আমার ভোট আমি দিব, যাকে খুশি তাকেই ক্ষমতায় আনব!
লিখেছেন লিখেছেন ঘুম ভাঙাতে চাই ২২ মে, ২০১৫, ০৯:১৫:০৬ রাত
সময়টা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের। আমার আপি সকাল সকাল ভোট কেন্দ্র থেকে ফীরে এসে ফেসবুকে হতাশার একটা স্টাটাস দিল, "ভোট দিতে গিয়েছিলাম কিন্তু কেন্দ্রে গিয়ে বুঝলাম, সবই আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে গেছে, আমার ভোটের কোন মূল্য নেই কিন্তু যেহেতু অধিকার, তাই ছাড়িনি।"
আমি কমেন্ট করলাম, আপু তুমি ভোট দিলে কেন? এটা মোটেও ঠিক করনি।
আপু খুব রেগে গেল। আমাকে ইনবক্স করল, একদম চুপ কর। তুই ভাল করেই জানিস আমি আওয়ামী-বিএনপি-জামাত কাউকে ভোট দিতে যাইনি, ভাল একটা মানুষ আসুক তাই চাই। অলরেডি ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেছে আর যেভাবে পাপাচার বাড়ছে আল্লাহর আযাব আরো বাড়বে, আর আল্লাহর আযাব যেখানে শুরু হয় সেখানে মুমিন-মুশরিক কেউই তো রেহাই পায়না। তাই সমাজকে তওবার দিকে নিয়ে আসতে পারে এমন মানুষের নেতৃত্বে আসা খুব দরকার। তাই ভোট অবশ্যই দেয়া উচিত।
আমি: আপি! আচ্ছা তুমি ভোট দিয়ে আসলেই কাউকে ক্ষমতায় আনতে পারবে? গত ৪০ বছর যাবত মানুষ ভোট দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কেউ কি নিশ্চিত করে বলতে পারবে, "ক্ষমতা তাদের ভোটে পরিবর্তন হয়?" মানুষের এত ভোট কি কোন কিছু পরিবর্তন করতে পেরেছে? যারা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছে তারা মানুষকে খুব আকর্ষণীয়-লোভনীয় প্রতিশ্রুতিসমূহ দিচ্ছে যে, তারা রাতারাতি নির্বাচনী এলাকা স্বর্গে পরিণত করে ফেলবে। সে যদি একবার জয়ী হয়েই যায়, তবে মানুষ ঘুম থেকে উঠেই দেখবে "তাদের স্বপ্নপূরণ হয়ে গেছে।" মানুষও তা শুনছে-গিলছে নিজের মস্তিষ্ককে বিশ্বাস করানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যে, নেতারা যা বলছে সব সত্যি। কিন্তু বাস্তবতা হল, যারা প্রতিশ্রুতি প্রদান করছে ও যারা প্রতিশ্রুতি পাচ্ছে, উভয় পক্ষই খুব ভাল করে্ই জানে, সব কিছুই মিথ্যা। তবুও মানুষ মরিচিকার পেছনেই ছুটছে। তাহলে বল, এ অবস্হায় ভোট দিয়ে কি লাভ হবে?
আপু: তাহলে কি আমরা ফ্রিজ হয়ে যাব? আর চুপচাপ মানবসৃষ্ট দুর্ভোগ আর আসমানী দুর্যোগ পোহানোর জন্য বসে থাকব?
কথার মাঝে নটিফিকেশনে দেখলাম, আমার কমেন্টে কেউ একজন লাইক দিয়েছে, তিনি ছিলেন আয়েশা আকতার আপু (ফেসবুক সেলিব্রেটি, আহলে হাদিস মতাদর্শের প্রচারক), নীচে কমেন্টও করলেন, ইসলামে গণতন্ত্র ও নেতা নির্বাচন করার জন্য ভোট প্রদান হারাম।
এমন বেগতিক অবস্হায় আপু খুব রেগে আছেন। আমাকে বললেন, মোবাইলে কল দে তো, কথা আছে। আপুকে কল করলাম। আপু রিসিভ করে প্রথমেই আমার খোঁজ-খবর নিলেন অনেক বকা-ঝকা করলেন আমার পড়াশুনার বেহাল দশা আর পার্সোনাল লাইফের নানান সিদ্ধান্তের জন্য। এরপর শুরু করলেন আসল আলোচনা।
আচ্ছা! আমাকে গুছিয়ে বলতো ইসলামে ভোটের ব্যাপারে আসলেই কি বলা আছে??? তোরা বলিস হারাম, অন্যরা বলছে হালাল। তারাও তো দেখি ইসলামের ব্যাপারে ভাল জানে তাহলে কার কথা বিশ্বাস করব?
উত্তর দিলাম: কারো কথাই না, বরং ইসলামের কথাই গ্রহণ করে নাও, মানুষের মুখ আছে বলতে দাও।
আপু: আচ্ছা! ঠিক আছে ইসলামের কথাই বল। ভোটের ব্যাপারে ইসলামে কি বলা আছে?
বেশ কিছু সহীহ হাদিস চোখের সামনে পেলাম, আর সেগুলো পড়ে আমিও স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। যেন আল্লাহ নিজেই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, বোনকে বোঝাও।
শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবদূর রাহমান ইবনু সামূরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবদুর রাহমান! তুমি শাসন ক্ষমতা চাইবে না। কেননা, যদি তুমি তোমার চাওয়ার মাধ্যমে তা প্রাপ্ত হও, তবে তার দায়িত্ব তোমার উপর ন্যস্ত হবে। আর যদি তুমি চাওয়া ব্যতীত তা প্রাপ্ত হও, তবে এ ব্যাপারে তুমি (আল্লাহর তরফ থেকে) সাহায্য পাবে।( মুসলিম, হাদিস নং:৪৫৬৪, মান: সহীহ)
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) আমি এবং আমার দুই-চাচাত ভাই নাবী ﷺ - এর নিকট উপস্থিত হলাম। ঐ দুই ব্যক্তির একজন বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! মহান আল্লাহ আপনাকে যে সমস্ত রাজ্যের কর্তৃত্ব প্রদান করেছেন তার কিছু অংশে আমাদেরকে আমীর নিযুক্ত করুন। অপরজনও অনুরুপ বললো। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা এমন কাউকে নের্তৃত্বে আসীন করিনা, যে তার জন্য প্রার্থী হয় এবং যে তার জন্য লালায়িত হয়।( মুসলিম: ৪৫৬৬, মান: সহীহ)
শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) হাসান থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জনৈক সাহাবী আয়েব ইবনু আমর (রাঃ) একদা উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়ার (রহঃ)-এর কাছে গেলেন। তখন তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন, বৎস! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, নিকৃষ্টতম রাখাল হচ্ছে অত্যাচারী শাসক। তুমি তাদের অন্তর্তুক্ত হওয়া থেকে সাবধান থাকবে।( মুসলিম: ৪৫৮১, মান: সহীহ)
আমার কথাগুলো শুনে আপু কেমন জানি উদাস হতে শুরু করল। :(
আলোচনা লম্বা হতে শুরু করল। আপুকে ইসলামের সাথে গনতন্ত্রের দ্বন্দ, বর্তমান যুগ ও এর ফেৎনা সম্পর্কে হাদিসের ভবিষ্যৎবাণী, কোরানের ঘটনাপঞ্জি ইত্যাদি বলতে লাগলাম। গণতন্ত্র ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আমার লেখা কিছু ব্লগপোস্টের লিংকও Click this link
Click this link
দিলাম (তবে বলিনি এসব আমার লেখা কারণ, আপু ভয় পাবে, টেনশন করবে আমাকে নিয়ে। মানা করবে এসব নিয়ে লেখতে)
আপুকে বললাম, এবার তুমিই বল তোমাকে ভোট দিতে বলি কিভাবে? মুসনাদে আহমাদে বলা হয়েছে, এব্যাবস্হাও ভেঙ্গে পরবে এটা স্হায়ী না, সেখানে তা জীবিত রাখার জন্য ভোটের কি দরকার?এই হাদিসটা শোন,
ইরবায বিন সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ)বলেন, আর আমার পর তোমাদের কেউ জীবিত থাকলে সে বহূ (ইসলামে) মতভেদ দেখতে পাবে। তখন আমার সুন্নাহ এবং হেদায়াতপ্রাপ্ত (৩০ বছরের ৪জন খলিফা যথাক্রমে: আবূ বকর, উমার, উসমান ও আলী রাঃ) খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ অনুসরণ করা হবে তোমাদের অপরিহার্য কর্তব্য। এই সুন্নাহকে খুব মজবুত করে দাঁত দিয়ে চেপে ধরবে। আর দ্বীনে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, (দ্বীনে)প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত জিনিসই হচ্ছে বিদ'আত।আর প্রত্যেক বিদ'আতই ভ্রষ্টতা।(আহমাদ, আবু দাউদ ৪৬০৭, তিরমিজি ২৮১৫, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ১৬৫)
আপু উত্তর দিল: এটা তো তারাও জানে যারা গনতন্ত্রের পক্ষে বলছে, তাইনা? তারাও তো ইসলামের পক্ষেই কথা বলছে যদিও কিছু খারাপ দিকও আছে। আপুর কথার পরিপেক্ষিতে হটাৎ একটা হাদিসে চোখ আটকে গেল!
মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কল্যাণের বিষয়াদি জিজ্ঞাসা করত। কিন্তু আমি তাকে অকল্যাণের বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এ ভয়ে যে, অকল্যাণ আমাকে পেয়ে না বসে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা তো জাহিলিয়াতে ও অকল্যাণের মাঝে ছিলাম। এরপর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ কল্যাণের মধ্যে নিয়ে আসলেন। এ কল্যাণের পর আবারও কি অকল্যান আসবে? তিনি বললেনঃ হ্যা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সে অকল্যাণের পর আবার কি কোন কল্যাণ আসবে? তিনি বললেনঃ হ্যা। তবে এর মধ্যে কিছুটা ধূম্রাচ্ছনতা থাকবে। আমি প্রশ্ন করলাম, এর ধূম্রাচ্ছনতা কিরূপ? তিনি বললেনঃ তখন এমন একদল লোকের উদ্ভব হবে-যারা আমার প্রবর্তিত পদ্ধতি ছাড়া অন্য পদ্ধতি- অবলম্বন করবে, আমার প্রদর্শিত হেদায়েতের পথ ছেড়ে অন্যত্র হেদায়েত ও পথের দিশা খুঁজবে। তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ উভয়টিই থাকবে। তখন-আমি আরয করলাম, এ কল্যাণ পর কি কোন অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হ্যা! জাহান্নামের দরজার দিকে আহবানকারীদের উদ্ভব হবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে তাদেরকে তারা তাতে নিক্ষেপ করবে। আমি তখন বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাদের কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা আমাদের বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ তাদের বর্ণ বা ধরন-ধারণ হবে আমাদের মতো এবং তারা আমাদেরই ভাষায় কথা বলবে।( মুসলিম: ৪৬৩১, বুখারী: ৬৬০৫ অর্থাৎ এটি মুত্তাফাকুন আলাইহ)
অর্থাৎ হাদিসে মডারেট ইসলামকে ধুম্রাচ্ছন্ন হিসেবেই আখ্যা দেয়া হয়েছে যার মাঝে ভাল-খারাপ সব দিকই আছে।
আপুর কন্ঠের গতি ধীর হতে লাগল, ভারি গলায় বলল, আচ্ছা একটা কথা বলতে পারবি? আমরা কি ইসলামের বিজয় দেখে যেতে পারবো না?
#কথাটা শুনে আমিও স্তম্ভিত হয়ে গেলাম, গলাটা ভারী হয়ে উঠল, কাপা কাপা গলায় বললাম: আল্লাহ ভাল জানেন, তবে আমার মনে হয়না পারব! আর আপু, না দেখতে পারলেই কি? পরকালের বিজয়ই তো আসল বিজয় তাইনা?
আপু: হ্যা! তা ঠিক।
##আপুর কাছে যা গোপন করলাম তা হল, কিয়ামত পূর্ব সময়ে হাদিসে যেসব ভয়াবহ যুদ্ধ, ভূমিকম্প, সুনামির বর্ণনা দেয়া হয়েছে, সেসব পুরণ হবার পরে খুব সামান্য কিছু মুসলিমই টিকবে যারা ইসলামের বিজয় দেখে যাবার সৌভাগ্য অর্জন করবে। কিন্তু বোনকে তো সে ভয়ে রাখতে চাইনা।##
আপু বলল: অনেক সমস্যা নিয়ে তো কথা বললি, সমাধান কি?বললাম, শান্তি বজায় রাখাটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ, মানুষকে পাত্তা না দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামকে আকড়ে ধরাটাই কর্তব্য।
আপু বিরক্ত হয়ে বলল, সমাধান বল, লেকচার না।
উত্তর দিলাম: আপু তুমি জানো আমরা শুধু দুজনেই কথা বলছি তা না, বরং আমাদের সামান্য কথাগুলোকেও নিরাপত্তা ঝুকি হিসেবে বিবেচনা করে কেউ বসে বসে শুনছে আর রেকর্ড করছে?? আপু বলল, হ্যা! এখন তো আবার ইসলামের কথা বললেই জঙ্গি! আফসোস!! যদি শাসকরা ইসলামের কথাগুলো বুঝত তাহলে তারাও স্বস্হিতে থাকত আর আমরাও নিরাপত্তা পেতাম। আচ্ছা তোকে আর মোবাইলে বকবক করতে হবেনা বাসায় চলে আয় একদিন। আমি তো এখন বাসাতেই থাকি আর আম্মুও থাকে বাসায় কথা হবে তখন। বললাম, আচ্ছা দোয়া করো একদিন ইনশাআল্লাহ হাজির হয়ে যাব।
আপু: আচ্ছা রাখ এখন, মাথাটা ঘুরছে।
বিঃদ্রঃ লেখাকে পাঠকের হৃদয়গ্রাহী আর গুরুত্বপূর্ণ করার জন্য মূল আলোচনার অনেক কিছুই বিয়োগ করা হয়েছে আবার কিছু যোগ করা হয়েছে আশা করি ব্যাপারটিকে সহজভাবে গ্রহণ করবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৭ বার পঠিত, ৫২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লেখা অনেক ভাল হয়েছে আর ও বেশি বেশি লিখুন ।
গল্পকারে হলেও চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছো কথোপকথনটি! এভাবেই একজন দায়ীকে কোরআন ও হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে দাওয়াতের কাজ করতে হয়! মাশা আল্লাহ! আল্লাহ তোমার মেধায় আরো বারাকাহ দান করুন! আমিন!
গনতন্ত্র দিয়ে আসলেই ইসলাম কায়েম হবে না! একমত!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
সহজ ভাবে দেখেন, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নিয়ে গনতন্ত্র সরকার গঠন করে । আমি আমার জন্ম থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের পাই নি যারা সত্যকার অর্থে চান ইসালমী শাষন কায়েম হোক! সুতরাং ভোট দিয়ে কেউ পারবে বলে মনে হয় না!
ইসলাম এত বড় নিয়ামত আমরা যদি না চাই, এর জন্য প্রচেষ্টা না চালাই আল্লাহ কেনো আমাদের এই নিয়মত দিবেন?
বর্তমান বিশ্ব ইসলামের এক নম্বর শত্রু। যখনি দেখবে কোন এক দেশে ইসলামী শাষন কায়েম হবার পথে সাথে সাথে বিদেশী শক্তি এতে প্রবেশ করবে এবং যত উপায়,পথ, বিভ্রান্তি আছে সব উন্মোচন করবে ইসলামের বিপরীতে!
উপরের কথাগুলো একান্তই আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনা !
প্রশ্ন তাহলে কিভাবে ইসলাম বিজয়ী হবে ? কোরআন থেকে আমরা জানি ইসলাম এসেছেই অন্যান্য সকল মতের উপর বিজয়ী হবার জন্য!
ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে - এটাও আমার ভাবনা! যদিও অনেক অসংগত এবং অবাস্তব মনে হচ্ছে ! এটা ছাড়া আর কোন উপায় আছে সেটা আপাতত বুঝতে পারছি না!
আপনার মতমত কি ভাই সালাউদ্দিন?
অফ টপিক- রাজনীতি সম্পর্কে আমার জ্ঞান একেবারেই অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী টাইপের!
গণতন্ত্র হারাম, নূনতম ইসলাম জানা প্রত্যেক ব্যক্তিই তা জানেন এবং স্বীকারও করেন। কিন্তু এখন যেসব ইসলামী দল নির্বাচনে প্রার্থী দিচ্ছে, নির্বাচিত হচ্ছে, তারা গণতন্ত্র মেনে নিয়ে করছে নাকি গণতন্ত্রের মাঝখান দিয়ে ইসলামের পথ রচনা করতে চায়, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে।
নেতা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকলে সে ব্যক্তির নেতৃত্ব ইসলাম সমর্থন করে না, কিন্তু ব্যক্তি নিজে নয়, অন্যেরা যদি উক্ত ব্যক্তিকে পছন্দ করে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বলে, তাহলে অসুবিধা আছে কি? জানার জন্যও লেখকের কাছে প্রশ্ন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ হাদিসের রেফারেন্সসহ সুন্দর লেখাটি আমাদের শেয়ার করার জন্য।
আপনার এই কথার উত্তর আলোচ্য হাদিসেই দেয়া আছে। "তখন এমন একদল লোকের উদ্ভব হবে-যারা আমার প্রবর্তিত পদ্ধতি ছাড়া অন্য পদ্ধতি- অবলম্বন করবে, আমার প্রদর্শিত হেদায়েতের পথ ছেড়ে অন্যত্র হেদায়েত ও পথের দিশা খুঁজবে। তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ উভয়টিই থাকবে।"
গণতন্ত্রের মাঝে হেদায়েতের পথ খোঁজা কি যৌক্তিক?
ইসলামে খেলাফতের বিকল্প কোন কিছু নেই খেলাফতের জায়গায় গণতন্ত্রকে রিপ্লেস করার কোন অপশন নেই।
মুসলিম শরীফ হাদিস নং:৪৬২১_তে বলা হয়েছে,
মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হাসেম (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে পাঁচ বছর অবস্থান করেছি। আমি তার কাছে শুনেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনি ইসরাঈলদের উপর রাজত্ব করতেন নাবীগণ। তাদের মধ্যকার একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করলে অপর একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্হলাভিষিক্ত হতেন। আমার পরে আর কোন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেই বরং খলীফাগণ হবেন এবং তারা সংখ্যায় প্রচুর হবেন। তখন সাহাবীগণ বললেনঃ তাহলে আপনি (এ ব্যাপারে) আমাদেরকে কি নির্দেশ দেন? তিনি বললেনঃ যার হাতে প্রথম বায়ঁআত বা আনুগত্যের শপথ করবে, তারই আনুগত্য করবে এবং তাদেরকে তাঁদের হক প্রদান করবে, তিনি তাদেরকে সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
ভাইয়া গণতন্ত্র জাস্ট শাসনব্যাবস্হা রিলেটেড না এটার ব্যাপ্তি বিশাল। এর সাথে গোটা মানুষে বিশ্বাস, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ব্যাবস্হা ও আইন কাঠামো প্রত্যেকটি জিনিস জড়িত। আপনাকে বলা হচ্ছে রাষ্ঠ্রের অনুগত্য করতে যে রাষ্ঠ্র সেকুলার বা আল্লাহকে অস্বীকার করে যার নিরাপত্তা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উপর নির্ভরশীল। যার অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে সুদের উপর নির্ভরশীল। সুদের দ্বারা ৭০ টি গুনাহ সংগঠিত হয় যার মাঝে সবচেয়ে নিম্নতর হল নিজের আপন মায়ের সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়া। নিরাপত্তা পরিষদের সংবিধান প্রায় ২৪-২৫ পাতার হবে যেটার প্রথম পাতা সরাসরি আল্লাহর শক্তিমত্তাকে অস্বীকার করেছে ও নিজেকে শর্বশক্তিমানরূপে দাবি করেছে। ইসলামে অর্থ ব্যাবস্হার ভিত্তিই হল দিনার ও দিরহাম। সোন ও রূপার মুদ্রা যার রয়েছে আলাদা মূল্যমান যেখানে আধুনিক কাগজের টাকার ভিত্তি সুদ ও ধোঁকাবাজি এর কোন বাহ্যিক মূল্য নেই। পার্লামেন্ট আল্লাহর জায়গায় স্হলাভিষিক্ত অথচ আল্লাহ হচ্ছেন হাকাম যা পার্লামেন্ট অস্বীকার করে। ইসলামি আন্দোলনকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করা ভুল কারণ তা গোটা সিস্টেমটাই ইসলাম ও আল্লাহকে অস্বীকার করেছে। এ অবস্হায় ইসলামী দলের নিবন্ধন মানে হচ্ছে সেকুলারিজমকে মেনে নেয়া। এটা একটা আত্ববিনাশী সিদ্ধান্ত। আর প্রধান বক্তব্য হচ্ছে, বুঝতে হবে পৃথিবীর একজন নিয়ন্ত্রক আছেন আজ যা ঘটছে এসব তার ইচ্ছাতেই দাজ্জালের অনুসারীরা ঘটাচ্ছে। এখানে আমাদের কাজ দাজ্জালের মোকাবেলা করা, দাজ্জালের সাথে সমঝোতায় গিয়ে ইসলাম কায়েমের স্বপ্ন দেখা বোকামি। হাদিসে বলা হয়েছে এই সময়টাতে ইরাকে ,আস শামে(সিরিয়া, ফিলিস্তিন, জর্ডান, লেবানন, তুরষ্কের কিছু অংশ),তুরষ্কে,খোরাসানে (আফগানিস্তান), হিন্দুস্তানে (উপমহাদেশ), ইয়েমেনে, মিশরে প্রত্যেকটি মুসলিম ভূখন্ডে যুদ্ধ শুরু হবে এবং এই যুদ্ধ গোটা মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়াকে গ্রাস করবে। আমেরিকার জায়গা দখলে নেবে ইহুদিরা, মুসলিমরা রূমদের সাথে জোট গঠন করবে এই ৩য় শক্তিকে পরাজিত করার জন্য। কিন্তু মডারেট ইসলাম বা গণতান্ত্রিক ইসলামিক দলগুলো হাদিসের এসব ভবিষ্যৎবাণী যা বর্তমানে চোখের সামনে বাস্তব, তাকে পাশ কাটিয়ে কিভাবে গণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় গিয়ে ইসলামী রাষ্ঠ্র কায়েম করা যায় সে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে? যেখানে হাদিসে এটাও বলে দেয়া হয়েছে, এ ব্যাবস্হা কয়েকশত বছরের ব্যাবধানেই ধ্বংশ হয়ে যাবে সেখানে তারা সেটাকেও চিন্তার আওতায় আনছেনা। ব্যাপারটি বিস্ময়কর নয়কি? বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে তারা কল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে যেখানে তারা হাদিস থেকেই জানে এটা সফল হবেনা। তারপর আবার আলজেরিয়াতে ৯০% ভোট পেয়েও তারা সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে কচুকাটা হল, মিশরেও তাই, তিউনিসিয়াতেও তাই অর্থাৎ এটি ব্যর্থ। মাঝখান থেকে এসব দলের সমর্থক হাজার হাজার মুসলিম হত্যা, নির্যাতন এমনকি পর্দানশীলা নারীরা জেলখানায় ধর্ষণের শিকার হল। এর চাইতে দুর্ভাগ্যজনক আর কি হতে পারে? এর দায়টাও কি এসব দলের নেতাদের উপর বর্তায় না? কিয়ামতের দিন আল্লাহ এসব নেতাকে পাকরাও করলে তারা কি জবাব দিবেন? কোরান-হাদিস ফেলে আমরা কোথায় ছুটছি? নিঃসন্দেহে বর্তমানে মুসলিম ভূখন্ডগুলিতে গণতান্ত্রিক ইসলামী দলগুলোর জনপ্রিয়তা বেশি অর্থাৎ মুসলিমরা হাদিসের ভবিষতৎবাণী ও বাস্তবতা কে পেছনে রেখে কল্প কাহিনীর পেছনে ছুটছে এতে কি কাফির শক্তিই বেশি লাভবান হচ্ছেনা?? এটা কেয়ামতপূর্ব সময় এসময়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আদ-দাজ্জাল, ধোঁয়া যাকে আলেমরা বলেছেন, ভয়ংকর কোন যুদ্ধ আমরা দেখছি পারমানবিক অস্ত্রগুলো তৈরী হচ্ছে। এসব বিষয় মোকাবেলায় গণতান্ত্রিক দলগুলোর প্রস্তুতি কি? তারা যদি এখনো বোকার মত বসে বসে ভাবে তারা রাজনৈতিক দল বানাবে, মানুষকে বোঝাবে, মানুষ ভোট দিবে আর তারা ক্ষমতায় গিয়ে ইসলাম কায়েম করে ফেলবে এটা কি হাস্যকর না??
এ সময়টাতে যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে অধিকতর পীড়া দিয়েছে এবং দিচ্ছে - তা হল আমাদের শ্রদ্ধেয় আলেম ও ওলামা সমাজ। ওনারা (লিটারেলী ৯৯%) আজকের দুনিয়ার বাস্তবতা বুঝছেন না, বোঝার চেষ্টা করছেন না, আবার কেউ বুঝাতে চাইলে - শুনতেই চাইছেন না।
পূর্ব হতে পশ্চিমে পুরো বিশ্বময় - মুসলিমরা যখন আজ কুকুরের ও অধম দমবন্ধ জীবন যাপন করছে - আমাদের আলেম ও ওলামাদের কাছে এ নিয়ে না পাচ্ছি কোন দিকনির্দেশনা, না পাচ্ছি কোন পরামর্শ - অথচ ওনাদের কথা বার্তায়, লিখা-লিখিতে, আচার আচরনে কোন পরিবর্তন তো দেখছিই না - বরং কেন যেন মনে হয় - ওনারা কালের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বড় বেশী জোরে শোরে পা চালাচ্ছেন।
আমার খুব কষ্ট হয় যখন দেখি কোরানে হাফেজ, আল আজহার কিংবা মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন মৌলানা, কারি ইত্যাকার সন্মানিত ব্যাক্তিরা আর সব গনমানুষের ন্যায় টাকার লোভে, ইউরোপের মায়ায় - এ সব দেশে এসে মানবেতর জীবন যাপন করছে শুধু টাকা জমাতে, গাড়ী বাড়ী করতে - তখন বড়ই কষ্ট হয়। অথচ এই সেইম মানুষগুলো কেন যেন 'ইসলাম'কে একান্তই নিজেদের সম্পদ ও সম্পত্তি বলে মনে করেন। নিজের মত ও চিন্তার বাইরে এক পাও যেতে চাইবেন না। কোরানের আয়াত, সহী হাদীস, ফ্যাক্টচুয়াল ইভিডেন্স - সব একত্রে হাজির করে দিনের আলোর মত পরিষ্কার করে প্রেজেন্ট করলেও কোন লাভ নেই - তারা শুনবেন না, তারা আলোচনা করবেন না। দয়া করে কাফের, মুরতাদ, মুনাফিক এসব মুখ ফুটে না বললেও ভাবটি করবেন এমন যে ঐ ভাইটি সিম্পলী একটা 'উজবুক' সম কিছু একটা।
আমার ইদানিং মনে হয় - আমাদের আলেম রা কি লিটারেলী বনী ইসরাইলী ঐ আলেম দের মত হয়ে গেছেন কিংবা যাচ্ছেন - (যারা মূলতঃ কোরান হাদীস ছেড়ে আগেকার আলেমদের তৈরী পূথিকে বেশী অগ্রাধিকার দিচ্ছেন) - যারা ঈসা আঃ এর জন্য অপেক্ষা করা স্বত্তেও - যখন তিনি এলেন - তখন রিজেক্ট করে বসলো কিংবা ঐ ইয়াহুদী আলেমদের মত যারা মোহাম্মদের সঃ এর প্রতীক্ষায় ইয়াত্রীব আর খায়বারে বসে থাকলো - কিন্তু তিনি এলে রিজেক্ট করলো? অর্থাৎ সত্যকে রিজেক্ট করতে ভুল কিছুকে অতি জোরেশোরে আকড়ে ধরে থাকলো? খোঁজ নিল না, নেবার চেষ্টা ও করলো না।
এখন সমাধানটা কি? হারাম হারাম - যে হাদিসগুলো টেনেছেন - তা দিয়ে হারাম বা হালাল করলেন কেমন করে? কনফিউজড। ধন্যবাদ।
যারা নির্বাচনে নামে ক্যাচাল করার আর ক্যাচাল ঠেকানোর হ্যাডম ও ক্যাডার নিয়েই মাঠে নামে । ভাল মানুষেরা সাধারনত ক্যাচালেও যায় না আর ক্যাডারও রাখে না । ফলে এসব উপরি ঝামেলাতেও যেতে চায় না ।
কিভাবে ভাল মানুষদেকে এই পেইন থেকে মুক্ত করা ও রাখা যায় ? আপনার কাছে জানা আছে কি কোন উপায় ?
ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহ.)...
আমীন আপনার দোয়ায়।
আপনি ছোট ভাই হলেও যথেষ্ট জ্ঞান-গরিমা আল্লাহ দান করেছেন মনে হচ্ছে। ”ভোট হারাম“ থিউরির পিছনে উপর্যুপরি এতটা সময় ব্যয় না করে আর কিছু করা যায় কিনা চেষ্টা করলে মনে হয় বেশ লাভবান হবেন। আপনাদের মতো এমন জ্ঞানীদেরকে এভাবে ব্যবহার করে কোনদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা আমার মতো মুর্খরা বুঝতে অক্ষম। আল্লাহ এবং তারাই ভালো জানেন যারা আপনাদেরকে কাজে লাগাচ্ছেন।
েসর্বোপরি মেহনত করা লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
"হযরত হুদায়ফা ইবনে ইয়ামান (রা হতে বর্ণীত রসুল (সা বলেন ."একদিন হুদায়ফা ইবনে ইয়ামান (রা নবীজিকে জিজ্ঞেস করলেন কোন জিনিসটা ভালো, তবে আমি ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোন জিনিসটা খারাপ কারণ অজ্ঞানতার কারনে আমরা অনেক সময় খারাপ কাজ করেছি আর আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে নিয়ে এসেছেন্ এরপরও কোন খারাপ কাজ হবে? নবীজি বল্লেন হ্যাঁ। তিনি আবার বল্লেন খারাপ কাজের পরে কিছু ভাল কাজ হবে? নবীজি বল্লেন হ্যাঁ তবে এর মধ্যেও কিছু খারাপ জিনিষ থাকবে, সাহাবীগণ তখন বল্লেন সে খারপ কাজটি কি? নবীজি বল্লেন তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক থাকবে যারা এমন কিছু প্রচার করবে যেগুলো আমার সুন্নাহ নয়। সাহাবীগণ বল্লেন এরপর আর কোন খারাপ কাজ হবে?নবীজি বল্লেন কিছু লোক থাকবে যারা তোমাদেরকে দোযকের দিকে আমন্ত্রন জানাবে, তখন হুদায়ফা (রা বল্লেন তখন আমাদের কি করা উচিত?তখন নবীজি বল্লেন তোমরা তোমাদের মুসলিম দল এবং নেতাকে আকড়ে ধরে থাকবে, সাহাবীগণ বল্লেন, যদি তাও না থাকে তখন কি করব? নবীজি বল্লেন, যদি কোন মুসলিম দল এবং নেতা আর না থাকে তবে সব দল থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে, প্রয়োজন হলে গাছের শীকড় কামড়ে থাকবে যতক্ষন না আল্লাহ সুবহানুতায়ালার সামনা সামনি হচ্ছো।সহীহ বুখারী:খন্ড-৪,সংখ্যা-৩৬০৬।"
সমাধানের ব্যাপারে আপনার লিখা পড়ার জন্য অপেক্ষায় আছি।
জাজাকুম আল্লাহ খাইরান
মন্তব্য করতে লগইন করুন