সুবর্ণ জয়ন্তিতে মাসুদ রানা।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৬ মে, ২০১৬, ১০:১৪:৪৭ সকাল
মাসুদ রানা! বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয় এবং খানিকটা বিতর্কিত একটি নাম। জন্ম ১৯৬৬ সালে। জন্মের সময় থেকেই চির তরুন! পেশাঃ গুপ্তচর। সাবেক মেজর। কর্মস্থান- পাকিস্তান কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স দিয়ে শুরু এখন বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স। পাশাপাশি রানা এজেন্সি নামে সিকিউরিটি ও প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থার মালিক। যেটা বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এর একটি কাভার। দেশপ্রেমিক, মানবতাবাদি তরুন দের এক আদর্শ পুরুষ।
সেই সদ্য কৈশোরে "বড়দের বই" খেতাব পাওয়া মাসুদ রানা সিরিজের "মড়নখেলা" দিয়ে আমার মাসুদ রানার সাথে পরিচয়। লুকিয়ে পড়তে হয়নি অবশ্য কারন বাসায় বই পড়ার বিষয়ে বিশেষ রেষ্ট্রিকশন ছিলনা। এখনও পর্যন্ত রানা কে ছাড়তে পারিনি। কিছুদিন পরপর একটা রানা না পড়লে যেন ভাত হজম হয়না! ছোট থাকতে রানার দাম হতো ১৫-২০ টাকা। পুড়ান বই কিনতাম ৭-৮ টাকায়। এখন ৪৪৬ তম বই নীল রক্ত এর দাম পড়ল ১৮৬ টাকা। তবুও রানা পড়ার বিরাম নাই। আমার জন্মের একযুগ আগে জন্ম নিয়েও রানা এখনও জনপ্রিয় আমার পরবর্তি প্রজন্মের কাছেও।
মাসুদ রানা কে বাংলাদেশের পাঠক সমাজের কাছে নিয়ে আসেন শ্রদ্ধেহ কাজী আনোয়ার হোসেন। যিনি তার পাঠক সমাজের কাছে কাজীদা হিসেবেই পরিচিত। জাতিয় অধ্যাপক ডঃ কাজী মোতাহার হোসেন এর সুযোগ্য পুত্র কাজীদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাষ্টার্স ডিগ্রিধারি। ১৯৬৩ সালে তিনি সেগুনবাগান প্রকাশনি নামে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে তখনকার জনপ্রিয় সিরিজ দস্যু বনহুর এর আদলে সৃষ্টি করেন তার প্রথম রোমাঞ্চকর চরিত্র কুয়াশা কে। তারপর ১৯৬৬ সালে নতুন নায়ক রানার সৃষ্টি করেন "ধ্বংস পাহাড়" বইটির মাধ্যমে। এই বছর এই সিরিজ তার পঞ্চাশতম বর্ষে পা দিল।
সিরিজের ৪৪৭ টি বই এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি মেীলিক বই। বাকি বইগুলি বিদেশি বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার লেখক এর লেখা বই অবলম্বনে লিখিত। প্রথম দুটি বই "ধ্বংস পাহাড়" ও "ভারত নাট্যম" এর পর তৃত্বিয় বই "স্বর্নমৃগ" থেকে এই বিদেশি কাহিনি অনুসরনে বই শুরু হয়। "স্বর্নমৃগ" লিখা হয়েছিল বিখ্যাত জেমস বন্ড সিরিজের দুটি বই "অন হার ম্যাজেষ্টিস সিক্রেট সার্ভিস" এবং "গোল্ড ফিঙ্গার" এর অনুসরনে। কিন্তু বিদেশি কাহিনির প্লট ব্যবহার করলেও মাসুদ রানার চরিত্র এবং আচরন একান্তভাবে নিজস্ব। কোনভাবেই বিদেশি কাহিনিগুলির অনুবাদ নয় রানা।
প্রকাশনার পর থেকেই রানা কে বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে। অশ্লিলতার অভিযোগে আদালতের মুখোমুখি ও হতে হয়েছে রানাকে। বড়দের বই এই তকমা ছাড়াও আমাদের দেশের অনেকে এখনও এটা মনে করেন যে মাসুদ রানা তরুন প্রজন্মকে নষ্ট করছে! অশ্লিলতার অভিযোগ কিছু ক্ষেত্রে সত্যি সন্দেহ নাই। তবে তার জন্য এত বেশি অভিযোগ সত্য নয়। আর বড়দের বই সেটা কিছু বই এর ক্ষেত্রে প্রকাশক ও লেখক নিজেই স্বিকার করেছেন। কিন্তু কিশোর এর জন্য সেটা অনুপযুক্ত নয়। মাসুদ রানার বিরুদ্ধে অনেকের এই অভিযোগ যে সেখানে নাকি শিখার কিছুই নাই। এরা এটা বুঝতে চাননা যে বই ও একটা বিনোদন ও অবসর কাটানর মাধ্যম। বই পড়লেই শিখতে হবে এমন কোন কথা নাই।
সেবা প্রকাশনি ও তার মাসুদ রানা এই জন্য বিশেষ ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য যে তারা দেশের যুবসমাজের একটি বড় অংশকে দেশিয় বই এর প্রতি আকর্শিত করতে পেরেছে। আন্তর্জাতিক মানের এই রোমাঞ্চকর উপন্যাস গুলি ভারতিয় বই এর একছত্র আগ্রাসন থেকে এই দেশের প্রকাশনা কে রক্ষায় যথেষ্ট ভুমিকা রেখেছে। সেবা শুধু রানা নয় হেনরী রাইডার হ্যাগার্ড,জুলভার্ন, পিজি উডহাউস,আলেকজান্ডার দ্যুমা এর মত লেখক দের লেখা সহজ অনুবাদ এবং সল্প মুল্যে প্রকাশ করার মাধ্যমে আমাদের বাংলাভাষি পাঠকদের বিশ্ব সাহিত্যের একটা বড় অংশের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
দেশের স্বাধিনতা এবং রাজনৈতিক উত্থান-পতন এর মধ্যেও মাসুদ রানা প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে। এই বছর মাসুদ রানা তা সুবর্ন জয়ন্তি বর্ষে পা দিল। আর তিন-চার বছর এর মধ্যে অাশা করি রানা সিরিজ এর ৫০০ তম বই ও প্রকাশিত হবে। মাসুদ রানা যেন আরো অনেকদিন এই দেশের দেশপ্রেমিক তরুন দের মাঝে আশার আলো জ্বেলে রাখতে পারে সেই আশা করছি।
বিষয়: বিবিধ
২৪৬৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসল কথা হল আমরা এমন এক হুজুগে টাইপের জাতি যে, মূল ঘটনার চাইতে হইহুল্লোড বেশি করি। মানুষের কাছে শুনা কথা দিয়েও অন্যের সমালোচনা করি। যা একটি সমস্যার সমালোচনা করতে গিযে আরো ১০টি সমস্যার জন্ম দেওয়ার মত।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। কাজীদা একজন হলেও বাংলাদেশি নায়ক তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন সত্যিই এই তার সার্থকতা।
লেখাটা রেডি করে ফেলেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন