কনফুসিয়াসের ঘাস-বাতাস ত্বত্ত এবং আজকের বাংলাদে
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১২:৩৮:৪৯ রাত
ইতিহাসখ্যাত চীনা দার্শনিক 'কনফুসিয়াস' ( জন্ম খৃষ্টপূর্ব ৫৫১ সাল ও মৃত্যু খৃষ্টপূর্ব ৪৭৯ সাল) তাঁর জীবনের প্রথম প্রায় পচিশটি বৎসর চীনের বিভিন্ন রাজদরবারে, রাজা রাজড়াদের কাছে, রাজবংশের নেতৃস্থানীয়দের কাছে ধর্না দিয়েছেন, তারা যেন কনফুসিয়াসকে তাদের রাজ্যে কোন দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করেন। তার কপাল ভালো, কোন রাজাই তাকে নিজেদের সরকারের কোন পদে নিযুক্ত করেনি।
অবশেষে হতাশ কনফুসিয়াস নিজ জন্মস্থানে ফিরে এসে শিক্ষকতায় আত্মেনিয়োগ করেন। কনফুসিয়াসের কাছে তিন হাজার ছাত্র শিক্ষা গ্রহণ করে, যাদের মধ্যে প্রায় সত্তরজন পরবর্তিতে চীনা ইতিহাসের সেরা দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তারা কনফুসিয়াসের ছয় দফা বিশিষ্ঠ দর্শনকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেন। পরবর্তিতে তাঁর এই দর্শন প্রাচ্যই কেবল নয় বরং প্রতীচ্য সহ প্রায় পুরো বিশ্বকেই নাড়া দেয়।
কনফুসিয়াসের সেই ছয় দফা দর্শন কী ছিল? তা এই ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনা করার কোন অবসর এখানে নেই। তবে দেশের সরকার ও জনসাধরণের পারষ্পরিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ, সে ব্যপারে তাঁর একটি চমৎকার দর্শন আছে, সেটি আজকের বিশ্ব ভেবে দেখতে পারে বৈকি।
তিনি দেশের সরকারের উদ্দেশ্যে বলতেন; 'তোমাদের শাসনব্যবস্থায় মৃত্যুদন্ডের এত কী দরকার? তোমরা শাসকরা যদি চরিত্রবান হয়ে যাও, তা হলে তোমাদের অধিনস্থরাও চরিত্রবান হয়ে যাবে, তারা অপরাধ করবে না। তখন তোমাদের শাসনব্যবস্থায় মৃত্যুদন্ডেরও কোনো প্রয়োজন হবে না।'
তাঁর মতে; দেশের শাসক হলো ঝড়ো বাতাস আর দেশের জনগন হলো ঘাস। বাতাস যেদিকে বইবে, ঘাসও সেদিকেই মুখ ফেরাবে। শাসকরা যদি উন্নত নৈতিকতার দিকে ঝুঁকে, তা হলে জনগণ উন্নত চরিত্রবান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বাধ্য।
আজ যখন তাঁর লেখা পড়ি, তখন ভাবি; স্বাধে কী আর কুনফুসিয়াসকে কোন রাজা তাদের সরকারে নেয় নি!
একমাত্র আল্লাহভীরু মুসলিম শাসক ছাড়া বিশ্বে আর কোন শাসক কী কখনও নিজেকে জনগনের কাতারে নামিয়ে এনেছে? বরং তারা নিজেরা পাপ, অবক্ষয় আর উচ্ছৃংখলতায় নিমজ্জিত থেকে জনগণকে উন্নত নৈতিকতার ছবক দিয়েছে। নিজেরা ভোগে ডুবে থেকে জনগণকে বৈরাগ্যবাদের নসিহত করেছে!
কনফুসিয়াসের পরে আজ আড়াই হাজার বছর পার হয়ে গেছে। সময় চলে গেছে বটে, তবে আমাদের সমাজের দিকে তাকালেই বুঝি কনফুসিয়াসের সময়কালের সে সমাজচিত্র এখনও টিকে আছে। এ সমাজেও আজ কোন আদর্শবান মানুষের স্থান নেই দেশ, সরকার আর প্রশাসনে। তবে রাষ্ট্রে তাদের কদর আছে বটে!
কদর আছে আদালতের দন্ড প্রয়োগের মাধ্যমে জেল, জুলুম আর ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলিয়ে ক্ষমতাবান গোষ্ঠী কর্তৃক জীবন মৃত্যুর ফয়সালা করার মত অসীম ক্ষমতা প্রয়োগের বাস্তব উদাহারণ সৃষ্টির জন্য!
হত্যার উন্মাদনায় উন্মত্ত আমাদের কলংকিত বিবেকের কোথাও কনফুসিয়াসের দর্শনটুকুও ঠাঁই করে নেয় নি। আফসোস কেবল এতটুকুই যে, আমাদের মধ্যে কোনো কনফুসিয়াস নেই। রয়েছে সেই বিবেকটুকু না থাকার দীর্ঘশ্বাস!
বিষয়: বিবিধ
১৪২৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হাস্যকর, কোন আল্লা ভীরু মুসলিম শাসক নিজেকে জনগনের কাতেরে নামিয়ে এনেছিলেন? দুই/একটা নাম বলুন তো, শুনি।
নবী মোহাম্মদ স্বয়ং বানু কোরাইজা বংশের উপর গনহত্যা চালিয়ে নির্মূল করেছেন। খলিফা ওমরের সময় অমুসলিমের কল্লাকাটা, প্রস্তর নিক্ষেপে নারী হত্যা, জিজিয়া কর, জবর দখল.... সবই ছিল। এরপর শুরু হয় নিজের মাঝে অন্তদ্বন্দ, ক্ষমতার লড়াই, গুপ্তহত্যা, কারবালা ম্যাসাকার। এরপরের ইতিহাস মুসলিম ইতিহাস গতানুগতিক মধ্যযূগীয় হত্যা, ধ্বংস, দখলবাজীর ইতিহাস। এই তো মুসলিম আল্লা ভিরুদের ইতহাস। নাকি??
একটি চিনা প্রবাদ আছে যখন আদালত এর সিড়িতে ঘাস গজায় আর মন্দির এর সিঁড়ি মানুষের ভারে ভেঙ্গে যায় তখন দেশে সুশাসন কায়েম হয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন