ধরা পড়ল র্যাবের জঙ্গি নাটক। কথিত পলাতক আসামী ২ মাস ধরে জেলে, এত অস্ত্র পেল কিন্তু কোন রিমান্ড নেই।
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আবদুর রহমান সিরাজী ০৩ মার্চ, ২০১৫, ০৮:৪৭:৪২ সকাল
চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বাঁশখালী ও হালিশহরে র্যাবের পৃথক অভিযানে বিপুল পরিমাণ বোমা, বিস্ফোরক, অস্ত্রসহ ২১ ‘জঙ্গি’ গ্রেপ্তার হলেও তাঁরা কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত, এখনো তা জানাতে পারেনি র্যা ব। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের কাউকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়নি।
সর্বশেষ গত শনিবার সকালে হালিশহরের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে ১৫০ কেজি বিস্ফোরক, ৭৬টি তাজা বোমা, বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম, জিহাদি বই, ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ডায়েরিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় র্যাবেরকরা মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় ‘পলাতক জঙ্গি’ হিসেবে দেখানো হয় আজিজুল হক ও পারভেজকে। আজিজুলের খোঁজে ২২ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর দুর্গম পাহাড়ে র্যা ব অভিযানও চালিয়েছিল বলে দাবি করেছিল। অথচ আজিজুল ভাঙচুরের একটি মামলায় প্রায় দুই মাস ধরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। গত ৭ জানুয়ারি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
হালিশহরের বাসা থেকে বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় কক্সবাজার পেকুয়া উপজেলার মগনামা গ্রামের মাওলানা আবুল কালামের ছেলে ফয়জুল হক, মেয়ে রহিমা আক্তার, নাতি (মেয়ের ছেলে) জাহেদুল্লাহ এবং বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের আবদুল হাইকে গ্রেপ্তার করে র্যা ব। পলাতক আজিজুল (কারাগারে থাকা) ফয়জুলের ভাই। আর পারভেজ আজিজুলের স্ত্রীর বড় ভাই।
হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান কবির গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার এজাহার র্যাবেরপক্ষ থেকে দায়ের করা হয়েছে। আসামি পলাতক, নাকি কারাগারে, তা আমাদের জানার বিষয় নয়।’
জানতে চাইলে র্যা ব-৭ চট্টগ্রামের মুখপাত্র ও সহকারী পরিচালক শাহেদা সুলতানা বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরে জানাবেন বলে জানান।
১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী থেকে ‘জঙ্গি’ সন্দেহে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাঁশখালীর পাহাড়ে অভিযান চালানো হয়। হাটহাজারী ও বাঁশখালী থেকে গ্রেপ্তার জঙ্গিদের তথ্য অনুযায়ী হালিশহরের বাসা থেকে বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। তিনটি ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে বলে র্যা ব দাবি করেছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ছগির মিয়া জানান, কক্সবাজারের পেকুয়া থানার মগনামা গ্রামের মাওলানা আবুল কালামের ছেলে আজিজুল হককে ৭ জানুয়ারি একটি ভাঙচুরের মামলায় কারা ফটক থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালত ৮ জানুয়ারি তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
গ্রেপ্তার চার আসামিকে গতকাল বিকেলে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণে কথা হয় আবদুল হাইয়ের সঙ্গে। তিনি নিজেকে অটোরিকশাচালক পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে ফয়জুল আমাকে ফোন করে বলেন, বাসায় (হালিশহর) পারভেজ আসবে। আমাকে বাসায় যেতে বলেন। বাসার নিচে গিয়ে দেখি, দুটি ভ্যানে বস্তাভর্তি জুতাসহ কাগজের প্যাকেটে জিনিসপত্র রয়েছে। এগুলো পারভেজসহ বাসায় তুলে দিই। পরদিন শুক্রবার দুপুরে ফয়জুলের মাকে (মোর্শেদা বেগমকে) চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে ওই বাসায় গাড়ি নিয়ে গেলে র্যা ব আমাকে ধরে ফেলে।’ তাঁর ছেলেকে ফয়জুলের বাবা আরবি পড়ান। এই সুবাদে তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
আদালত প্রাঙ্গণে ফয়জুল হক জানান, স্ত্রীসহ তিনি আগ্রাবাদ বহুতলা কলোনি এলাকায় থাকেন। হালিশহরে তাঁর মা-বাবা থাকেন। পারভেজ তাঁকে ফোন করলে সেদিন তিনি আবদুল হাইকে হালিশহরের বাসায় আসতে বলেছিলেন।
ফয়জুল দাবি করেন, টেরিবাজার এলাকায় বড় বোনের বাসার সামনে থেকে শুক্রবার বিকেলে র্যা ব তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
বাসায় বস্তাভর্তি এতগুলো জিনিসপত্র রেখে গেলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কেন জানানো হয়নি, জানতে চাইলে আদালত প্রাঙ্গণে ফয়জুলের বোন রহিমা আক্তার দাবি করেন, পারভেজ ভাই রেখে গেছেন। এক দিন পরে নিয়ে যাবেন বলেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে র্যা ব বাসায় গিয়ে তাঁদের আটক করে। ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।
গতকাল দুপুরে হালিশহরের বাসায় গিয়ে ফয়জুলের বাবা আবুল কালাম ও মা মোর্শেদার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় বস্তাভর্তি জিনিসগুলো পারভেজ নিয়ে আসেন। এক দিন পরে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
আবুল কালাম জানান, তাঁর দুই ছেলে ফয়জুল হক ও আজিজুল হক। তিন মেয়ের মধ্যে দুজনের বিয়ে হয়েছে। ফয়জুল নগরের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের অফিস সহকারী।
আবুল কালাম দাবি করেন, আজিজুল লবণ, মাছ ও বাঁশের ব্যবসা করেন। এ ব্যবসার আয় দিয়ে বাসা ও সংসার খরচ মেটান। আজিজুল এখন কারাগারে, নাকি পলাতক, তা জানা নেই বলে জানান তিনি। তাঁর দাবি, আগে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও আজিজুল এখন শিবির করেন না।
গতকাল দুপুরে ফয়জুলের স্ত্রী ফারজানা ইয়াছমিন জানান, শুক্রবার বেলা ১১টায় বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি তাঁর স্বামী। ওই দিন বিকেলে টেরিবাজার থেকে তাঁকে র্যা ব আটক করেছে বলে শুনেছেন।
আগ্রাবাদ মা ও শিশু মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এ এস এম মোশতাক আহমেদ জানান, ফয়জুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ফয়জুল ২০০৮ সালে অফিস সহকারী পদে যোগদান করেন। এর আগে তিনি নগরের চকবাজার পিপলস হসপিটালে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।
এদিকে গ্রেপ্তার চার আসামিকে গতকাল বিকেলে আদালতে হাজির করা হলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সৈয়দ মাসফিকুল ইসলাম আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান জানান, হরতালের কারণে রিমান্ড শুনানি হয়নি।
সুত্র প্রথম আলো http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/466627
বিষয়: বিবিধ
১৫১৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন