ক্ষুদ্র একটি সেফ্টিপিন, অতঃপর বৃহত্তর উপলব্ধি.........
লিখেছেন লিখেছেন ইশরাত জাহান রুবাইয়া ০৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:১৮:০৩ বিকাল
সকালবেলা মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য তৈরী হতে গিয়ে বোরকা গায়ে চাপিয়ে স্কার্ফ হাতে নিতেই বাঁধলো বিপত্তি। সেফ্টিপিন দেখি মাত্র দুইটা! অথচ নিক্বাব করতে আমার মোট চারটা সেফ্টিপিনের প্রয়োজন। গতকাল দুইটা সেফ্টিপিন খুঁজে পাচ্ছিলামনা, ছোটবোনের বোরকা থেকে দুইটা পিন খুলে নিয়ে স্কার্ফ বেঁধেই দৌড় দিয়েছি। আসার সময় আলসেমি করে কিনেও আনিনি। এখন কি করি? স্কার্ফ দিয়ে তো এখন নিক্বাব করা যাবেনা, তাই ওটা রেখে আলমিরা থেকে ওড়না নামালাম, ওড়না বেঁধে তার উপর আলাদা নিক্বাব বাঁধবো বলে। ওড়না হাতে নিতে গিয়ে মনে হলো, আমি তো ওড়নাও তিনটা পিন দিয়ে বাঁধি, যাতে শরীর ঠিকমত ঢাকা থাকে এবং ওড়নার প্যাঁচ না খুলে যায়। এখন আরেকটা কই পাই!
সেফ্টিপিন রাখার বক্সটা হাতে নিয়ে দেখলাম, নতুন পিন আছে কিনা! নাহ, ওটাও খালি। অবশ্য সেফ্টিপিন না পাওয়া গেলে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে দোপাট্টা পরা যাবে, কিন্তু গরমে এ মূহূর্তে ওটা পরতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। কি করি? ভাবতে গিয়ে মনে হলো, অনেকদিন আগে একটা ড্রেসের ওড়নার সাথে একটা পিন আটকে রেখেছিলাম। আলমিরা থেকে ড্রেসটা নামিয়ে ওড়নার ভাঁজ খুললাম। কিন্তু খুঁজেও পিন পেলামনা! এরপর মনে হলো বারান্দায় আলনায় বাতিল করে ফেলে রাখা একটা ড্রেসের ওড়নায় একটা পিন লাগিয়ে রেখেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। ওটা নেয়া যায়! কিন্তু বারান্দায় গিয়ে ঐ ওড়নাতেও পিন পাওয়া গেলোনা! তারপর খেয়াল হলো, বইয়ের সেল্ফে বইয়ের পাশে দুইদিন আগে একটা সেফ্টিপিন রেখেছিলাম, ওটা আছে নাকি দেখি! খুঁজতে গিয়ে ওটাও পেলামনা আজ! এরপর আল্লাহর নাম নিয়ে ড্রেসিং টেবিল ঘাটতে দিয়ে অবহেলায় ফেলে রাখা স্টোনের কাজ করা একটা বড় সুন্দর পিন পেলাম, দেখলাম কায়দামত বসাতে পারলে ঐ একটা পিনই দুইটা পিনের সমান কাজ করবে। তারপর ওটা লাগিয়েই তৈরী হয়ে বের হলাম।
নিজের অবহেলা আর উদাসীনতার ছোট্ট এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে হলো, ছোট্ট একটা সেফ্টিপিন। আপাতদৃষ্টিতে কমদামী এবং খুব সহজলভ্য জিনিস বলে মনে হয়। কিন্তু আজ যখন খুব প্রয়োজন পড়লো, এবং প্রয়োজনের মূহূর্তে সংগ্রহ করাটাও সম্ভব ছিলনা, তখন এই ছোট্ট জিনিসটাই কী আকাঙ্খিত হয়ে উঠেছিলো আমার কাছে! ক্ষুদ্র বস্তু ভেবে বিভিন্ন সময় কোথায় কোথায় অনাদরে ফেলে রেখে ভুলে গেছি, অথচ আজ প্রয়োজনের মূহূর্তে মনে করে করে সেসব জায়গায় আঁতিপাঁতি করে খুঁজতে গেছি! প্রকৃতপক্ষে যেকোন কিছু আপাতদৃষ্টিতে যতই ক্ষুদ্র মনে হোক, এর যথাযথ মূল্য অনুভূত হয় প্রয়োজনের সময়!
এমনিভাবেই আমরা মানুষেরা অনেক সময় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেক নফল কাজকে ক্ষুদ্র ভেবে হেলাফেলা করি। অনেক সুন্নাতকেও “ওওওও! এটাতো সুন্নাত!” এই কথা বলে ব্যস্ততার অজুহাতে এড়িয়ে চলি! অথচ একদিন যখন আমল পরিমাপের সময় আসবে, নতুন করে সে মূহূর্তে আমলসংগ্রহ করার উপায়ও আর থাকবেনা, আমলনামায় নেকীর ঘাটতি থাকবে, তখন হন্য হয়ে “এককালে আমাদের দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র আমলগুলি” যেমন বিসমিল্লাহ বলে ডানহাতে খাওয়া, কাপড় পড়ার দুআ, বাথরুমের যাওয়া-আসার দুআ, ঘুমের দুআ, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো, হাঁটতে হাঁটতে যিকির করা, সিড়ি দিয়ে উঠতে নামতে আল্লাহু আকবার-সুবহানাল্লাহ বলা, রোগী দেখতে যাওয়া, আত্মীয়ের খোঁজ-খবর নেয়া, দুস্থকে দান-সাদাকা করা, এইসব আমলগুলিকে খুঁজতে থাকবো! কবে, কখন, কোথায় কী কী ছোট ছোট আমল করেছিলাম সেদিন সেগুলোই মনে করে করে হন্য হয়ে খুঁজতে থাকবো!
ভাবতে পারেন, সামান্য এক সেফ্টিপিনের সূত্র ধরে লেখার প্রসঙ্গ আখিরাতের আমল পরিমাপের দিকে ঘুরে গেলো কেন! কোথায় নগন্য সেফ্টিপিন, আর কোথায় সুন্নাত, নফল আমল! কিসের সাথে কী!!! আসলে পুরো ব্যাপারটাই উপলব্ধির! খেয়াল করলে আপনিও ধরতে পারবেন, মিলটা কোথায়!!!
উদাসীনতা দেখিয়ে কোন ছোট আমলকে “ওওও এটা তো সুন্নাত/ ওওও এটা তো নফল” বলে যেন অবহেলা না করি, প্রয়োজনের সময় এগুলোই অনেক আকাঙ্খিত হয়ে উঠবে। আর কোন ছোট সগীরা গুনাহকে “আরেহ, এইটা তো সগীরা গুনাহ, এক/দুইবার করলে কী হবে” বলে যেন করে না ফেলি! কারণ বিন্দু বিন্দু জল দিয়েই সিন্ধু গড়ে উঠে! আর কবিরা গুনাহ করলে যাকে অসন্তুষ্ট করা হয়, সগীরা গুনাহ করলেও কিন্তু তাঁকেই অসন্তুষ্ট করা হয়! বিচারক, শাস্তিদাতা, ক্ষমাকারী, সবই কিন্তু একজনই!!!
বিষয়: বিবিধ
১৭৫০ বার পঠিত, ৩৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তোমার পরীক্ষা কি শেষ? তাহলে শুক্রবারে স্কাইপে একটা আড্ডার আয়োজন কর।
বই একটা বের করে পড়েছি আরো বিপদে!! ক্লাসে একটু অন্যমনস্ক হলেই প্রশ্ন "কী ভাবছেন, হ্যাঁ? আপনার মাথায় কি এখন লেখার পোকাটা কিলবিল করছে?"
স্কাইপে শুক্রবারে কখন? কী বিষয় নিয়ে আড্ডা দিতে চাচ্ছেন? আমি তো পারবো নাকি জানিনা আপু! আপনারা অন্য সবাই দেন নাহয়, আমাকে বাদ দিয়ে!
জাজাকাল্লাহু খায়রান।
গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের জন্য অনেক শুকরিয়া ভাই। আলহামদুলিল্লাহ আমি বুঝতে পেরেছি, আপনি যেটা বোঝাতে চাচ্ছেন। আসলে আমাদেরকে চিন্তাশীল হতে হবে। দৈনন্দিন জীবনে ঘটমান নানা বিষয় নিয়ে, আল্লাহর সৃষ্টির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে চিন্তা করলেও আমরা সবকিছুতেই আল্লাহর সুনিপুণ হিকমাহ, দয়া ও মহত্ব খুঁজে পাব।
দুআ করবেন আল্লাহ যেন পূর্ণ হিদায়াতের উপর অটল রাখেন। আমীন। জাঝাকাল্লাহু খাইরন ফীদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাত।
বানানের দিকে সামান্য খেয়াল চাই৷ যেমন;-'দোপাট্টা পড়া যাবে, গরমের দিনে ওটা পড়তে কষ্ট'৷ এখানে 'র' হবে৷ অযাচিত উপদেশে রাগ করলে দুঃখীত৷
ঠিক করে দিয়েছি।
অনেক ধন্যবাদ চাচাজান।
জাঝাকাল্লাহ।
এই সময়ের কারণে আপনার মূল্যবান লেখাগুলোও মিস হয়ে যায়!
দুআ করবেন আপুমনি আল্লাহ যেন আমার সময়ে বরকত দেন!
জাজাকাল্লাহু খাইরান
জাযাকাল্লাহ খাইরান...
আব্বার কব্বে দেখা পাবো, আল্লাহই ভালো জানেন...
জাঝাকাল্লাহু খাইরন ভিশুজ্বী।
আসলেই অনুপস্থিতিটা বোধহয় একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে!
কি করি বলেন তো!!!
পরীক্ষা আমায় দেয়না অবসর!!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন