প্রেম যেন এমনই হয়-৩৭

লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:১২:৪৯ রাত



নানা আনুষ্ঠানিকতায় রতনের কেমন যেন এক ঘেয়েমি ধরে বসেছে। তাই আরামে আরো কিছুক্ষণ ঘুমানোর ইচ্ছে ছিল তারা। যদিও সকালটা তিন ঘণ্টা আগেই শুরু হয়েছিল, তাতে কি আরো তিন ঘণ্টা কেটে যাক।

এই মুহূর্তে সঞ্চিতা এল। রতন বললো শুয়ে পর। আরো একটু ঘুমাই। সঞ্চিতা রেগে আগুন। ‘এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাও তুমি। তোমার কোন কা-জ্ঞান নেই। বাবা মা সবাই খেতে বসেছে। আর তুমি ঘুমাচ্ছো তো ঘুমাচ্ছো।’ একটানে এতগুলো কথা বললো সঞ্চিতা।

রতন কিছু বলবে এই সুযোগটাও পেল না।

ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সঞ্চিতা। রতন ঝটপট বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হতে ঠুকলো। অল্প সময়ের ভেতর গোসল সেরে নিল। এরপর হালকা বিষন্নতা নিয়ে রুমে ঢুকে একটা বই দেখতে পেল। বইটির নাম ‘বিয়ে’ লিখেছেন রেণু আপু। রতন মনে মনে ভাবলো বিবাহিত জীবনে আজ যা আদরের সম্ভাষণ পেলাম তাতে সাধ মিটে গেছে। ঘুমের মত শান্তিপূর্ণ কাজে বউয়ের রুদ্ররূপ। যাহোক রেণু আপুর বইটা পড়ে দেখতে হবে। বিজ্ঞজন বিয়ের বয়ান কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তাই দেখতে হবে।

সব ভাবনা বাদ দিয়ে সে ছুটলো খাবার টেবিলের দিকে। খাবার টেবিলে গিয়ে দেখলো সবার খাওয়াই শেষের দিকে। সঞ্চিতা খাওয়া শেষ করে রুণুর সাথে পরিবেশনেও সহযোগিতা করছে। রিদিতা রতনকে দেখে মিটমিটিয়ে হাসছে।

সানজিদা তথা রতনের মা কথা বলে উঠলেন। বসে পড় একটু খেয়ে নিয়ে ঘুমাতি তাতেতো সমস্যা ছিলনা।

সঞ্চিতা রীতিমত বিদ্রোহের সুরে বললো। ঘুমাবে কি মা। আজ না ওর পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার কথা। রেণু আপু সেই সকালে ফোন দিয়েছে। আর ও ঘুমাচ্ছে।

রতন যেন স্মৃতি শক্তি ফিরে পেল। আজতো তার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার কথা। পাসপোর্টেও জটিলতা যত তাড়াতাড়ি শেষ হবে ততই মঙ্গল। সময় হাতে মাত্র একটা মাস তারও এক সপ্তাহ চলে গেছে।

তাই খাওয়া ঝটপট শেষ করে রতন রুণুকে বললো, আমার বাইকের চাবিটা আর মোবাইলটা ঝটপট নিয়ে আয়তো। রেণু ছুটে গিয়ে নিয়ে এল। রতন একটু আঁড়চোখে সঞ্চিতার দিকে তাকিয়ে বের হচ্ছিল। সঞ্চিতা পিছু ডাকলো, এই শোন। একটু দাঁড়াও আমি পেপারস গুলো নিয়ে আসি।

থেমে গেল রতন, সঞ্চিতা কাগজগুলো এনে রতনের হাতে দিয়ে বললো, সাবধানে যেও।

রিদিতাও তার অনুকরণ করে মিটমিটিয়ে হেসে বললো; সাবধানে যাস ঘরে বউ আছে। বুঝে শুনে চলিস। আমাকে ফুপি ফুপি...

সঞ্চিতা পেছন থেকে রিদিতাকে চেপে ধরে বললো; আপু ওঠ আর খাবার টেবিলে বসে থাকতে হবে না।

রতন সঞ্চিতার মুখের দিকে একনজর তাকিয়ে বের হয়ে গেল।

ইতিমধ্যে লিটন সাহেব-সানজিদা, তারেক-তামান্না সবাই খাওয়া শেষ করেছে। বাচ্চারাও খাওয়া শেষ করে এখানে সেখানে খেলতে শুরু করেছে।

লিটন সাহেবের পুরো বাড়ি যেন কানায় কানায় পূর্ণ।

সানজিদা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, রাতেতো খুব একটা ঘুমালে না। আরেকটু শুবে সকালে?

লিটন সাহেব বললেন দরকার নেই দুপুরের পরে একটু বিশ্রাম নিলেই হবে। রিডিং রুমে যাচ্ছি একটু পড়াশুনা করবো। আবার লেখাও এ কয়দিন থেমে ছিল। তুমি রুণুকে দিয়ে একটু চা পাঠিয়ে দিও।

তামান্না জিজ্ঞেস করলো; বাবা কি বই বের করার কথা ভাবছেন নাকি?

লিটন সাহেব বললেন; না মা নামের খাতিরে লিখছি না। লিখতে ভাল লাগছে তাই লিখছি। বেঁচে থাকতে না হোক তোমরা যদি ভাল মনে কর এক সময় এগুলো ছাপিও। আর তা না হলে নিজেরাই বিরক্ত মিশ্রিত অবস্থায় পড়ে নিও।

তারেক বললো; বাবা রাখতো এসব কথা। একটা পা-ুলিপি দিয়ে দিও। আর তুমিতো কম্পিউটারেই লিখ। একটা প্রিন্ট কপি আমাকে দিও। আমার এক পরিচিত প্রকাশক আছে। এবারই তোমার একটা বই বের করি আমরা। মা তুমি কি বল।

সানজিদা ভীষণ খুশি হলেন তারেকের কথায়, বললেন; খুব ভাল হয়। তোর বাবা মাঝারি মানের একজন ভাল লেখক। লেখা ভাল কেউ সম্পাদনা করে দিলে পাঠক প্রিয়তা পাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

লিটন সাহেব বলে উঠলেন; বেলী তুমি কি আমায় আগের মত ভালবাস? তোমার মুখে নিজের প্রশংসা শুনলে খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করে।

ঘরভর্তি সবাই উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলো। লিটন সাহেব খাবার টেবিল থেকে উঠে রিডিং রুমের দিকে হাঁটা দিল। সানজিদা লাজুক ভঙ্গিতে টেবিলে বসে থাকলো।

চলবে...

বিষয়: সাহিত্য

১০৯১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

302669
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:২১
আফরা লিখেছেন : আমি অপেক্ষা করছি আপনার এই গল্পটা শেষ হবে কবে । শেষ পর্ব আসলে একসাথে পড়ব ।
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:৪২
244810
প্রগতিশীল লিখেছেন : ৪০ এই শেষ হবে...তবে শেষে লেখা থাকবে বাকিটা ছাপানো হলে...
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:৪৭
244811
আফরা লিখেছেন : আপনি তো ভালো ঝামেলার মানুষ আপনাকে জরিমানা করা হবে !
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:২৬
245090
প্রগতিশীল লিখেছেন : আফারা আপনার জন্য ৫০...পাঠককে সবসময় প্রায়োরিটি...যেমন রেহনুমা আপু গল্পের চরিত্রেও আছেন আর ওনার জন্য গল্পটাকে পরিবর্তনও করা হয়েছে পুরো একটা পার্ট...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File