শেখ মুজিব বনাম ইসলামী চেতনা
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ০৩:০৭:০০ দুপুর
আমি এক নগন্য খেটে খাওয়া মানুষ | এদেশের রাজনীতির উতপত্তি , বিস্তার ও সাধারণ মানুষের মাঝে এর শেকড় নিয়ে অনুপুঙ্খ গবেষণা করার সময় আমার একদম নেই। তবে যেহেতু আমি একজন বই বা লেখা প্রিয় মানুষ তাই এই রাজনীতির গতিধারা সম্পর্কে কিঞ্চিত হলেও কিছু অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে | সেই অভিজ্ঞতা এবং নিজের চিন্তা চেতনা থেকেই আমি উল্লিখিত শিরোনামে কয়েকটি কথা বলতে চাই।
১| শেখ মুজিব কিংবা আওয়ামী চেতনার মানুষেরা ইসলাম ধর্মের আদর্শকে সত্যিকার ভাবে ভাল না বেসে কেবল ধর্ম নিয়ে নোংরা রাজনীতি করে গেছে।
২| আমি দৃঢ় ভাবেই বিশ্বাস করি বাংলাদেশে কেবল জামায়াত ইসলামী ছাড়া আর সত্যিকারের ইসলামী চেতনার রাজনীতি করে গেছেন মাওলানা ভাষাণী।
স্বয়ং শেখ মুজিবের রাজনৈতিক গুরু ছিলেন এই মাওলানা ভাষাণী। তিনি আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও বিশ্বাসী ছিলেন | মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে এই ইসলাম প্রিয় মানুষটির অবদানের কথা আওয়ামী লীগের কেউ কেন একটুও স্মরণ করেনা ? কারণ বাকশাল কায়েম করে শেখ মুজিব তার এই গুরুর ওপর যে নিপিড়ন চালিয়েছিলেন সে কথা স্মরণ করলে আওয়ামী চেতনার আসল রূপ ধরা পড়বেই |
মাওলানা ভাষানীকে কেন আমৃত্যু অন্তরীণ রেখেছিলেন শেখ মুজিব আমরা অনেকেই তা জানিনা | আসুন তাহলে সে সম্পর্কে একটু আলোচনা হোক। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে মাওলানা ভাষানীর সম্পাদনায় ' সাপ্তাহিক হক কথা ' নামে একটি সাময়িকী প্রচার হত। সেই কাগজটিতে মাওলানা ভাষানী শয়তানের ওস্তাদ ' ইবলিশ 'কে নিয়ে একটি রূপক কাহিনী লিখেন। তাতে ইবলিশ সম্পর্কে বলা হয়েছিল ' একদিন শয়তানের দল তাদের নেতা ইবলিশ কে স্বর্গ মর্ত্য পাতাল কোথাও খুঁজে পাচ্ছিল না। খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে অবশেষে তাকে পাওয়া গেল বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবের কামড়ায় | দেখা গেল ইবলিশ প্রেসিডেন্টের পা ধরে অনেক অনুনয় বিনয় করছে ৭ই মার্চের ভাষনের মত আর একটি ভাষণ দিতে। শয়তানের দল সারা বছর পরিশ্রম করেও যেখানেই মাত্র কয়েক শ মানুষকে আল্লাহ বিমুখ করতে পারে সেখানে শেখ মুজিবের এক ভাষণেই দশ লক্ষ মানুষ আল্লাহ বিমুখ হয়ে গেল।
এরকম একটি লেখায় মাওলানা ভাষাণী জাতির পিতা শেখ মুজিব কে ইবলিশের ও গুরু বানিয়ে দিলেন | আর যায় কোথায়? শেখ মুজিব সেই লেখা প্রকাশের সাথে সাথেই সাপ্তাহিক হক কথা বন্ধ করেদিলেন আর তার রাজনৈতিক গুরু পিতার বয়সী বয়োবৃদ্ধ ভাষানীকে করলেন গৃহ বন্দী |
শেখ মুজিব সম্পর্কে তার বড় বড় চেলারা যত গুণকীর্তণ ই করুক না কেন নিজের ওস্তাদের প্রতি এমন বেয়াদবী করছেন জেনে আমার পক্ষে তাকে একজন আদর্শ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে মেনে নেওয়া একেবারেই অসম্ভব |
শেখ মুজিব ঢাকার কাছে টংগীতে বিশ্ব ইজতেমা করার জন্য জায়গা দিয়েছে বলে আওয়ামী লীগ আর তাদের চেলা এবং সেই সাথে ইসলামী আদর্শের সঠিক রূপ সম্পর্কে বিশেষ অজ্ঞ কিছু সরকারি আলেম শেখ মুজিবকে এদেশে ইসলামের একজন সেবক হিসেবে প্রচার করে বেড়ায় | কিন্তু যেহেতু আমি এটাও জেনেছি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে পবিত্র কুরআনের 'ইকরা ' আরবীতে লেখা শব্দটা ও তার সহ্য হয়নি | তার সহ্য হয়নি 'কাজী নজরুল ইসলাম ' হলের নামের ' ইসলাম ' শব্দটি কিংবা 'সলিমুল্লাহ মুসলিম ' হলের 'মুসলিম' শব্দটি |
কাজেই আওয়ামী লীগ বা কথিত মুক্ত চিন্তার লোকেরা শেখ মুজিব বা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি মূলক ইসলাম প্রিয়তার নমুনা দেখিয়ে আমার প্রতি যতই তেড়ে আসুক শেখ মুজিবকে একজন আদর্শ মুসলমান হিসেবেও মেনে নিতে আমার বিবেক সায় দেবেনা |
হ্যাঁ , মুক্তিযুদ্ধের পরে যখন পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদারদের প্ররোচনা দানকারী আরেক খলনায়ক জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশে আসে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে শেখ মুজিব বলেছিলেন ' আপনারা আমাদের ভাইয়ের মত। আর আমরা দেখিয়ে দিতে চাই আমরা ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে কতটা উদার হতে পারি।'
এই কথা বলে তিনি যে মহান দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছিলেন তার পিছনে যতটা না ' ভাই ' নামক ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ এর মহত্ব লুকায়িত ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল।
কারণ মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশ কে তুলে ধরতে কিংবা তাদের সাহায্য পেতে পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ছিল জরুরি |
এখন আর পাকিদের কিংবা আরব রাষ্ট্র কিংবা অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের সাহায্য বাংলাদেশের আর দরকার নেই। একমাত্র ইন্ডিয়াই যথেষ্ট | কাজেই আওয়ামী লীগ জানে পূরো জাতি যত তাড়াতাড়ি হিন্দুত্বকে বরণ করে নেবে তত তাড়াতাড়িই তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
এখন তো চারিদিকে তার আলামত সুস্পষ্ট | জামায়াত ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ইসলামী দল কিংবা তাদের নেতারা এদেশকে কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে ইন্ডিয়ার পেটে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই যেন বাঁচে। কিন্তু জীবন থাকতে আমি কখনোই এসব অপরাজনীতিকে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কল্যাণের বলে মেনে নেবনা। এসব না মানলে ওরা যদি আমাকে ফাঁসিতে ঝুলায় তাও আমি মৃত্যকে বরণ করে নেব।
বিষয়: বিবিধ
১২২১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন