বলুন তো এগুলো কোন গ্রহের ছবি?
লিখেছেন লিখেছেন রেহনুমা বিনত আনিস ১২ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৪৭:২৫ সকাল
দেখে কোন অচেনা গ্রহের চিত্র মনে হচ্ছে? না, এগুলো পৃথিবীতেই অবস্থিত। আমাদের সৃষ্টিকর্তার অসাধারন শৈল্পিকতার নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের চোখে মেলে দেখার অপেক্ষায়। আসুন, জেনে নেই এর কোনটি কোথায়।
১/ 
চেলটেনহাম ব্যাডল্যান্ডস, ক্যালেডন, অন্টারিও, ক্যানাডাঃ দেখে মঙ্গলগ্রহের চিত্র মনে হচ্ছে? হতেই পারে- লালচে, উষর, নিষ্প্রান, বন্ধুর, পাথুরে মাটি দেখে কে বলবে এটা পৃথিবীর অংশ? এখানে এককালে নদী ছিল, হ্রদ ছিল। একসময় নদী শুকিয়ে, লৌহসম্বৃদ্ধ লালচে মাটি চাপা পড়ে পলিমাটির নীচে। গত শতাব্দীতে ত্রিশের দশকে এই এলাকায় ত্রুটিপূর্ণ চাষাবাদের ফলে ওপরের মাটি ক্ষয়ে গিয়ে শেলের (shale) স্তর বেরিয়ে পড়ে। মাটিরে প্রচুর পরিমাণ আয়রন অক্সাইড থাকার ফলে এখানে মাটির রঙ লাল, কিছু কিছু জায়গায় মাটির নীচে অবস্থিত পানির সাথে বিক্রিয়ার কারণে লাল অক্সাইড ঈষৎ সবুজাভ অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়ে ভূমিবিন্যাসে বৈচিত্র এনেছে। ২০০০ সালে অন্টারিও হেরিটেজ ফাউন্ডেশন এই এলাকাটি সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এখন এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত।
২/ 
ডেভন আইল্যান্ড, ব্যাফিন বে, নূনাভুট, ক্যানাডাঃ এখানে মঙ্গলগ্রহে সঞ্চারনকারী যান দেখে ভাবছেন এবার ঠিক ধরেছেন? এটা মঙ্গলই হবে? না, আবারও ভুল হোল। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জনমানবহীন দ্বীপ। এর ভূমিবিন্যাস লোহিত গ্রহটির এতটা কাছাকাছি যে এখানেই হটন-মার্স প্রজেক্টের স্থায়ী বাসস্থান নির্মান করা হয়েছে যেন মঙ্গলে কোন যান পাঠাবার আগে এখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে নেয়া যায় সেটি ওখানে কতটা কার্যকর হবে।
৩ ক/ 
সালার দো উয়ূনী, পতসী ও অরুরো, বলিভিয়াঃ কি অদ্ভুত সুন্দর তাইনা? এটা আসলে লবনের তৈরী এক সমভূমি যা ১০,৫৮২ বর্গকিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত! অ্যান্ডিজ পর্বতের চূড়ার কাছাকাছি সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ১১,৯৫৫ ফুট উচ্চতায় ৩০,০০০ থেকে ৪২,০০০ বছর আগে একটি বিশাল প্রাগৈতিহাসিক হ্রদ ছিল যার নামকরণ করা হয়েছে লেক মিঞ্চিন। হ্রদটি নানান বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এক সময় শুকিয়ে যায়, স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রেখে যায় দু’টি ক্ষুদ্রাকৃতি হ্রদ এবং কয়েক মিটার পুরু এই লবনের স্তর যা অসমতল পর্বতগাত্রে সৃষ্টি করেছে একটি লবনজাত সমভূমি যেখানে মজুদ রয়েছে ১০ বিলিয়ন টন লবন! মাথা ঘুরছে? আমারও। কিন্তু আরো আছে। বর্ষার মৌসুমে এখানে লবনের ওপর পানির অগভীর স্তর জমে সৃষ্টি হয় এক বিশালাকার আয়না যা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন ৩ (খ) নং ছবিতে।
৩ খ/ 
৪/ 
আইসল্যান্ডঃ ভাবছিলেন এটা কোন গ্রহ? এই ছবির ফটোগ্রাফার আঁদ্রে আর্মোলায়েভ বলেন, ‘প্রতিবার ছবিগুলো দেখে লোকে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে। কারণ ছবিগুলো প্রথমবার দেখে কারো পক্ষে ধারণা করা কঠিন যে তারা পৃথিবীর ছবি দেখছে। অনেকেই ধারণা করে এগুলো হাতে আঁকা ছবি!’ আইসল্যান্ডকে বলা হয় নিশীথ সূর্যের দেশ (land of the midnight sun), যেখানে আকাশে খেলা করে মেরুজ্যোতি (aurora), থরে থরে জমে থাকা বরফের স্তর, উঁচুনিচু ভূমিবিন্যাস- সব মিলে আইসল্যান্ডকে ভিনগ্রহ বলে ভুল হওয়াই স্বাভাবিক! ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন সবুজাভ মেরুজ্যোতি শ্বেতশুভ্র বরফের ওপর প্রতিফলিত হয়ে একটি আলৌকিক দৃশ্যপট রচনা করেছে।
৫ ক/ 
রিও টিন্টো, স্পেনঃ রিও টিন্টো মানে লাল নদী। এই নদীর পাড়ে খিষ্টপূর্ব ৩০০০ সাল থেকে বিভিন্ন সময় তাম্র, রৌপ্য এবং স্বর্নের জন্য খনন করা হয়ে আসছে যার ফলে নদীর পানি অত্যন্ত অম্লধর্মী (acidic)। এই অম্লধর্মী পানিতে লোহা গলিত হয়ে মিশে গিয়ে নদীটি লোহিতবর্ণ ধারণ করেছে। এটি মূলত পরিবেশ দূষনের ফসল, কিন্তু দেখতে কি অদ্ভুত, তাইনা?
৫খ/ 
৬/ 
গ্র্যান্ড প্রিজম্যাটিক প্রস্রবন, ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক, ওয়ায়োমিং, ইউ এস এঃ ভাবছেন আকাশের রংধনু মাটিতে নেমে এলো কিভাবে? এটি আসলে একটি প্রস্রবন। ভূতত্ত্ববিদরা ১৮৭১ সালে এই প্রস্রবনটির সন্ধান পান যার ব্যাস ৯০ মিটার এবং গভীরতা ৫০ মিটার। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম এবং পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম উষ্ণ প্রস্রবন। প্রস্রবনটির পাড়ে কিছু রঙ্গিন ব্যাকটিরিয়া বসবাস করে যারা প্রস্রবনস্থিত ক্লোরোফিল ও ক্যারোটিনয়েড ব্যাবহার করে পানিতে এই রঙ উৎপাদন করে। কিন্তু রঙের উৎপাদনের পরিমাণ আবহাওয়ার তাপমাত্রার ওপরেও নির্ভর করে। ফলে একেক মৌসুমে পানিতে রঙের পরিমাণে তারতম্য দেখা যায়। কতগুলো সামান্য ব্যাকটিরিয়া আকাশের রংধনুকে মাটিতে নামিয়ে আনতে পারে, আমরা যদি এই রঙ আমাদের পোশাকে আনতে পারতাম!
৭/ 
পামুক্কালি, তুরস্কঃ টার্কিশ ভাষায় পামুক্কালি অর্থ তুলার প্রাসাদ। মধ্যখানে যে নীল জলাধার এগুলো হোল উষ্ণ প্রস্রবন, একে ঘিরে যে শ্বেত প্রাচীর তা হোল উষ্ণ প্রস্রবনের মুখে দ্রুত জমে যাওয়া চুনাপাথর। সব মিলিয়ে মনে হয় যেন এক তুষারাবৃত ভূমিবিন্যাসের মাঝে টলটলে স্বচ্ছ পানি। অথচ এটি একটি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল, এখানে তুষারের চিহ্নমাত্র নেই, পুরোটাই চুনাপাথরের স্তরে স্তরে উষ্ণ প্রস্রবনের প্রবাহ। হাজার বছর ধরে এখানে পর্যটকরা বেড়াতে আসেন।
এত অসাধারন সৌন্দর্যের আধার এই পৃথিবী ধ্বংসোন্মুখ আমাদের অযত্নের কারণে। নিজেদের এই আবাস ধ্বংস করে আমরা কোথায় আশ্রয় নেব সেই অনিশ্চিত আবাসের জন্য আমরা তারায় তারায় আশ্রয় খুঁজে বেড়াই। কবে আমরা বুঝব, যে নিজের ঘরের যত্ন নেয়না সে কি করে অপরের ঘর সংরক্ষণ করবে? এই সুন্দর পৃথিবীটার প্রতি আমরা কি একটু যত্নশীল হতে পারিনা?
সূত্রঃ ক্যাল্গেরী ওয়েদার নেটওয়ার্ক
বিষয়: বিবিধ
২০৫৯ বার পঠিত, ৪২ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আপনাকে এরকম আক্কেল দিন
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ অদেখা সুন্দরকে দেখানোর জন্য
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ অদেখা সুন্দরকে দেখানোর জন্য
এ ধরণের সচিত্র পোস্ট পড়তে-দেখতে তো ভালই লাগে, কিন্তু, ছবির ক্যাপশনগুলোর নাম যে বেশীদিন মনে রাখা যায় না !
ধন্যবান সুন্দর পোষ্টটির জন্য।
এতো সুন্দর করে যিনি সৃজন করেছেন এসব না জানি তিনি কতো সুন্দর।
সেই সুন্দর আল্লাহকে দেখতে চাই।
ধন্যবাদ আমার রবের সৃষ্টির সৌন্দর্য সম্পর্কে কিছু ধারনা পেলাম।
আসলেই আল্লাহ সৌন্দর্যের আধার বলেই তাঁর সৃষ্টি এত সুন্দর! এজন্যই আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁর সৃষ্টি দেখার চেষ্টা করা উচিত যেন আমরা তাঁর মহিমা অনুধাবন করতে পারি
এক কথায় "সুবহানাল্লাহ"। সত্যি বলেছেন, আমরা এই পৃথিবীর অনেক কথাই জানিনা, আর ছুটছি তারায় তারায় নুতন অাবাসের খোঁজে। দুইটা মাস হয়ে গেল মালয়েশিয়ান বিমানের হদিসটি পর্যন্ত যে মানুষ বার করতে পারলো না তারা আসে বিজ্ঞান নিয়ে সৃষ্টিকর্তার সাথে টক্কর দিতে...
মন্তব্য করতে লগইন করুন