বন্ধুকথা- ২

লিখেছেন লিখেছেন আহসান সাদী ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:০২:৫২ সকাল

আমার এক বন্ধুকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে বলেছিলাম, 'সে খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি ইউনিভার্সিটির অমুক বিষয়ে পড়াশোনা করে থাকে'।

প্রতিদিন ব্রেকফাস্টে তার আঠারোটা রুটি খাওয়ার চরম মিথ্যাটাও লোকজন অবলীলায় বিশ্বাস করে ফেলতো কেনো কে জানে! আঠারোটা রুটির বিষয়টা হঠাৎ করেই মাথায় চলে এসেছিলো। বানিয়ে বানিয়ে কিছু মুখরোচক গল্প দুয়েক জায়গায় বলেছিলাম হয়তো। ইউনিভার্সিটির সংস্কৃতিটাই এমন ছিলো, উল্টোপাল্টা কথা বাতাসের গতিতে ছড়িয়ে যেতো। এক শুভাকাঙ্ক্ষী বড়ভাই সেই বন্ধুটিকে আলাদা ডেকে নিয়ে একদিন বোঝালেন, 'শোনো তোমার ওজন কমাতে হবে। এটার জন্যে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। প্রতিদিন সকালে আঠারোটা রুটি খেলে এটা কেমনে হবে'! আমার বন্ধুটি বুঝে ফেললো এই কথার উৎস কি? বলা বাহুল্য সেই বড় ভাইটাকে আমি চিনতাম না। একান ওকান হয়ে উনার কানেও সেই মিথ্যাটা সত্য হয়ে পৌঁছেছিলো। পরবর্তীতে যেদিন আমার সাথে দেখা, তার প্রথম কথাটা ছিলো, 'আই উইল কিল ইউ'!

এই মোটাসোটা বন্ধুর আবার বড় বড় জিনিপত্রের দিকে ঝোঁক ছিলো বেশী। তার হাতঘড়িটা ছিলো বিশাল। এক বন্ধু তাই ঘোষণা করেছিলো 'এটা পৃথিবীর সবচাইতে ছোট দেয়ালঘড়ি'। তার রুমে একদিন বন্ধুরা বসে গল্প করছিলাম। এক বন্ধু গোসল করতে চাইলো। সেই বন্ধুটির কাছে টাওয়াল চাইলো। বিশাল তোয়ালেটা দেখে তার মন্তব্য ছিলো, 'আমি টাওয়াল চেয়েছি, তোমার ঘরের কার্পেট নয়'।

আমার মনে পড়ে দুই দিনের সফরে আমি আর সেই বন্ধু শহরের বাইরে বেড়াতে গেলাম। আসার সময় হাত প্রায় একদমই খালি। অতিরিক্ত কোনো টাকা হাতে নেই। বাস না নিয়ে ভাবলাম মাইক্রোতে সিট ভাড়া করে চলে আসবো। মাইক্রো ড্রাইভার জানালো একশো আশি টাকা লাগবে। এত টাকা আমাদের সাথে ছিলো না। হিসেব করলাম, মাথাপিছু ষাট টাকা হলে দুইজনে একশ বিশ টাকা হবার কথা। একশ আশি কীভাবে, জানতে চাইলাম। ড্রাইভার নির্বিকারভাবে জানালো 'আপনাদের জন্যে সীট তিনটা লাগবে, দুই সিটে আপনাদের হবে না'! কষ্ট করে তাই বাসেই ফিরতে হলো।

এই বন্ধুকে নিয়ে একজন মন্তব্য করেছিলো, পৃথবীর তিনভাগ জল আর একভাগ আবীর (আসল নাম নয়)।

আমাদের এমন আরো হাজারো খোঁচা এবং চাপিয়ে দেয়া অপবাদ হাসিমুখে সয়ে যাওয়া সেই মানুষটা এবং সেইসব দিনগুলি 'মিস' করি ভীষণ। আল্লাহ সবার সহায় হউন।

বি.দ্র. সেই বন্ধুটি বর্তমানে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক। সেখানে তার কামরাটাও নিশ্চয় খুব বড়! কে জানে, হবে হয়তো!!

বিষয়: বিবিধ

১২৭৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

268999
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৫৮
আফরা লিখেছেন : আপনার বন্ধু ঠিক আছে টাকা দিয়ে জিনিস কিনব তো ছোট টা কিনব কেন ।

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০২:২৬
212816
আহসান সাদী লিখেছেন : এজন্যেই সে ইউনিভার্সিটিতে ব্যাবসা পড়ায়!
269702
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৪৪
এ এম ডি লিখেছেন : Thumbs Up
270106
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:৫৯
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : আমি কিন্তু মোটেই মোটা না, কিন্তু বিরাট আকারের জিনিস বযাবহার করতে ভালবাসি। Worried
298948
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০১:৩০
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : বড় কথা হল আপনার লিখায় রম্যতার পাশাপাশি দারুণ হাত আছে। অথচ আপনি লিখেনা। জীবনে থেকে নেয়া গল্পই সেরা গল্প। ধন্যবাদ।
২৬ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০২:৪৫
258047
আহসান সাদী লিখেছেন : লেখার চাইতে আলস্য যে আমার বড় আদরের!হাহাহা।

আপনার রায় জেনে অসম্ভব ভালো লাগলো মজুমদার ভাই। আপনাদের মতো এমন অভিভাবকতূল্য অগ্রজেরা আছেন বলেই প্রায়ই মনে পড়ে যায় লেখালেখির কথা। সোনার বাংলাদেশ ব্লগে তৈরী হওয়া পরিবারের কথা। কেনো জানি টুডে ব্লগ আমার পিসিতে 'ওপেন' হতো না। আজ কীভাবে জানি হয়ে গেলো। ইনশাআল্লাহ আমি নিয়মিত থাকবো।

আপনি আছেন তো?
301554
২৪ জানুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আপনার লেখাগুলো পড়ি পাঠক হয়ে কিন্তু মন্তব্য করার সময় ও সুযোগ হয়ে ওঠে কম তাই করিনা। তবে আপনার লেখা মিস করি। পারলে নিয়মিত লিখুন।
২৬ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০২:৩৭
258046
আহসান সাদী লিখেছেন : ধন্যবাদ। জেনে ভালো লাগলো এবং আমি অনেকগুলো মাস পর আজই এই ব্লগে প্রবেশ করতে পারলাম!

(রিপ্লাই দিতে সামান্য একটু দেরী হয়ে গেল মনে হয়!)

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File