চরমোনাই মাহফিলে যোগ দিন : ৫,৬ ও ৭ মার্চ ২০১৪ইং রোজ:বুধ , বৃহঃ ও শুক্র বার।
লিখেছেন লিখেছেন এম এম নুর হোসাইন মিয়াজী ০৩ মার্চ, ২০১৪, ০৭:২২:০১ সন্ধ্যা
আল-হামদুলিল্লাহ!
আর মাত্র একদিন পরেই ঐতিহাসিক চরমোনাই মাহফিল শুরু হবে।
যে সকল বন্ধুরা অফলাইনে-অনলাইনে জেনে -নাজেনে চরমোনাইর বিরুদ্ধে বিষেদাগার করছেন!
তাদের কাছে আবেদন- অন্তত একটি বারের জন্য হলেও চরমোনাই মাহফিলে এবং এবারই আসার চেস্টা করুন।
মাহফিলের শেষ দিন মুনাজাতের পূর্বে সুওয়াল-জওয়াব পর্ব থাকে।
চরমোনাইর সম্পর্কে আপনার যে কোন সুওয়াল করে সন্তোষ জনক জওয়াব পাবেন বলে আশা বাদী।
পীর সাহেব চরমোনাই রহ. বলতেন এবং বতর্মান পীর সাহেব দা. বা. বলেন-আমি যতক্ষন করুআন-হাদিসের উপর অটল থাকবো এবং সে অনুপাতে কথা বলবো ততক্ষন আপনারা আমার কথা শুনুন ,মানুন।আর যখন আমি কুরআন-হাদিসের বাহিরে কথা বলি বা চলি তাহলে আপনারা আমাকে ভূল দরিয়ে দিবেন। আমি যদি সংশোধন না হই ,তাহলে আপনারা আর আমার কথা শুনবেন না।
বিষয়: বিবিধ
৩৩৬১ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আলহামদুলিল্লাহ।
এখন থেকে লাখ লাখ মুসল্লির জিকিরে মুখরিত হচ্ছে চরমোনাই’র ময়দান।
সারা দুনিয়া থেকে সরাসরি দেখা যাবে http://www.CharmonaiVS.net
পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বেচ্ছাসেবক ভাইগণ আগত মুসল্লীদের খেদমতে প্রস্তুত হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর রুহানিয়াত অর্জনের এ মার্কাজ চরমোনাই’র ময়দান আজ শুধু গুটি কয়েক লাখ মানুষ নয়; ছড়িয়ে পড়েছে কোটি মানুষের হ্নদয়ে।
মাহফিল সরাসরি সম্প্রচার করা হবে- http://www.CharmonaiVS.net এ ঠিকানায়।
এবং আমাদের সাথে ফেসবুকে সরাসরিও দেখতে পাবেন http://www.facebook.com/CharmonaiVS/app_196506863720166 এ ঠিকানায়।
কিন্তু এবারও মনে হয় মিস করলেন।
আগামীতে দাওয়াত রহিল।
বাঁশ বেয়ে ওঠা - এই আইটেমটা থাকছে এবারও ?
আল্লাহ না করুন!আমরা যেন আসলেই হতাভাগাদের কাতার ভূক্ত না হয়ে যাই।
শুধু তা-ই নয়। কুরআন হাদীস তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এ পীর-মুরীদীর কোনো দলীলের সন্ধান পাওয়া যাবেনা।
জানান! ইলেমি যোগতা কতটুকু আছে আগে বলুন।তার পর দেখি সমস্যা কোন যায়গা।কেন আপনি পীর-মুরিদি রাসূল সা, সাহাবা,তাবেই কারো যুগে কেন পেলেন না।
সারা পৃথিবীর লাখ লাখ আলেম-উলমা পীর-মুরিদির সাথে জড়িত!
তারা যদি পেয়ে থাকে আপনি কেন পেলেন না।
নিজের থলে ঠিক আছে কিনা আগে তা দেখুন।
প্রশ্নের উত্তর দিবেন আশা করি।দেখি আপনি পীর-মুরিদি কেন কোথাও পেলেন না।
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সাহায্য চাওয়া জায়েয নয়; বরং তা শিরক। পূর্বোক্ত আলোচনা থেকে তা কুরআন হাদীস ও ফিকাহর অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এই আলোচনার শেষ ভাগে পীর পোরস্ত আলিমদের তিনটি দলীল সম্পর্কে সংক্ষেপে দুটি কথা না বললে ভুল অপনোদন এবং বাতিলের প্রতিবাদ সম্পূর্ণ হবেনা।
উক্ত আলিম সাহেবদের আল্লাহ ছাড়া অন্য শক্তির নিকট-জীবিত বা মৃত অলী-আল্লাহর নিকট ইস্তেমদাদ ও সাহায্য চাওয়া জায়েয। আর তা প্রমাণের জন্য তারা কুরআন মজীদ থেকে তিনটি আয়াত পেশ করে থাকেন। প্রথম আয়াত হলো সূরা ছফ এর।
مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللَّهِ ۖ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنصَارُ اللَّهِ ۖ
-হযরত ঈসা(আ) বললেনঃ আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে আমার সহায়ক কে হবে? শিষ্যগণ বললো-আমরাই আল্লাহর কাজে আপনার সহায়ক। (আছ ছফঃ১৪)
আর দ্বিতীয় আয়াতটি হলো সূরা আল কাহাফ এর।
قَالَ مَا مَكَّنِّي فِيهِ رَبِّي خَيْرٌ فَأَعِينُونِي بِقُوَّةٍ أَجْعَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ رَدْمًا [١٨:٩٥]
-তোমাদের আর্থিক সাহায্য দেয়ার জরুরত নেই, কেননা আমার প্রভু আমাকে যে ধন সম্পদ দান করেছেন তা-ই যথেষ্ট; তবে তোমরা আমাকে দৈহিক সাহায্য করতে পার। তাহলে আমি তোমাদের ও তাদের মাঝে এক দৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেবো।(আল কাহাফঃ৯৫)
আর তৃতীয় আয়াত হলো সূরা ইউসুফ এর। আয়াতটি এইঃ
اذْكُرْنِي عِندَ رَبِّكَ فَأَنسَاهُ الشَّيْطَانُ ذِكْرَ رَبِّهِ فَلَبِثَ فِي السِّجْنِ بِضْعَ سِنِينَ [١٢:٤٢]
–তোমার প্রভুর(আজিজ মিসর) নিকট আমার কথা উল্লেখ করবে। কিন্তু শয়তান তাকে তার প্রভুর নিকট তার কথার উল্লেখ করতে ভুলিয়ে দিলো। ফলে ইউসুফ(আ)আরও কয়েক বৎসর কারাগারেই রইলো।
এই তিনটি আয়াত পেশ করে পীর-পোরস্ত আলিম নামধারী লোকেরা বলতে চান যে, যেভাবে হযরত ঈসা(আ)হাওয়ারী লোকদের নিকট সাহায্য চেয়েছিলেন, যেভাবে জুলকারনাইন জনগণের কাছে বলেছিলেন বাঁধ বাধার ব্যাপারে তোমরা শক্তি দিয়ে আমাকে সাহায্য করো এবং যেভাবে হযরত ইউসুফ(আ) কারাগার থেকে মুক্তিলাভের জন্য মুক্তিপ্রাপ্ত সাথীকে বাদশাহর নিকট সুপারিশ করতে বলেছিলেন, অনুরূপভাবে কোনো বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার জন্যে কিংবা বৈষয়িক মুক্তি লাভের আশায় যে কোনো জীবিত বা মৃত অলী আল্লাহর নিকট দো’আ প্রার্থনা করা যায় তা সম্পূর্ণ জায়েয। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে কথাটি প্রমাণ করার জন্য কুরআন মজীদের উক্ত তিনটি আয়াত পেশ করা হয়, তা এর কোনো একটি আয়াত থেকেও প্রমাণিত হয়না। প্রত্যেকটি আয়াতকে ভিত্তি করে বিচার বিবেচনা করলেই আমার এ কথার সত্যতা প্রমাণিত হবে। মনে রাখা আবশ্যক যে, আলোচনা হচ্ছে ‘ইস্তেমদাদে রূহানী’ ‘আধ্যাত্মিক উপায়ে সাহায্য পাওয়ার জন্য কারো নিকট দো’আ করা’ সম্পর্কে। আহলে সুন্নাত আল জামা’আতের আকীদা হলো এই যে, এ ধরনের সাহায্য প্রার্থনা একমাত্র আল্লাহরই নিকট করা যেতে পারে। কেননা এ ধরনের সাহায্য দানের ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই-থাকতে পারেনা। আর আল্লাহ তা’আলার সুস্পষ্ট নির্দেশ এই যে, এ ধরনের অবস্থায় কেবল আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে হবে। তওহীদী আকীদাও তাই। অন্য কারো নিকট সাহায্য চাইলে তা আকীদার দিক দিয়ে হবে শিরক এবং তওহীদী আকীদায় তাই হবে বিদয়াত। এ প্রেক্ষিতে আয়াত তিনটি যাচাই করলে দেখা যাবে যে, এর কোনোটিতেই এ পর্যায়ের সাহায্য চাওয়ার কথা নেই। সূরা ছফ এর প্রথমোক্ত আয়াতে হযরত ঈসা(আ) এর যে সাহায্য চাওয়ার কথা বলা হয়েছে ‘আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে আমার সহায়ক কে হবে?’ এ কথা বলে, সে সাহায্য তো কোনো ব্যক্তির বিপদে পড়ে চাওয়া সাহায্য নয়। হযরত ঈসা(আ) কোনো বিপদে পড়ে হাওয়াকারীদের সাহায্য চাননি। সাহায্য চাননি নিজের কোনো কাজের ব্যাপারে। কোনো আধ্যাত্মিক উপায়ে সাহায্য করার জন্যে ফরিয়াদ করা হয়নি এখানে। কুরআনের আয়াত مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللَّهِ‘আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে কে আমার সহায়ক হবে’ কথাটিই প্রমাণ করে সে সাহায্য চাওয়ার মূল লক্ষ্য হলো আল্লাহর দ্বীন প্রচার ও কায়েম করার ব্যাপারে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে তাদের আহবান জানানো হয়েছে মাত্র। কেননা দ্বীন কায়েমের জন্য চেষ্টা করা কেবলমাত্র ঈসা(আ) এরই দায়িত্ব ছিলনা, অন্য সব মুসলমানেরও দায়িত্ব ছিল। আয়াতটির সূচনাইতো হয়েছে আল্লাহর সাহায্যকারী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে।
বলা হয়েছেঃ হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।
এখন বাস্তবভাবে আল্লাহর সাহায্য কাজে আহবান করাতো নবীরই দায়িত্ব। হযরত ঈসা(আ) তো সে দায়িত্বই পালন করেছেন এই সাহায্য চেয়ে। এ কারণেই আল্লামা আলূসী সহ সব মু’তাবার তাফসীরেই এই আয়াতের তাফসীর করা হয়েছে এভাবেঃ
অর্থাৎ আল্লাহর সাহায্যের উদ্দেশ্য নিয়ে কে আমার সৈন্য হতে রাজি আছে? এতো কোনো আধ্যাত্মিক উপায়ে সাহায্য করতে বলার কথা নয়। এ তো হচ্ছে নবীর নব্যুয়তী দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সাহায্য করার আহবান। এ কাজ নবীর নিজের কোনো কাজ নয়। এ হচ্ছে সোজাসুজি ও সরাসরি আল্লাহর সাহায্যের কাজ। এর বড় প্রমাণ রয়েছে খোদ কুরআনের এ সূরাতেই উল্লিখিত তাদের জবাবে।তারা অগ্রসর হয়ে এসেছে ঈসা(আ) এর সাহায্যে নয়, আল্লাহর সাহায্য করার কাজে। তাই তারা বলেছেন- نَحْنُ أَنصَارُ اللَّهِ–আমরাই আল্লাহর সাহায্যকারী।আল্লামা আলুসী এখানেই লিখেছেনঃ আমার সাহায্য বলার মানে দুই শরীকের কাজকে একজনের পক্ষে অপরজনের কাজ বলা। আর যখন, এরা দুপক্ষই সমানভাবে আল্লাহর সাহায্য কাজে শরীক হয়েছে, তখন উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হলো এবং এ কথা বলাকে সহীহ সাব্যস্ত করে দিলো।
অতএব স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হযরত ঈসা(আ) কোনো অলৌকিক কাজ করার ব্যাপারে কোনো মৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য চাননি। তাঁর কথার সার হলোঃ বাঁধ বাঁধতে হবে, টাকা পয়সা আমার আছে। তোমরা বাস্তবভাবে সাহায্য করে আমার এ কাজে সাহায্য করো। এ হচ্ছে বৈষয়িক কাজে নিতান্ত বাস্তবভাবে কাজের সহযোগিতা করতে বলা। আর এ জগততো বাস্তব কার্য্কারণের জগত। এ জগতে এ ধরনের পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতা চাওয়া বা পাওয়া কিছুতেই কোনো আধ্যাত্মিক সাহায্যের ব্যাপার নয়।এ হলো মানুষের সামাজিক জীবনের জন্য অপরিহার্য্ ব্যাপার, যা সম্পূর্ণ জায়েয। তাই ইমাম ইবনে কাসীর এ আয়াতের তাফসীরে লিখেছেনঃ
-“অর্থাৎ আল্লাহ আমাকে রাজত্ব ও আধিপত্য যা দিয়েছেন, তা তোমাদের জন্য সব কিছুই থেকে উত্তম। কিন্তু তোমরা আমাকে শক্তি দিয়ে সাহায্য করো অর্থাৎ কাজ করে ও নির্মাণ কাজের জিনিসপত্র দিয়ে।”
আর তৃতীয় আয়াতটিও একটি বৈষয়িক তদবীর সংক্রান্ত ব্যাপার। হযরত ইউসুফ(আ) দীর্ঘদিন বিনাবিচারে আটক হয়ে পড়েছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন, বাদশাহ হয়তো তাঁর কথা ভুলেই গেছে। অতএব তিনি সহবন্দীর রেহাই পেয়ে জেল থেকে চলে যাওয়ার সময় বলে দিলেন যে, আমার কথা তোমার প্রভুর নিকট বলবে। এও যদি কোনো আধ্যাত্মিক সাহায্য চাওয়ার পর্যায়ের কাজ হয়ে থাকে তা হলে তো বলতে হবে যে, নবীও অ-নবীর নিকট অলৌকিক উপায়ে সাহায্য চাইতে পারেন। কিন্তু তা যে একজন নবীর পক্ষে কতখানি অপমানকর তা বলাই বাহুল্য।(এই পর্যায়ে ইমাম ইবনে কাসীর একটি হাদীস উদ্ধৃতি করেছিলেন। হাদীসটি এইঃ নবী করীম(স) বলেছেনঃ হযরত ইউসুফ(আ) এই যে কথাটি বলেছিলেন, অর্থাৎ তিনি যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট মুক্তি কামনা করেছিলেন, তা না করলে তিনি যতদিন জেলে ছিলেন ততদিন থাকতেননা। পরে ইবনে কাসীর লিখেছেন- এ হাদীসটি সাংঘাতিকভাবে যয়ীফ, অগ্রহণযোগ্য।) সবচেয়ে বড় কথা, একজন নবী অলৌকিক বা আধ্যাত্মিক উপায়ে(?) সাহায্য চাইলেন, আর শয়তান তা ভুলিয়ে দিলো, তার মুক্তির প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিলো! এরূপ কথা পীর-পোরস্তারাই বিশ্বাস করতে পারে, কোনো তওহীদবাদী আহলে সুন্নাত ব্যক্তি এরূপ বিশ্বাসকে মনের দূরতম কোণেও স্থান দিতে প্রস্তুত হতে পারেনা।
মোটকথা, এ কয়টি আয়াত দিয়ে পীর-পোরস্তরা যা প্রমাণ করতে চাইছে তা আদৌ প্রমাণিত হয়না। হয় শুধু ধোঁকাবাজি করা।
এই পর্যায়ে কুরআনের নিম্নোদ্ধৃত আয়াতটি আমাদের অবশ্যই সবসময় স্মরণে রাখতে হবে।
আরবী(**********)
-আল্লাহ ছাড়া আর যারা যারা আছে তারা তো তোমাদের কোনো উপকারও করতে পারেনা, ক্ষতিও না-তাই তাকে আদৌ ডাকবেনা। যদি ডাকো তাহলে তুমি জালিমদের মধ্যে গণ্য হয়ে যাবে।
মানুষ কাউকে ডাকে তাঁর কাছ হতে উপকার পাওয়ার আশায় অথবা কোনো ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য। আর উপকার ও ক্ষতি যে করতে পারেনা তাকে ডেকে কি লাভ হবে। তা করার নিরংকুশ ক্ষমতা তো একমাত্র আল্লাহর, অতএব ডাকতে হবে সর্বাবস্থায়, সব কিছুর জন্য একমাত্র তাঁকেই। পানাহ বা আশ্রয় চাওয়া কেবল তাঁরই নিকট সম্ভব। কেননা পানাহ বা আশ্রয় দেয়ার একবিন্দু ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া আর কারোরই নেই। তাই আল্লাহ নিজেই নির্দেশ দিয়েছেন-পানাহ বা আশ্রয় চাও কেবল সেই এক আল্লাহর নিকট।
এ সম্পর্কে আমরা বেশি শুনতে চাইব মুজাদ্দিদে আলফেসানী শায়খ আহমদ সরহিন্দীর নিকট থেকে, জানতে চাইব তাঁর মতামত। কেননা পাক-ভারতে একদিকে তিনি যেমন তাসাউফ বা ইলমে মারিফাতের গোড়া তেমনি আকবরী ‘দ্বীনি-ইলাহী’ ফিতনা ও ইসলামের দুশমনির সয়লাবের মুখে তিনি প্রকৃত দ্বীন ইসলামকে জাগিয়ে তুলেছেন। কাজেই তাসাউফ সম্পর্কে তাঁর মতামত ‘আপনি আমি বা সে’ এর তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মত পেশ করা এজন্যও বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, এ দেশের পীরের সাধারণত তাঁকেই সব পীরের গোড়া বলে দাবি করে থাকেন।
শরীয়ত ও মারিফাত পর্যায়ে তিনি তাঁর ‘মকতুবাত’ এ লিখেছেন-
কাল কিয়ামতের দিন শরীয়ত সম্পর্কেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তাসাউফ সম্পর্কে কিছূই জিজ্ঞাসা করা হবেনা। জান্নাতে যাওয়া ও জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া শরীয়তের বিধান পালনের উপর নির্ভরশীল। নবী-রাসূলগণ-যাঁরা গোটা সৃষ্টিলোকের মাঝে সর্বোত্তম-শরীয়ত কবুল করারই দাওয়াত দিয়েছেন, পরকালীন নাজাতের জন্য শরীয়তই একমাত্র উপায় বলে ঘোষণা করেছেন। এ মহান মানবদের দুনিয়ায় আগমনের উদ্দেশ্যই হলো শরীয়তের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা। সবচেয়ে বড় নেকীর কাজ হলো শরীয়তকে চালু করা। এবং শরীয়তের বিধানসমূহের মধ্যে একটি হুকুমকে হলেও জিন্দা করা বিশেষ করে এমন সময় যখন ইসলামের নিদর্শনসমূহ ধ্বংস হয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকা আল্লাহর পথে খরচ করাও শরীয়তের কোনো একটি মাসালাকে রেয়াজ দেয়ার সওয়াবের সমান হতে পারেনা।
মুজাদ্দিদে আলফেসানী(রহ) এ পর্যায়ে আরো একটি প্রশ্নের বিশদ ও স্পষ্ট জবাব দিয়েছেন। সাধারণ্যে প্রচলিত মত জাহিল পীরেরা ও তাদের মুরীদেরা প্রচার করে বেড়ায় যে, শরীয়ত হচ্ছে দ্বীনের বাইরের দিকের চামড়া, আর আসল মগজ হচ্ছে তরীকত বা মারিফাত। একথা বলে যারা শরীয়তের আলিম, কিন্তু তরীকত, মারিফাত ইত্যাদির ধার ধারেননা, শরীয়তকেই যথেষ্ট মনে করেন-তাঁদের ফাসিক ও বিদয়াতী ইত্যাদি বলে অভিহিত করে, তাঁদের সমালোচনা করে এবং তাঁদের দোষ গেয়ে বেড়ায়। এর জবাবে মুজাদ্দেদি আলফেসানীর-যিনি এদেশের প্রকৃত মারিফাতেরও গোড়া-তাঁর দাঁতভাঙ্গা জবাব শুনুন।
তিনি বলেছেনঃ শরীয়তের তিনটি অংশ রয়েছে। ইলম(শরীয়তকে জানা), আমল(শরীয়ত অনুযায়ী কাজ) এবং ইখলাস(নিষ্ঠা)। তরীকত ও হাকীকত উভয়ই শরীয়তের এই তৃতীয় অংশ-ইসলামের পরিপূরক হিসেবে শরীয়তের খাদেম মাত্র। এটিই আসল কথা, কিন্তু সকলে এতদূর বুঝতে সক্ষম হয়না। অধিকাংশ আলেম লোক কল্পনার সুখ স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। আর বেহুদা অর্থহীন ও অকাজের কথাবার্তা বলাই যথেষ্ট মনে করে। এ লোকেরা শরীয়তের প্রতিপালন সম্পর্কে কি জানে, কি বুঝবে! তরীকতের হাকীকতই বা এরা কি বুঝবে! এরা শরীয়তকে চামড়া বা বাইরের জিনিস মনে করে বসে আছে আর হাকীকতকে মনে করছে মূল, মগজ ও আসল। আসল ব্যাপার কি, তা এরা আদৌ বুঝতে পারছেনা। সুফী লোকদের-পীরদের বেহুদা অর্থহীন কথাবার্তা নিয়ে অহমিকায় নিমগ্ন রয়েছে এবং মারিফাতের ‘আহওয়াল’ ও ‘মাকামাত’ এর মধ্যে পাগল হয়ে ঘুরে মরছে তারা। আল্লাহ তা‘আলা এ লোকদেরকে সঠিক পথে হেদায়াত করুন এ দোয়া করি।
শরীয়ত ও মারিফাতকে যারা দুটো জিনিস মনে করে নিয়েছে এবং তরীকতের অর্থহীন অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তায় যারা নিমগ্ন হয়েছে, মোজাদ্দেদি আলফেসানী(রহ) তাদেরকে জাহিল ও বিভ্রান্ত লোক বলে অভিহিত করেছেন। মুজাদ্দিদে আলফেসানীর এ কথা যে সম্পূর্ণ সত্য ও একান্তই নির্ভূল, তাতে অন্তত শরীয়তের আলিমদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। বস্তুত শরীয়তের আলিম ও জাহিল পীর ও তাদের অন্ধ মুরীদদের মাঝে মতভেদ শুরু থেকেই চলে এসেছে। শরীয়ত এর আলিমগণ ইসলামী শরীয়ত আর তরীকতের বিভক্তিকে কোনোদিনই সমর্থন করেননি, চিরদিনই এর বিরোধিতা করেছেন-এ জিনিসকে দ্বীন ইসলামের বাইরে থেকে আমদানি করা এক মারাত্মক বিদয়াত বলে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু আজ জাহিল পীরেরা নিজেদের বৈষয়িক স্বার্থের জন্য এবং শরীয়ত পালন ও কায়েমের দায়িত্বপূর্ণ কাজ থেকে দূরে খানকা শরীফের চার দেয়ালের মধ্যে সহজ ও সস্তা সুন্নাত পালনের অভিনয় করার জন্য শরীয়ত থেকে বিচ্ছিন্ন ‘তরীকত’ নামের এক নতুন বস্তু প্রচলন করেছে। এরূপ অবস্থায় কার কথা বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করা যাবে? আলিমদের, না সূফী ও পীরদের? এর জবাব দিয়েছেন মুজাদ্দেদি আলফেসানী(রহ)। তিনি বলেছেনঃ জেনে রাখা ভালো, যে বিষয়ে সূফী, পীর ও শরীয়তের আলিমদের মাঝে মতভেদ হয়, ভালোভাবে চিন্তা ও অধ্যয়ন করলে দেখা যাবে যে, সে বিষয়ে আলিমদের মত-ই হক। এর কারণ এই যে, আলিমগণ নবী রাসূলগণের অনুসরণ করার মাধ্যমে নব্যুয়তের গভীর মাহাত্ম এবং তদলব্ধ ইলম লাভ করতে পেরেছেন। আর সূফী পীরদের দৃষ্টি বেলায়েতের কালিমাত ও তত্ত্বকথার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে।
পীরদের মুরীদ বানানো ব্যবসার সবচেয়ে বড় মূলধন হচ্ছে কাশফ ও ইলহামের দোহাই। পীরেরা যখন বলে আমার কাশফ হয়েছে-ইলহামযোগে আমি একথা জানতে পেরেছি’-তখন জাহিল মুরীদান ভক্তিতে গদগদ হয়ে কদমবুসি করতে শুরু করে। কিন্তু এসব জিনিস যে পীর মুরীদীর ব্যবসা চালাবার জন্য হয়, তা বুঝবার ক্ষমতা এই মূর্খ পীরদের নেই। ‘ইলহাম’ হতে পারে, কাশফও হয়, হয় আল্লাহর মেহেরবানীতে। যদি কেউ তা লাভ করে তাহলে অন্য লোকদের তা না বলে আল্লাহর শোকর আদায় করা উচিত। কিন্তু জাহিল পীরেরা শরীয়তের ধার ধারেনা। তারা ইলহামের দোহাই দিয়ে জায়েয-নাজায়েয, হালাল-হারাম ও ফরয ওয়াজিব ঠিক করে ফেলে। আর অন্ধ মুরীদরা তাই মাথা পেতে নেয়, শরীয়তের হুকুমের প্রতি তাকাবার খেয়ালও জাগেনা। এ সম্পর্কে মুজাদ্দেদি আলফেসানীর কথাই আমাদেরকে নির্ভূল পথ-নির্দেশ করতে পারে। তিনি বলেছেনঃ
কিয়াস ও ইজতিহাদ শরীয়তের মূলনীতিসমূহের মধ্যে অন্যতম। তা মেনে চলার জন্য আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে।কিন্তু কাশফ ও ইলহাম মেনে নেয়ার কোনো নির্দেশ আমাদেরকে দেয়া হয়নি। উপরন্তু ইলহাম অপর লোকের বিরুদ্ধে দলীল নয়। ইজতিহাদ মুকাল্লীদ এর জন্য দলীল(মেনে চলতে বাধ্য)। অতএব মুজতাহিদ আলিমদের মেনে চলাই উচিত এবং তাঁদের মতের ভিত্তিতে দ্বীনের নীতি তালাশ করা কর্তব্য। আর সূফীরা মুজতাহিদ আলিমদের মতের বিপরীত যা কিছু বলে বা দাবি করে, তা মেনে চলা কিছুতেই উচিত নয়।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, পীর ও জাহিল লোক নিজেরা যেমন সাধারণত জাহিল হয়ে থাকে, মুরীদদেরকেও তেমনি জাহিল করে রাখতে চায় এবং তাদের দ্বীন-ইসলাম ও ইসলামী শরীয়ত সম্পর্কে কুরআন হাদীস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার জন্য কখনো হেদায়াত দেয়না। পীর কিবলা মুরীদকে মুরাকাবা করতে বলবে, আল্লাহর যিকির করতে বলবে এবং হাযার বার করে ‘বানানো দুরুদ শরীফের অজীফা’ পড়তে বলবে; কিন্তু আল্লাহর কালাম দ্বীন ইসলামের মূল উৎস কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করতে, তার তরজমা ও তাফসীর বুঝতে এবং আল্লাহর কথার সাথে গভীরভাবে পরিচিত হতে কখনোই বলবেনা। বস্তুত এ এক আশ্চর্যের ব্যাপার। কিন্তু মুজাদ্দিদে আলফেসানী(রহ) স্পষ্ট ভাষায় বলেছেনঃ
অধিক জরুরী নসীহত হলো এই যে, কুরআন শরীফের অধ্যয়নে ও পড়াশোনায় কোনোরূপ ত্রুটি করবেনা। আপনার সমস্ত সময় যদি এই অধ্যয়নে ব্যয় হয়ে যায় যায় তাহলে ভালো। যিকির ও মুরাকাবার কোনো লাভ করবেননা।
মোগলদের ইসলাম বিরোধী শাসন আমলে মুজাদ্দিদে আলফেসানী যখন দ্বীন ইসলাম প্রচার এবং বাতিলের প্রতিবাদ শুরু করেন, তখন বাতিল পীরেরা তাঁর এ কাজের পথে অন্যতম প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। তিনি তখন স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন যে, এ বাতিলপন্থী পীরদের উৎখাত এবং তাসাউফের সংশোধন না হলে দ্বীন-ইসলামকে সঠিকভাবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা যাবেনা। এজন্য তিনি তাসাউফের অনেকখানি সংশোধনও করেছেন, মুক্ত করেছেন তাকে বাতিল চিন্তা ও তরীকা থেকে।
আসল কথা হলো, পীরবাদ মোটেই ইসলামী জিনিস নয়। ইসলামের আলোকোজ্জ্বল পরিবেশে তার প্রচলন হয়নি। তার উন্মেষই হয়েছে ইসলামের পতন যুগে। অবশ্য ইসলামের অনেক মনীষীও ইলমে তাসাউফের মাধ্যমে জনগণকে দ্বীন ইসলামের দিকে নিয়ে আসতে চেষ্টা করেছেন; কিন্তু পীরবাদে যে মূল দোষত্রুটি ছিল, তার বীজ রয়েই গেছে এবং তা সৃষ্টি করেছে একটি বিষবৃক্ষ। বর্তমানে তাই এক বিরাট বৃক্ষে পরিণত হয়ে জনগণকে চরমভাবে বিভ্রান্ত করেছে, বিষাক্ত করেছে জনগণের আকীদা ও আমলকে। দ্বীন ইসলামের মূল সুন্নাতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এ বাতিল পীরবারে মূলোৎপাটন আজও অপরিহার্য্ , যেমন অপরিহার্য্ ছিল মোজাদ্দিদে আলফেসানীর জীবনকালে।
ইরশাদ হয়েছেঃ
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا [٣٣:٢١]
-নিশ্চিতই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের চরিত্রে উত্তম অনুসরণীয় নমুনা ও আদর্শ রয়েছে। তাদের জন্য তা ফলপ্রসূ হবে যারা আল্লাহকে পেতে চায়, পরকালে মুক্তি চায় এবং আল্লাহকে খুব বেশি স্মরণ করে।
বর্তমান পীর মুরীদী ক্ষেত্রে মুরীদকে বায়’আত করা, মুরীদের নিকট হতে বায়’আত গ্রহণ এবং মুরীদের পক্ষে পীরের নিকট বায়’আত করা এক মৌলিক ব্যাপার। বস্তুত বায়’আত করা সুন্নাত মোতাবিক কাজ বটে; কিন্তু পীর-মুরীদীর বায়’আত সম্পূর্ণ বিদয়াত, যেমন বিদয়াত স্বয়ং পীর-মুরীদী।
‘বায়’আত’ আরবী শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো ক্রয় বা বিক্রয় করা। এ শব্দটি বললেই দুটি পক্ষের কথা মনে জাগে। একপক্ষ বায়’আত করে আর অপরপক্ষ বায়’আত কবুল করে। একজন বিক্রেতা, অপরজন ক্রেতা। এই ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারটি বড়ই সঙ্গীন। ইসলামে এর স্থান কোথায়, কি এর প্রকৃত ব্যাপার এবং সে ক্ষেত্রে সু্ন্নাত তরীকাই বা কি তা আমাদের বিস্তারিত জানতে হবে।
‘বায়’আত’, শব্দের ব্যাখ্যাদান প্রসঙ্গে ইমাম রাগেব ইসফাহানী লিখেছেনঃ
যখন কেউ কোনো সার্বভৌমত্বের আনুগত্য স্বীকার করে তাকে মেনে চলার স্বীকৃতি দেয়, তখন এ কাজকে বলা হয় ‘বায়’আত’ করা বা পারস্পরিক বায়’আত গ্রহণ। আর এ থেকেই বলা হয়ঃ সে সার্বভৌমের নিকট বায়’আত করেছে বা দুজন পারস্পরিক বায়’আত করেছে।
কুরআন মজীদে আল্লাহ তা’আলা রাসূল(সা) এর নিকট সাহাবাদের বায়’আত করার কথা উল্লেখ করেছেন নানা জায়গায়। প্রথমত যেসব লোক প্রথম ঈমান এনে ইসলাম কবুল করতো, তারা রাসূলের নিকট বায়’আত করতো, রাসূল তাদের নিকট বায়’আত কবুল করতেন। সূরা আল ফতহুর আয়াতে হুদায়বিয়ার গৃহীত ‘বায়’আতের’ উল্লেখ প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ ۚ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَىٰ نَفْسِهِ ۖ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا [٤٨:١٠]
-হে নবী, যারা তোমার নিকট বায়’আত করে তারা আসলে বায়’আত করে আল্লাহরই নিকটে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর সংস্থাপিত। অতঃপর যেই এই এ বায়’আত ভঙ্গ করে, এ বায়’আত ভঙ্গের ক্ষতি তার নিজের ওপরই চাপবে। আর যে তা পুরো করবে, যা সে আল্লাহর সাথে ওয়াদা করছে, তাকে অবশ্যই বিরাট প্রতিফল দেয়া হবে।
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, বায়’আত ইসলামী জীবনধারার এক মৌল ব্যাপার। কিন্তু সে বায়’আত রাসূলের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় স্বয়ং আল্লাহর সাথে এবং সে বায়’আত হলো খালিস ও পূর্ণাঙ্গভাবে আল্লাহর দাসত্ব কবুল করার বায়’আত, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে চলার বায়’আত, আল্লাহর পথে তাঁর দ্বীন কায়েমের লক্ষ্যে আত্মদানের বায়’আত, জিহাদে শরীক হওয়ার বায়’আত।
এ হলো সাধারণ পর্যায়ে বায়’আত। এ পর্যায়ের আর এক বায়’আতের কথা উল্লেখ হয়েছে, যা রাসূলে করীম(স) গ্রহণ করতেন মুমিন মহিলাদের নিকট থেকে।
সূরা মুমতাহিনায় বলা হয়েছেঃ
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَىٰ أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ ۙ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٦٠:١٢]
–হে নবী, মুমিন মহিলারা যদি তোমার নিকট এসে বায়’আত করে এসব কথার ওপর যে, তারা আল্লাহর সাথে একবিন্দু শিরক করবেনা, তারা চুরি করবেনা, তারা যিনা-ব্যভিচার করবেনা, তারা তাদের সন্তান হত্যা করবেনা, তারা প্রকাশ্যভাবে মিথ্যামিথ্যি কোনো অমূলক কাজের দোষ কারো ওপর আরোপ করবেনা, আর তারা ভালো পরিচিত কাজে তোমার নাফরমানী করবেনা, তাহলে তুমি তাদের নিকট থেকে এ বায়’আত গ্রহণ করো, আর আল্লাহর নিকট তাদের জন্যে মাগফিরাতের দো’আ করো, আল্লাহ নিশ্চিতই বড় ক্ষমাশীল এবং অতীব করুণাময়। (মুমতাহিনাঃ১২)
এ আয়াত স্পষ্ট বলে দিচ্ছে যে, নবী করীম(স) কি কি বিষয়ে মুসলিম মেয়েদের নিকট থেকে বায়’আত গ্রহণ করেছেন। বিষয়গুলো যে ইসলামী ঈমান ও আমলের একেবারে মৌলিক,- কবীরা গুনাহ না করার প্রতিশ্রুতিতেই যে বায়’আত গ্রহণ করা হয়েছে-তা স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে। কাজেই সু্ন্নাত অনুযায়ী ‘বায়’আত’ হলো শুধু তাই, যা এসব বিষয়ে এবং এ ধরনের মৌলিক বিষয়েই করা হবে বা গ্রহণ করা হবে। এক কথায়, ইসলামের হুকুম আহকাম পুরোপুরি পালন করার এবং শরীয়তের বরখেলাপ কোনো কাজ না করার ওয়াদা দিয়ে ও নিয়ে-ই যে বায়’আত করা বা গ্রহণ করা হয় তা-ই হলো সুন্নাত মোতাবিক বায়’আত। এরূপ বায়’আত গ্রহণই সুন্নাত হতে পারে অন্য কোনোরূপ বায়’আত নয়।
দ্বিতীয়, বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতি ও প্রয়োজন অনুসারে নবী করীম(স) মুসলমানদের নিকট হতে বায়’আত গ্রহণ করেছেন। এ পর্যায়েরই বায়’আত হলো বায়’আতে রেজওয়ান। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হয়েছেঃ
لَّقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا [٤٨:١٨]
–যেসব মু’মিন লোক গাছের তলায় বসে হে নবী! তোমার নিকট বায়’আত করেছিল, আল্লাহ তাদের প্রতি রাজি ও খুশি হয়েছেন। তাদের মনের আবেগ ও দরদের ভাবধারা তিনি ভালোভাবেই জেনেছিলেন এবং তাদের প্রতি পরম গভীর শান্তি নাযিল করেছিলেন এবং নিকটতর বিজয় দানেও তাদের ভূষিত করেছিলেন।(আল ফাতহঃ১৮)
হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, এরূপ বায়’আত করার জন্য নবী করীম(স) সমস্ত সাহাবীদের আহবান করেছিলেন। এই বায়’আত সম্পর্কে তখনকার লোকেরা বলতোঃ নবী করীম (স) তো লোকদের নিকট হতে মৃত্যু কবুল করার বায়’আত গ্রহণ করেছিলেন।
আর হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ বলেনঃ
নবী করীম(স) ঠিক মৃত্যু কবুলের জন্য বায়’আত গ্রহণ করেননি। বরং আমরা বায়’আত গ্রহণ করেছি এর ওপর যে, আমরা কেউ-ই যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাবনা। ফলে লোকেরা বায়’আত করেছিল এবং উপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে কেবল বনী সালমা গোত্র সরদার জা্দ্দ ইবনে কায়স ছাড়া কেউই পালিয়ে যায়নি।(তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৪র্থ খন্ড)।
‘বায়’আতে রেজওয়ান’ যে কঠিন মুহুর্তে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং কি গুরুতর ব্যাপার নিয়ে তা গ্রহণ করা হয়েছিল, এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট জানা গেল। অনুরূপভাবে জিহাদের ক্ষেত্রেও নবী করীম(স) বায়’আত গ্রহণ করতেন।
হযরত আনাস ইবনে মালিক(রা) বলেনঃ আনসার লোকেরা বলতো-আমরা খন্দকের দিন নবীর নিকট জিহাদের জন্য বায়’আত করেছি, যদ্দিন আমরা বেঁচে থাকব তদ্দিনের জন্য।
অন্য হাদীস থেকে এ প্রমাণও পাওয়া যায় যে, নবী করীম(স) সাধারণভাবে আনুগত্যের বায়’আতও গ্রহণ করতেন এবং লোকেরা তা করতো। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর(রা) বলেনঃ আরবী(********)
-আমরা রাসূলে করীম(স) এর নিকট শোনা ও মেনে চলার(আনুগত্য করার জন্য) বায়’আত করতাম। রাসূল(স) সে বায়’আত গ্রহণ করতেন। তবে এ বায়’আতে নবী করীম(স) আমাদেরকে ‘যতদূর আমাদের ক্ষমতা কুলায়’ বলে একটি শর্ত আরোপ করেছেন।
রাসূল (স) এর জামানায় এই ছিল তাৎপর্য্ ও ব্যবহার। পরবর্তীকালে সাহাবীদের যুগেও এই বায়’আত ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু তা হয়েছে শুধু রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে খলীফার আনুগত্য করার শপথ বা প্রতিশ্রুতি দেয়ার জন্য। যেমন নবী করীম(স) এর ইন্তিকালের পর খলীফা নির্বাচনী সভায় হযরত উমর ফারূক(রা) সর্বপ্রথম বায়’আত করলেন হযরত আবু বকর(রা) এর হাতে।
এ সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছেঃ আরবী(*********)
-হযরত উমর আবু বকরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ না, আমরা তো আপনার হাতে বায়’আত করবো, আপনিই আমাদের সরদার, আমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি এবং নবী করীমের নিকট আমাদের অপেক্ষা সর্বাধিক প্রিয় লোক। অতঃপর উমর ফারূক(রা) তাঁর হাত ধরলেন এবং বায়’আত করলেন, আর সেই সঙ্গে উপস্থিত সব লোকই বায়’আত করলো।
এ ঘটনা থেকে একথা প্রমাণিত হচ্ছে যে, বায়’আত করা এবং বায়’আত গ্রহণ করা মুসলিম সমাজে একটি সুন্নাত হিসেবেই চালু রয়েছে। নবী করীম(স) এর পরেও কিন্তু সে বায়’আত ছিল হয় জিহাদে যোগদান করার জন্য, না হয় রাষ্ট্রীয় আনুগত্য প্রকাশের জন্য।
কিন্তু পীর মুরীদীর ক্ষেত্রে- চিশতীয়া, নকশবন্দীয়া মুজাদ্দিদীয়া ও মুহাম্মদীয়া তরীকায় ফকীর-হাকীরের হাতে বায়’আত নেয়ার বর্তমানে প্রচলিত এই সিলসিলা এল কোথ্থেকে, এ বায়’আতের সাথে নবী করীম(স) ও সাহাবাদের বায়’আতের সম্পর্ক কি?-মিল কোথায়? আসলে এ হচ্ছে একটি ভালো কাজকে খারাপ উদ্দেশ্যে ও খারাপ ক্ষেত্রে ব্যবহার করার মতো ব্যাপার। কাজটা ভালো, কিন্তু তা খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এ কারণেই পীর মুরীদীর ক্ষেত্রে হাতে হাতে কিংবা পাগড়ী ধরে অথবা পাগড়ী ধরা লোকের গায়ে গা মিলিয়ে বায়’আত করা, বায়’আত করা নানা তরীকায় মুরাকাবা করার জন্য-সম্পূর্ণ বিদয়াত। আরো বড় বিদয়াত হলো কুরআন বাদ দিয়ে মুরীদ ও পীরের ‘দালায়েলুল খয়রাত’ নামে এক বানানো দুরুদ সম্বলিত কিতাবের তিলাওয়াতে মশগুল হওয়া। মনে হয় এর তিলাওয়াত যেন একেবারে ফরয। কিন্তু শরীয়তে কুরআন ছাড়া আর কিছু তিলাওয়াত করা বড় সওয়াবের কাজ মনে করা, কুরআন অপেক্ষা অন্য কোনো মানবীয় কিতাবকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করা সুস্পষ্টরূপে এক বড় বিদয়াত।
শুধু তা-ই নয়, বায়’আত শব্দের আভিধানিক অর্থ বিক্রয় করা। যে লোকই ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ পড়েছে ও বিশ্বাস করেছে, সে তো নিজেকে আল্লাহর নিকট বিক্রয় করেই দিয়েছে, সে নতুন করে নিজেকে কোনো পীরের নিকট বিক্রয় করতে পারে কোন অধিকারে?
আল্লাহ ঘোষণা করেছেনঃ
إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ
–নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের নিকট হতে তাদের জান ও মালকে ক্রয় করে নিয়েছেন এ শর্তে যে, তিনি এর বিনিময়ে জান্নাত লাভ করবেন।(আত তাওবাঃ১১১)
(এ আয়াত অনুযায়ী ক্রেতা হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ, বিক্রেতা হচ্ছে মুমিন ব্যক্তি। বিক্রয়ের জিনিসগুলো হলো মুমিন ব্যক্তির নিজ সত্তা এবং তার মূল্য হচ্ছে জান্নাত দানের ওয়াদা। এ ক্রয়-বিক্রয় যথারীতি সম্পন্ন হয়ে গেছে, যখনই একজন লোক সচেতন মনে পড়ছেঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।)
কাজেই আল্লাহর নিকট জান মাল বিক্রয় করার পর তা যদি কোনো পীরের হাতে পুনরায় বিক্রয় (বায়’আত) করে তবে তা হবে অনধিকার চর্চা, সুস্পষ্ট শিরক।
(উপরন্তু আল্লাহ ও রাসূলের নিকট বায়’আত করার উদ্দেশ্য যে দ্বীনের জন্য জিহাদ করা, তা আয়াতের পরবর্তী শব্দগুলোতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। অথচ পীরদের নিকট বায়’আত করার উদ্দেশ্য হলো চোখ বন্ধ করে মুরাকাবা মুশাহিদা করা, যিকির করা, কল্পনার জগতে উড়ে বেড়ানো। এ ধরনের বায়’আতের মধ্যে আসমান জমীনের পার্থক্য।)
কিন্তু তা সত্ত্বেও সায়্যিদ আহমদ শহীদ কোনো পীর-মুরীদী করেছিলেন তা বলিষ্ঠভাবে প্রমাণিত নয়। বরং তাঁর প্রামাণ্য জীবনী গ্রন্থে এই কথাগুলো বলিষ্ঠভাবে উদ্ধৃত পাওয়া যায়।
তিনি যখন দিল্লীতে অবস্থানকারী শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভীর সুযোগ্য পুত্র এবং কুরআন-হাদীস ও সমসাময়িক যুগের সকল সূক্ষ্ম জ্ঞান বিজ্ঞানে পারদর্শী শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভীর নিকট মৌখিকভাবে কুরআন হাদীসের শিক্ষা লাভ করে বেরেলী ফিরে আসলেন, তখন তিনি নিজের বাসগৃহে বসবাস না করে মসজিদে অবস্থান গ্রহণ করলেন এবং কুরআন হাদীসের ভিত্তিতে জনগণকে ওয়াজনসীহত করতে শুরু করলেন। তখন বিপুল সংখ্যক জনতা তাঁর হাতে বায়’আত করে তাঁর মুরীদ হওযার প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করলো এবং তাঁকে সেজন্য বাধ্য করতে চেষ্টা করতে লাগলো। তিনি মুরীদ বানাতে স্পষ্ট ভাষায় অস্বীকার করলেন এবং বললেন-মুসলমানদের পক্ষে আল্লাহ ও তাঁর রাসূরের মুরীদ হওয়াই যথেষ্ট। মিথ্যা বলবেনা, ধোঁকা দিবেনা, নিজের স্বার্থের খাতিরে অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেনা-এটাই তোমাদের প্রতি নসীহত। তোমরা যদিও কারো মুরীদ হলে এবং তারপরেও এসব কাজ করতে থাকলে, তাহলে সে মুরীদী তোমাকে কোনো ফায়দা দিবেনা। আর যদি নেক নিয়্যতে এসব নেক আমল পাবন্দীর সাথে করলে তাহলে তোমাকে কারো নিকট মুরীদ হবার প্রয়োজন হবেনা। তখন তোমরা নিজেরাই নিজেদের পীর হবে এবং স্বীয় বিদ্রোহী নফসকে তোমাদের মুরীদ বানিয়ে দিবে। তোমরা তোমাদের নফসের নিকট হতে বায়’আত গ্রহণ করো, যেন তা কোনোদিনই শয়তানী ওয়াসওয়াসার অনুসরণকারী না হয়। পরকালের নাজাত পাওয়ার এটাই হচ্ছে যথেষ্ট পন্থা।
বস্তুত নবী করীম(স) এর বায়’আত গ্রহণের অন্তর্নিহিত মৌল ভাবধারার সাথে সায়্যিদ আহমদ শহীদের উপরোক্ত কথাগুলোর যে মিল রয়েছে তা সহজেই বুঝতে পারা যায় । তিনি স্বভাবতই পীর মুরীদী পছন্দ করতেননা। লোকেরা তাঁর সম্মুখে মাথা নত করে বসে থাকবে ও তাঁর তাজীম করবে, তাঁর প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা জাহির করবে তা তিনি খুবই অপছন্দ করতেন। তাই এসব কিছু প্রত্যাখ্যান করে তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরী গ্রহণ করে বহু দূরে চলে যান। উত্তরকালে তিনি জিহাদের জন্য যে বায়’আত গ্রহণ করতেন তা অনস্বীকার্য্।
এ পর্যায়ে আর একটি বড় প্রশ্ন হলো এই যে, পীর-মুরীদীর ক্ষেত্রে এই যে, ‘গদিনশীন পীর’ হওয়ার প্রখা চালু রয়েছে ইসলামী শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি আছে কি? কোনো মতে একজন লোক যদি একবার পীর নামে খ্যাত হতে পারলো, অমনি তাঁর বড় পুত্র অবশ্যই তাঁর গদীনশীন হবে। কিন্তু পীরের গদী কোনটি, যার ওপর বড় সাহেব ‘নশীন’ হন? পীর কি জমিদার যে, তার মৃত্যুর পর তার বড় পুত্র বাবার স্থলে জমিদার হয়ে বসবে? পীর-মুরীদী কি কোনো রাজা প্রজার ব্যাপার-পীর সাহেব রাজা বাদশাহ এবং মুরীদরা তার প্রজা, আর সে রাজার অন্তর্ধানের পর অমনি তার বড় পুত্র সিংহাসনে আসীন হয়ে বসবে? না পীর কোনো বড় দোকানদার যে, তার মরে যাওয়ার পরে সে দোকানদারের গদীর মালিক হয়ে বসবে তার বড় ছেলে? …এর কোনটি? এর মধ্যে যা-ই হোক, এর কোনোটির সাথে যে ইসলামের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক্ নেই, তা তো স্পষ্ট কথা। ইসলামে নেই কোনো জমিদারী. বাদশাহী; নেই দ্বীন নিয়ে এখানে কোনো দোকানদারী ব্যবসা চালাবার অবকাশ।
শুধু তা্-ই নয়, কেউ পীর বলে খ্যাত হলে অমনি তার ছেলেরা ‘শাহ’ বলে অভিহিত হতে শুরু করে। ‘শাহ’ মানে বাদশাহ। পীরের ছেলেকে ‘শাহ’ বা ‘বাদশাহ’ বলার এই মানে হতে পারে যে, পীর সাহেব নিজে একজন বাদশাহ; আর তার ছেলেরা খুঁদে বাদশাহ-বাদশাহজাদা। বুড়ো বাদশাহর চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ছেলেদের মধ্যে যে বড়, সে অমনি পীর-গদীনশীন হয়ে বসবে, আর অমনি তার পুত্রেরা পূর্বানুরূপ শাহ উপাধিতে ভূষিত হতে শুরু করবে। এই চিরন্তন নিয়ম আবহমান কাল হতে চলে আসছে, এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি কখনো, কোনো ক্ষেত্রেই।
এ থেকে স্পষ্ট বুঝতে পারা যায় যে, পীর মুরীদী প্রথাটাই একটা জাহিলিয়াতের প্রথা। অন্তত এ কথাটাতো পরিষ্কার যে, এটা প্রচলিত হয়েছে এমন এক যুগে, যখন সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রচন্ড বাদশাহী প্রথা প্রতিষ্ঠিত ছিল। সামাজিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এ সর্বাত্মক ব্যবস্থার প্রভাব নিতান্ত ধর্মীয় ক্ষেত্রেও এমন প্রচন্ড হয়ে পড়েছিল যে, ধর্মীয় নেতৃত্বকেও অনুরূপ এক বাদশাহী মনে করা হয়েছে। বাদশাহীর ন্যায় ‘বাদশাহের ছেলে বাদশাহ হবে’ এই নীতি অনুযায়ী ‘পীরের ছেলেও পীর হবে’ এ ধারণাও বদ্ধমূল করে নেয়া হয়েছে।
বাদশাহর ছেলেকে বলা হয়-শাহজাদা-এ ঠিক শাব্দিক অর্থেই সঠিক প্রয়োগ(ইংরেজীতে বলা হয় Prince), পীরের ছেলেকেও তাই শাহ বলা হতে লাগলো-কৃত্রিম অর্থে। কেননা পীরও আসলে বাদশাহ নয়। আর তার ছেলেও নয় বাদশাহজাদা। এখানে মজার ব্যাপার এই যে, পীরের ছেলেরাই সবকিছু, তারাই শাহ নামে অভিহিত হয়, তাদের মধ্যে যে বড় সেই হয় গদীনশীন। কিন্তু বেচারী মেয়েদের কোনো অধিকার স্বীকৃত নয়, না মেয়েদের সন্তানের কোনো অধিকার সেখানে স্বীকৃত। সব কিছুই চলে পীরের ছেলে পীর, তার ছেলে পীর এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ধারায়। এই ধারা কখনো পীরের কন্যাদের দিকে প্রবাহিত হয়না। ঠিক বাদশাহী সিস্টেমও তাই। সেখানে গদী-তথা রাজতখতের ওপর একমাত্র অধিকার ছেলেদের, সব ছেলে নয়, কেবল মাত্র বড় ছেলের আর তার বংশধরদের। মুসলমানদের মাঝে যে বাদশাহী সিস্টেম রয়েছে, তাতে অনেক সময় দেখা যায় বড় ছেলে বাদশাহ হয়ে গেলে ছোট ভাই বা অন্য কেউ-‘অলী আহমদ’ হয়। তার মানে এ বাদশাহর পর তার ছেলে নয়, তার ভাই-ই হবে গদীনশীন। কিন্তু পীর মুরীদীর ক্ষেত্রে এ বাদশাহী সিস্টেম এতদূর বিকৃতরূপ লাভ করেছে যে. এখানে বড় ছেলেই সব। বড় ছেলে একবার গদীনশীন হয়ে বসতে পারলে সে-ই হর্তা কর্তা বিধাতা। সে পিতার কেবল গদী-ই দখল করেনা, পিতার মুরীদরা সব তার মুরীদে পরিণত হয়ে যায় আপনা আপনিভাবে। যেমন জমিদার বা রাজার প্রজারা আপনা আপনি তার ছেলেরও প্রজা হয়ে যায়। আর বিত্ত সম্পত্তি কিছু থাকলে তারও একমাত্র ভোগদখলকারী হয় এই বড় সাহেব, যিনি গদীনশীন হয়ে বসেন। ছোট ভাই কেউ থাকলে তারা হয় চরম অসহায়, উপেক্ষিত, বঞ্চিত এবং পিতার বিশাল মুরীদ মহল হতে বিতাড়িত।
কিন্তু প্রশ্ন এই যে, এসব কথা কি ধর্মীয়? হতে পারে ব্রাক্ষ্মণ্য ধর্মের এ-ই নীতি। সেখানে ব্রাক্ষ্মণের বড় পুত্র অবশ্যই ব্রাক্ষ্মণ হবে, আর সে আপনা আপনি পেয়ে যাবে পিতার জযমানদের। এতদিন তারা ছিল বুড়ো ব্রাক্ষ্মণের জযমান আর এখন হবে তারা এই ব্রাক্ষ্মণ-পুত্র- ব্রাক্ষ্মণের জযমান। তবে কি এই ব্রাক্ষ্মণপ্রথা হরফে হরফে মুসলিম সমাজেও চালু হয়ে গেছে।
এ সম্পর্কে কারোরই এক বিন্দু সন্দেহও থাকতে পারেনা যে, এ প্রথার সাথে ইসলামের কোনোই সম্পর্ক নেই। এ প্রথা কিছুমাত্র ইসলামী নয়। ইসলামে গদীনশীন হওয়ার কোনো অবকাশ নেই, নেই শাহ হওয়ার কোনো সুযোগ। ছোট ভাই এবং বোনদের অধিকার হরণ করে একাই সব কিছু গ্রাস করে নেয়ার এ ব্যবস্থা ইসলামে আদৌ সমর্থিত হতে পারেনা।
ইসলাম আমরা পেয়েছি হযরত মুহাম্মদ(স) এর নিকট থেকে। তিনি ইসলামকে শুধু মৌখিক নসীহতের মাধ্যমেই পেশ করেননি, তিনি তাঁর বাস্তব জীবন দিয়ে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ আদর্শকে বাস্তবায়িত ও সমাজে প্রতিফলিত করে গেছেন। তিনি তেইশ বছরের সাধনা ও সংগ্রামের ফলে কায়েম করে গেছেন এক বিরাট রাষ্ট্র। কিন্তু তাঁর ইন্তিকালের পর তাঁর বংশে চললোনা নব্যুয়তের ধারা, না হলো কেউ গদীনশীন নবী। তিনি যে রাষ্ট্র কায়েম করে গেলেন, তাতেও কায়েম করা হলোনা তাঁর বংশের লোকদের কর্তৃত্ব। বরং মুসলমানেরা স্বাধীনভাবে নিজেদের মধ্য থেকে ইসলামের বিধান অনুযায়ী সর্বাধিক মুত্তাকী ব্যক্তিকে খলীফা নির্বাচিত করে নিলেন। সে খলীফা না হলো তাঁর প্রিয়তমা কন্যা ফাতিমা, না তাঁর জামাতা, না তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় নাতি দৌহিত্ররা। নব্যুয়তের ধারাও চললোনা তাঁর বংশে। এমনি তাঁর সম্মানিত জামাতাদেরও কেউ এ সূত্রে রাসূল পরবর্তী খলীফা হলেননা। উত্তরকালে তাঁদের কেউ খলীফা হলেও তা রাসূলের জামাতা হওয়ার কারণে নয়, তা হয়েছেন তদানীন্তন সমাজের তাঁদের নৈতিক অবস্থান ও যোগ্যতার বৈশিষ্ট্যের কারণে। এ-ই ইসলামী ব্যবস্থা। এখানে বংশানুক্রমিকতা সম্পূর্ণ অচল। এ পীর মুরীদী রাসূলে করীম(স) থেকেই যদি চলে এসে থাকে-যেমন দাবি করা হচ্ছে, তাহলে এখানে গদীনশীন, ‘শাহ’ হওয়ার প্রথা এল কোথ্থেকে? রাসূলের জীবনে ও তাঁর কায়েম করা সমাজে তো এর নাম নিশানাও দেখা যায়না। খুলাফায়ে রাশেদুন এর সময়েও ছিলনা খলীফার ছেলে খলীফা হয়ে বসার প্রথা। বরং তাঁরা প্রত্যেকেই এ বংশানুক্রমিকতার প্রতিবাদ করেছেন। কোনো খলীফার ছেলেই খলীফা হতে পারেনি-না হযরত আবু বকরের, না উমর ফারূকের, না উসমান জিন্নুরাইনের, না আলী হায়দার(রা) এর। তাহলে প্রমাণিত হলো যে, এ প্রথা রাসূল(স) এর নিকট হতে গ্রহণ করা হয়নি। অতএব তা সুন্নাত নয়, তা স্পষ্ট বিদয়াত। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এ বিদয়াতী প্রথায় গদীপ্রাপ্ত লোকেরাই সমাজে নিজেদেরকে পেশ করেছে সুন্নাতের বড় পায়রবী করনেওয়ালা- সুন্নাতের বড় ধারক বাহকরূপে। তার দৃষ্টিতে তিনি ছাড়া আর কেউই নাকি হক পথে নেই। অথচ সম্পূর্ণ ‘বিদয়াতী’ সিস্টেমে ‘গদীনশীন’ হয়ে নিজেকে ‘আহলে সুন্নাত’ হিসাবে পেশ করা এবং সুন্নাতের বড় অনুসারী হওয়ার দাবি করা বিদয়াত, বিদয়াতের নির্লজ্জ দৃষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়।
এখানেই শেষ নয়, এ গদীনশিন যদি জনমতের ভিত্তিতে ও উপযুক্ততার কারণে হতো, তাহলেও তার কোনো না কোনো দৃষ্টান্ত সলফে সালেহীনে হয়ত বা পাওয়া যেত। কিন্তু এখানে কোনো জনমতের স্থান নেই, যোগ্যতা অযোগ্যতার বিচার নেই। ব্যস বড় ছেলে হওয়াই গদী পাওয়ার অধিকারী হওয়ার জন্য বড় দলীল। এর ফলে এ গদীনশিন হয়ে গেছে এক ন্যক্কারজনক ব্রাক্ষ্মণ্যবাদ। পীরের মৃত্যুর পর তাঁর মুরীদান খলীফার মাঝে সবচেয়ে মুত্তাকী কোন লোক সত্যি পরবর্তী পীর হওয়ার সর্বাধিক উপযুক্ত, সে বিচার করা হয়না এখানে এবং সুন্নাত তরীকা মতো সবচেয়ে বেশি মুত্তাকী ও যোগ্য ব্যক্তিকে গদীনশিন করার কোনো প্রবণতাই এখানে পরিলক্ষিত হয়না। সে রকম লোককে নিজেদের মধ্যেও তালাশ করে বের করা হয়না। এখানে স্থায়ীভাবে ধরে নেয়া হয়-স্বয়ং পীর সাহেব ও জানেন, জানে মুরীদরা, জানে সাধারণ মানুষ যে হুযুরের বড় ছেলেই হবে পরবর্তী পীর, গদীনশিন। সে ছেলে লেখাপড়া কিছু জানুক আর না-ই জানুক, নৈতিক চরিত্র তার যতই খারাপ হোক, জ্ঞান বুদ্ধিতে সে যতই বুদ্ধু হোক, সেই হবে পরবর্তী পীর। আর মরহুম পীরের মতোই যোগ্যতাসম্পন্ন লোক সে দরবারে অন্য কেউ থাকলেও তাকে সেখানে কোনো স্থান দেয়া হবেনা। শুধু তা-ই নয়, সে যোগ্য ও অধিক মুত্তাকী ব্যক্তিকেও বরং মুরীদ হতে হবে সে অযোগ্য অ-আলীম-মানে জাহিল, চরিত্রহীন ও বুদ্ধু গদীনশিন পীরের। নতুবা সে দরবারে তার কোনো স্থান হবেনা, সেখানে থেকে অনতিবিলম্বে বিতাড়িত হতে হবে।
এ যে তথাকথিত জমিদারতন্ত্র, রাজতন্ত্র, আর ব্রাক্ষ্মণ্যবাদ প্রভৃতি জাহিলিয়াতের সব পদ্ধতিকেও ছাড়িয়ে গেছে। এর সাথে ইসলামের সুন্নাতের দূরতম সম্পর্কও থাকতে পারে কি?
কোনোরূপ সম্পর্ক থাকতে পারেনা। শুধু তা-ই নয়, এই পীর ও তার মুরীদরা- এ পীরের সমর্থকরা-হাদীয়া তোহফা ও টাকা পয়সা যারা দেয়, তারা সকলেই রাসূল(স) এর ঘোষণা অনুযায়ী আল্লাহর নিকট অভিশপ্ত। হযরত আলী(রা) বর্ণিত হাদীসে রাসূলে করীম(স) এর চারটি কথার তৃতীয় কথা হচ্ছেঃ আরবী(*******)
-আল্লাহ তা‘আলা অভিশপ্ত করেছেন সেই ব্যক্তিকে যে বিদয়াতকারীকে বা বিদয়াতপন্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, সম্মান করেছে ও সাহায্য সহযোগিতা দিয়েছে।
পীর মুরীদী সম্পর্কে আমার চূড়ান্ত কথা
পীর মুরীদী সম্পর্কে আমি উপরে যা কিছুই লিখেছি, পাঠক মহোদয় লক্ষ্য করলে স্বীকার করবেন যে, আমি নিজস্ব মনগড়া কোনো কথা লিখিনি। তা যেমন কুরআন, সুন্নাত ও সর্বজনমান্য মনীষীবৃন্দের কথার দলীলের ভিত্তিতে লিখেছি তেমনি এ পর্যায়ে আমার নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতাও রয়েছে।
কিন্তু সে অভিজ্ঞতা শুধু বিদয়াতী পীর সম্পর্কে বা পীর মুরীদী বিদয়াত হওয়া সম্পর্কেই নয়, এর বিপরীত এ অভিজ্ঞতাও আমার রয়েছে যে, সিলসিলার ও পীরের মৃত্যুর পর গদীনশিন হওয়ার পরও কেউ কেউ এমন আছেন, যিনি পীর মুরীদকে বিদয়াত ও নিছক ব্যবসায়ীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধকার থেকে টেনে বাইরে নিয়ে এসে তাকে ঠিক ওস্তাদ-শাগরীদ, শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক কার্য্ত স্থাপন করেছেন। মারিফাত চর্চাকে শরীয়তের ভিত্তিতে পুনর্গঠিত করেছেন। শরীয়তের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে মারিফাতের শিক্ষাদানের কাজ করেছেন এবং এই গোটা তৎপরতার সঙ্গে জিহাদের সম্পর্ক স্থাপন করে দ্বীনী বিপ্লবের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। তা দেখে দিল খুশিতে ভরে গেছে এবং মনে আশা জেগেছে যে, আল্লাহর নাযিল করা ও সর্বশেষ নবী রাসূল হযরত মুহাম্মাদ(স) এর প্রচারিত ও কায়েম করা দ্বীন হয়ত এখানে কায়েম হবে। মূলত খিলাফাতে রাশেদার অবসানের পর প্রথম দিকে দ্বীন কায়েমের যেসব চেষ্টা প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল, তা দ্বীনভিত্তিক মারিফাত ও জিহাদের বিপ্লবী ভাবধারা সমন্বিত ছিল, যাঁর ধ্বংসাবশেষ রূপ বর্তমান ব্যবসামূলক বিদয়াতপন্থী পীর-মুরীদী। বর্তমান অবস্থার আমূল পরিবর্তন করে সেই আসল ও আদর্শবাদভিত্তিক উস্তাদ-শাগরিদমূলক জন-সংগঠনের মাধ্যমে দ্বীন কায়েমের জন্য দ্বীন ও শরীয়তের, মারিফাত ও জিহাদের সমন্বয় নতুন করে কায়েম করাই বর্তমান মরণাপন্ন মুসলিম সমাজকে রক্ষা করা ও দ্বীনের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করার একমাত্র উপায়। ধর্মহীন রাজনীতি, রাজনীতিহীন ধর্ম- উপরন্তু দ্বীনের শুষ্ক তাত্ত্বিকতা দ্বীন কায়েমের পথে বড় বাঁধা। দ্বীন-ইসলামের নির্ভূল তত্ত্বকে হৃদয়ের ঈমানী আবেগে সঞ্জীবিত করে জিহাদী কার্য্ক্রমের মাধ্যমেই পীর-মুরীদীর পুনর্গঠন হওয়া আবশ্যক।
- মাওলানা আবদুর রহীম
আপনি আমাকের যে ব্যাপারে সতর্ক করে#বন্ধুরা !
কিছুক্ষনের মধ্যে সালাতুল আসরের আজান শুরু হবে।
আমরা নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি।
আল্লাহ পাকের দেওয়া অন্যতম একটি নেয়ামত সময়।
এই নেয়ামত থেকে কিছু সময় একান্ত ভাবে নামাজের জন্য
নির্ধারন করা আবশ্যক।
চলুন আমরা নামাজ আদায় করে আসি।
***নামাজকে বলো না আমার কাজ আ্ছে
বরং কাজকে বলো আমার নামাজ করলেন,আবার দলিল দিয়ে আপনি তাই সঠিক প্রমান করলেন।
আসলে আপনি কি যে বুঝেন,তাই বুঝেন নাই।
আপনাকে যে প্রশ্ন গুলি করছি তার উত্তর দিন।
কয়েক বছর আগে সাপ্তাহিক ২০০০-এ পড়েছি ফকিরের পুত থেকে হাজার হাজার টাকার মালিক বনে যাওয়া চর্মনাই পীরের কাহিনী। ভাবছি চর্মনাই থেকে এই দুইনম্বরি ব্যবসার পদ্ধতি শিখে নিমুনি কোন?
আবার পানশালার মদ বিক্রেতাকেও পীরে মুগাঁ বলা হয়। কারণ সুফীবাদীরা আধ্যাতিক প্রেমকে রূপকভাবে মদরূপে অভিহিত করে, উক্ত প্রেমরস-পরিবেশককে পীর বা 'শুড়ী মশাই' নামে অভিহিত করে থাকেন। খৃষ্টানদের পাদরী, হিন্দুদের পুরোহিত এবং বৌদ্ধদের ভিক্ষু বলতে যা বুঝায় পীর বলতে ঠিক তাই বুঝায়।
কবি বলেছেন...
বমায়ে শাজ্জাদাহ রঙ্গীন কুন
গিরাত পীরে মুগাঁ গোয়াদ
সে সালেক বেখবর নাবুদ
যে রাহে রাসমো মানযালহা।
অর্থাৎ পীরে মুগাঁ অর্থাৎ শুড়ি মশায় যদি বলেন, তাহলে তুমি জায়নামাজকে মদের দ্বারা রাঙিয়ে তুলো। কেননা পথের সন্ধান গুরুজী ভালভাবে অবগত আছেন। এই কবিতায় শুঁড়ি মশায়কে পীরে মুগাঁ বলা হয়েছে।
পীর, পুরোহীত বা পাদরী এর কোন প্রতিশব্দ কুরআন-হাদীসে নেই। আবু বকর, উমর, উসমান, আলী (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণও কেউ কোনদিন পীর বলে দাবী করেননি। তাবেয়ীনদের যুগে পীরের অস্তিত্ব ছিলনা। ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম নাসায়ী, ইমাম তিরমিযী, ইমাম ইবনু মাজাহ (রহ.) প্রভৃতি মহামতি ইমামগণও পীরগিরি করেননি। কোন কুক্ষণে পারস্যের অগ্নি পুঁজারীদের সেই পীর তাওহীদবাদী মুসলিম সমাজের ঘাড়ে-গর্দানে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসল- তা ভেবে কুল পাওয়া যায়না। আরবী ভাষায় উসতায ও নেতাকে শাইখ বলা হয়।
"মুসা (আঃ) এরদিন পথে চলছিলেন, এমন সময় দেখলেন এক রাখাল ধ্যান মগ্ন হয়ে গুন গুন করে বলছেন,'ওগো আল্লাহ,তোমারে যদি পাইতাম তাহলে সাবান দিয়া গোসল করাইতাম,মাথার চুল আচড়াইয়া দিতাম,আতর সুরমা লাগাইয়া দিতাম..."
এইসব কথা শুনে মুসা (আঃ) তাকে ধমক দিয়ে বললেন,'কিসব আজেবাজে কথা বলছ!এসব শিরকি কথা!'
রাখাল ভয়ে জঙ্গলে পালিয়ে গেল। তখন আল্লাহ (নাকি!) মুসা (আঃ) কে ডাক দিয়ে তিরষ্কার করলেন এবং জানালেন রাখালের কথায় তিনি (নাকি!) সন্তুষ্ট ছিলেন!
মুসা (আঃ) নবুয়াত হারানোর ভয়ে সেই রাখালকে খুঁজে বের করে তার কাছে মাফ চাইলেন। তখন রাখাল জানালো সে নাকি সিরাতুল মুন্তাহা পার হয়ে আরশের কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিল। কিন্তু ঐ মুহূর্তে তাকে বাধা দিয়ে আল্লাহর দীদার হতে বঞ্চিত করেছেন।"
এই ঘটনা উল্ল্যেখ করার পরে চরমনাইয়ের পীর সাহেব বলেছে,"হে মুমীন ভাই সকল! এখন বুইঝালন যে, মুর্খ লোক মারেফতের উপরের দরজায় পৌছাতে পারে কিনা এবং ইহাও খেয়াল করুন যে মারেফতের রাস্তা কত গোপন আর কঠিন, যেখানে মুসা (আঃ) এর মতন নবীও সেই রাখালের অবস্থা বুঝতে পারেন নাই!"
দেখুন,কি করে একজন রাখালকে মুসা (আঃ) এর উপরে প্রাধান্য দিলেন চরমনাইয়ের পীর সাহেব!!মারেফতের নামে ভন্ডামির দ্বার উন্মুক্ত করে!
অথচ নবী রাসুলরা হলেন যার যার যুগের শ্রেষ্ঠ মানুষ! আর মুসা (আঃ) হলেন"উলুল আযমী মিনার রাসুল"(৫জন শ্রেষ্ঠ রাসুল) দের মাঝে একজন।
এই যদি হয় কথিত হাক্কানি পীরদের লিখিত কিতাবের অবস্থা!তাহলে বাকি পীরদের কি অবস্থা!!
চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও চরমোনাই পীরের সব বই নিষিদ্ধ করতে হবে । এই দাবির সাথে যারা একমত তারা এক হোন ।
কেন চরমোনাই পীরের দল ও তার বইপত্র নিষিদ্ধ করতে হবে তা এসব উদৃতি পড়লেই বুঝতে পারবেন :
পীরদের মধ্যে যে নিজেকে হক্কানী পীর বলে দাবী করেন মাওলানা সৈয়দমোহম্মদ এছহাক সাহেবর কিছু আক্বীদা -
১.আল্লাহর আন্দাজ নাই...(ভেদে মারেফাত, ১৫পৃ
২. শরিয়ত কামেল পীর সাহেব যদি এমন হুকম দেন যাহা প্রকাশ্যে শরিয়তের খেলাফ হয়, তবুও তা নিরাপত্তিতে আদায় করিবে....(আশেকমাশুক, ৩৫পৃ.)
৩. আমি এত বড় আলীশান খোদা,আমি জমিন ও আসমানে সামাই হই না,একমাত্র মোমেনের কলবে সামাই হই....(ভেদে মারেফাত, ২১পৃ
৪. মনসুর হাল্লাজ আল্লাহ পাকের মোরাকাবা করিতে করিতে আল্লাহর নূরের মধ্যে গরক হইয়া হঠাৎ একদিন বলিতে লাগিলেন আনাল হক (আমি খোদা)... (আশেক মাশুক, ৪২পৃ.)
৫. পীর সাহেব হলেন আখেরাতের উকিল স্বরূপ... (ভেদে মারেফাত,৬০পৃ
৬.যেই ব্যক্তির পীর নাই, তাহার পীর শয়তান... (ভেদে মারেফাত,২৩পৃ
৭.বান্দা অসংখ্য গুনাহ করার ফলেআল্লাহ পাক তাহাকে কবুল করিতে চান না। পীর সাহেব আল্লাহ পাকের দরবারে অনুনয় বিনয় করিয়া ঐ বান্দার জন্য দোয়া করিবেন,যাহাতে তিনি কবুল করিয়া নেন।...(ভেদে মারেফাত,৩৪পৃ
৮. কাফন চোরের হাত আমার হাতের সঙ্গে লাগিয়াছে, এখন কেয়ামত দিবসে ওকে ছাড়িয়া আমি কেমনে পুলছপার হইয়া যাইব ? (ভেদে মারেফাত,২৭-২৮পৃ
৯. পীরের মুরীদ হওয়া ফরজ। (মাওয়াযেজ এসহাকিয়া)
১০.যদি কারো দুইজন পীর হয় তবে দুই পীর তোমার দুই ডানা ধরে বেহেশতে নিয়ে যাবেন, কোনই ক্ষতি নেই । (মাওয়াযেজ এসহাকিয়া, ৫৫-৫৬পৃ
মন্তব্য করতে লগইন করুন