ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-১

লিখেছেন লিখেছেন আজাদ আব্দুল্লাহ ৩১ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৫২:৩২ সকাল

ভূমিকাঃ

বাংলাদেশে ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিকতা উগ্ররূপ ধারণ করেছে।এ চুড়ান্ত ধর্মবিদ্বেষী কার্যক্রম চালিত হচ্ছে অভ্যন্তরিণ ও বহিস্থঃ তথা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় শক্তির সুসংগঠিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে। দৃশ্যতঃ তাদের এ বিদ্বেষ সব ধর্মের বিরুদ্ধে হলেও মুলত ইসলাম-ই তাদের একমাত্র টার্গেট। ইসলামী তাহজীব-তামাদ্দুন, ইসলামী লেবাস, রীতি-নীতি ইত্যাদি হচ্ছে তাদের কাছে তামাশার বস্তু। দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওরা বেছে নিয়েছে ঘৃনা ছড়ানোর নিকৃষ্টতম প্রকল্প। ইসলাম, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ইসলামি রীতিনীতির বিরুদ্ধে ওরা নেমেছে গোয়েবলসীয় প্রক্রিয়ায় মিথ্যাচারে। জনমনে ধর্ম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করার জন্য ওরা হাতে নিয়েছে নানামুখী প্রকল্প। সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে ওদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। এক্ষেত্রে ওরা সুযোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও স্বঘোষিত মোড়লদের ইসলামোফোবিয়া তথা ইসলাম বিরোধী প্রপাগান্ডা, পার্শ্ববর্তী দাদা রাষ্ট্রের বাংলাদেশ ও ইসলাম বিরোধী সেন্টিমেন্ট এবং তথাকথিত ডিজুস জেনারেশানের ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার। তাদের এই ধর্মদ্রোহিতা আজ চুড়ান্ত পর্যায়ে ফ্যাসিবাদে রূপ নিয়েছে (সূত্রঃ মাহমুদুর রহমান, ফরহাদ মজহার, আমার দেশ)।বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান আর মিডিয়াকে ব্যবহার করে ওরা আজ গড়ে তুলেছে মূলধারার সরকারের ভিতর আরেক সরকার (সূত্র-ইমরান এইচ সরকারের বক্তৃতা), রাষ্ট্রের ভিতর আরেক রাষ্ট্র, হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ভিতর আরেক সংস্কৃতি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় জনগনের ভোটে নির্বাচিত সরকার ও ওদের কাছে অসহায়। যেখানে সরকার তার কোন সমালোচককে বিন্দুমাত্র সহ্য করছে না, প্রকাশ্য দিবালোকে করছে গুলি। পড়ছে অসংখ্য লাশ (২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩)। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে ফেসবুকে একটা স্টাটাস দিলেও তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে সেখানে আল্লাহ সুবহানু তাআলা এবং তাঁর প্রিয় হাবীব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব রাসুল (স) কে নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি, নিকৃষ্ট ধরনের নোংরামি করার পর ও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকার বলছে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাদের সীমাবদ্ধতা আছে (সূত্রঃ আমারদেশ-২৮/০৩/২০১৩)। বরং এসব নাস্তিকদের বিরুদ্ধে যখন সারাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা গর্জে উঠেছে সরকার উলটো তাওহীদি জনতার মিছিলে গুলি চালিয়ে নাস্তিকদের জন্য তাদের চুড়ান্ত দরদের ঘোষণা দিল(মানিকগঞ্জে ৫ জন নিহত)। তাদের এ অপকর্ম জনগনের সামনে তুলে ধরায় তারা ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছে আমারদেশ পত্রিকার বিরুদ্ধেই (তথ্যমন্ত্রী)। সরকারের বক্তব্যে একথা স্পষ্ট যে তারাও বুঝতে পারছেন এ ধর্মদ্রোহিরা যা করেছে এবং করছে তা জঘন্যতম অপরাধ (সরকারের গঠিত কমিটি)। কিন্তু তারা ওদের বিরুদ্ধে কোন একশান এ যাচ্ছেন না বরং তাদের রক্ষার জন্য ফোর্স দেয়ার মাধ্যমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছেন (আমার দেশ সহ জাতীয় দৈনিক)। সরকারের এ ভূমিকায় সচেতন নাগরিক দের মনে প্রশ্ন উদিত হচ্ছে এর পিছনে কারণ কি? কারণ হতে পারে দুটো হয় সরকার তথা আওয়ামিলীগ নিজেই নাস্তিকতাকে প্রমোট করতে চান নতুবা এই ধর্মদ্রোহি নাস্তিকদের তারা ভয় পান। আওয়ামিলীগ নাস্তিকদের দল বা নাস্তিকতাকে প্রমোট করার জন্য রাজনীতি করছেন এমনটা মনে করেন না অধিকাংশ মানুষ-ই। কারণ এই আওয়ামিলীগকে এদেশবাসি দীর্ঘদিন ধরেই চিনে। এ দলের নেত্রীও নিজেকে প্র্যাক্টিসিং মুসলীম হিসেবেই দাবি করেন। তবে কি ২য় টিই সত্য? যেমনটি বলেছেন সরকারের তদন্ত কমিটি যে “নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে”।

তাহলে কি সেই ভিত্তি যার কারনে স্বয়ং সরকার ও তাদের ভয় পায়? মুক্তচিন্তা, বাকস্বাধীনতা আর প্রগতিশীলতাকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে ওরা করে যাচ্ছেতাই। আমরা জানার চেষ্টা করব কি সেই অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তি যার কারনে নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশে ও পুষ্ট হচ্ছে ভয়ংকর এই ধর্মদ্রোহিরা? সংখ্যায় হাতে গোনা ক’জন হয়েও কি করে এতো দুঃসাহস দেখায়? সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের বোধ বিশ্বাসের মূল্য ও তাদের কাছে নগন্যই?

এ ধরণের ধর্মদ্রোহীরা কোন যুক্তির ধার ধারে না, ধার ধারে না কোন মূল্যবোধ-সামাজিক শৃঙ্গলা বা সম্প্রীতির। ছড়িয়ে দিতে চায় উগ্রতা আর বিদ্বেষের বিষবাষ্প। তাই দেশের সামাজিক মূল্যবোধ এবং শৃংখলা রক্ষার্থে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনায় সমৃদ্ধ জনগনের সুদৃঢ় ঐক্যই পারে এ অশুভ শক্তিকে রুখে দিতে। এ দেশের সব ধর্মের-বর্ণের-জাতের মানুষ আমরা ভাই ভাই। আমরা সবাই বাংলাদেশি। ধর্ম, বর্ণ, জাতি, বাঙ্গালি-অবাঙ্গালি বলে আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য তাই বলে। কিন্তু এই গুটিকয়েক ধর্মদ্রোহিরা আমাদের এই এতিহ্যকে ধ্বংস করে দিতে চায়।

এই উগ্র ধর্মদোহীতা আজ আর ‘সমস্যা’ পর্যায়ে নেই বরং তা উত্তরিত হয়েছে ‘সঙ্কটে’। এখনি যদি ঐক্যবদ্ধ ভাবে এ অশুভ শক্তিকে মুকাবেলা করা না যায় তাহলে জাতিকে হয়তো চরম মূল্য দিতে হতে পারে। কালক্ষেপন জন্ম দিতে পারে মহা বিপর্যয়ের।

ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-২

ধর্মদ্রোহিতার অর্থনীতি-৩

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১৩১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File