্ষমতাধর যারা নিজেদের খোদা বলেও দাবি করেছে তাদেরকেও মরতে হয়েছে, তাদের ভাগ্যের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে সামান্য পরিমান সময়ও কেও দুনিয়াতে অতিরিক্ত থাকতে পারেন নি,কিয়ামত পর্যন্ত কেও পারবেনওনা।

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।
এই মহা সত্যকে আস্তিক-নাস্তিক সকলেই মেনে নিয়েছি।

আমাদের সমাজে অনেক সময়ই মানুষ দুটি পর্যায়ে অন্যের মৃত্যুর জন্য কামনা করে। এই মৃত্যু কামনায় একটার মধ্যে থাকে ভালোবাসা আর অন্যটায় থাকে ক্ষোভ-দুঃখ-জ্বালা যন্ত্রনা এমনকি নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ।সহজ প্রক্রিয়ায় নিস্তার পাওয়ার জন্য এই ফরিয়াদ জানানো হয় জীবন মৃত্যুর মালিক মহান আল্লাহর দরবারে।

আমার নানি যখন বয়সের ভারে ন্যুজ , শারিরিক সমস্যা লেগেই আছে, চলাফেরা একেবারে বন্ধ,বিচানা থেকে উঠার কোন সামান্যতম শক্তি তার মধ্যে নেই, খাওয়া দাওয়া-প্রস্রাব পায়খানা সব কিছুই যখন বিচানায়, তখন একদিন জানতে পারলাম, আমার মামারা তাদের মায়ের জন্য খতমে সিফা পড়িয়েছেন।উদ্দেশ্য আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের মাকে সালামতি দেন।যখন কাজ হলোনা তখন আমার মা খালারা তিনজন মিলে তারাও খতমে সিফা পড়িয়েছেন একই উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ তারা সকলেই চাচ্ছেন তাদের মাকে যেহেতু মরতেই হবে তখন এত কষ্ট না দিয়ে যেন আল্লাহ তায়ালা মৃত্যু দেন।

এই মৃত্যু কামনায় মহব্বত জড়িত।চোঁখের সামনে বয়স্ক মা-বাব মৃত্যু যন্ত্রনায় পড়ে থাকবেন,সন্তানের যখন আর কিছুই করার থাকেনা তখন তার দরবারে হাত তুলা ছাড়া আর কি করার আছে যার হাতে আমাদের জীবন মরন।সাধারনত কম বয়সী কেও যত বড় অসুস্হ্য হোক না কেন,কতদিন বাঁচবে ডাক্তাররা বলে দেয়ার পরও আমরা তার মৃত্যু কামনা না করে সুস্হ্যতার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি।কিন্তু বয়স যখন এমন একটা পর্যায়ে চলে যায় যেখানে আমরা খুব নিরুপায় সেখানেই সালামতির জন্য আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। এই মৃত্যু কামনা আমাদের সমাজে শুধু নয়,ভিন্ন সমাজেও পরিলক্ষিত হয়।তাই এটাকে বাঁকা চোঁখে দেখার কোন সুযোগ নেই।

যা দেখলাম আমাদের মিডিয়ায়।৩/৪ দিন আগে কোন এক মিডিয়ায় পড়লাম, গোলাম আযমের মৃত্যু কামনায় পরিবারের দোয়া। শিরোনাম দেখেই চোঁখ ছানাবড়া। এটা কিভাবে সম্ভব! পরিবার থেকে মৃত্যু কামনা করা হচ্ছে।যে মানুষটার সাথে লক্ষ কোটি ঈমানদ্ধারের হৃদয়ের সম্পর্ক, যে মানুষটার সুস্হ্যতা ও নিরাপদ জীবন কামনায় হাজার হাজার তরুন-যুবক-বৃদ্ধ রাতের পর রাত জেগে মনিবের দরবারে চোঁখের পানি ফেলছে, যে মানুষটার জন্য একাধারে বছরের পর বছর মানুষ নফল রোযা রাখছে, সেই মানুষটার মৃত্যু কামনায় পরিবারের দোয়া অনুষ্টান। শিরোনাম পড়ে ভিতরে ঢুকে জেনে নিলাম আসল রহস্যটা কি। দেখলাম, যা আমরা সচরাচর আমাদের প্রিয়জনদের জন্য করে থাকি ঠিক সেই কাজটাই গোলাম আযমের পরিবার করেছে।তখন বুঝতে পারলাম আমাদের মিডিয়া গুলোর হীন মানসিকতার এটা একটা প্রকাশমাত্র।

দুই

উপরে উল্লেখ করেছি যে মানুষ ক্ষোভ দুঃখ,জ্বালা যন্ত্রনা ও নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্যও অপর কারোও মৃত্যু কামনা করে থাকে। আমি আমার পাশের বাড়ির এক মহিলাকে বলতে শুনেছি,সে তার ছেলের জন্য মৃত্যু কামনা করছে।ছেলেটা তার কোন খোঁজ খবর রাখেনা, খাবার দাবার দেয়না, অযত্ন আর অবহেলায় থেকে থেকে তার মধ্যে একটা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তার কথায়।

অনেক সময় কারো মনে যখন প্রচন্ড দুঃখ বা জ্বালা যন্ত্রনা কাজ করে তখন সে নিজের মৃত্যু কামনা করে আবার যার দ্ধারা সে এই দুঃখ বা জ্বালা যন্ত্রনার মধ্যে পড়েছে তার জন্যও মৃত্যু কামনা করে। এই ধরনের মৃত্যু কামনা সামষ্টিক ভাবে হয়না, হয় ব্যক্তিকেন্দ্রিক।

আবার অনেক সময় সামষ্টিক ভাবে অন্যের মৃত্যু কামনা করা হয়ে থাকে। এটা হয় সাধারনত কোন ক্ষমতাধর মানুষের বেলায়। যখন কোন ক্ষমতাধর ব্যাক্তির দ্ধারা দেশের অনেক গুলো মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়, সেই মানুষটির সাথে সাধারণ মানুষের কিছুই করার থাকেনা, তখন মানুষ নীরবে নিভ্রিতে চোঁখের পানি ফেলে, মনিবের দরবারে ফরিয়াদ জানায়, নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্যে ঐ ক্ষমতাধর ব্যাক্তির মৃত্যু কামনা করে। মনে করে যেন ঐ একটি মাত্র মানুষের মৃত্যু হলে তারা নির্যাতন থেকে বেঁচে যাবে। অনেক সময় দেখেছি মসজিদে ইমাম সাহেবরা সকলকে সাথে নিয়েও মৃত্যু কামনা করে দোয়া করতে।

আমি ব্যাক্তিগত ভাবে এই মৃত্যু কামনাকে সমর্থন করিনা। আমাদের সকলের উচিৎ কারো মৃত্যু কামনা না করে তার নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানানো। আল্লাহই ফয়সালা করবেন, কিভাবে তিনি আমাদেরকে নির্যাতন থেকে মুক্তি দেবেন।

আপনারা দেখেছেন কিছুদিন আগে এক কলেজ শিক্ষক তার ফেসবুকে শেখ হাসিনার মৃত্যু কামনা করে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সাথে সাথে পুলিশ থাকে গ্রেফতার করেছে এবং তার ভাগ্যে যা ছিলো তা সে ভোগ করেছে। মৃত্যু কামনাটা এভাবে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার কারনে সে হয়তো অপরাধই করেছে। কিন্তু এ থেকে কি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর জন্য কোন শিক্ষা ছিলনা। কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌছলে মানুষ তার দেশের প্রধান মন্ত্রীর জন্য মৃত্যু কামনা করতে পারে। শুধুই কি ফেসবুকে মৃত্যু কামনা হচ্ছে ? অবশ্যই না। দেশের অসংখ্য মসজিদ মাদ্রাসায় এই দোয়া অহরহ হচ্ছে।পুলিশ দিয়ে কিছু মানুষের মুখ হয়তো বন্ধ করা যাবে, কিছু মানুষ হয়তো ফেসবুকে আর কোন ষ্ট্যাটাস দিবেনা, কিন্তু হাজার হাজার মানুষের অন্তরের কান্না ও মনিবের দরবারে রাতের আধাঁরে যে পানি ফেলা হয় তা কিভাবে রোধ করবেন ?

আওয়ামীলীগ বা বি এন পি করেন এমন মানুষের মুখেও শুনেছি, বলতেছে আল্লাহ কবে যে এই দুই নেত্রীর হাত থেকে আমাদের মুক্তি দিবেন।

বিষয়: রাজনীতি

৪৫৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File