দেশে দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বিশেষভাবে ইসলাম নিষিদ্ধকরণ,পরবর্তী পরিস্থিতি এবং আজকের বাংলাদেশ...

লিখেছেন লিখেছেন মেঘাচছন্ন আকাশ ১০ মার্চ, ২০১৩, ০১:০৭:০৩ দুপুর

আসসালামু আলাইকুম,

কষ্ট করে হলেও পুরো টা পড়ার জন্য অনুরোধ রইলঃ

নিকট ইতিহাসে পৃথিবীর কয়েকটা দেশে রাজনীতিতে ধর্ম, বিশেষভাবে ইসলাম,

নিষিদ্ধ হওয়ার পর কি ঘটেছে তা অন্তত মুসলিমদের জানা থাকা উচিত। নয়ত নিজেদের অবধারিত কিছু ফলাফলের জন্য নিজেদেরকেই কী বুঝাবো, আল্লাহর কাছে

যেদিন জবাবদিহিতা করতে হবে, সেদিনই বা কী জবাব দিবো আমরা ?

☻ তুরস্ক ☻

১৯২৪ সালের পয়লা মার্চ তুরস্কের পার্লামেন্টে কামাল পাশা ঘোষণা করেন

“ইসলাম এখন থেকে আর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে না। এতে করে

ধর্ম হিসেবে ইসলাম এক মহত্তর মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হলো”।

রাজনীতির নোংরা ময়দান থেকে সরিয়ে গিলাফ মুড়িয়ে তাকে তুলে রেখে

ইসলামের পবিত্রতা রক্ষার পর তুরস্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিলো।

- ১৯২৪ সালে মার্চের তিন তারিখ ‘ইউনিফিকেশন অভ এডুকেশন’ আইনের মাধ্যমে

মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম শিক্ষা নিষিদ্ধ হয়েছিলো।

- ‘হ্যাট পরিধান আইন’ এর মাধ্যমে সরকারী কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানের সাথে

জড়িত সবাইকে পানামা হ্যাট পরার আদেশ দেয়া হয়। ট্রাডিশনার টার্কিশ ফেজ

টুপি পরা নিষিদ্ধ করা হয়।

- ১৯২৫ সালে সব সুফী খানকা ও মাজারকে নিষিদ্ধ করা হয়, এবং যাদুঘরে

রুপান্তরিত করা হয়। দেশের সব মসজিদকে সরকারী মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ করা

হয় এবং নতুন মসজিদ নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়।

- ১৯২৮ সালে কামাল পাশা আরবী অক্ষরের পরিবর্তে ল্যাটিন (ইংলিশ) অক্ষরে

তুর্কী ভাষা লেখার প্রচলন করেন।

- ইসলামী হিজরী ক্যালেন্ডারকে নিষিদ্ধ করে ইংলিশ গ্রেগরিয়ান

ক্যালেন্ডারকে সরকারী ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করেন।

- সব ধর্মীয় স্কুল নিষিদ্ধ করেন।- ১৯৩২ সালে আইন করে আরবীর পরিবর্তে

টার্কিশ ভাষায় কুরআন শরীফ পাঠের প্রচলন শুরু করেন। নামাযে টার্কিশ

ভাষায় কুরআন পাঠ বাধ্যতামূলক করেন। আযান আরবীর পরিবর্তে র্টার্কিশ

ভাষায় দেয়া বাধ্যতামূলক করেন। এমনকি স্রষ্টাকে আরবী শব্দ ‘আল্লাহ’ নামে

না ডেকে টার্কিশ শব্দে উচ্চারণ করার নিয়ম করেন।

- ১৯৩৪ সালে ‘নিষিদ্ধ পোষাকের আইন’ প্রনয়ণ করেন। লম্বা পোষাক ও পর্দার

পরিবর্তে পাশ্চাত্য স্যুট এবং স্কার্টকে অফিসিয়াল পোষাক হিসেবে গ্রহণ

করা হয়। বোরকা ও পর্দাকে নিরুৎসাহিত এবং সীমিত করা হয়।

- বিয়ে ও তালাকের আইনের ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়াকে অকার্যকর ঘোষণা করে

ইউরোপিয়ান সিভিল কোড প্রনয়ণ করেন এবং বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করেন।

১৯৩৮ সালে কামাল আতাতুর্ক মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত এইসব নিয়ম ও নিষেধ

প্রচলন করতে গিয়ে হাজার হাজার গ্রাম ধ্বংস করে দেয়া হয়, লক্ষ লক্ষ

মানুষকে গ্রেফতার ও পুলিশী নির্যাতন করা হয় এবং শুধুমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব

তুরস্কেই ত্রিশ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়।

☻ সোভিয়েত ইউনিয়ন☻

রাজনীতি ও সমাজনীতি থেকে ধর্মকে তাড়িয়ে দিয়ে মহান বামপন্থায় উজ্জীবিত

হয়ে এ শতাব্দীর শুরুর দিকে বৃহত্তর সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠিত হয়।

সোভিয়েতের পনেরোটি রাষ্ট্রের ভেতর ছয়টি ছিলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠঃ

আজারবাইজান, কাজাখস্থান, কিরঘিজিয়া, তাজিকিস্থান, তুর্কমেনিস্থান এবং

উজবেকিস্থান। বামপন্থীদের কেবলা এই সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯২২ সালে মহামতি

জোসেফ ষ্ট্যালিন ক্ষমতায় আসেন। তিনি রাজনীতি থেকে ইসলামকে বিযোজিত করে

ইসলামের খেদমত করতে গিয়ে অনেক ঐতিহাসিক অবদান রাখেন।

- সেন্ট্রাল এশিয়ার সব মসজিদকে তিনি বন্ধ করে দেন এবং গুদামে রুপান্তরিত করেন।

- ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব, পন্ডিত এবং ইমামদেরকে গণহারে হত্যা করা হয় এবং

সাইবেরিয়াতে নির্বাসন দেয়া হয়।

- সব মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়া হয়, হজ্বযাত্রা বেআইনী করা হয়, ওয়াক্ফ

সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হয় এবং ওয়াকফ করা নিষিদ্ধ করা হয়।

- মহিলাদের পর্দা করা নিষিদ্ধ করা হয় এবং কমিউনিষ্ট পার্টির ‘হুযুম’

আন্দোলনের মাধ্যমে পর্দা করা মহিলাদের লাঞ্চিত করা হয়, পর্দাকে সমাজ

থেকে উৎখাত করা হয়।

- ১৯২২ থেকে ১৯৫২, এই ত্রিশ বছরের ষ্ট্যালিন শাসনামলে তিন লাখেরও বেশি

মুসলিম জনসংখ্যাকে তাদের বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া হয় এবং

পঞ্চাশহাজারেরও বেশি মুসলিম বিভিন্ন নির্যাতনে নিহত হয়।

☻ চীন ☻

বামপন্থী আদর্শের আরেক কেবলা চায়নাতে ১৯৪৮ সালে ষ্ট্যালিনের বন্ধু (অনেক

পন্ডিতের মতে অনুসারীও বটে) মহামতি মাওজেদং (মাওসেতুং) ‘সাংস্কৃতিক

বিপ্লব’ ঘটান। তিনি রাষ্ট্র ও রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করতে প্রভুত

গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

- মসজিদগুলোকে শুকরের খামারে রুপান্তরিত করা হয় এবং তাতে ইমাম ও ধর্মীয়

ব্যাক্তিত্বদেরকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

- মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উইঘুর ভাষাকে আরবী অক্ষরের পরিবর্তে ল্যাটিন

অক্ষরে লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়।

- মাদ্রাসাগুলো নিষিদ্ধ ও বন্ধ করা হয়।

- ইমাম, আলেম ও ইসলাম ধর্ম পরিচয় প্রকাশকারী ব্যাক্তিদেরকে গ্রেফতার ও

নির্যাতন চালানো হয়।

- সব মুসলিম উইঘুরদেরকে ত্রিশহাজার ‘কমিউন’ নামের ঘেরাও করা ঘেটো গ্রামে

রাখা হয় এবং সরকারের অধীনস্থ বাধ্যতামূলক শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া

হয়।

- চার লাখেরও বেশি মুসলিমকে মৃত্যুদন্ড ও নির্যাতনের মাধ্যমে নিহত করা হয়।

- পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে মুসলিমদের হজ্বযাত্রাও নিষিদ্ধ করা হয়, যে আইন

বেশ কয়বছর পর গণদাবীর মুখে তারা আবার বাতিল করতেও বাধ্য হয়।

বেশি দিন আগের কথা না। এই বিগত শতাব্দীর প্রথম অর্ধভাগেই রাশিয়া, তুরস্ক

এবং চীনে, যেসব দেশে বিপুল সংখ্যায় মুসলিম জনসংখ্যা আছে, রাজনীতি থেকে

ধর্মকে পৃথক করার এইসব উদ্যোগ নেয়া হয়। তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষ

জাতীয়তাবাদের নামে এবং চীন ও রাশিয়াতে বামপন্থী কমিউনিজমের নামে এভাবে

ইসলাম ও মুসলিমদেরকে শিকার করা হয়েছে। সবগুলো ঘটনায় কিছু সাধারণ

বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

- প্রথমে শুরু হয় বেশ সুন্দর সুন্দর আদর্শ ও সমতার কথা দিয়ে।

- ধীরে ধীরে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে ব্যাবস্থা নেয়া শুরু হয়।

- পর্দা, পোষাক, দাড়ি ইত্যাদি ধর্মীয় চিহ্নও একসময় ব্যাবস্থার শিকার

হতে শুরু করে।

- সমাজজীবনে ইসলাম ও ইসলামী আচরণের বহিপ্রকাশকে একসময় অসহ্য বোধ হতে শুরু হয়।

- শেষপর্যন্ত নির্যাতন, নির্বাসন, গ্রেফতার ও হত্যাকান্ডের মাধ্যমে

রাজনীতি থেকে ধর্মকে পৃথক করার মহান আদর্শের চুড়ান্ত পর্যায়ের খেদমত

করা হয়।

বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িকতা, প্রগতিশীলতা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম

ইত্যাদি ইত্যাদি মনোহর শব্দ ও ভাষা দিয়ে বহুদিন যাবৎ ক্যাম্পেইন চলছে।

সংবিধানে এখন সেকুলারিজম আছে। এখন দাড়ি টুপি আর বোরকার কারণে পুলিশ

গ্রেফতার করে এইদেশে। কুরআন শরীফ ও হাদীসের বইসহ গ্রেফতার হলে জেহাদী বই

সামনে নিয়ে হাত পেছনে বাঁধা অবস্থায় ছবি আসে পত্রিকায়। আজ বামপন্থী

সৈনিকরা মুখ ফুটে ‘ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ’ করার দাবীতে হরতালও দিলেন।

তাদের এই যুগযুগান্তরের আকাংখার ছাইচাপা আগুনে বাতাসের যোগান দিচ্ছে

একাত্তর সালে জামায়াতে ইসলামীর ভুমিকা।

ভবিষ্যতে হয়তো আতাতুর্ক (তুর্কী জাতির পিতা) কামাল, চেয়ারম্যান মাও

অথবা মহামতি ষ্ট্যালিনের মতো কোন মহামতি এই দেশকে এগিয়ে বা পিছিয়ে

নিয়ে যাবেন, আমি হতাশ হবো না। প্রসববেদনা ছাড়া কোন মহৎ ঘটনা সাধিত

হয়না। এদেশের মানুষ বড় অনায়াসে বহুদিনের বিবর্তনে শিরক মিশ্রিত যে

ইসলাম জন্মসুত্রে পেয়েছে, তার মূল্য চুকিয়ে পেছনের দিকে না হাটলে

ভবিষ্যত ইতিহাসের গর্ভে যুগান্তকারী কোন বিপ্লব হয়তো নাও আসতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

২৩৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File