ভাবরাজ্যের কাহিনী

লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র পারাবত ০৩ জুলাই, ২০১৩, ১২:৫৯:৫৩ দুপুর



বালক বেলার সেই সিংহাসনের কথা একটু বলি| বি.এ.ডি.সি 'র ক্যাম্পাসে আমাদের যে কটেজ ছিল তার ঠিক পেছনে ছিল একটি মধ্যাকৃতির জাম্বুরা গাছ|সেই গাছের মধ্যম উঁচুর একটি ডাল ছিল, হাফপ্যান্ট পরা আমার একমাত্র সিংহাসন| বসতে বসতে ক্ষুদে রাজার আসনটি মসৃণ হয়ে গিয়েছিল| যাই হোক,স্কুল থেকে এসেই অনেক কসরত টসরত করেই সেই রাজ্যের তখতে বসতাম|ওঠার পর আমায় আর পায় কে,রাজার মত একটা আত্মগর্বের হাবভাব চেহারায় ফুটে ওঠত|তারপর আরেকটু কসরত করে মুখ সুঁচালো করে করে কয়েকটা ফুঁ দিতে হতো|ভাবছেন ফুঁ টু কি দরকার,জিন ভূত আছে কিনা? আরে বাবা,রাজা থাকবে আর রাজার

সেনাপতি থাকবে না,তাই কি হয়?গাছের পাশেই কয়েক প্লাটুন লাল পিঁপড়াদের তাবু ছিল|উনারা ভুলক্রমে আসনের দিকে চলা আসাতে ফুঁ এর আয়োজন|যেন খামস বলে একটা হুংকার|সিংহাসন হলো,রাজকীয় খাবার হিসেবে জাম্বুরা খাওয়া হলো,কিন্তু প্রজা যে নেই| কি করি!

ছোট বোন জারিফ লাকি আম্মার কাছ

থেকে বার্তা নিয়ে আসতো|বার্তাতো নয় এযেন ১০নং মহাবিপদ সংকেত|থতমত করে ভয় আড়াল রেখে বলতাম"আরে যা যা,এখন

পারবো না,সে পরে দেখা যাবে|তারপর পরপর কয়েকটা ডুক গিলে রাজার ভাব নিয়ে বলতাম"এই তুই এখানে বারবার আসিস কেন|আর যদি আসিস"-বলে হাতটি তলোয়ারের মতো দেখিয়ে বলতাম "তো দেখবি কি করি"|যেন আমার সুরম্য প্রাসাদে প্রজার এই বারবার আসা বরদাসত করছি না| প্রজাটিও ছিল ভারী বেয়াদপ,মুখ বাংলার পাঁচ করে কি যে ভেংচি কাটত যে পিত্তিটা জ্বলে যেতো| তারপরও প্রজা ভেবে তো একটা হুঙ্কার দেওয়ার স্বাদ হল|

এভাবেই হাসি গানে চলছিল আমার ক্ষুদ্র ভাবের রাজ্যের কার্যাবলি|কিন্তু সেই সুখ একদিন শোকে পরিণত হল| হঠাৎ একদিন আমার সিংহাসন আমাকে সহ ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল|ওমা কি যে ব্যথা!আরে না অন্য কোন রাজ্যের রাজার সাড়াসি আভিযানে নয়| আসলে বসতে বসতে কখন যে ডালটি পুষ্টিহীন

হয়ে পড়েছিল তা বুঝি নি|যখন বুঝলাম তখন আমার একমাত্র প্রজাসহ উনার কয়েকজন বান্ধবীদের দাঁতাল হাসির হি হি আওয়াজ শুনতে পেলাম| এভাবেই সমাপ্ত হল আমার ভাবরাজ্যের

কাহিনী|

বিষয়: সাহিত্য

১৪৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File