ভদ্রলোক ও তার স্ত্রী
লিখেছেন লিখেছেন ইসহাক মাসুদ ২৫ আগস্ট, ২০১৩, ১১:৪০:৫৭ রাত
দুপুরের খাবার খেয়ে কাজী অফিসে ইজি চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে ঘুমাবার চেষ্টা করছি। তন্দ্রা আমাকে ঘিরে ধরছে। চোখ জুড়ে রাজ্যের ঘুম চেপে আসছে। ঠিক তখনি এক ভদ্র লোক অফিসের গ্লাস ধাক্কা দিয়ে ছালাম দিল এবং বসাব অনুমতি চাইল। আমি সৌজন্যতার খাতিরে তাকে বসতে বলি। ভদ্র লোক আমার পরিচিত। বললেন, কাজী ভাই আপনার সাথে একটি পরামর্শ করতে চাই, কিছু সময় দিতে পারবে? আমি হ্যাঁ বলে সোজা হয়ে বসি। বললাম, কি সমস্য?
ভদ্র লোকঃ ভাই বউ কে নিয়ে সমস্যায় আছি? কি করব বুঝতে পারছি না। কাহকে বলতেও পারছি না, নিজে সহ্যও করতে পারছি না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সমস্য কি?
ভদ্র লোক আমি বিয়ে করছি প্রায় ৭ বছর, এরি মধ্যে দুটি বাচ্চাও হয়েছে। আমাদের বিয়ের আগে আমার বউয়ের সাথে তার জেঠাত ভাইয়ের প্রেমের সর্ম্পক ছিল। জেঠাত ভাই বয়সে তার সমান। তাই তার পরিবার উক্ত সম্পর্ক মেনে নেয়নি। বিষয়টি আমাদেরকেও জানায়নি। আমি বিয়ে করে বিদেশ চলে যাই। দুই বছর পর পর দেশে এসে ফিরে প্রবাসে গিয়েছি। কিন্তু সামন্যর জন্যও অনুমান করতে পারিনি যে, তার সাথে জেঠাত ভাইয়ের এখনো উক্ত সর্ম্পক বহাল আছে। সে আমাকে প্রেম ভালবাসার সকল পাঠ শিখিয়ে, আমি তা রপ্ত করেছি এবং মন প্রাণ উজাড় করে তাকে ভালবেসে আসছি। অর্থাৎ সে তার জেঠাত ভাই এর সাথে প্রেমের সকল সর্ম্পক রেখে আমার সাথে ভালবাসার অভিনয় করে চলছে। আমিতো সামান্য সময়ের জন্য দেশে আসি, সে সময়ের জন্য আমাকে অসুন্তষ্ট করে না এবং তার অন্তরের অবস্থাটি আমাকে বুঝতেও দেয় না। একদিন সে তার বাবার বাড়ীতে গিয়ে চাচাত ভাইয়ে সাথে পালিয়ে যায়, আমার শ্বশুর পক্ষ আমাদেরকে গুনাক্ষরেও বুঝতে দেয়নি। যখন বুঝতে পেরেছি তখন অনেক লেইট হয়ে গিয়েছে। দুইটা বাচ্চা, আমার জীবনের সকল ইনকাম ও ব্যাংক ইন্সুরেন্সের যাবতীয় টাকা তার হতে এবং আমার শ্বশুরের কাছে আমার পাওনা ৫ লক্ষ টাকা । তাদের সম্পর্কে কথা শুনে মাথার উপর যেন বিশাল একটা বাজ পড়েছে। কি করব বুঝতে পারছি না, ইচ্ছে করছে আত্মহত্যা করতে। ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা এতগুলো টাকা পয়সা সর্বোপরি তাকে আমি প্রাণের চেয়ে বেশি ভালবাসি। কি ছাড়ি কি নিই। সে থাকলে আমার সব কিছু থেকে যায়।
আমি প্রশ্ন করলাম আপনি কি করতে চান? যদি আপনার কাছে টাকা পয়সার কোন ডোকমেন্ট থাকে তাহালে আপনি সে গুলো পেয়ে যাবেন।
ভদ্রলোকঃ আমি চাই, সে আমার ছোট বাচ্চাদের জন্য, তাদের মায়ের অভাব গুছানোর জন্য, আমার ভালবাসার জন্য সে আমার সাথে সংসার করুক।
তাহলে বর্তমানে সমস্য কোথায়?
ভদ্রলোকঃ ভাই আমার বউ বলছে সে আমার সাথে সংসার করবে না। সমস্যাটা সেখানে। আমি আমার আগের কোন টাকার হিসাব চাইনা। তারা আমার কোন টাকা ফেরত না দিক কিন্তু শুধু যে কোন প্রকারে আমার বউকে বুঝিয়ে সুজিয়ে ফেরত দিক। আমি শুধু এটাই চাই।
আমি তাকে বললাম, তাহলে আপনি সরাসরি আপনার স্ত্রীর সাথে বাচ্চাদেরকে সামনে রেখে দীর্ঘ সময় নিয়ে কথা বলুন। তাকে বুঝান, সন্তানদের ওয়াসতা দিন। একটু মিনতি করুন। হয়ত সুফল হতে পারে। ভদ্রলোক আচ্ছা বলে চলে গেলেন।
২ সাপ্তাহ পর তিনি আবার আসলেন, ভদ্রলোককে একটু প্রফুল্ল প্রফুল্ল বোধ হচ্ছে। বললেন, কাজী সাহেব চলেন, চা খাই। আমিও তার ডাকে সাড়া দিলাম। স্থানীয় বাজারের ভালমানের একটি হোটেলে নিয়ে গেলেন। নিরিবিলি জায়গা নিয়ে বসলেন। নাস্তার ওডার দিয়েই বললেন, আপনার পরামর্শে কাজ হয়েছে। আমিও তার কথা শুনে মনে মনে পুলকিত হলাম। চা পর্ব সারতে সারতে অনেক শলা পরামর্শ দেয়া নেয়া হল এবং তাকে সতর্ক করলাম যেন আপনার স্ত্রী বাপের বাড়ীতে যেন খুব কম যায়, গেলেও দিনে দিনে চলে আসে, অবশ্য ভদ্রলোকে শ্বশুরবাড়ী তার বাড়ীর চেয়ে ১মাইল তফাত। তাকে বললাম, ঘরে যেন একটি মোবাইল থাকে এবং সেটি থাকবে আপনার মায়ের নিকট, প্রয়োজনে চেয়ে নিবে। কথার ফাঁকে ভদ্রলোক জানালেন, আগামী সাপ্তাহে তিনি বিদেশ চলে যাবে। সেই দিনের মত হ্যান্ডশীপ করে বিদায় নিলাম।
ভদ্রলোক স্ত্রীর প্রেমে মজা, যে যাই বলুক স্ত্রীর কথাই শিরধার্য, স্ত্রীর সকল ন্যায় অন্যায় আবদার অকপটে মেনে নেন। হাদীসে আছে, প্রেম মানুষকে অন্ধ ও বধির বানিয়ে দেয়। ভদ্রলোকের বেলায়ও হয়েছে সেটি।
ভদ্রলোক বিদেশে যাওয়ার কিছুদিন পর, স্ত্রীজান মোবাইল নিয়ে শ্বাশুড়ীর সাথে বাঁধিয়েছে ঝগড়া। স্ত্রী স্বামীকে জানিয়েছে তার মা বউকে নাকি মোবাইল ধরতে নিষেধ করেছে, মোবাইল নাকি নষ্ট হয়ে যাবে। অবশ্য স্ত্রী ইতি পর্বে একটি মোবাইল পানিতে চুবিয়েছে, যেন আগামীতে শ্বাশুড়ী মোবাইল ধরতে না দেয় এবং তা নিয়ে স্বামীর কাছে শেকায়েত করতে পারে। ভদ্রলোক বাচ বিবেচনা না করে স্ত্রীর জন্য একটি দামী মোবাইল পাঠিয়ে দিল। বাস! স্ত্রীর গায়ে স্বাধীনতার হওয়া লাগছে। জেঠাত ভাইয়ে সাথে সারা রাত কথা চলে। শ্বাশুড়ী জিজ্ঞেস করলে, উত্তর আপনার ছেলে কথা বলেছে। শ্বাশুড়ীও খোশ বউও খোশ ঐদিকে স্বামীও খোশ। এভাবে ৪ মাস যেতে না যেতে ভদ্রলোকে স্ত্রী শ্বাশুড়ীর সাথে ঝগড়ার মাত্রা বাড়ীয়ে দিল। সারাক্ষণ বউ শ্বাশুড়ীতে লেগে থাকতো। এ নিয়ে পাড়া মহল্লায় কয়েকবার শালীশ বিচারও হয়েছে। পারিবারিক মান্যগন্য ব্যক্তিবর্গে উপস্থিতে কয়েকবার আপোষ ও সুরাহা হয়েছে কিন্তু স্ত্রী নাছোড় বান্দি সে তার বাপের বাড়ীতে যাবে এবং জেঠাত ভাইয়ের সাথে কথা বলবে দেখা করবে। পুরাতন ইয়ার তো মন মানে না। একদিন ঝগড়ার এক পর্যয়ে শ্বাশুড়ীর গায়ে হাত উঠিয়েছে। এবার পারিবারের লোকজন বউয়ের কাছে হার মানলো, স্বামী ভদ্রলোক প্রেমে নুয়ে গেল একধম মাটি হয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি ফরমান জারি করলো বউকে যেন, তার বাপের বাড়ীতে থাকতে দেওয়া হয়। বউয়ের খরচ পাতি প্রতি মাসে শ্বশুর বাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বউতো খুশিতে আটখানা। সে যা চাইছে হয়েছেই তাই।
দিন যায় রাত হয়, রাত যায় দিন হয়, সবাই আপন আপন কাজে ব্যস্ত , এখন বউ দুই জনকে খুশি করতে ব্যস্ত, একজনকে কথা দিয়ে অন্যজনকে অন্য কিছু দিয়ে। কেউ কারো খবর রাখে না, বেখবর জগত হাঠৎ খবর হল ভদ্রলোকে বউ জেঠাত ভাইকে নিয়ে পালিয়েছে। ভদ্রলোকে দুই সন্তান এখন তাদের দাদুর কাছে। বউ জেঠাত ভাইয়ের কাছে। ভদ্রলোক বেচারা পরামর্শ এর জন্য আমার কাছে। ভদ্রলোক ঘুম থেকে জেগেছেন। এখন তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন, প্রেম করবেন নাকি বিয়ে করবেন। বর্তমানে তিনি কোনটাই করতে নারাজ।
বিষয়: বিবিধ
১৫৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন