এসব কিসের বিষ বাষ্প ছড়াচ্ছেন মোশাররফ করিমরা?

লিখেছেন লিখেছেন শহর ইয়ার ০৩ মে, ২০১৩, ০৫:৫২:০৫ সকাল

ইউটিউবে একটি টেলিফিল্ম দেখলাম। নাম কাঁটা। এর উপজীব্য হচ্ছে মুসলমানদের হাতে নির্যাতিত একটি হিন্দু ফ্যামিলির গল্প। এই ছবিটি নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে কোন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। দেশের টিভি চ্যানেল দেখার সুযোগ নেই বলে বলতে পারছি না কোন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছিল।



এই টেলিফিল্মে যেভাবে মুসলমানদের তুলে ধরা হয়েছে তাতে যে কারোই মনে হবে এরা অতি দুষ্কৃতিকারী ও অমানুষ। ধর্মান্ধ মৌলবাদী। এই গল্পে একটি চরিত্রও নেই যাতে দেখা যায় মুসলমানদের মধ্যে কোন ভাল গুণাবলী আছে।

গল্পের মুল চরিত্র সুবোধ নতুন বাড়ি ভাড়া নিয়ে আসেন ঢাকার ভূতের গলিতে। সাথে তার স্ত্রী স্বপ্না। মুসলিম বেশধারী কয়েকজন বয়স্ক লোকের কাছে তারা নতুন বাসায় যাবার রাস্তার দিক নির্দেশনা জিজ্ঞেস করেন। মুসলমান লোকগুলো বেশ রহস্যজনক ও ভীতিকর আচরণ করেন। এখান থেকেই গল্প এগিয়ে যায়।

প্রথমে ১৯৭১ সালের পটভূমিতে রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মির হাত থেকে বাঁচতে সুবোধ কলিমা শেখেন। কিন্তু তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। সুবোধ কে মেরে ফেলে মুসলমান বেশধারী রাজাকাররা।এই টেলিফিল্মে বুঝানো হয়েছে পাকিস্তানী আর্মি কিংবা রাজাকারদের একমাত্র কাজ ছিল মহল্লায় কে হিন্দু তাকে খুঁজে বের করা এবং হত্যা করা। এমনকি সে যদি মুক্তিযোদ্ধা নাও হয়।

দ্বিতীয় দফায় ১৯৯২সালের পটভূমিতে ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার পর একাত্তরের একই কুশীলবদের হাতে সেই হিন্দু ফ্যামিলিকে আবার কুয়ায় ফেলে মারা হয়। এবার অতিরিক্ত হিসাবে হিন্দুদের মন্দিরে মুসলমানদের অতর্কিত আক্রমন দেখানো হয়েছে।

মোশাররফ করিম একজন অভিনেতা হিসাবে একটি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন। একজন শিল্পীর দেশ ও সমাজের প্রতি অনেক দায়বদ্ধতা আছে। তিনি যখন অভিনয় করেন তখন তার নিজস্ব রাজনৈতিক পরিচয় থাকে না, হয়ে উঠেন সকলের। কিন্তু আমাদের দেশের শিল্পীদের এই মূল্যবোধ আছে বলে মনে হয় না। মোশাররফ করিম এই টেলিফিল্মের মাধ্যমে পুরোপুরি রাজনীতিই করলেন।

তবে এই টেলিফিল্মের মাহাত্ম্য শুধু আমাদের দেশের রাজনীতিতে আটকে থাকলে সমস্যা ছিল না। এর মাধ্যমে মুসলমানদের কে তিনি যতঠুকু নীচভাবে তুলে ধরেছেন, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছেন মুসলমানরা ভারতসহ যেসব দেশে সংখ্যালগু তাদেরকে বিপদে ঠেলে দেয়ার মাধ্যমে। এই টেলিফিল্মটি যদি ভারতীয় সাবটাইটেল দিয়ে প্রচারিত হয়, তাহলে সেখানে যেকোন সময় আবার গণহারে মুসলিম নিধন শুরু হবে।

মুসলমানের ঘরে জন্মগ্রহণ করে মোশাররফ করিম, মামুনুর রশীদ, শহিদুজ্জামান সেলিমরা কী করে মুসলিমদের প্রতি এতটা বিদ্বেষ পোষন করেন সেটা বোধগম্য নয়। এই গল্পের উল্টো স্পিরিট দিয়েও তো টেলিফিল্ম করা যায়। ভারতে আদভানীর নেতৃত্বে মৌলবাদী হিন্দুরা কথিত পৌরানিক কাহিনীর সূত্র ধরে চারশ বছরের পুরনো একটি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলল। সেটা কি তাহলে অপরাধ নয়। কিছুদিন আগে গুজরাটে হাজার হাজার মুসলমানকে নারী-শিশু নির্বিশেষে গণহারে হত্যা করা হয়। এটা পূত-পবিত্র হিন্দুদের অতি পূজনীয় কাজ তাহলে? বার্মার নির্যাতিত মুসলিমদের কথা এখানে নাইবা বললাম।

আশা করছি এই মহৎ কাজটির জন্য মোশাররফ করিম গংরা ভবিষ্যতে আরো বড় কিছু করার জন্য একটি বিরাট অনুদান পাবেন ওপার থেকে। আপাতত ভারতের কলকাতার কোন গলি থেকে বিশেষ এই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরষ্কার জুটলেই হয়। তারপর আমাদের মিডিয়া তাদের কে একেকজন সত্যজিত রায় বানিয়ে ছাড়বে।

টেলিফিল্মের লিন্ক: link

বিষয়: বিবিধ

১৪২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File