ফ্যাশন হিজাব নাকি ইসলামী হিজাব!
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:২২:২৩ সন্ধ্যা
’ফ্যাশন হিজাব’ নামের নূতন একটা ট্রেন্ড চালু হয়ে গেছে আমাদের ফ্যাশন অঙ্গনে । দৃশ্যতঃ ধর্মীয় মূল্যবোধ পোষন করেন এমন মহলের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে ফ্যাশন হিজাবের প্রচলন হলেও মূলতঃ এটা আমাদের মা বোনদেরকে হিজাবের ইসলামী নিয়ম থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া এবং ফলশ্রুতিতে এই ফ্যাশন প্রচলনকারীদের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিরই বহিঃপ্রকাশ। দুঃখের বিষয় সমাজের জ্ঞানীদের চোখের সামনে দিয়েই ‘ফ্যাশন হিজাব’ ব্যাপারটি সবার অলক্ষ্যে চালু হয়ে গেছে আমাদের এই সমাজে। তবে হিজাব তো হিজাবই, হিজাবকে ফ্যাশন করে পালনের পেছনে আসলে যে কোন বরকত নেই,এবং তা যে আমাদের নারীজাতিকে আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়তের হিজাব পালনের নিয়ম কানুনের বিরোধিতা করেই চালু হয়ে যাওয়া একটা প্রচন্ড বেদাত তা আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে।
হিজাব মানেই হলো পর্দাপালন করা, নারীর নিজ শরীরের রূপ সৌন্দর্য্যকে পরপুরুষের দৃষ্টির আড়াল করে এমনভাবে রাখা যাতে তার শারিরীক স্পর্শকাতর অঙ্গের গঠন/মাপ, ফাইনারী এমনভাবে ঢাকতে হবে যাতে পরপুরুষ তাকে দেখে মনে কোন কুধারণা পোষন করতে না পারে, তার মনে কুপ্রবৃ্ত্তির বাসনা না জাগতে পারে।বলতে না পারে যে, ‘ইস এতো মোটা/চিকন, বা এত ফাইন, এত সেক্সী’।
কিন্তু তথাকথিত এই ফ্যাশন হিজাবের জ্বরে যারা আক্রান্ত, যারা এর বাজারজাতকরনের সাথে জড়িত বা যারা তা ব্যবহার করছেন, তারা ইসলামের হিজাব পালনের মূলনীতির কোন তোয়াক্কা করছেন না। ফ্যাশন করতে গিয়ে বোরখাকে তারা নানা রংয়ে, নানা ঢংয়ে কাটছাট করে এবং বডিটাইট করে বাজারজাত করছে এবং করছে সম্পূর্ণ দুনিয়াবী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মুনাফা লাভের আশায়, আর যারা এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ব্যবহার করছেন তাদের কেউ করছেন জ্ঞানের অপূর্ণতার কারণে, কেউ করছেন নিজেকে তার চারপাশের ইসলামী মনোভাবাপন্ন পরিবেশের সাথে যেনতন প্রকারে মানিয়ে নেবার আশায়। কিন্তু এতে যে তারা কাকের মতো নিজের পুচ্ছে ময়ুরের পুচ্ছ জুড়ে দিয়ে বৃথা ময়ুর হবার আনন্দে মত্ত তা কিছুতেই বুঝতে পারছেন না। এভাবে হিজাব করে তাঁরা অন্যদের যেমন বিপথগামী করছেন, তা করে নিজের পাপের ভার বৃদ্ধি করার সাথে সাথে অন্য যাদেরকে বিপথগামী করছেন তাদের কৃত অপরাধেরও পাপ নিজ স্কন্ধে তুলে নিচ্ছেন।
হিজাব সম্পর্কে কোন কোন পরিবারের বোধজ্ঞান কিংবা ধারণা আরো নিম্নমানের, আরো বিচিত্র প্রকৃতির। আমার পরিচিত এক পরিবারের উদাহরণ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। সলিম সাহেব (নিকনেম) বিয়ে করে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন। স্ত্রী পোশাকে আশাকে আর দশজন কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের মতোই, জামার সাথে পাজামা বা চুস্ত পাজামা, মাথায় কাপড় দেন না, বুকে নেই ওড়না, যেটা আছে দড়ির আকারে কাঁধের একপাশে ফেলে রাখার মত। কিছুদিন আগে তারা দেশে গেলেন বেড়াতে। ফেরত যখন আসলেন দেখি মহিলা তাঁর মাথায় বেশ ভালো করে স্কার্ফ বেঁধেছেন। জিনস্ এর প্যান্ট যা এখানে পরা ধরেছিলেন তা পরা ছেড়ে দিয়েছেন। সলিম সাহেবকে পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে বললেন তাঁর শ্বশুর তাঁর মেয়েকে জিনস পরতে দেখে ভীষন রেগে যান। বিদেশে গিয়ে পশ্চিমা কায়দা রপ্ত করানোর কারণে জামাই বাবাজীকে বেশ বকাঝকা করেছেন। জামাই বাবা প্রতিজ্ঞা করলেন যে আর জিনস প্যান্ট পরাবেন না স্ত্রীকে। আমরা সবাই মনে মনে খুশী হলাম যে যাক তাহলে এখন থেকে বৌকে হিজাব করাবেন।
গত উইক এন্ডে আমরা কয়েক পরিবার মিলে একটি সামার রিসর্ট ঘুরে আসলাম। সাথে আমাদের সলিম সাহেব ও তাঁর স্ত্রীও ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর পরনে ছিল মাথায় বাঁধা সুন্দর স্কার্ফ, বড়িটাইট ফুল হাতা জামা যা কোমর থেকেই কাটা আর শরীরের সাথে লেপ্টে থাকা এমন একটি চোস্ত পাজামা যাতে তাঁর স্পর্শকাতর অংশগুলো সামান্য বাতাসেই প্রকাশ হয়ে পড়ছিল। হাদীসে যাকে বলা হয়েছে কাপড় পরিধান করেও উলঙ্গ থাকা। মনে মনে প্রমাদ গণলাম এই ভেবে, জিনস প্যান্ট আর কি দোষ করেছিল, বরং সেটাতো মোটা মেটেরিয়াল হবার কারণে পরিধানকারীর শরীরে এতো কঠিনভাবে লেপ্টে থাকতোনা যে তার অঙ্গের ফাইনারী বিনা কোন স্পেশাল লেন্স ছাড়াই একেবারে স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো প্রকাশ করে দিচ্ছে।
মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদের মা-বোন কন্যাদেরকে ইসলামের সঠিক নিয়ম মেনে পর্দা পালন করার জ্ঞান এবং মন মানসিকতা প্রদান করেন। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
২৬৯৩ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কেউ বাজে নিয়ত করে, বোরকা পড়ে বেরুল, তাতে কল্যান নেই।
কেউ ভাল নিয়ত করল কিন্তু বোরকার অভাবে সাময়িক সাধারণ পোষাক পড়ে কাজ সাড়ল, তাতে কল্যান আছে।
কোন মহিলা আফগানের বোরকা গায়ে চড়িয়ে, মাথায় রাণী এলিজাবেতের হীরার টুপি পড়ল। মহিলাকে কেউ না দেখলেও সে গুনাহগার হবে কেননা সে চলমান পথিকের দৃষ্টিকে আকর্ষন করতে চেয়েছে।
কেউ হিজার পড়ে অফিসে যায়, রাস্তার মাস্তান যাতে চিনতে না পারে, সেটাতে নিরাপত্তা থাকলেও কল্যান নাই।
কোন মহিলা চিন্তা করল কোর্টের মত কিছু একটা পড়া হল, যাতে হিজাব ও কভার হল আবার আধুনিকতার মানদন্ড রক্ষা হল। দুইটা যারা রক্ষা করতে চায়, শয়তান তাদের খেলার বস্তু বানায়। কেননা শয়তান নতুন কিছু সৃষ্টি করে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার চেয়ে চলমান সংস্কৃতিকে ঘুরিয়ে দিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চায়।
তাই নিজের জন্য হিজাব দরকার, নিজেকে প্রকাশিত করার মানসিকতা আছে কিনা সেটার উপরই নির্ভর করে মানদন্ড। অনেক ধন্যবাদ
কেউ ভাল নিয়ত করল কিন্তু বোরকার অভাবে সাময়িক সাধারণ পোষাক পড়ে কাজ সাড়ল, তাতে কল্যান আছে।
কোন মহিলা আফগানের বোরকা গায়ে চড়িয়ে, মাথায় রাণী এলিজাবেতের হীরার টুপি পড়ল। মহিলাকে কেউ না দেখলেও সে গুনাহগার হবে কেননা সে চলমান পথিকের দৃষ্টিকে আকর্ষন করতে চেয়েছে।
কেউ হিজার পড়ে অফিসে যায়, রাস্তার মাস্তান যাতে চিনতে না পারে, সেটাতে নিরাপত্তা থাকলেও কল্যান নাই।"
ভাই আপনার উপরের তিনটি আলাদা মন্তব্য আরো ব্যাখ্যার দাবী রাখে। প্রথমটিতে খারাপ নিয়্যতের কথা বলে বোরখার ব্যবহারে কল্যাণ নেই, তো সেটা যার বদনিয়্যত তার সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু সমাজের তাতে কল্যাণ নেই কেন বুঝা গেলনা। দ্বিতীয় বাক্যে 'বোরখার অভাবের' কথা বলেছেন এবং সেটা সাময়িক বলেছেন, তাই কথাটায় আপাতদৃষ্টিতে দ্বিমত করতে পারছিনা। আফগান বোরখা আর তাজ ব্যবহার করা, সেটাও একপ্রকার ফ্যাশন হিজাবের আওতায় পড়ে, তাই এতে কল্যাণ নেই বলায় যুক্তি আছে। কিন্তু শেষ বাক্যটিও বোধগম্য হচ্ছেনা, এখানেও কথাটা ব্যাখ্যার দাবী রাখে। আশা করি মনোযোগ দিবেন।
কেউ ভাল নিয়ত করল কিন্তু বোরকার অভাবে সাময়িক সাধারণ পোষাক পড়ে কাজ সাড়ল, তাতে কল্যান আছে।
কোন মহিলা আফগানের বোরকা গায়ে চড়িয়ে, মাথায় রাণী এলিজাবেতের হীরার টুপি পড়ল। মহিলাকে কেউ না দেখলেও সে গুনাহগার হবে কেননা সে চলমান পথিকের দৃষ্টিকে আকর্ষন করতে চেয়েছে।
কেউ হিজার পড়ে অফিসে যায়, রাস্তার মাস্তান যাতে চিনতে না পারে, সেটাতে নিরাপত্তা থাকলেও কল্যান নাই।"
ভাই আপনার উপরের তিনটি আলাদা মন্তব্য আরো ব্যাখ্যার দাবী রাখে। প্রথমটিতে খারাপ নিয়্যতের কথা বলে বোরখার ব্যবহারে কল্যাণ নেই, তো সেটা যার বদনিয়্যত তার সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু সমাজের তাতে কল্যাণ নেই কেন বুঝা গেলনা। দ্বিতীয় বাক্যে 'বোরখার অভাবের' কথা বলেছেন এবং সেটা সাময়িক বলেছেন, তাই কথাটায় আপাতদৃষ্টিতে দ্বিমত করতে পারছিনা। আফগান বোরখা আর তাজ ব্যবহার করা, সেটাও একপ্রকার ফ্যাশন হিজাবের আওতায় পড়ে, তাই এতে কল্যাণ নেই বলায় যুক্তি আছে। কিন্তু শেষ বাক্যটিও বোধগম্য হচ্ছেনা, এখানেও কথাটা ব্যাখ্যার দাবী রাখে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন