জ়ীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফাদ - মৃত্যুকালে শয়তানের শেষ চেস্টা

লিখেছেন লিখেছেন এলিট ২০ মার্চ, ২০১৪, ০৮:৫১:৩৯ রাত



দুনিয়াতে আমরা এসেছি একটা পরীক্ষা দিতে। আমাদের জীবনটাই পরীক্ষা। দুনিয়া হল পরীক্ষার হল। এই পরীক্ষার জন্য মুল পাঠ্যবই কোরআন, সহযোগী (গাইড) বই হাদিস। এই পরীক্ষা কিভাবে দিতে হবে তা প্রাক্টিকাল দেখিয়েছেন মহানবী (সাঃ)। সেই সাথে আমাদের আরো সুবিধার জন্য রয়েছে সঠিক উত্তর লেখা হাজার হাজার বই, আছে সঠিক শিক্ষক (ইসলামিক পন্ডিত, আলেম)। ওদিকে আবার পরীক্ষাতে আমাদের ক্ষতির জন্য, বাজারে ভুল উত্তর লেখা বই রয়েছে, ভুল শিক্ষা দেওয়া লোক সমাজে রয়েছে। সর্বপরি রয়েছে এই পরীক্ষাতে সর্বক্ষনিক বিরক্ত করে, ভুল বুদ্ধি দিয়ে আমাদেরকে ফেল করাতে চাওয়া এক বিশাল ব্যাক্তি। হ্যা, আমি ইবলিশ শয়তানের কথা বলছি। এই পরীক্ষার খাতা জমা দেওয়া হবে মরনের সময়। আর এই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হবে হাশরের ময়দানে। এর পরে, পুরস্কার ও শাস্তি তো আমরা সবাই জানি।

ইবলিশ শয়তান আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। সে চ্যালেঞ্জ করেছিল যে সে সব মানুষকে এই পরীক্ষায় ফেল করিয়ে ছাড়বে। এটা করার ক্ষমতাও আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। শয়তান আমাদেরকে কোন কিছু জোর করে করাতে পারে না। সে যেটা পারে সেটা হল বুদ্ধি দিতে। আমাদেরকে চিন্তা দেয়। বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করে। এসবের ফলে আমরা নিজের ইচ্ছাতেই পাপ করি। এটা শয়তান আমাদের সারা জীবন ধরে করে। সবার সাথে একসাথে করে। একইসাথে সারা দুনিয়ার মানুষকে কু-বুদ্ধি দেবার ক্ষমতা শয়তানের আছে। সারা জীবনে শয়তান কি কি কু-বুদ্ধি দেয় সেটা বলে শেষ করা যাবে না। এই লেখাতে আমি মানুষের মৃত্যুর সময় শয়তান কি করতে পারে তার একটা ধারনা দেবার চেস্টা করব।

মৃত্যু একটি চীর সত্য। জন্মিলে মরিতে হবে। মৃত্যুর পরে আবার বেচে ফিরে আসা যায় না। কাজেই এ সম্পর্কে আমরা যাই বলি না কেন , সবই শোনা কথা। মৃত্যু আসলে এর থেকে হাজার গুন বেশী ভয়বাহ। মৃত্যু অত্যান্ত যন্ত্রনাদায়ক। এর সাথে যোগ হয় লম্বা সময়। আমরা দেখি একজন মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করে এক মিনিটেরও কম সময়ে মারা যায়। সেই ক্ষুদ্র সময়টি ওই মৃত্যু পথযাত্রীর কাছে এক বছর বা তার চেয়েও বেশী লম্বা হতে পারে। আইনেস্টাইনের থিওরী অফ রিলেটিভিটি এমনই বলে। না, ওখানে মৃত্যুর কথা বলা নেই। আইনেস্টাইন নিজে, সুত্রটি সহজে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন সারা রাত লেখাপড়া করলে রাত লম্বা মনে হয় আর সারা রাত আড্ডা দিলে রাতটা ছোট মনে হয়। একই পরিমান সময়, দুজনের কাছে দুই রকমের মনে হয়। এভাবেই ক্ষুদ্র সময়টা মৃত্যু পথযাত্রীর কাছে লম্বা মনে হয় আর লম্বা সময় ধরে মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করতে থাকে। আমরা সবাই মারা যাব। এটা নিয়ে আমাদের সবারই ভাব উচিত।

এই যন্ত্রনার সময় সারা জীবনের স্মৃতি মনে পড়ে। কোথায় কবে কি করেছেন, হয়ত ভুলেও গিয়েছিলেন, সেগুলোও মনে পড়ে। এই সময় শয়তান হাজির হয় শেষ চেস্টা করার জন্য। সেই একইভাবে বুদ্ধি, যুক্তি দিয়ে আমাদেরকে ফাদে ফেলার চেস্টা করে। যাতে তার ফাদে পড়ে আমরা যেন ঈমান নিয়ে না মরতে পারি। সে চেস্ট করে, মরার আগ মুহুর্তে আমরা যেন এমন কিছু বলি বা এমন কিছু চিন্তা করি যাতে আমাদের ঈমান দুর্বল বা নস্ট হয়ে যায়। সারা জীবন তো শয়তান আড়ালে থেকে বুদ্ধি দেয়। ওই শেষ চেস্টায় একেবারে সামনেও চলে আসতে পারে। চেস্টার কোন ত্রুটি করে না। শয়তানের শয়তানি বুদ্ধির ধরনই আলাদা। আমার মতন নগন্ন লোকের পক্ষে সেটার ধারনা দেওয়া সম্ভব নয়। তবুও উদাহরন দিচ্ছি বিষয়টা বোঝার জন্য।

আল্লাহ আপনার হায়াত বাড়িয়ে দিন। আপনার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে ওই যন্ত্রনাময় মুহুর্তে শয়তান আপনার মাথায় বুদ্ধি , চিন্তা দিল

- আচ্ছা , তুমি তো সারা জীবন আল্লাহকে বিশ্বাস করে আসলে। ওদিকে তোমার পাশের বাসায় অন্যধর্মী ব্যাক্তি তো সারা জীবন কুফরী করে আসছে। সে তো তোমার চেয়ে সব দিক থেকে ভাল আছে। বুঝলাম যে মৃত্যুর পরে তুমি পুরস্কার পাবে। কিন্তু দুনিয়াতে তুমি কি পেলে? আল্লাহ তোমাকে দুনিয়াতে কম দিয়েছে , তাই না? দুনিয়াতে কম দিল আর তুমি বোকার মতন আশা করে আছ যে তোমাকে মৃত্যুর পরে বেশী দিবে। তুমি কি মৃত্যুর পরের জীবন দেখেছ? ওখানে যে বেশী পাবে তার গ্যারান্টি কি?

আমি (লেখক) জানি যে আপনাদের সবারই এই প্রশ্নের উত্তর জানা আছে। কিন্তু এই প্রশ্নটা এমন কায়দার যে, এটা নিয়ে চিন্তা করতে গেলেই আপনাকে চিন্তা করতে হবে, আল্লাহ কি আসলেই আমাকে কম দিয়েছে? মৃত্যু পরে পুরস্কার পাব, ভাল কথা, কিন্তু আমি আল্লাহর পথে থেকেও দুনিয়াতে কম পেলাম কেন? আপনাকে চিন্তা করতে হবে আমি কি আসলেই মৃত্যুর পরে পুরস্কার পাব? এসব চিন্তাটাও কিন্তু আল্লাহর প্রতি এক প্রকারের অবিশ্বাস। এটা ঈমানের দুর্বলতা। মৃত্যুর সময় ওই যন্ত্রনাদায়ক মুহুর্তে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এই চিন্তা করে আমরা কিন্তু এক পর্যায়ে ঠিক মরার আগে ঈমানহীন হয়ে যেতে পারি।

শয়তান হয়ত চিন্তা দিয়ে দিল - আচ্ছা আল্লাহ যে এক, তার কি প্রমান আছে তোমার কাছে?

এখানে আপনি যদি চিন্তা করেন - আল্লাহ যদি এক না হোত তাহলে এটা হোত না , সেটা হোত না ইত্যাদি। এখানেও কিন্তু আপনি “আল্লাহ যদি এক না হোত” কথাটি চিন্তা করে ফেলেছেন। এই চিন্তাটিই প্রমান করে দিচ্ছে যে “আল্লাহ এক” এই ধারনাটা আপনার মনে অতটা পোক্ত নয়। আপনার কিছুটা হলেও সন্দেহ আছে তাই আপনি এর সপক্ষে যুক্তি খুজছেন।

এভাবে শয়তান মৃত্যুর আগ মুহুর্তে বিভিন্ন শয়তানী প্রশ্ন ও চিন্তা দিয়ে আমাদের ফাদে ফেলতে চাইবে। এসব নিয়ে চিন্তা করতে গেলেই আমরা নিজের অজান্তেই এমন কিছু চিন্তা করে ফেলব যা আমাদের ঈমানকে নস্ট করে দিবে। মৃত্যুর সময় ঈমান নিয়ে না মরতে পারলে সেটা হবে পরীক্ষার খাতায় অনেক কিছু লেখার পরেও গোল্লা পাওয়ার মতন।

এখানেই শেষ নয়। শয়তান যখন আমাদেরকে চিন্তা দিতে পারে তখন আমাদের ব্রেনকে কন্ট্রোল করে আমাদেরকে আজগুবী জিনিস দেখাতেও পারে। যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় হেলুসিনেশন বলে। বাংলায় ইন্দ্রিয়ভ্রম। যা নেই সেটা দেখা বা শোনা বা অনুভব করা। শয়তান এখন এটা করছে না কারন আজকে এটা করলে, কালকে ঘোর কেটে যাবার পরে, আপনি শয়তানের অস্তিত্ব আরো ভাল বুঝতে পারবেন। বাকী জীবনে আপনাকে ধোকা দেওয়া শয়তানের জন্য কঠিন হবে। মৃত্যুর মুহুর্তে তো সময় শেষ। তাই ওই সময় সব রকমের চেস্টা শয়তান করবে। সব রকমের জিনিস দেখাবে। সব রকমের রূপ ধারন করবে।

আপনি যদি মনে করেন যে শয়তান বড় দাত, শিং ও লেজ নিয়ে আপনার সামনে হাজির হবে তাহলে ভুল করবেন। এমন হলে তো আপনি তাকে চিনে ফেলবেন। সে আসবে দাড়িওয়ালা নুরানী চেহারা নিয়ে, যাকে দেখলেই আপনার ভক্তি করতে ইচ্ছা হবে। এসে মিস্টি ভাষায় আপনাকে যা বলবে তা শুনতে গেলও আপনার ইমান হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ শুনে মনে হবে কত ভাল কথা বলছে। হয়ত আপনার মৃত কোন মুরব্বীর রূপ নিয়ে আসবে। মা-বাবার রূপ নিয়ে আসবে। এমন কারো রূপ নিয়ে আসবে যার কথা আপনি মান্য করেন। শয়তান সারা জীবন আপনাকে কু-বুদ্ধি দিয়েছে। আপনাকে হাড়ে হাড়ে চিনে। কি কায়দা করলে আপনি কুপোকাত হবেন সেটা সে জ়ানে। হয়ত দেখবেন দাড়ীওয়ালা সুন্দর চেহারা সুন্দর আতরের গন্ধ মাখানো একজন এসে বলছে, “আমিই নবী মুহাম্মদ। তোমাকে নিতে এসেছি” । তাকে রাসুল (সাঃ) মনে করাটাও কিন্তু ঈমান কিছুটা নস্ট করে দেয় । রাসুল (সাঃ) আমাদের মতন রক্ত-মাংশের মানুষ ছিলেন। তিনি মারা গেছেন দেড় হাজার বছর আগে। অন্য কোন মানুষের মৃত্যুর সময় তিনি গিয়ে দাড়াতে পারেন না। সেই ক্ষমতা তার নেই। অনেকে বলে শয়তান তো রাসুল (সাঃ) এর রূপ ধারন করতে পারে না। একথা ঠিক। কিন্তু রাসুল (সাঃ) কে আমরা দেখিনি। কাজেই যে কোন দাড়িওয়ালা নুরানী চেহারার রূপ ধারন করেই আমাদের লোকা বানানো যাবে। শয়তান সেই চেস্টাই করবে। আল্লাহকেও তো আমরা দেখিনি। শয়তান যে কোন পছন্দসই রূপ নিয়ে হয়ত এসে বলল “আমি আল্লাহ। এত দিন যা জ়েনেছ সব মিথ্যা। সবই ষড়যন্ত্র। ইসলাম আমার দেওয়া ব্যাবস্থা নয়। তুমি এখন তওবা কর আর আমাকে আল্লাহ মেনে নাও। তাহলেই তুমি জান্নাত পাবে।“ তার কাছে যুক্তি প্রমানও থাকবে। হয়ত অনেক অসাধ্য সাধন করে নিজেকে আল্লাহ প্রমানের চেস্টা করবে। মৃত্যুর যন্ত্রনায় কাতর হয়ে এই ফাদে পা দিলে সব শেষ।

মোট কথা শয়তান সব রকমের চেস্টা করবে। ওটা তার শেষ চেস্টা কাজেই সেটা হবে আপ্রান চেস্টা। ইসলাম এর খুটি নাটি নয়, মুল বিষয় সম্পর্কে যদি আমাদের সঠিক ধারনা থাকে তাহলে আমরা অনেকাংশে রেহাই পাব। আর শয়তানের যে কোন চিন্তা ও প্রশ্ন মাথায় ঢুকতে না নিয়ে শুধুই আল্লাহর নাম নিতে হবে আর বলতে হবে “আল্লাহ আমাকে রক্ষা কর”। আমি এত লেকচার দিচ্ছি, নিজে কতটুকু পারব আল্লাহই জানে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শয়তানের ধোকা থেকে বাচার তওফিক দান করুন। আমাদের সবাইকে ইমান নিয়ে মরার তওফিক দান করুন, আমীন।

বি দ্রঃ মৃত্যুর পরে পুরস্কার (জান্নাত) সম্পর্কে আমাদের একটি ভুল ধারনা আছে। তা হল আমাদের সৎ কর্মের বিনিময় বা পুরস্কার হল জান্নাত। এটা আসলে ঠিক নয়। আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাত দান করবেন তার রহমত থেকে, দয়া করে। তবে এই দয়াটা পেতে হলে ইসলামের পথে থাকতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

৩৪৮১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

195446
২০ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:১৬
মাটিরলাঠি লিখেছেন : আল্লাহ আমাদেরকে ঈমান ও সৎ আমল সহ মৃত্যু দান করুন। যাযাকাল্লাহু খাইরান।
195485
২০ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:১১
ফেরারী মন লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের সবাইকে শয়তানের ধোকা থেকে বাচার তওফিক দান করুন। আমাদের সবাইকে ইমান নিয়ে মরার তওফিক দান করুন, আমীন।
Praying

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File